কাশ্মীর : স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল

কাশ্মীর। ভূস্বর্গ হিসেবে প্রসিদ্ধ। যা প্রধানত হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত। এই রাজ্যের দক্ষিণে ভারতের হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাব রাজ্যদুটি অবস্থিত। উত্তর ও পূর্বে গণচীন অবস্থিত। পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিমে লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোলের ওপারে কাশ্মীরের পাকিস্তান শাসিত অংশ আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট-বালুচিস্তান অবস্থিত। বর্তমান জম্মু ও কাশ্মীর ভূখন্ডটি অতীতে কাশ্মীর ও জম্মু দেশীয় রাজ্যের অধীনস্থ ছিল। এই রাজ্যের শাসকেরা ঐতিহাসিক বৃহত্তর কাশ্মীর অঞ্চল শাসন করতেন। বর্তমানে কাশ্মির অঞ্চলের মালিকানা নিয়ে পাকিস্তান, ভারত ও গণচীনের মধ্যে বিরোধ চলছে।
১৯২৫ সালে কাশ্মীরের রাজা ছিলেন হরি সিং। ভারত স্বাধীনতা অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত তিনিই শাসক ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের অন্যতম শর্ত ছিল, ভারতের দেশীয় রাজ্যের রাজারা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন অথবা তারা স্বাধীনতা বজায় রেখে শাসনকাজ চালাতে পারবেন।
১৯৪৭ সালের ২০ অক্টোবর পাকিস্তান সমর্থিত আদিবাসীরা কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে। কাশ্মীরের রাজা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলেও গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেনর কাছে সহায়তা চান। কাশ্মীরের রাজা ভারতভুক্তির শর্ত মেনে নিয়ে মাউন্টব্যাটেনের সাহায্যপ্রাপ্ত হন। ভারতীয় সেনা কাশ্মীরে প্রবেশ করে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ভারত ও পাকিস্তান এক পর্যায়ে যুদ্ধ বিরতির শর্ত হিসেবে কাশ্মীর থেকে উভয় পক্ষের সেনা প্রত্যাহার ও গণভোটের প্রস্তাব প্রদান করা হয়। ভারত গণভোটে অসম্মত এবং পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহারে সম্মতি প্রদান করেনি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে অন্তত তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। ১৯৪৭ ইং, ১৯৬৫ ইং এবং ১৯৯৯ ইং সালে যুদ্ধগুলো অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া সিয়াচেন হিমবাহ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই দুই দেশ বেশ কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধে জড়িত হয়। ভারত সমগ্র জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য তাদের বলে দাবি করে।
জম্মু ও কাশ্মীরের অশান্তির ফলে হাজারো মুসলমানসহ মারা গেছেন অসংখ্য জন। বিশেষ করে কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অধিক সংখ্যক মুসলমান কাশ্মিরী। তাদের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ১৯৮৯ সালে জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৬ সালের ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত নিহত কাশ্মীরের নাগরিক ৯৪৫০৪ জন, থানা হেফাজতে মৃত্যু ৭০৬২ জন। ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে ১০৬২৬১টি, বিধবা হয়েছে ২২৮২৪ জন নারী, এতিম হয়েছে ১০৭৫৮৬ জন শিশু। এছাড়া ইন্ডিয়ান সেনা কর্তৃক ১০৪৩৩টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই ক্ষুদ্র এলাকার বিদ্রোহ দমনে রাখতে ভারত প্রায় দশলক্ষ সেনা সদস্য মোতায়েন করে রেখেছে।
কাশ্মীরীরা স্বাধীনতার জন্য যুগের পর যুগ জীবন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের ঐ স্বপ্ন অধরা রয়েই গেছে। কবে পূর্ণ হবে তাদের স্বপ্নের নিরেট বাস্তবতা?
স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। সেই অধিকার বাস্তবিকভাবে ভোগ করতে সকল মানুষই উদগ্রীব থাকে। অন্যের দাসত্ব বা ঔপনিবেশ হয়ে থাকতে কখনও পছন্দের নয়। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কাশ্মীরীরা তাদের স্বাধীনতা ফিরে পেতে প্রাণপণ প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীর ইস্যু আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ভারতীয় সেনাদের গুলির আঘাতে ঝাঁঝরা হচ্ছে হাজারো মুসলমানদের শরীর। শিশু-মহিলাদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। কাশ্মীর উপত্যকাটি রক্তের বন্যায় ভাসছে। গত ৮ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনীর এক অভিযানে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী তরুণ কমাণ্ডার বুরহান মুজাফ্ফর ওয়ানি দুই সহযোগীসহ নিহত হন। এই ঘটনার পর থেকে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানের নওয়াজ শরীফ ওয়ানীকে শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। যার কারণে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নওয়াজ শরীফের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন।
বর্তমান সময়ে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে ভারত পাকিস্তান মুখোমুখী অবস্থানে রয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্কে চলছে টানাপোড়ন। যে কোন সময় যুদ্ধের দামামা বেঁজে উঠতে পারে। এদিকে সৌদি আরবসহ গণচীন পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন সহ সহযোগীতার আশ্বাস প্রদান করেছে। আমরা চাই, কাশ্মীরীদের উপর হতে নির্যাতনের ষ্টীমরোলার বন্ধ হোক। পৃথিবীর স্বর্গখ্যাত কাশ্মীর ফিরে পাক তার স্বাধীনতা। আর কেউ যেন ফায়দা লুটতে না পারে। আল্লাহ যেন কাশ্মীরের মুসলমানদের সহায়তা করেন। আমীন।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *