বাবা আমার পথচলার অনুপ্রেরণা

‘বাবা’ শব্দটি শুনলেই কারো কারো মনে ভেসে ওঠে একজন বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ। আবার কারো মনে ভেসে ওঠে গম্ভীর একটি ভাবমূর্তি। তবে বাবা যেমনই হোক না কেন, বাবাকে পাঁচশ’ কিংবা হাজার শব্দে আঁকা সম্ভব না। বাবা হলেন সম্পূর্ণ একটা উপন্যাস, যার প্রতিটি পাতায় পাতায় থাকে নানা ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা, পরিবারের জন্য সর্বস্ব বিসর্জন, আক্ষেপ, বুকে কষ্টের পাহাড় চেপে সন্তানের ‘বাবা’ ডাক শুনে হাসি দেওয়ার ক্ষমতা।
শরীরের রক্ত বেঁচে হলেও পরিবারের সুখ যে নিঃস্বার্থভাবে কামনা করে তিনি হলেন বাবা। এই বাবা নামক গোটা উপন্যাসটির সারাংশ হল আমার পরিবার, আপনজনেরা ভাল থাকুক। তাদের জন্য আমি সর্বস্ব বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। বাবা হলেন প্রতিটি সন্তানের আবদারের ভাÐার। রাগ, অভিমান পেরিয়ে বাবা হলেন সন্তানের সাহস দাতা, স্বপ্নপূরণের সোনালী হাতিয়ার। বেকারত্বের কষাঘাতে জর্জরিত হওয়ার সন্তানের কাঁধে হাত রেখে যে বলে, ‘চিন্তা করিস না আমি তো আছি।’ তিনি হলেন বাবা। এই উপন্যাসটির একেকটি চ্যাপ্টারে চ্যাপ্টারে থাকে সন্তান, স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন আরো কতশত না বলা ঝামেলা, যা পোহান দিনের পর দিন।
আমি পরিবারের ছোট মেয়ে আমার অনেক মজার ঘটনা আছে আমার বাবার সাথে। ছোট হওয়ায় আমি যেমন আদর পেয়েছি তেমনি শাসনও। বরাবরই বাবাকে আমি ভীষণ ভয় পাই। তবুও আবদারের কমতি থাকে না তার কাছে। বাবাও সবসময় চেষ্টা করেন সাধ্য অনুযায়ী সে আবদার পূরণ করার। আমি ছোটবেলায় ভীষণ চঞ্চল ছিলাম। সারাদিন এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে আমার পায়ে অনেক ব্যথা হত। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ছটফট করতাম ব্যথায়। তখন বাবা আমার পা চেপে দিতেন যতক্ষণ আমি না ঘুমাতাম। মাঝে মাঝে কোলে নিয়ে আমাকে পায়চারি করতেন তিনি। যেন আমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাই। আমায় কাঁধে, পিঠে চড়াতেন মাঝে মাঝে।
এতো এতো আদর, মধুর মুহূর্তের পরেও এই মানুষটার প্রতি আমার ভীষণ রাগ-ক্ষোভ জন্মে। কারণ বাবা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আমাকে ভীষণ শাসনের মধ্যে রাখেন। কিন্তু এখন ঠিকই উপলব্ধি করি বাবারা শাসন না করলে সন্তান কখনো মানুষের মত মানুষ হতে পারে না।


আমার জীবনে আমার বাবা একটি অন্যতম অনুপ্রেরণার নাম, শৈশবের খেলার সাথী আমার। শীতকালে ভোরে উঠে আমি বাবার সাথে ব্যাডমিন্টন খেলতাম। আমি কখনোই খুব মেধাবী ছিলাম না। মিডল ক্লাসের শিক্ষার্থী বলা যায়। কিন্তু আমার বাবা কখনোই বলতেন না এ প্লাস না পেলে চলবেই না। বাবা সবসময় বলতেন, তোমার ব্রেন যতটুকু নিতে পারে ততটুকুই করো। ‘কোন ভয় নেই মা। সবসময় মনে রাখবে, তুমি যা পারো বা জানো তা ঐ পরীক্ষা কক্ষের কেউ জানে না।’ বাবা আমাকে যেকোনো পরীক্ষায় যাওয়ার আগে এভাবে এসে প্রাণবন্ত করে রাখতেন। এই কথাটা আমায় ভীষণ অনুপ্রেরণা দিতো।
বাবাকে নিয়ে লিখে শেষ করা যাবে না। ভালো থাকুন যে বাবারা বেঁচে আছেন, তাদের জন্য দোয়া। যারা বাবাকে হারিয়ে ফেলেছেন, তাদের জন্যেও দোয়া। সে বাবারা ভালো থাকুন অপারে। বাবাদের সাথে মন খুলে কথা হোক, হাসিমুখে জড়িয়ে ধরা হোক, মুখ ফুটে বলা হোক ‘ভালোবাসি বাবা।’

লেখকঃ ইসরাত জাহান তাহমিনা

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *