ঈদ : সম্প্রীতির পরম শিক্ষা

ঈদ। খুশি আনন্দ আর মুসলমানদের অন্যতম মিলনমেলা। ঈদগাহ আর মসজিদে মুসলমানদের সম্মিলনে গড়ে উঠে ঈদ। তাই ঈদ মুসলমানদের নিকট অতীব গুরুত্ববহ। ইবনুল আরাবী বলেন, “ঈদ” কে ঈদ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে এ জন্য যে, প্রত্যেক বছরই নতুনভাবে আনন্দ আর খুশি নিয়ে ফিরে আসে। তাই ঈদের আমেজ সবার মাঝে ভিন্ন প্রকৃতির। ঈদের আনন্দ সবার মাঝে শিক্ষা দেয় সম্প্রীতি ভালোবাসা আর ভ্রাতৃত্ববোধের। সকলেই একে বরণ করে আনন্দ আর খুশির মাধ্যমে। ধনী-গরীব, ফকির-মিসকীন, রাজা-প্রজা, ছোট-বড় সকলেই ঈদের আনন্দে একাকার হয়ে যায়। বিত্তবানরা অসহায় নিঃস্বদের ঈদের আনন্দে শামিল করতে সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালান ঈদের দিনের আগমূহুর্ত পর্যন্ত। সবাই নিজ নিজ সাধ্যমত নতুন জামা পড়ে ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করতে ভোর থেকে অপেক্ষমান থাকেন। সবাই নতুন খুশিতে মেতে উঠেন। ঈদের নামাজে সকলে অংশগ্রহণ করে জানান দেন সম্প্রীতির মহান শিক্ষাকে। কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে নামাজ আদায় করে বুকে বুকে মিলিয়ে কোলাকুলি করে নিজেদের মধ্যে বিরাজমান থাকা সকল হিংসা বিদ্বেষকে ভুলে নতুন ভাবে জীবনকে রাঙানোর শিক্ষা গ্রহণ করেন। যা আল্লাহ প্রদত্ত মহান নিয়ামাত। সমাজের সকল অনাচার দূর করার জন্য ঈদের শিক্ষা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্ববহ। কিন্তু এরপরও সমাজের কিছু মানুষ ঈদ হতে শিক্ষা গ্রহণ করেন না। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের আনন্দে যাতে সবাই অংশীদার হয় সেজন্য সাদকাতুল ফিতরকে আবশ্যক করেছেন। যা সম্প্রীতি সৌহার্দকে আরো সুদৃঢ় করে।

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ আসে সবার মাঝে আনন্দ আর খুশিকে ভাগাভাগি করে সমাজের কলহ বিবাদ বিসম্বাদ আর সকল ধরণের অসহনীয় আচরণগুলোকে বিদায় দিতে। সমাজে ভালোবাসা সম্প্রীতি আর ভ্রাতৃত্ববোধকে সুদৃঢ় করতে। ঈদ আমাদের কে ভ্রাতৃত্ববোধ আর সম্প্রীতি শিক্ষা দেয়, শিক্ষা দেয় ভালোবাসা উদারতা আর গরীবকে সাথে নিয়ে আনন্দকে সমানভাবে ভাগ করে নিতে। তারই অংশ হিসেবে পবিত্র রামাদ্বান মাসের শেষ দিকে ধনীদের জন্য গরীবের অধিকার হিসেবে সাদকাতুল ফিতরকে আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে। সকলে যাতে ঈদের আনন্দ ভোগ করতে পারে সে পথ পন্থা ইসলাম আগেই নির্ধারণ করে রেখেছে। ‘হজরত আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মক্কার গলিসমূহে ঘোষক পাঠিয়ে ঘোষণা করালেন যে, তোমরা জেনে রাখ! সদকায়ে ফিতর প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-স্ত্রী, স্বাধীন-ক্রীতদাস, ছোট-বড় সকলের উপর ফরজ’ -(তিরমিজি)। মূলত সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার কারণ হলো ফকির-মিসকীন সবাই যাতে ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারে। আর তাইতো প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকায়ে ফিতরকে ঈদের জামাতে যাওয়ার পূর্বে প্রদান করতে তাগিদ দিয়েছেন। ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, মুসলমানদের প্রত্যেক স্বাধীন নারী, পুরুষ, ছোট-বড় সকলের উপর সাদকায়ে ফিতর হিসেবে এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ যব ফরজ করেছেন এবং নামাজে বের হওয়ার পূর্বেই এটা আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন’ -(বোখারী ও মুসলীম)। আর এটা নিঃস্বদের মুখে খাদ্য দেয়ার জন্য নির্ধারণ করেছেন। হাদীসের ভাষ্যমতে, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদকায়ে ফিতর নিঃস্বদের মুখে খাদ্য দেয়ার জন্য নির্ধারণ করেছেন’ -(আবু দাউদ)। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ঈদ আসে সম্প্রীতির শিক্ষা দিতে। মুসলমান একে অপরের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে নতুন করে মজবুত করতে। আমাদের জীবনে ঈদের প্রকৃত শিক্ষা ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতির মহান এ শিক্ষাকে শুধু ঈদের দিনে সীমাবদ্ধ না রেখে সারাবছর ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। তবেই এই ভ্রাতৃত্ববোধ আর ভালোবাসা জীবনে পাথেয় হিসেবে থাকবে সর্বদা। আসুন ঈদের শিক্ষাকে জীবনে বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট হই।

Comments

comments

About

Check Also

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার মূর্তপ্রতীক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

ইদানিংকালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। জাতি সংঘ সহ সারাবিশ্বের সব দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *