মুবাহাসা (২য় পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)
মুসাল্লা উঠিয়ে নাও
ইমাম আযম আবু হানিফা র.-এর আদত মুবারক ছিল যখন তিনি শাগরিদকে অভাবগ্রস্ত দেখতেন তখন তিনি দরসের মজলিস শেষ হওয়ার পর তাকে বসার নির্দেশ দিতেন। মজলিসের সকল চলে যাওয়ার পর তাকে সাহায্য করতেন।
একদিন এক ছাত্রের পরনে পুরাতন ছিড়া জামা দেখতে পেলেন। আদত মুবারক অনুযায়ী তাকে বসার নির্দেশ দিলেন। লোকজন চলে যাওয়ার পর স্বীয় শাগরিদকে উদ্দেশ্য করে বলেন-
ইমাম আযম র. : মুসাল্লা উঠিয়ে নাও। নিচে টাকা আছে। তা দিয়ে তোমার অবস্থার পরিবর্তন করে নাও।
শাগরিদ : হুজুর! আমি ধনী মানুষ। আমার টাকা পয়সার প্রয়োজন নেই। সুখেই জীবন-যাপন করছি।
ইমাম আযম র. : তোমার কী এ হাদীস জানা নেই। যাতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান-‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহপাক স্বীয় বান্দাহর মধ্যে তাঁর নিয়ামতের প্রভাব দেখতে ভালোবাসেন।’ (মুসতাদরাকে হাকিম)
হে ত্বালিব! তুমি যদি ধনী মানুষ হয়ে থাক তাহলে তোমার অবস্থাকে পরিবর্তন করো। তাতে তোমার বন্ধু-বান্ধব তোমাকে দেখে দুঃখ প্রকাশ করবে না।
দেখুন! আমরা উপর্যুক্ত ঘটনা থেকে অবগত হলাম যে, মহান আল্লাহপাক যাকে যে পরিমাণ নিয়ামত দান করেছেন তার যথাযথ ব্যবহার করা মহান আল্লাহ পাকের নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার নামান্তর এবং মহান আল্লাহ পাকের ভালোবাসা লাভের উপায়।

রফয়ে ইয়াদাইন
একবার ইমাম আজম আবু হানিফা র. ও ইমাম আওযায়ী র. এর মধ্যে রফয়ে ইয়াদাইন তথা নামাজের মধ্যে বারবার উভয় হাত উত্তোলনের ব্যাপারে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। নিম্নে তা উল্লেখিত হল-
ইমাম আওযায়ী র. : এ ব্যাপারে কী কারণ রয়েছে যে আপনি রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করেন না?
ইমাম আজম র. : এ জন্য যে এ ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ কোন হাদীস বর্ণিত নেই।
ইমাম আওযায়ী র. : আপনি কিভাবে বলেন যে, এ ব্যাপারে কোন সহিহ হাদীস বর্ণিত নেই। অথচ ইমাম যুহরি সালিব থেকে এবং সালিব স্বীয় পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ শুরু করে যখন রুকুতে যেতেন এবং রুকু থেকে মাথা উত্তোলন করতেন তখন রফয়ে ইয়াদাইন করতেন।
ইমাম আজম র. : আমরা হাম্মাদ থেকে হাম্মাদ ইব্রাহীম থেকে এবং ইব্রাহীম আল কামা এবং আসওয়াদ থেকে আবু আলকামা এবং আসওয়াদ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর মাধ্যমে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল নকল করেন যে-হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম শুধুমাত্র নামাজের শুরুতে রফয়ে ইয়াদাইন করতেন। তারপরে আর রফয়ে ইয়াদাইন করতেন না।
ইমাম আওযায়ী র. : আমি আপনাকে যুহরি সালিম থেকে সালিম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে এ রেওয়াতেরই কাছাকাছি। আর আপনি হাম্মাদ ইব্রাহীম থেকে এ রেওয়াতে বর্ণনা করছেন।


ইমাম আজম র. : হাম্মাদ যুহুরি থেকে অধিকতর ফকিহ। আর ইব্রাহীম সালিম থেকে অধিকতর ফকিহ। আল কামা ইলমে ফিকাহের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে কম জ্ঞানী নহে। যদিও ইবনে ওমর (রা.) সাহাবীর মর্যাদায় ভূষিত। আর আসওয়াদও একজন মর্যাদাবান বুযুর্গ। আর আব্দুল্লাহ তো আব্দুল্লাহ বটে।
ইমাম আজম র. এর এমন উত্তরে ইমাম আওযায়ী র. নিরুত্তর হয়ে গেলেন। (তারিকুল বুখারী) (শেখ আহমদ আলী সাহারানপুরী র.

ইমামের পেছনে ক্বেরাত
একদিন বহু লোকের একটি কাফেলা ইমাম আযম আবু হানিফা র. এর দরবারে হাযির হল নামাযের মধ্যে ইমাম সাহেবের পিছনে কেরাত পড়ার ব্যাপারে বিতর্ক করার জন্য।
কাফেলা : আমরা আপনার সাথে ইমাম সাহেবের পিছনে কেরাত পড়ার ব্যাপারে বিতর্ক করতে চাই।
ইমাম আযম র. : ঠিক আছে। তবে কথা হল আমি এত মানুষের সাথে একই সময়ে কথা বলতে পারব না। এমনকি সকলের কথার উত্তরও দিতে পারব না। আপনারা আপনাদের মধ্য থেকে একজন জ্ঞানী ব্যক্তিকে ঠিক করে নেন। যিনি একটাই আমার সাথে কথা বলবেন।
কাফেলা : আমরা আমাদের মধ্য থেকে একজন বড় আলিম নির্বাচিত করলাম। যিনি আপনার সাথে কথা বলবেন।
ইমাম আযম র. : আপনাদের নির্বাচিত এ আলিম সাহেব যে কথাবার্তা বলবেন তা কী আপনাদের পক্ষ থেকে হবে?
কাফেলা : হ্যাঁ। তাঁর কথাবার্তা আমাদেরই কথাবার্তার। ইহার উপর আমরা ঐকমত।

(চলবে)

১ম পর্ব

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *