তারাবীহর নামায বিশ রাকাআত

সালাতুত তারাবীহ অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ একটি নামায। রামাদান মাসে ইশার নামাযের পর জামাআতে এ নামায আদায় করা হয়। এটি সুন্নতে মুআক্্কাদাহ। তারাবীহ (تراويح) শব্দটি তারবীহাতুন (ترويحة) শব্দের কহুবচন। ترويحة শব্দের অর্থ হলো একবার বিশ্রাম নেয়া। তারাবীহ একটি বিশেষ নামায, যা মাহে রামাদ্বানের মুবারক রজনীতে জামা‘আতের সাথে আদায় করা হয়। সাহাবায়ে কিরাম (রা.) যখন সম্মিলিতভাবে এ নামায পড়তে শুরু করেন তখন থেকেই তাঁরা প্রতি দুই সালাম অর্থাৎ চার রাকাআতের পর একবার বিশ্রাম নিতেন। এ জন্য এ নামাযকে সালাতুত তারাবীহ বলা হয়। এ নামাযের সবিশেষ ফযীলত রয়েছে। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামা সিয়াম তথা রোযা ও তারাবীহকে গুনাহ মাফের মাধ্যম বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন, হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لِرَمَضَانَ مَنْ قَامَهُ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
-আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মাহে রামাদ্বান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াবের প্রত্যাশায় এ মাসে রাত্রিজাগরণ করে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (বুখারী, بَابُ فَضْلِ مَنْ قَامَ رَمَضَانَ হাদীস নং-২০০৮)
তারাবীহর নামায বিশ রাকাআত
তারাবীহর নামায বিশ রাকাআত ও তা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর যুগ থেকে তারাবীহ’র নামায বিশ রাকাআত হিসেবেই পালিত হয়ে আসছে। তাবিঈন ও তাবে তাবিঈনের যুগ এবং পরবর্তী কোন যুগে এর ব্যত্যয় ঘটেনি। চার মাযহাবের প্রত্যেক ইমাম থেকে তারাবীহর নামায বিশ রাকাআত বলেছেন। বিশ রাকাআতের কম কেউ বলেননি। এমনকি ইমাম মালিক (র.) থেকে এক বর্ণনায় তিন রাকাআত বিতরসহ তারাবীহর নামায ৩৯ রাকাআত এবং অন্য বর্ণনায় একচল্লিশ রাকাআত বলে উল্লেখ রয়েছে। ইমাম মালিক (র.)-এর অন্য বর্ণনা জমহুরের অনুরূপ, অর্থাৎ তারাবীহর নামায বিশ রাকাআত।
ইমাম নববী (র.) বলেন,
إعلم أن صلاة التراويح سنة باتفاق العلماء ، وهي عشرون ركعة ، يسلم من كل ركعتين ، وصفة نفس الصلاة كصفة باقي الصلوات على ما تقدم بيانه.
-জেনে রাখো, উলামায়ে কিরামের ঐকমত্যে তারাবীহর নামায সুন্নত। আর এটি বিশ রাকাআত। প্রত্যেক দুই রাকাআতে সালাম ফিরাবে। আর এ নামাযের পদ্ধতি অন্যান্য নামাযের মতোই, যার বর্ণনা পূর্বে রয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, ইমাম মালিক (র.) থেকে বিশ রাকাতের অধিক যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে অতিরিক্ত রাকাআতসমূহ মূলত তারাবীহ নয়। মক্কার অধিবাসীগণ চার রাকাআত তারাবীহ পড়ে একবার তাওয়াফ করতেন। এর পরিবর্তে মদীনাবাসীগণ চার রাকাআত করে অতিরিক্ত নামায পড়তেন। ফলে বিতরসহ তাদের নামায ৩৯ রাকাআত হয়ে যেত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশ রাকাআত তারাবীহ আদায় করেছেন
বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তিন রাত জামাআতে তারাবীহ আদায় করেছেন। তবে এসব হাদীসে রাকাআত সংখ্যা উল্লেখ নেই। হযরত ইবনে হাজার আসকালানী (র.) ‘আত তালখীস’-এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর এক বর্ণনায় আছে রাসূলুল্লাহ (সা.) একাকী বিশ রাকাআত তারাবীহ আদায় করতেন।
উক্ত হাদীসের সনদের মধ্যে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। সূতরাং নিশ্চিতভাবে এটি বলা যাবে না যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশ রাকাআত তারাবীহ আদায় করেছেন। তবে বিশ রাকাআত তারাবীহ’র উপর সাহাবায়ে কিরাম আমল করেছেন এবং মুসলিম উম্মাহও এটি গ্রহণ করেছেন।
তারাবীহ নামাযের রাকাআত নিয়ে সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিঈনের বর্ণনা
পূর্বে উল্লেখিত সহীহ বুখারীর বর্ণনা থেকে প্রমাণিত যে, হযরত ওমর (রা.) নিয়মিতভাবে জামাআতে তারাবীহর নামায আদায়ের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এ হাদীসে রাকাআত সংখ্যা উল্লেখিত নেই। তবে সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিঈনে ইযামের বিভিন্ন বর্ণনায় বিশ রাকাতের কথা সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যারা তারাবীহ নামাযের রাকাআত সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদের জবাব হিসেবে এসকল বর্ণনাই যথেষ্ট। নি¤েœ এ সংক্রান্ত কিছু বর্ণনা উপস্থাপন করা হলো।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كان النبي صلى الله عليه و سلم يصلي في شهر رمضان في غير جماعة بعشرين ركعة والوتر
-নবী করীম (সা.) রামাদ্বান মাসে একাকী বিশ রাকাআত তারাবীহ ও বিতর আদায় করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ : ২/২২২)
হযরত সাইব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন-
كنا نقوم في زمان عُمَر بن الخطاب رضي الله عنه بعشرين ركعة والوتر
-আমরা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর সময়ে বিশ রাকাআত তারাবীহ ও বিতর নামায (জামা‘আতে) আদায় করতাম। (বায়হাকী, সুনানে সুগরা; নাসবুর রাযাহ : ২/১৭৫)
বিশিষ্ট তাবিঈ হযরত ইয়াযীদ ইবনে রুমান (রা.) বলেন,
كَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ فِى زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ فِى رَمَضَانَ بِثَلاَثٍ وَعِشْرِينَ رَكْعَةً.
-ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে মানুষেরা রামাদ্বান মাসে ২৩ রাকাআত নামায পড়তেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক ৪০, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী : ২/৪৯৬)
হযরত ইয়াযীদ ইবনে খুসায়ফা (র.) বলেন, সাইব ইবনে ইয়াযীদ (রা.) বলেছেন,
كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ فِى شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً – قَالَ – وَكَانُوا يَقْرَءُونَ بِالْمِئِينِ ، وَكَانُوا يَتَوَكَّئُونَ عَلَى عُصِيِّهِمْ فِى عَهْدِ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ مِنْ شِدَّةِ الْقِيَامِ.
-তাঁরা (সাহাবা ও তাবিঈন) ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যামানায় রামাদ্বান মাসে বিশ রাকাআত নামায (তারাবীহ) পড়তেন। তিনি আরো বলেন, তারা নামাযে শতাধিক আয়াতবিশিষ্ট সূরাসমূহ পড়তেন এবং ওসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর যুগে দীর্ঘ নামাযের কারণে তারা (কেউ কেউ) তাদের লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী : ২/৪৯৬)
বিখ্যাত তাবিঈ আবূ আবদুর রহমান আস সুলামী (রা.) বলেন,
أَنَّ عَلِيا رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ دَعَا الْقُرَّاءَ فِى رَمَضَانَ ، فَأَمَرَ مِنْهُمْ رَجُلاً يُصَلِّى بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً. قَالَ : وَكَانَ عَلِىٌّ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ يُوتِرُ بِهِمْ.
হযরত আলী (রা.) (তাঁর খিলাফতকালে) রামাদ্বানে কারীগণকে ডাকেন এবং তাদের একজনকে আদেশ করেন তিনি যেন লোকদের নিয়ে বিশ রাকাআত নামায পড়েন। আর আলী (রা.) তাদেরকে নিয়ে বিতর পড়তেন। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী : ২/৪৯৬)
এ আলোচনা থেকে প্রমাণ হয় যে, তারাবীহর নামায বিশ রাকাআত। অধিকন্তু বিশ রাকাআত তারাবীহ খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত। আর তাঁদের সুন্নাতকে আকঢ়ে ধরার জন্য স্বয়ং রাসূলে পাক (সা.) নির্দেশ প্রদান করেছেন। যেমন, তিনি ইরশাদ করেন,
من يعش منكم بعدى فسيرى اختلافا كثيرا ، فعليكم بسنتى وسنة الخلفاء المهديين الراشدين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ
-তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে বেঁচে থাকবে তোমরা অনেক ইখতেলাফ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাহ ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাহ আঁকড়ে ধরবে। তোমরা তা আঁকড়ে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে ধরে রাখবে। (সুনানে আবি দাউদ, বাব باب فِى لُزُومِ السُّنَّةِ হাদীস নং ৪৬০৯)
বিশ রাকাআত তারাবীহ-এর উপর সাহাবায়ে কিরামের ও সালফে সালিহীনের ইজমা
হযরত ওমর (রা.)-এর সময় থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে সাহাবায়ে কিরাম, তাবিঈন, তাবে তাবিঈন সকলেই তারাবীহর নামায বিশ রাকাআতই আদায় করেছেন। এ বিষয়ে কেউ কোন দ্বিমত পোষণ করেননি। এ বিষয়ে আমলগত দিক থেকে সাহাবায়ে কিরাম ও সালফে সালিহীনের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারাবীহ’র নামায বিষয়ে ইমাম আহমদ (র.)-এর মত আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম ইবনে কুদামা বলেন, “ইমাম আহমদ (র.)-এর কাছে পছন্দনীয় আমল হলো বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়া। ইমাম সুফিয়ান সাওরী (র.)ও তাই বলেন। তাদের দলীল এই যে, হযরত ওমর (রা.) যখন উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-এর পেছনে সাহাবায়ে কিরামকে একত্র করেছেন তখন তারা বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়েছেন। তাছাড়া হযরত ইয়াযীদ ইবনে রূমান ও হযরত আলী (রা.)-এর হাদীস থেকেও ইমাম আহমদ (র.) দলীল গ্রহণ করেছেন। ইবনে কুদামা বলেন, এটা মূলত: সাহাবায়ে কিরামের ইজমাকেই প্রকাশ করে। আর সাহাবায়ে কিরাম যে বিষয়কে অবলম্বন করেছেন তা-ই গ্রহণীয় ও অনুসরণীয়।” (আল মুগনী)
বিশিষ্ট তাবিঈ হযরত আতা (র.) বলেন, আমি সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-কে রামাদ্বানে বিশ রাকাআত তারাবীহ এবং তিন রাকাআত বিতর পড়তে দেখেছি। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ : ২/২৮৫, মারওয়াযী, কিয়ামুল লাইল, পৃষ্ঠা-৫৭)আবদুল আযীয ইবনে রাফীঈ (রা.) বলেন, উবাই ইবনে কা’ব (রা.) রামাদ্বান মাসে মদীনায় লোকদের অর্থাৎ সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিঈনকে নিয়ে বিশ রাকাআত তারাবীহ ও তিন রাকাআত বিতর পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ : ২/২৮৫)
ইমাম নববী (র.) বলেন, তারাবীহ নামায সুন্নাত হওয়ার বিষয়ে সকল আলিম একমত। এ নামায বিশ রাকাআত, যার প্রতি দুই রাকাআতে সালাম ফিরাতে হয়। (আল আয্্কার : ৮৩)
ইবনে তাইমিয়া (র.)-এর দৃষ্টিতে বিশ রাকাআত তারাবীহ সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত
লা-মাযহাবীদের মান্যবর শায়খ ইবনে তায়মিয়া লিখেছেন :“যখন উমর (রা.) লোকদেরকে উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-এর পিছনে একত্রিত করে দিলেন তখন তিনি বিশ রাকাআত তারাবীহ ও বিতর পড়তেন। (আল-ফাতওয়া আল মিসরিয়্যা) তারাবীহ’র বিষয়ে ওমর (রা.)-এর সিদ্ধান্ত অর্থাৎ জামাআতবদ্ধভাবে বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়াকে সুন্নত বলেছেন। তিনি হযরত ওমর (রা.)-এর এ কাজকে সুন্নত বলেছেন। তিনি লিখেছেন : “হযরত উমর (রা.) সকল সাহাবীকে উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-এর পিছনে এক জামাতে একত্রিত করেছেন। বলাবাহুল্য, উমর (রা.) খুলাফায়ে রাশেদীনের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন, যাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, فعليكم بسنتى وسنة الخلفاء المهديين الراشدين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ অর্থাৎ ‘আমার সুন্নাহ ও আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাগণের সুন্নাহকে অবলম্বন করবে এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে রাখবে।’ মাড়ির দাতের কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এজন্য বলেছেন যে, এভাবে ধারণ করলে তা মজবুত হয়ে থাকে। তারাবীহ বিষয়ে উমর (রা.)-এর এই কাজ সুন্নাহর অন্তর্ভূক্ত।” (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া)
ইবনে তায়মিয়া যেখানে ওমর (রা.)-এর কাজকে সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত বলছেন সেখানে আধুনিক লা-মাযহাবীরা কিভাবে এটাকে বিদআত বলে?
আট রাকাআতের দলীল ও কিছু কথা
যারা তারাবীহর নামায আট রাকাআত বলে থাকেন তারা বুখারী শরীফে হযরত আয়িশা (রা.) বর্ণিত একটি হাদীস দিয়ে দলীল প্রদান করে থাকেন। হাদীসটি হলো এই :
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا كَيْفَ كَانَتْ صَلَاةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي ثَلَاثًا فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ قَالَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلَا يَنَامُ قَلْبِي
-হযরত আবূ সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত যে তিনি হযরত আয়িশা (রা.)-কে প্রশ্ন করেছিলেন, রামাদ্বান মাসে রাসূলে পাক (সা.)-এর নামায কেমন ছিল? আয়িশা (রা.) উত্তরে বলেন, রাসূল (সা.) রামাদ্বান ও অন্য মাসে এসার রাকাআতের বেশী পড়তেন না। তিনি চার রাকাআত নামায পড়তেন। তুমি এর দীর্ঘতা ও সৌন্দর্য সম্পর্কে প্রশ্ন করো না (কারণ, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়)। অতঃপর তিনি আরো চার রাকাআত নামায পড়তেন। তুমি এরও দীর্ঘতা ও সৌন্দর্য সম্পর্কে প্রশ্ন করো না। এরপর তিনি তিন রাকাআত নামায পড়তেন। আয়িশা (রা.) রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছেন, ইয়া রাসূল্লাহ! আপনি কি বিতর পড়ার আগে ঘুমাচ্ছেন? উত্তরে তিনি বলেছেন, হে আয়িশা! আমার চোখ ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৩)
গায়র মুকাল্লিদগণ ৮ রাকাআত তারাবীহকে সুন্নাত প্রমাণ করার জন্য উল্লেখিত হাদীসকে দৃঢ়তার সাথে উপস্থাপন করেন এবং তারাবীহর নামায ২০ রাকাআত সম্পর্কিত সকল হাদীসকে এর সাথে বিরোধপূর্ণ বলে প্রত্যাখ্যান করেন। অথচ লক্ষণীয় বিষয় হলো :
প্রথমত: এ হাদীস তাহাজ্জুদ সম্পর্কিত, তারাবীহ সম্পর্কিত নয় যার অনেক প্রমাণ রয়েছে।
দ্বিতীয়ত: নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, স্বয়ং গায়র মুকাল্লিদগণই এর উপর আমল করছেন না। বরং তারা তারা এর বিরোধিতা করছেন। যেমন :
১. এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (সা.) চার রাকাআত করে নমায পড়তেন অথচ গায়র মুকাল্লিদগণ দু’রাকআত করে পড়েন।
২. এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একা একা নামায পড়তেন। কিন্তু গায়র মুকাল্লিদগণ পুরো রামাদ্বান মাস জামাআতের সাথে তারাবীহ পড়েন।
৩. উক্ত হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ নামায ঘরে পড়তেন। এ হাদীসে আছে, হযরত আয়শা (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে প্রশ্ন করেছিলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি কি বিতর না পড়েই ঘুমাবেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বলেছিলেন- হে আয়শা, আমার চোখগুলো ঘুমালেও অন্তর ঘুমায় না। এরূপ প্রশ্নোত্তর থেকে বুঝা যায় বিষযটি ঘরের বিষয় ছিল, কারণ, সফরের অবস্থায় না হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরেই ঘুমাতেন। অথচ গায়র মুকাল্লিদগণ সারা রামাদ্বান মাস ঘরের বদলে মসজিদেই এ নামায পড়ে থাকেন।
৪. এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (সা.) নামায পড়ে ঘুমিয়ে যেতেন। ঘুম থেকে উঠে বিতর পড়তেন। অথচ গায়র মুকাল্লিদগণ তারাবীহর সাথে সাথে ঘুমানোর পূর্বেই বিতর আদায় করে নেন।
৫. এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (সা.) একা একা বিতর আদায় করতেন, অথচ গায়র মুকাল্লিদগণ জামাআতের সাথে বিতর আদায় করেন।
৬. এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (সা.) সারা বছর বিতর নামায এক সালামে তিন রাকাআত পড়তেন, কিন্তু গায়র মুকাল্লিদগণ বেশির ভাগ সময়ে এক রাকআত বিতর পড়েন। কখনো তিন রাকাআত পড়লে তা দু’সালামে পড়েন।

Comments

comments

About

Check Also

কাদিয়ানীরা অমুসলিম কেন?

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ পৃথিবীতে হযরত আদম (আ.) কে প্রেরণের মাধ্যমে নবুওয়াতীর ধারাকে সূচনা করেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *