সহশিক্ষা : ইসলামের আলোকে

ছাত্র সমাজ, দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার। দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার হতে হলে তাদেরকে অবশ্যই সৎ, মহৎ ও চরিত্রবান করে তুলতে হবে। আদর্শ ও চরিত্রবান মানুষ গড়ে তোলার একমাত্র স্থান হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দুঃখজনক হলেও সত্য-আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে লক্ষ লক্ষ ছাত্র শিক্ষা লাভ করে দেশ-বিদেশে কর্মরত আছেন। এদের অনেককে দেখা যায় অসৎ চরিত্রের অধিকারী ও চরম দুর্নীতিবাজ। প্রশ্ন হল-উচ্চশিক্ষা লাভ করেও চরিত্রহীন হলো কেন? ধর্ষণ মামলার এক নম্বর আসামী যদি খুঁজে বের করা হয় তাহলে দেখা যাবে সে একজন উচ্চ শিক্ষিত লোক। উচ্চ শিক্ষিত হয়েও সে ধর্ষক হবে কেন? দেখা যায় চরিত্রহীনতার জন্য যে বা যারাই দায়ী-এরা সবাই শিক্ষিত। যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চরিত্রবান লোক বের হওয়ার কথা ছিল সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হচ্ছে চরিত্রহীন লোক। সে জন্য আজ স্থানে স্থানে চরিত্রহীনদের মহড়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চরিত্রহীন লোক বের হচ্ছে-তাই বলে কি আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করব? না, কখনও না। এ জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখনও দায়ী হতে পারে না, দায়ী করা যাবে না। দায়ী করা হবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সহশিক্ষা চালু আছে। সেই সহশিক্ষা নামক মরণব্যাধিই আমাদেরকে চরমভাবে কলুষিত করছে। সহশিক্ষাই ছাত্রছাত্রীদেরকে অতি অল্প বয়সে চরিত্রহীন করছে। সহশিক্ষায় রয়েছে ছাত্রছাত্রীর অবাধ চলাফেরার ব্যবস্থা। যেখানে ছাত্রীরা খেল-তামাশা করবে সেখানেই ছাত্ররা খেল-তামাশা করবে, যেখানে ছাত্রীরা নৃত্য করবে সেখানে সেই ছাত্রীদের সাথে ছাত্ররা আপনভাবে নৃত্য প্রদর্শন করবে-কোন প্রকার পর্দা করা হবে না। সেটাই হচ্ছে সহশিক্ষা। সহশিক্ষায় ইসলামের পর্দার বিধানকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখা হয়, যারা পর্দা করে চলতে চায় তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়, যারা যত নগ্নভাবে চলে তাদেরকে ধন্যবাদ দেয়া হয়। সহশিক্ষা মানেই পর্দাহীনতা। কলেজ-ভার্সিটিতে আজ শিক্ষা নেই বললেই চলে। কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা আজ নগ্নতা, অশ্লীলতা ও অবৈধ প্রেমপ্রীতি নিয়ে ব্যস্ত, কলেজ-ভার্সিটির ক্যাম্পাসগুলো আজ ছাত্রছাত্রীর কেবল আড্ডাখানায় পরিণত। প্রকৃত ছাত্রছাত্রীরা আজ মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। সহশিক্ষার তাণ্ডবলীলায় বিপর্যস্ত আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল-চরিত্র গঠন করে ইহকালীন শান্তি ও মুক্তি লাভ করা। যে শিক্ষা ব্যবস্থায় চরিত্র নষ্ট হয়, অবাধ যৌনাচারের পথ দেখায় সেই শিক্ষা দ্বারা আমাদের লাভ কি? আত্মিক, নৈতিক, মানবিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। আর এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সহশিক্ষাকে অবশ্যই সর্বদা ‘না’ বলতে হবে। সহশিক্ষা দ্বারা কখনও চরিত্রবান হওয়া যায় না। আর চরিত্রহীন মানুষ দ্বারা দেশ ও জাতির উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। মনে রাখতে হবে-সহশিক্ষার সাগর থেকে কখনও মণিমুক্তা পাওয়া যাবে না। সহশিক্ষার কুফল পদে পদে। সহশিক্ষার কুফল অত্যন্ত ভয়াবহ। একজন উত্তম ছাত্রের অনন্য বৈশিষ্ট্য হল-সে সহশিক্ষাকে সব সময় ‘না’ বলবে। সে সহশিক্ষার চরম বিরোধীতা করবে।
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। শিক্ষক হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষার উন্নয়নে উত্তম শিক্ষকের বিকল্প নেই। উত্তম শিক্ষকের পূর্বশর্ত হচ্ছে উত্তম ছাত্র হওয়া। উত্তম ছাত্র ব্যতীত উত্তম শিক্ষক হওয়া যায় না। ফকীহ আবুল লেইস সমরকন্দী (র.) বলেন-‘উত্তম ছাত্রের অনন্য বৈশিষ্ট্য হল-সে মহিলাদের সাথে কম মিশবে।’ উত্তম ছাত্রের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-তার স্মরণশক্তি থাকবে। স্মরণশক্তি ছাড়া কোন ছাত্র মেধাবী হতে পারবে না। স্মরণশক্তি বৃদ্ধির শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে পাপাচার থেকে বিরত থাকা। পাপ কাজে লিপ্ত থাকলে স্মরণশক্তি লোপ পেয়ে যায়। ইমাম শাফেয়ী (র.) বলেন-আমার উস্তাদ ইমাম ওয়াকী (র.)-এর দরবারে ইলিম স্মরণ না থাকার অভিযোগ করলে তিনি গুনাহ ত্যাগ করার অসীয়ত করলেন। তিনি বললেন-‘ইলিম হচ্ছে আল্লাহর নূর। সেই নূর আল্লাহপাক কোন গুনাহগারকে দান করেন না।’ সহশিক্ষার সুবাধে ছাত্রছাত্রীরা অবাধে বেপর্দা চলাফেরা করে। ছাত্রছাত্রীরা ফ্রি চলাফেরা করার কারণে নানা ধরণের পাপ কাজে লিপ্ত হয়-ফলে অনায়াসে সেসব ছাত্রছাত্রীর স্মরণশক্তি লোপ পেয়ে যায়। আর এভাবেই সহশিক্ষার কারণে আমাদের ছাত্র সমাজ থেকে মেধা লোপ পাচ্ছে এবং মেধাহীন জাতি সৃষ্টি হচ্ছে। যদি প্রশ্ন করা হয়-কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা অবৈধ প্রেম ও অবাধ অনাচারে লিপ্ত হওয়ার কারণ কি? আমি এর জবাবে বলবো-এর কারণ হল সহশিক্ষা। যদি প্রশ্ন করা হয়-কলেজ ভার্সিটির ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ইভটিজিং নামক ঘৃণ্য পাপের মহড়া হয় কেন? আমি এর জবাবে বলবো-এর কারণ হল সহশিক্ষা।
শিক্ষা অর্জন করা পুরুষের উপর যেমন ফরজ তেমনি নারীর উপরও শিক্ষা অর্জন করা ফরজ। নারীদের উচ্চশিক্ষা লাভ করতে ইসলামের কোনো বাধা নেই। নারীদেরকে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে ইসলাম সব সময় উৎসাহিত করে। যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামের পর্দার বিধান লংঘন হয় সেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইসলাম সমর্থন করে না। নারী-পুরুষ আলাদা অবস্থানে থেকে পর্দা রক্ষা করে শিক্ষা অর্জন করবে-এটাই ইসলামের চিরন্তন বিধান।

Comments

comments

About

Check Also

জ্ঞানের দুয়ার হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এমন এক ব্যক্তি যার জন্ম হয় পবিত্র কা’বা শরীফের ভেতরে, সম্পূর্ণ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *