খোদাভীতির উজ্জ্বল নমুনা

আল্লাহর ভয়ে গুণাহ ছাড়ার একটি আশ্চর্য ঘটনা নিম্নরূপ-আগের দিনের এক রাজার মেয়ের বিবাহ হয়েছে অন্য দেশের রাজার ছেলের সাথে। বিবাহের পর বিরাট সৈন্য বাহিনী ও বহু মেহমানসহ মেয়েকে ছেলের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বরযাত্রী বউ নিয়ে রওয়ানা হয়েছে। কিন্তু তখন তো আর এ ধরণের গাড়ির ব্যবস্থা ছিল না। হেঁটে হেঁটে বা উট-ঘোড়া ইত্যাদিতে করে যেতে হতো। তারাও এভাবে রওয়ানা হয়েছে। পথিমধ্যে রাত হয়ে গেল। চারদিক অন্ধকার, আর এমতাবস্থায় প্রচণ্ড বেগে তুফান শুরু হলো। প্রচণ্ড ঠাণ্ডাবায়ু বইতে লাগল। এমন কঠিন ঝড় যে, সেই কাফেলা নিজ অবস্থানে থাকতে পারল না। সব ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। কে কোন দিকে গেল তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। প্রত্যেকেই নিজের প্রাণ নিয়ে ভাগল। যে যেদিকে সুযোগ পেল ছুটে গেল। বরও কোন দিকে ছুটে গেল তারও কোন খবর নেই। এখন রাজার মেয়ে ঐ নতুন বধু একা হয়ে গেল। তার খবর নেওয়ার মতও কোনো লোক সেখানে নেই।
এখন এই নতুন বধু একা কী করবে, কোন দিকে যাবে তার কোন দিশা সে পাচ্ছে না। একে তো নতুন অচেনা জায়গা। আরো হল মেয়ে মানুষ, এরপর রাত্রিবেলা, আরো প্রচণ্ড ঝড়। দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে লাগল যে, এ মুহূর্তে তার কী উপায় হবে, কোন দিকে যাবে। আর এদিক সেদিক রাস্তা খুঁজতে লাগল, কোথাও কোনো লোক বা বসতি দেখা যায় কি না, কোথাও কোন আলো পাওয়া যায় কি না। হঠাৎ করে তার নজরে পড়ল যে দূরে একস্থানে একটু আলো দেখা যাচ্ছে। একটি বাতি জ্বলছে। সেখানে কোন মানুষ আছে বলে মনে হলো, সুতরাং মেয়েটি সে দিকেই রওয়ানা করল। গিয়ে দেখে যে, একটি ঝুপড়ির মধ্যে একজন তালেবে ইলম, বা সুফী সাহেব বাতি জ্বালিয়ে বসে বসে কুরআনপাক তিলাওয়াত করছে। ঝড়ে সব কিছু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে কিন্তু আল্লাহপাক সুফী সাহেবের ঐ ঝুপড়িকে নিজ অবস্থানে রেখে দিয়েছেন। তার কোন ক্ষতি হয়নি। মেয়েটি সেখানে আশ্রয় নিল এবং সারারাত সে ঝুপড়ির এক কোণে বসে থাকল। এদিকে সুফী সাহেব পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকলেন আর একটু পর পর নিজের হাতের শাহাদাত আঙ্গুলটি উঠিয়ে ঐ বাতির আগুনে ধরতেন। এভাবে সারারাত কেটে গেল। আঙ্গুলটা পুড়ে গেল। মেয়েটা বসে এই দৃশ্য দেখছিল।

এদিকে সকাল বেলা বাদশাহ মেয়ের খোঁজে লোক পাঠাল, তারা খুঁজতে খুজতে ঐ ঝুপড়ির মধ্যে এসে মেয়েকে পেল এবং তাকে বাদশাহর দরবারে নিয়ে গেল। অন্যদিকে তার যে স্বামী ছিল সে ঝড়ে মৃত্যুবরণ করেছে। মেয়ে ছিল বিধবা তাই বাদশাহ মেয়েকে নতুন করে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু মেয়ে বলল যে, আব্বা আমার আর বিবাহের ইচ্ছা নেই। তারপরও যদি দিতে চান তাহলে একটি কাজ করুন। আমাকে আপনি যে ঝুপড়িতে পেয়েছেন সেই ঝুপড়িতে যেই সুফী সাহেব কুরআনের তিলাওয়াত করছিল তাকে একটু আমার সামনে হাজির করুন। বাদশা লোক পাঠিয়ে তাকে হাজির করলেন। তখন মেয়ে বলল যে, আব্বা ঐ দিন সারারাত একটি অবস্থা দেখেছিলাম, সে সারারাত একটু পর পর তার শাহাদত আঙ্গুলটি আগুনের উপর ধরে রাখত, এভাবে সে আঙ্গুলটি পুড়িয়ে ফেলেছে। এর কারণ কী তাকে একটু জিজ্ঞাসা করুন।
বাদশাহ জিজ্ঞাসা করলেন সে, বাবা তুমি কেন তোমার আঙ্গুলকে আগুনে জ্বালালে, কী তার কারণ? তখন সে বলল, বাদশাহ শুনুন! এই গভীর অন্ধকার রাতে ঐ ঝুপড়ির মধ্যে শুধু আমি আর আপনার মেয়ে ছিলাম। অন্য কোনো লোক সেখানে ছিল না। আর আপনার মেয়ে একেতো পরমা সুন্দরী তারপর আবার সাজানো গুজানো নতুন বধু। সে একা আমার ঝুপড়ির মধ্যে বসা ছিল, তখন আমার দিলে বিভিন্ন ধরণের চিন্তা, ওয়াসওয়াসা আসা স্বাভাবিক ছিল, তাই যখনই আমার হৃদয়ে খারাপ কোনো খেয়াল আসত তখনই আমি আমার এ আঙ্গুলটিকে আগুনের উপর ধরতাম আর মনকে বুঝাতাম যে জাহান্নামের আগুন এর চেয়েও সত্তরগুণ বেশি তেজি হবে। তুমি যে খারাপ কাজ করতে চাও, তাই আগে পরীক্ষা করে দেখ যে, এই আগুন তুমি সহ্য করতে পার কিনা? তা যদি সহ্য করতে না পার তাহলে জাহান্নামের আগুন কীভাবে সহ্য করবে? কেননা এ মেয়ের সাথে অপকর্ম করলে তো তোমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এভাবে আমি আমার মনকে বুঝাচ্ছিলাম। এর বরকতে শয়তান দূর হয়ে গেছে। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। আর আপনার মেয়ের ইজ্জতের হেফাজতও হয়ে গেছে। তখন মেয়ে বলল, আমাকে বিবাহ দিতে হলে এই ছেলের সাথে দিন। তাকে ছাড়া অন্যত্র কোথাও আমি আর বিয়ে বসতে রাজি নই। সুতরাং বাদশাহ ঐ ছেলের সাথেই নিজের মেয়ের বিবাহ দিয়ে দিলেন। (কবর কী পহেলী রাত)

Comments

comments

About

Check Also

‘বাংলার রুমী’ কাব্যে আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী র.

মো. ছাদিকুর রহমান অলংকারী জীবন ও জগতের এমন কোনো দিক নেই যা কবিদের কবিতায় বাদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *