মসজিদে মহিলাদের যেতে বাধা কোথায়? (২য় পর্ব)

(১ম পর্বের পর)
যদি মসজিদে জামাআতে শরীক হওয়া মহিলাদের দায়িত্ব হতো তাহলে নবী (সা.) মহিলাদেরকেও উক্ত হাদিসে ধিক্কার দিতেন। ৯. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত অন্য একখানা হাদিসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন-ঐ মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! আমার ইচ্ছা হয় জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দেই। এরপর নামাজ কায়েম করার নির্দেশ দেই। এরপর আজান দেয়া হবে এবং এক ব্যক্তিকে ইমামতি করার নির্দেশ দিয়ে আমি ঐ সমস্ত পুরুষদের কাছে যাই ও তাদের (যারা নামাজের জামাআতে শরীক হয়নি) ঘরগুলো জ্বালিয়ে দেই’ (বুখারী)। উক্ত হাদীসে ‘পুরুষদের কাছে যাই’ দ্বারা বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, মহিলারা উক্ত হাদিসের হুকুমের আওতায় নয়। অর্থাৎ মসজিদে জামাআতে শরীক হওয়া মহিলাদের দায়িত্ব নয়। ১০. হজরত ওমর (রা.) ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। তারই পছন্দের ভিত্তিতে আল্লাহপাক ইসলামের অনেক বিধান জারি করেছেন। যেমন-পর্দার বিধান, মাকামে ইব্রাহীমকে নামাজের স্থান বানানো ইত্যাদি। বিশ রাকাত তারাবীর নামাজের শাশ্বত বিধানটি জারি করেছিলেন সেই হজরত ওমর (রা.)। প্রিয় নবীর সেই প্রিয় সাহাবী হজরত ওমর (রা.) মহিলাদের মসজিদে যাওয়াকে কখনও পছন্দ করতেন না (বুখারী ও মুসলিম)।
মহিলাদের জন্য নিজ ঘরে নামাজ আদায় করাই উত্তম। মহিলাদের মসজিদে যাবার বিষয়ে যেসব দলিল রয়েছে সেসব দলিলের জবাবে আমি বলব-
১. মহিলাদের মসজিদে গমন জায়েজ বিষয়ক হাদিসগুলো ইসলামের প্রথম যুগের। নবী (সা.) মহিলাদেরকে নামাজের প্রতি উৎসাহিত করার জন্যই মসজিদে যাবার অনুমতি দিয়েছিলেন। অথবা আজকের মত তৎকালে স্থানে স্থানে মক্তব, মসজিদ ও মাদ্রাসা ছিল না। নামাজের নিয়ম-নীতি শিক্ষার জন্য নবী (সা.) মহিলাদেরকে মসজিদে যাবার অনুমতি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মহিলারা যখন নামাজের নিয়ম-নীতি ও ইসলামের অনেক বিধান জানতে পারল তখন নবী (সা.) বললেন-‘মহিলাদের জন্য ঘরে নামাজ পড়াই উত্তম।’ অথবা পুরুষ-মহিলার অবাধ সমাগমে মসজিদে ফিতনার সৃষ্টি হবে বিধায় নবী (সা.) বললেন-‘মহিলাদের জন্য নিজ ঘরগুলো হল তাদের জন্য উত্তম মসজিদ’ (সহীহ ইবনে খুজাইমাহ)।
মসজিদে মহিলাদের যেতে বাধা কোথায়? (২য় পর্ব)

২. মহিলাদের মসজিদে যাবার পক্ষে-বিপক্ষে হাদিস রয়েছে। উসূলের নিয়ম হল-কোন একটি বিষয়ে মুজতাহিদ ইমামগণের মতামত মেনে নিতে হবে। মুজতাহিদ ইমামগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম, ইমামে আজম, ইমাম আবু হানিফা (র.) ও তাঁর অনুসারী মুজতাহিদ ইমামগণের মতে-‘মহিলাদের মসজিদে যাওয়া জায়েজ নেই। মহিলাদের জন্য নিজ নিজ ঘরে নামাজ আদায় করাই উত্তম’। ইমাম শাফিয়ী, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র.) এর মতে-শর্তসাপেক্ষে মহিলারা মসজিদে যেতে পারবে। অতএব মহিলাদের পক্ষে শর্ত পালন করা কি সম্ভব? যদি সম্ভব না হয় তাহলে মহিলাদের জন্য ঘরে নামাজ পড়াই উত্তম।
৩. মহানবী (সা.) বলেছেন-‘আমার উম্মতের মধ্যে পুরুষের জন্য নারী জাতি অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোনো ফিতনা আমি রেখে যাচ্ছিনা’ (বুখারী)। মহিলা-পুরুষ একত্র হলে তো তাদের মধ্যে আকর্ষণ-বিকর্ষণ সৃষ্টি হবেই। আর এই আকর্ষণ-বিকর্ষণ থেকেই সকল ফিতনার সূত্রপাত হয়। ফিতনা সৃষ্টির ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে-‘ফিতনা সৃষ্টি হত্যা অপেক্ষা গুরুতর’ (সূরা বাকারা : আয়াত-১৯১)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-‘ফিতনা হত্যা অপেক্ষা ভীষণ অন্যায়’ (সূরা বাকারা : আয়াত-২১৭)। ফিতনার চেয়ে জঘন্য অপরাধ আর নেই। আমাদের সমাজে যতসব জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয় সব অপরাধ নারী-পুরুষ ঘটিত। আর তা সংঘটিত হয় একমাত্র নারী-পুরুষের অবাধ চলাফেরা করার কারণেই। পুরুষ ও মহিলা একত্র হলে ফিতনা সৃষ্টি হবে, হবেই। বিশ্বের প্রতাপশালী দেশগুলোতে ইভটিজিং, নারীদের হয়রানি বন্ধে সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ণ ও প্রয়োগ করেও ইভটিজিং ও যৌন-হয়রানির মত জঘন্য অপরাধ বন্ধ করা মোটেই সম্ভব হচ্ছে না। বরং দিন দিন এসব অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ঘর। শান্তির একমাত্র স্থান হচ্ছে মসজিদ। এই শান্তির স্থান মসজিদে ফিতনা বা অশান্তির কোনো ধরণের উপসর্গ তৈরী করা কোনোক্রমেই সমীচিন নয়। নারী-পুরুষ একত্রিত হলে মসজিদ ফিতনার আড্ডাখানায় পরিণত হয়ে যাবে। যা কখনও কাম্য নয়। অতএব মহিলাদের জন্য নিজ ঘরে নামাজ আদায় করাই অতি উত্তম।
৪. জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। পক্ষান্তরে পর্দা রক্ষা করা, নিরাপদে থাকা ও ফিতনামুক্ত থাকা সব সময়ই ফরজ। সুন্নত আদায় করতে গিয়ে কখনও ফরজ নষ্ট করা যাবে না। এছাড়া হাদিসে জামাআতে নামাজের জন্য পুরুষদেরকে যেভাবে তাগিদ দেয়া হয়েছে মহিলাদের সেভাবে তাগিদ দেয়া হয়নি। নামাজের জামাতে অনুপস্থিতির কারণে পুরুষদেরকে হাদিসে যেভাবে ধমকি দেয়া হয়েছে মহিলাদেরকে সেই কারণে কোনো হাদিসের কোথাও ধমকি দেয়া হয়নি। এর দ্বারা দিবালোকের ন্যায় এটাই প্রমাণিত হয়-মহিলাদের জন্য মসজিদে নামাজের জামাআতে শরীক হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
ইসলামের প্রথম যুগে মহিলাদেরকে মসজিদে যাবার অনুমতি দেয়া হলেও পরবর্তীতে ‘মহিলাদের জন্য নিজ ঘরে নামাজ আদায় করা উত্তম’ বলে হাদিসে ঘোষণা করা হয়েছে। সকল ফতোয়ার কিতাবাদীতেও আছে- ‘মহিলাদের জন্য নিজ ঘরে নামাজ আদায় করা উত্তম।’ অতএব মহিলাদের নিজ নিজ ঘরে নামাজ আদায় করাই উচিত।
(১ম পর্ব)

Comments

comments

About

Check Also

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার মূর্তপ্রতীক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

ইদানিংকালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। জাতি সংঘ সহ সারাবিশ্বের সব দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *