খোদাভীতির উজ্জ্বল নমুনা

পূর্ব প্রকাশিতের পর
৪৫.
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন জগৎ বিখ্যাত মুহাদ্দিস। কোন এক ব্যক্তি সফরে যাওয়ার সময় তাঁকে একটি চিঠি দিয়ে বলল, হুজুর আমার এই চিঠিটা অমুক লোককে দিয়ে দিবেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) বললেন, ‘তুমি যানবাহনের মালিক থেকে অনুমতি নিয়ে নাও। আমি তাকে সব মালপত্র দেখিয়ে দিয়েছি। কথাবার্তা ও বিনিময় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তোমার এ চিঠি হচ্ছে অতিরিক্ত জিনিস। সুতরাং তার অনুমতি নেওয়া জরুরী।’ সুবহানাল্লাহ, এটাই ছিল আমাদের পূর্বসুরীগণের তাকওয়ার নমুনা। (ফয়যানে সুন্নাত)

৪৬.
এক ভদ্রলোক কোন এক প্রমোদবালার উপর আসক্ত হয়ে গেলেন। তার সাথে দরাদরি চূড়ান্ত করে ওকে প্রতিদিন ওনার কাছে হাজির থাকার নির্দেশ দিলেন। কথামতো মহিলাটি তার সামনে বসা থাকতো এবং তিনি ওর দিকে তাকাতেন এবং নিজ কাজ করতে থাকতেন। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলো। একদিন প্রমোদবালা বললো, আপনি অনর্থক আপনার পয়সা ও আমার সময় নষ্ট কেন করছেন? যখন আমার সাথে কোন কিছু করার না থাকে, তাহলে আমাকে চলে যাওয়ার অনুমতি দিন। প্রমোদবালার কথা শুনে ঐ ব্যক্তির নফস খুবই উত্তেজিত হয় উঠল। ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন এবং একটি চেরাগ জ্বালালেন।
অতঃপর চেরাগের শিখার উপর স্বীয় আঙ্গুুল রাখলেন, ফলে চামড়া মাংস সব জ্বলে গেল। এরপর প্রমোদবালাকে বললেন, তুমি চলে যাও, আর এসো না। সে বলল, আমিতো যাচ্ছি, তবে আমাকে এটা বলুন যে আপনি আমাকে কেন ডাকলেন আর এখন কেন চলে যেতে বললেন?
ভদ্রলোক বললেন, আমাকে দীর্ঘদিন ধরে আমার এ নফস তোমার মায়াজালে আবদ্ধ করে রেখেছিল। আমি খুবই জোর জবরদস্তি করে ওকে প্রতিরোধ করে রেখেছিলাম। আজ তোমার সেই কথা থেকে ভীষণ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল এবং কুপ্রবৃত্তি, লালসা খুবই বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাই আমি স্বীয় নফসকে বললাম, প্রথমে দুনিয়ার আগুনের তেজ যাচাই কর। যদি একে সহ্য করতে পার, তাহলে দোজখে যাবার সাহস পাবে কিন্তু দুনিয়ার আগুনে আমার আঙ্গুলের চর্বি জ্বলে গেল, তখন নফস আওয়াজ দিল, আমার সহ্য করার ক্ষমতা নেই। খোদার আজাবের ভয়ে আমার সে সব উত্তেজনা একেবারে প্রশমিত হয়ে গেল। এখন তুমি চলে যাও আর কখনও এখানে আসবে না। যেহেতু ভদ্রলোকের কথাগুলো অন্তরের গহীন কন্দর থেকে আবেগ তাড়িত হয়ে বের হয়েছিল, সেহেতু সেটা প্রমোদবালার মনে দারুণ রেখাপাত করল। সে মহিলা কাঁদতে লাগল এবং বলল, তাহলে আমার কি অবস্থা হবে, আমি আল্লাহকে কিভাবে মুখ দেখাব। অতঃপর ঐ মহিলাও তওবা করল এবং নেককার হয়ে গেল। (ফয়যানে সুন্নাত)

৪৭.
একবার হজরত ইমাম বুখারী (রহ.) সামুদ্রিক জাহাজে সফর করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল এক হাজার আশরাফী। ভ্রমণকালে এক ব্যক্তি ইমাম ছাহেবের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে এবং আনাগোনা করতে থাকে। ইমাম ছাহেবেরও তার সাথে কিছুটা স্নেহের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ইমাম ছাহেব একদিন লোকটাকে বলে ফেললেন যে তাঁর নিকট এক হাজার আশরফী রয়েছে। একদিন লোকটি উচ্চস্বরে চিৎকার করে ক্রন্দন আরম্ভ করল। জাহাজের কয়েকজন আরোহী তাকে জিজ্ঞাসা করলেন কেন কাঁদছ? সে আরও উচ্চকণ্ঠে ক্রন্দন আরম্ভ করল এবং পরিধেয় বস্ত্র ছিঁড়তে লাগল। অবশেষে বারবার জিজ্ঞেস করার পর লোকটি বলল, আমার এক হাজার আশরফীর একটি থলি ছিল তা হারিয়ে গেছে। অবস্থা দেখে দয়া পরবশ হয়ে আরোহীগণ বাক্স পেটারা অন্বেষণ আরম্ভ করেন। কোন যাত্রীর নিকট থলির খোঁজ পাওয়া গেল না। এদিকে ইমাম বুখারী (রহ.) নিজ আশরফীর থলিটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করলেন। অন্যান্য যাত্রীগণের মত ইমাম বুখারীরও সবকিছু অন্বেষণ করা হলো। অবশেষে কোথাও আশরফীর খোঁজ না পেয়ে সকলে এবার লোকটিকে ভৎসনা করল। সফর শেষ হয়ে আসলে লোকটি নির্জনে ইমাম বুখারী (র.)’র সামনে উপস্থিত হয়ে বলল, হুজুর আপনার আশরফীর থলিটি কি করলেন? ইমাম বুখারী (রহ.) বললেন, আমি থলিটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করেছি। সে বলল, এতগুলি মূল্যবান মুদ্রা আপনি নষ্ট করে কিভাবে ধৈর্য ধারণ করলেন? তিনি তার কথা শুনে বললেন, ‘তুমি কত বড় আহমক! তুমি কি জাননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস শরিফ অন্বেষণে আমার মূল্যবান জীবন অর্পণ করে বিশ্বস্থতার স্বীকৃতি অর্জন করেছি। এমতাবস্থায় চুরির অপবাদটা আমার উপর আসুক তা কি সহ্য করতে পারি। যে দৌলত আমি সারাজীবন লাভ করেছি তা কি কয়েকটি আশরফীর বিনিময়ে হারিয়ে ফেলতে পারি?’
(আদর্শ গল্প সংকলন)

Comments

comments

About

Check Also

‘বাংলার রুমী’ কাব্যে আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী র.

মো. ছাদিকুর রহমান অলংকারী জীবন ও জগতের এমন কোনো দিক নেই যা কবিদের কবিতায় বাদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *