ফরমালিনের সুবিধা
১. যারা হাড় কিপটে টাইপের মানুষ তারা সব ধরণের ফলমূল,মাছ,মাংস কেনা থেকে বিরত থাকুন আর আর যেহেতু ফরমালিন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সুতরাং নিজেকে এবং পরিবারের অন্যদের এই বলে সান্ত্বনা দিন যে-‘নফস্ দমন করো,ফরমালিন খাওয়া বন্ধ কর।’ এতে আপনার পরম যত্মে গড়ে তোলা টাকার পাহাড় ধসে না গিয়ে সেখানে সবুজ ঘাস গজাতে পারে।
২. যারা গ্রামকে ভুলেই গেছেন শহরের বাতাস পাকাপোক্ত ভাবে গায়ে লাগার পর থেকে তারা অন্তত নিজের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ফরমালিন মুক্ত ফলমূল, শাকসবজি খাওয়ার জন্য গ্রামের বাড়ি ছুটবেন। এতে গ্রামের সাথে আপনার হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক পুনরুদ্ধারও হতে পারে।
৩. ফরমালিন আছে বলেই আমরা সারা বছর সব ধরণের ফলমূলের স্বাদ নিতে পারি। ফলে সারা বছর আমরা সবাই থাকি রসালো মনের মানুষ হয়ে। যদি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হয় নিঃসন্দেহে ফরমালিন একুশ শতকের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। তাই ফরমালিন প্রয়োগকারীদের ভৎসনা না দিয়ে গোল্ড মেডেল দেওয়া উচিত।
৪. যারা চরম মাত্রায় অলস, নিজের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত উদাসীন ফরমালিন তাদের জন্য হতে পারে আশীর্বাদ। তারা মাসের বেতন হাতে পাওয়া মাত্রই সে টাকায় ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস কিনে সারা বছর রিল্যাক্সে বসে বসে শুয়ে শুয়ে যেমন ইচ্ছা তেমন ভাবে খেতে পারবেন।
৫.ফরমালিন যেহেতু অধিক উপকারী বস্তু-কাজেই শুধু ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংসে এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ না রেখে বিষয়টি নিয়ে প্রগতিশীল চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে। যেহেতু আমরা মানুষেরা নানা সমস্যায় জর্জরিত এবং ক্রমাগত প্রেমে ছ্যাকা খাওয়ার ফলে মন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কাজেই এখন থেকে মনেও ফরমালিন প্রয়োগের উদ্দোগ গ্রহণ করা উচিত।
জ্যামের সুবিধা
১. যারা রাতভর ফেসবুকে পছন্দের আইডির মানুষটি ছেলে না মেয়ে না জেনেই শুধুমাত্র অ্যাবাউট এ ফিমেইল আর রিলেশনশিপ সিংগেল দেখে চ্যাট করতে করতে ঘুমের তেরটা বাজায় তারা জ্যামের আশীর্বাদে স্কুল, কলেজ কিংবা অফিস যাওয়ার পথে এবং ফেরার পথে দুই + দুই = চার ঘণ্টা মনের সুখে ঘুমিয়ে নিতে পারেন।
২. জ্যামকে মাথায় রেখে আপনি প্রত্যক্ষ ভাবে মানব সেবা এবং পরোক্ষ ভাবে সমাজ সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারেন। গ্রামের বাড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণে আম, জাম, বড়ই, তেতুলিনের আচার বানিয়ে সব সময় নিজের সাথে আচারের বোতল গুলো রাখুন। যখন দেখবেন বিশাল জ্যামে পড়ে কেউ অস্থির হয়ে বলছে-‘আমার জ্যাম ভালো লাগেনা।’ তৎক্ষণাৎ ঐ ব্যক্তির মুখের সামনে আচারের বোতল তুলে ধরে বলুন-জ্যাম ভালো লাগেনা তাতে কি এই ধরেন জেলী খান।
৩. যারা বলেন এ দেশের মানুষ বোকা, মূর্খ, গর্ধব তাদের ফর্সা মুখে ঝামা ঘষে কালো করে দেওয়ার জন্য আপনি ব্যক্তিগত উদ্দোগে শুরু করতে পারেন জ্যাম বিষয়ক রচনা ও সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযোগিতা যেখানে পুরস্কার হিসেবে থাকবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জীবন থেকে জ্যামের ওপর বরাদ্দকৃত সময়ের গবেষণামূলক গ্রন্থ। দেখবেন সবাই মনের এত মাধুরী মিশিয়ে রচনা লিখবে যে আপনি কাকে রেখে কাকে প্রথম ঘোষণা করবেন একদম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাবেন।
৪. নানা কর্মব্যস্ততায় থাকার কারণে আমরা কেউ আর আজকাল কারো খোঁজ-খবর নিতে পারিনা। এক্ষেত্রে জ্যাম হতে পার মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো। জ্যামে আটকে থাকা সময় টুকু আশে পাশে মানুষ গুলোর সাথে সৌজন্যমূলক কথাবার্তায় কাটিয়ে দিতে পারেন। তবে অতিরিক্ত সৌজন্য ভুলেও দেখাতে যাবেন না। কথায় আছে না-অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।
৫. একজন সফল রাজনীতিবিদ হওয়ার ইচ্ছা যাদের জন্মের পর থেকেই তারা জ্যামকে কাজে লাগিয়ে মাথার ঘাম পায়ে না ফেলে রাস্তার ওপর ফেলে মাইক নিয়ে উচ্চস্বরে সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তীব্র প্রশংসনায় মেতে উঠুন। দেখবেন বিভিন্ন চ্যানেলে সরাসরি প্রচারের ফলে আপনি খুব সহজেই উক্ত মন্ত্রণালয়ের চোখে পড়ে যাবেন। এবার আপনার রাজনীতিবিদ হওয়া ঠ্যাকায় কে।