রঙ্-বাহারি

বাণী চিরন্তন

রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি বলেন-

আমি যখন আযান শুনি সঙ্গে সঙ্গে কেয়ামতের সিংগা বাজানোর কথা মনে পড়ে যায়। যখন তুষারপাত দেখি তখনো কল্পনা করি শেষ বিচারের দিনে এভাবেই আমাদের আমলনামা গুলো শূন্যে ভাসতে থাকবে। এমনকি যখন একসঙ্গে কোথাও অসংখ্য পোকা দেখি তখনও আমার মনে পড়ে যায় হাশরের মাঠে এভাবেই অসংখ্য মানুষ গিজগিজ করবে। এভাবেই প্রকৃতির প্রতিটি জিনিস আমাকে কেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

সিজদার মাহাত্ম্য 

প্রখ্যাত তাবেয়ী আহনাফ ইবনুল কায়েস রাহমাতুল্লাহি আলাইহি একদিন ভোর বেলায় মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করতে গিয়ে দেখেন একজন ব্যক্তি সারারাত নামাজ পড়েছেন, যতক্ষ্ণ না নামাজ পড়েছেন তার চেয়ে বেশি সিজদাই দিয়েছেন। একেকটি সিজদায় অনেক বেশি সময় নিয়েছেন, এতটা সময় মাঝে মাঝে মনে হতো তিনি কি সিজদায় মধ্যে ইন্তেকাল করেছেন? তখন হযরত আহনাফের মধ্যে এই প্রশ্ন হল, এতটা সময় সিজদায় থাকলে কোন রাকাতের সিজদায় আছেন অনেক সময় তাও তো ভুলে যাওয়ার কথা।

এসব নানা কথা ভাবতে ভাবতে তিনি সেই সেজদারত মানুষটির কাছে গেলেন। এর পরেরবার যখন তার নামাজ শেষ হলো তখন হযরত আহনাফ রহমতুল্লাহি তাকে প্রশ্ন করেন, আপনি যে এত লম্বা সিজদা দিচ্ছেন এতে রাকাতের হিসাব করতে ভুল হয়ে যায় না?

 সেই ব্যক্তি উত্তর দিলেন আমি ভুল করলেও আমার রবের তো কখনো ভুল হয় না, আমি না জানলেও আমার রব সব জানেন।

এরপরই সেই ব্যক্তি বললেন, আমার প্রিয়তম আমাকে বলেছেন… এতটুকু বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন। বেশ কিছু সময় পর আবারো বললেন, আমার প্রিয়তম আমাকে বলেছেন…। আবারো তিনি কথা না বলে কান্না করতে শুরু করলেন।

হযরত আহনাফ রহমতুল্লাহি বুঝতে পারছিলেন না সেই ব্যক্তি তার কোন প্রিয়তমের কথা বলছে কিংবা তার মনে এমন কোন কষ্ট আছে কিনা যার জন্য এতটা কান্না করছেন। তাই তিনি তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকলে এবার সেই ব্যক্তি যেন একটু শক্ত হলেন। এরপর বললেন,

আমার প্রিয়তম মানুষ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি একটিবারও সিজদা দিল আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা অনেকগুণ বৃদ্ধি পেল। আর যখনই কেউ সিজদা দিল তার আমলনামা থেকে একটি করে গুনাহ মাফ হয়। একথা শুনে হযরত আহনাফ রহমতুল্লাহি চমকে উঠলেন। তিনি বললেন আপনি কে?

সেই ব্যক্তি উত্তর দিলেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী হযরত আবুজার গিফারি। (সুবহানাল্লাহ)

বুক রিভিউঃ

‘আল গিবতাতুন নাযির ফি তারজামিশ শায়খ আব্দিল কাদির (রহ.)’

ঢাকার স্বণামধন্য প্রকাশনী ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে কিতাবটি। না, ঠিক এ কিতাবটি নয়; প্রকাশিত হয়েছে আরবী ভাষায় লিখিত মুল্যবান এ গ্রন্থের বাংলা সংস্করণ “আব্দুল কাদির জিলানীঃ জীবনদর্শন” নামক মুল্যবান বই। বইটির মুল আরবি কপির লেখক জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও মুবাল্লিগ আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ.। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থটির ভাষান্তর করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আব্দুল্লাহ যোবায়ের। তিনি ইতোমধ্যে অনুবাদ করেছেন “রিসালায়ে কুশায়রিয়্যাহ”, “রিসালায়ে নুর”, “ফুতুহুল গায়ব” সহ মুল্যবান কিছু গ্রন্থ।

আব্দুল কাদির জিলানী রহ. কে নিয়ে লিখিত অনেক কিতাব পাওয়া যায় লাইব্রেরিগুলোতে, যার অধিকাংশ বইগুলোতেই থাকে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ির ছড়াছড়ি। কাল্পনিক গাল-গল্পে ভরপুর বইগুলো পড়লে যে কেউই বিভ্রান্ত হয় নিমিষেই। এর অন্যতম আরেকটি কারণ হলো লেখক যারা থাকেন তাদের অধিকাংশই অখ্যাত। যাদের গ্রহনযোগ্যতা বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। 

পাশাপাশি অদক্ষ এবং নামকাওয়াস্তে কিছু আলিম ছাহেবগণ আব্দুল কাদির জিলানী রহ. এর জীবনে বিষয়ে এমন এমন উদ্ভট তথ্য আমাদের সামনে পেশ করেন যা বিশ্বাস করাটা কঠিন হয়ে পরে। অনেক সময় আব্দুল কাদির জিলানী  রহ.  কে নবীদের সমান করে ফেলেন তারা।

যাহোক, এ কিতাবটি সম্পুর্ণ তার বিপরীত। তার আগে একটি বিষয় খোলাসা করা প্রয়োজন তাহলো, আল্লামা আসকালানী রহ. এর কিছু জীবনী গ্রন্থে এই কিতাবটির উল্লেখ না থাকায় এ কিতাবের গ্রহনযোগ্যতা নিয়েও কিছু সন্দেহ কাজ করবে অনেকের মনে। এই সন্দেহ দূর করার জন্য অর্থাৎ এ কিতাবটি যে, সত্যিই আসকালানী রহ. লিখিত সে বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন অনুবাদক। আমার কাছে যা অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে মজবুত হাতিয়ার বলে মনে হয়েছে। 

বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী রহ. এর যতগুলো জীবনী আমার পড়া হয়েছে সেগুলো থেকে আমার এই কিতাবটি বেশি ফায়দাজনক মনে হয়েছে। খুব মাপ-যোগ করে তথ্যগুলো উপস্থাপনের পাশাপাশি এর ঐতিহাসিক ভিত্তির ব্যাপারে অনুবাদকের মুন্সিয়ানা প্রশংসনীয়। 

যারা বিভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে প্রকৃত ইতিহাস সন্ধানে কয়েকধাপ এগিয়ে তাদের জন্যে কিতাবটি অনেক মুল্যবান। 

আমি অনলাইন বুকশপ ‘রকমারী’ থেকে বইটি সংগ্রহ করেছি। 

আজই সংগ্রহ করুন বইটি। অনেক বিভ্রান্তি কাটবে বইটি দ্বারা।

★শিক্ষণীয় গল্প★

বিয়ে পরবর্তী মা-মেয়ের একটি শিক্ষণীয় কথোপকথন। 

মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর যখন সে প্রথমবার

বাবার বাড়ি আসে তখন মা খুব আগ্রহ ভরে

জানতে চায় যে ঐ বাড়িতে তার কেমন

লেগেছে ?

মেয়ে জবাবে বলে-

“ আমার ওখানে ভালো লাগেনা।

মানুষগুলো কেমন যেন। পরিবেশটাও

আমার ভালো লাগছেনা”।

মেয়ের ভেতর এক ধরনের হতাশা দেখতে

পায় তার মা। দেখতে দেখতে বেশ

কিছুদিন কেটে যায়। মেয়ের চলে যাবার

সময় চলে আসে। চলে যাবার ঠিক আগের

দিন মা তার মেয়েকে নিয়ে রান্না ঘরে

প্রবেশ করেন। মা হাড়িতে পানি দেন

এবং তা গরম করতে থাকেন। একসময় যখন

তা ফুটতে থাকে তখন মা হাড়িতে গাজর,

ডিম আর কফির বিন দেন। এভাবে বিশ

মিনিট পর মা আগুন নিভিয়ে ফেলেন।

একটি বাটিতে গাজর, ডিম এবং কফির

বিন নামিয়ে রাখেন। এবার তিনি

মেয়েকে উদ্দেশ্য

করে বলেন-

“তুমি এখান থেকে কি বুঝতে পারলে

আমাকে বল” ?

মেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলে-

“আমি দেখলাম তুমি গাজর, ডিম আর

কফির বিন সিদ্ধ করলে মাত্র”।

মেয়ের কথা শুনে মা বললেন-

“হ্যাঁ, তুমি ঠিকই দেখেছ। তবে তুমি কি

আরও কিছু লক্ষ্য করনি?”

মেয়ে বলে-

“ না- মা ”

মা বলে-

“গাজর মোটামুটি শক্ত ধরনের, ডিম খুব

হালকা আর কফির বিন খুবই শক্ত। কিন্তু

যখন এগুলিকে গরম পানিতে রাখা হল

তখন তিনটি জিনিসের তিন রকম অবস্থা

হল। গাজর খুব নরম হয়ে গেল, আর ডিম শক্ত

হয়ে গেল আর কফির বিন সুন্দর ঘ্রান আর

মিষ্টি স্বাদে পানিতে মিশে গেল”।

মা এবার দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যেন

অনেক অতীতে চলে যেতে চাইলেন।

তারপর আবার বাস্তবে ফিরে এসে

মেয়ের দিকে ফিরে বললেন-

“আমি তোমাকে এখন যে কথাগুলি বলব,

আমার মাও ঠিক এইভাবেই আমাকে এ

কথাগুলি বলেছিল। আমি জানিনা

কথাগুলি তোমার কতটুকু উপকারে আসবে,

তবে আমার জীবনকে অনেক প্রভাবিত

করেছিল”।

মা কিছুক্ষন বিরতি দিয়ে বলতে

লাগলেন-

“তুমি যদি তোমার স্বামীর বাড়িতে

নিজেকে কঠিনভাবে উপস্থাপন কর, তবে

প্রতিকূল পরিবেশের সাথে তোমার

সংঘর্ষ হবে- তোমাকে দুর্বল করে ঠিক

গাজরের মতই নরম করে ফেলবে- তোমার

ব্যক্তিত্বকে ভেঙে ফেলবে। যদি তুমি

নিজেকে নরম-ভঙ্গুর করে উপস্থাপন কর

তবে প্রতিকূল পরিবেশ তোমাকে কব্জা

করে ফেলবে, আঘাতের পর আঘাত এসে

তোমার হৃদয়কে একসময় কঠিন করে ফেলবে

ঠিক ডিমের মত। কিন্তু তুমি যদি তোমার

ভালবাসা দিয়ে নিজেকে প্রতিকূল

পরিবেশের সাথে মিশিয়ে দিয়ে তার

অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পার তবে

পরিবেশ সুন্দর হয়ে উঠবে ঠিক যেমন কফির

বিন গরম পানির সাথে নিজেকে

মিশিয়ে দিয়ে পানিকে সুস্বাদু আর

চারপাশকে মিষ্টি ঘ্রানে ভরিয়ে

দিয়েছে”।

পরের দিন যখন মেয়েটি তার স্বামীর

বাড়িতে যাচ্ছিল তখন তার ভিতর এক

আশ্চর্য শান্ত ভাব আর এক দৃঢ় প্রত্যয়

প্রকাশ পাচ্ছিল।

★কৌতুক★

ছোট্ট অন্তুকে ক্লাসে তার ম্যাম জিজ্ঞাস করল, বলত আমি তোমাকে একটা আপেল , আরেকটা আপেল , আরেকটা আপেল দিলাম। তাহলে তোমার কয়টা আপেল হল।

চারটা ম্যাম ।

ম্যাম ভাবলেন অন্তু হয়ত শুনতে একটু গড়বড় করে ফেলেছে। তাই তিনি আবার বললেন, ভাল করে শুনে বল অন্তু। আমি তোমাকে একটা আপেল , আরেকটা আপেল এবং আরেকটা আপেল দিলাম। তাহলে তোমার কয়টা আপেল হল।

অন্তুও একটু ভেবে আবারো বলল , চারটা ম্যাম । কিন্তু সে দেখল তাঁর ম্যামের মনটা খারাপ হয়ে গেল। সেও বুঝতে পারছে না , কি ভুল সে করছে।

ম্যাম অন্তুর কাছ থেকে এরকম উত্তর আশা করে নাই। তিনি ভাবলেন, অন্তুর হয়ত আপেল পছন্দ না , তাই সে ভুলভাল উত্তর দিচ্ছে। তাই তিনি এবার ভাবলেন আপেলের বদলে অন্য কিছু বলবেন। তিনি বললেন ,আমি তোমাকে একটা লিচু , আরেকটা লিচু এবং আরেকটা লিচু দিলাম। তাহলে তোমার কয়টা লিচু হল।

অন্তু এবার বলল, তিনটা ম্যাম।

এইতো ঠিক আছে। ভেরি গুড। তাহলে আপেলের বেলায় তুমি চারটা বলছিলে কেন?

বারে! আমি তো ঠিকই বলেছি। বলতে বলতে সে ব্যাগের চেইন খুলে একটা আপেল বের করল যেটা তার মা আজকে টিফিন হিসাবে দিয়ে দিয়েছে। সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না , তার ভুল কোথায়?

Comments

comments

About

Check Also

রঙ্-বাহারি

বুক রিভিউ বালাই হাওরের কান্না : কান্না থামে না যে বই পড়লে আল্লামা ইমাদ উদ্দিন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *