রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম কেন প্রয়োজন?

সংবিধান। প্রত্যেকটি দেশে তার রাষ্ট্রীয় সীমানা, রাষ্ট্রীয় নীতি, রাষ্ট্রভাষা, রাষ্ট্রধর্ম ইত্যাদি দেশের সংবিধানে উল্লেখ থাকে। ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সংবিধানেও বিদ্যমান। কি হবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম? স্বাধীনতার পর সংবিধানের মূলনীতিতে “ধর্ম নিরপেক্ষতা” বিদ্যমান ছিল। ১৯৮৮ সালের ২০ জুলাই ৪র্থ জাতীয় সংসদে ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম “ইসলাম” ঘোষণা করা হয়। সংবিধানের ২ (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয় ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সম অধিকার নিশ্চিত করিবেন’।
যদি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম না হয় তাহলে কি হবে রাষ্ট্রধর্ম? ফিরে যাবো আগের সংবিধানে। অর্থাৎ-ধর্মনিরপেক্ষতা। এটি এমন একটি দর্শন যা সকল প্রকার ধর্মদর্শনকে নাকচ করে দেয়। এমন এক মতবাদ যার মতে রাষ্ট্র, নৈতিকতা, শিক্ষা ইত্যাদি সবকিছু ধর্মমুক্ত থাকবে। অন্যভাবে বলা যায়-“সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা এমন একটি সামাজিক আন্দোলনের নাম, যা মানুষকে পরকাল থেকে মুখ ফিরিয়ে শুধু দুনিয়াবী জীবনের প্রতি নির্দেশ করে। যা মধ্যযুগে (শেষের দিকে) ধার্মিক ব্যক্তির স্বীয় কর্মের প্রতি এবং ঈশ্বর ও পরকালে বিশ্বাসী ব্যক্তির প্রতি তাচ্ছিল্যের প্রবণতা তীব্রভাবে সূচনা করে”।
প্রত্যেক মানুষেরই কোনো না কোনো ধর্ম আছে। হোক সে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, চিরন্তনবাদী, বিজ্ঞানবাদী, বাহাই, শিন্তো, বা অন্য কোনো ধর্মের। পৃথিবীতে প্রায় ৪৩,০০০টি ধর্ম রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এটিও একটি ধর্ম। যা মতবাদ বা আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এর নীতি পদ্ধতি যারা অনুসরণ করে নিঃসন্দেহে তারা এর অনুসারী। তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ধর্মনিরপেক্ষ হলো কী করে? ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের আরো অনেক নাম রয়েছে। বস্তুবাদী, জড়বাদী, অনাধ্যাতœবাদী ও সন্দেহবাদী। সমগ্র পৃথিবীতে এদের সংখ্যা ১০০ কোটি ১০ লাখ। ধর্মনিরপেক্ষতা এটাও একটা মতবাদ। যে মতবাদ মানুষের ধর্মীয় জীবন ও বৈষয়িক জীবনকে ধর্ম থেকে করেছে বিচ্ছিন্ন। অথচ ধর্ম ও মানুষের বৈষয়িক জীবন আলাদা নয়। ইসলাম ধর্ম শুধু ধর্ম নয় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এখানে একজন মানুষের সর্ববিষয়ের বিশদালোচনা করা হয়েছে। মানুষের জীবনের কোনো অংশকে বাদ দেয়া হয়নি। এই পূর্ণাঙ্গতা মহান আল্লাহর ঘোষণার মাধ্যমেই প্রস্ফুটিত হয়েছে। আল্লাহর বাণী-“ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম-(সূরা আল মায়িদা-৩)।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা মানুষের জীবনকে দুইভাগে বিভক্ত করেছে নিজেদের স্বার্থে। যারা জীবনকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছে তাদের সম্পর্কেই ঘোষিত হচ্ছে-“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী তদুপরি আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে, আমরা কতক কে বিশ্বাস করি কিন্তু কতককে প্রত্যাখ্যান করি এবং এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্য প্রত্যাখ্যানকারী।
তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছি অপমানজনক শাস্তি-(সূরা আন নিসা: ১৫০,১৫১)। অন্যত্র মহান রাব্বুল আলামীন আরো বলেন-“তবে কি তোমরা কিতাবের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিক জীবনে দূর্গতি ছাড়া তাদের আর কোনোই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন। এরাই পরকারের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করেছে। অতএব এদের শাস্তি লঘু হবে না এবং এরা সাহায্য প্রাপ্তও হবে না-(সূরা আল বাকারা : ৮৫ ও ৮৬)। এ সমস্ত আয়াত সমূহের মাধ্যমে প্রতীয়মান হলো যে, একজন মুসলমান কখনও ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না। কারণ, এটা একটা কুফুরী মতবাদ। যাদের মধ্যে এরকম স্বভাব রয়েছে তার উচিৎ আল্লাহর ঐ আয়াতের সমর্থনে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেয়া। আল্লাহ বলেন-“হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করনা। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্র“। অতঃপর তোমাদের মাঝে পরিষ্কার নির্দেশ এসে গেছে বলে জানার পরেও যদি তোমরা পদঙ্খলিত হও, তাহলে নিশ্চিত জেনে রেখো, আল্লাহ পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ-(সূরা আল বাক্বারা : ২০৮, ২০৯)।
‘ইসলাম ধর্ম’ কেন রাষ্ট্রধর্ম হওয়া উচিৎ? তার উত্তর যদি আমরা পবিত্র কুরআনের আলোকে অনুসন্ধান করি তাহলে তার জবাবে যা পাই তা হলো : মহান আল্লাহর বাণী-“নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম-(সূরা আল ইমরান : ১৯)।
তবে যদি কেউ আল্লাহর এই মনোনীত ধর্ম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদ অন্বেষণ করে তার সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা হলো-“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত-(সূরা আল ইমরান : ৮৫)। তাহলে এটাই প্রমাণিত হল যে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হতে পারে না।
প্রসঙ্গতা উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছাড়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী বিদ্যমান। দাবী আসতে পারে, তাহলে রাষ্ট্রধর্ম হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান দেয়া হোক। দাবী করা যৌক্তিক। তবে ঐ সকল ধর্মানুসারীরা ধর্মনিরপেক্ষতা দাবী করতে পারেন না। কারণ, বিভিন্ন ধর্মগুলো ভিন্ন ভিন্ন মতবাদে আদর্শিত। তারা কখনও ধর্মনিরপেক্ষতা দাবী করতে পারেন না। যদি দাবি করে থাকেন তাহলে প্রমাণিত হবে তারা নিজ ধর্মের প্রতি অবিচল নন, অথবা নিজ ধর্ম-কর্ম সম্পর্কে কিছু জানেন না, বুঝেন না। অথবা তারা ধর্মকে খোলস হিসেবে ব্যবহার করছেন। যদি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী হতে এরকম দাবি উত্থাপিত হয় তাহলে তা প্রথমেই যৌক্তিকভাবে প্রত্যাখ্যাত, নাকচ করার যোগ্য। কারণ, যে দেশে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান সেখানে ৭/৮ ভাগ অন্যান্য ধর্মানুসারীরা নিজের ধর্মের উপর রাষ্ট্রধর্ম করার যৌক্তিকতা কোথায়? বিবেকবানদের প্রতি প্রশ্ন রইল। তাহলে যৌক্তিক ও বিবেকের তাড়নায় বলতে বাধ্য বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম হবে “ইসলাম”।

Comments

comments

About

Check Also

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার মূর্তপ্রতীক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

ইদানিংকালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। জাতি সংঘ সহ সারাবিশ্বের সব দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *