কুরবানি সংক্রান্ত কয়েকটি জরুরি জিজ্ঞাসার জবাব ও দরকারি তথ্য

জিজ্ঞাসা ও জবাব
প্রশ্ন : কুরআন মাজীদের কোন কোন্ স্থানে/সূরায় কুরবানীর আলোচনা রয়েছে?
উত্তর : সূরা আল-মায়িদাহ ৫:২৭-৩১; সূরা আল-আনআম ৬:১৬২-১৬৩; সূরা আল-হাজ্জ ২২:২৮, ৩২-৩৭; সূরা আস-সাফ্ফাত ৩৭:১০০-১১০; সূরা আল-কাওছার ১০৮:২

প্রশ্ন : জীবিত কিংবা মৃত, সমস্ত মুসলমানের পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়া বৈধ হবে কি?
উত্তর : বৈধ হবে। এ ব্যাপারে নবীজী স.-এর নিজের আমল রয়েছে। অর্থাৎ, বিষয়টি নবীজী স.-এর ফি’লী হাদীছ দিয়ে প্রমাণিত। (মুসলিম; মিশকাত-১৩৭০; আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ, দারিমী, তিরমীযী; মিশকাত-১৩৭৭)

প্রশ্ন : একটি গরুতে ০৭ জন শরিক হতে পারবে কি?
উত্তর : গরু/মহিষ কিংবা উট-এ অবশ্যই সর্বোচ্চ ০৭ জন শরীক হবে পারবে। এটি সরাসরি গ্রহণযোগ্য সনদের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। মুসলিম, আবু দাউদ; মিশকাত-১৩৭৩

প্রশ্ন : মৃত বাবা/মা/দাদা/দাদী/নানা/নানী’র পক্ষ থেকে কুরবানী করা যাবে কি?
উত্তর : অবশ্যই করা যাবে, যে কোন মুমিনের পক্ষ থেকেই করা যাবে। বিষয়টি হাদীছে নববী দিয়ে প্রমাণিত। (আবু দাউদ, তিরমিযি, মুসলিম; মিশকাত-১৩৭৮)

প্রশ্ন : একই পরিবারের কয়েকজন সম্পদশালী হলে যে কোন একজন কুরবানী দিলে অন্যরা দায়মুক্ত হতে পারবে কি?
উত্তর : কুরবানী ওয়াজিব হয় সাহেবে নিসাব বা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে। অতএব, কোন নারীও যদি তার মালিকানাধীন অলংকার বা প্রাপ্ত দেনমোহর বা অন্য কোন সূত্রেও যদি সম্পদের মালিক হয়, তাহলে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব; না দিলে কঠিন গুনাহগার হবেন। (ইবনু মাজাহ, আবু দাউদ, নাসায়ী)

প্রশ্ন : আমার নামে প্রতি বছরই কুরবানী দিচ্ছি। এখন থেকে কয়েক বছর মা-বাবা ও দাদা-দাদীর পক্ষ থেকে কুরবানী করতে চাই। এ ব্যাপারে শরিআতে কোন বাধা আছে কি না?
উত্তর : যার ওপর কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে, তার পক্ষ থেকে আদায় না করে তার স্ত্রী, মা, বাবা, নানা, দাদা, দাদী, নানী বা অন্য কারুর পক্ষ থেকে আদায় করলে সাহেবে নিসাবের ওয়াজিব তার যিম্মায় বাকি থেকে যাবে। ফলে সে গুনাহগার হবে। এই গুনাহের পরিবেশ তৈরিতে যে বা যারা তাকে বাধ্য করবেন, তারাও গুনাহগার হবেন। মা-বাবা বা আপনজন বুঝতে না চাইলে তাদেরকে বুঝাতে হবে যে, যে কুরবানী ছাওয়াবের জন্যে আপনার নামে দিতে সাহেবে নিসাবকে বাধ্য করছেন, তাতে ছাওয়াব না হয়ে কবীরা গুনাহ হবে। (তিরমীযী, ইবনু মাজাহ; মিশকাত-১৩৮৬)

প্রশ্ন : কুরবানীর টাকা গরিবকে সাদাকা করে দেয়া উত্তম হবে কি?
উত্তর : কিছুতেই উত্তম হবে না; এমনকি কুরবানী দেয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যদি এমনটি কেউ করে, সেটি গ্রহণযোগ্য কিংবা মার্জনীয় হবে না। কুরবানীর দিনে কুরবানীর চেয়ে ভাল কোন আমল থাকতে পারে না। -তিরমীযী, ইবনু মাজাহ; মিশকাত-১৩৮৬

প্রশ্ন : কুরবানী কি প্রতি বছর দিতে হবে? নাকি জীবনে একবার করলেই আদায় হয়ে যাবে?
উত্তর : যিলহাজ মাসের ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবেন, এমন প্রত্যেক ব্যক্তির ওপরই কুরবানী ওয়াজিব। অতএব, জীবনে যতবার এই শর্ত পূরণ হবে, ততবারই কুরবানী করতে হবে। নবীজী স. তাঁর মাদানী যিন্দেগীর একটি বছরও কুরবানী মিস করেন নি। (আবু দাউদ, নাসায়ী; তিরমীযী, মিশকাত-১৩৯০)

প্রশ্ন : কুরবানির পশুরু ভুরি খাওয়া জায়েয হবে কিনা, জানতে চাই।
উত্তর : অবশ্যই জায়েয হবে। হাদিসে হালাল পশুরু ৬/৭টি অঙ্গ খাওয়াকে হারাম করা হয়েছে। সেই তালিকায় আমরা ভুরি কিংবা চামড়ার কথা পাই না। অতএব, নিঃসন্দেহে হালাল পশুর ভুরি বা চামড়া খাওয়া হালাল হবে।

প্রশ্ন : কুরবানির গরুতে আকীকাদাতা শরীক হতে পারবে কি?
উত্তর : অবশ্যই শরীক হতে পারবে। বিষয়টি ফুকাহায়ে কেরামের কিয়াস ও ইজতিহাদ দ্বারা প্রমাণিত। এর ওপর যুগে যুগে ওলামায়ে কেরাম আমল করে আসছেন। এরকম আমলে মুতাওয়ারিছ (ধারাবাহিকভাবে চলে আসা আমল) মুহাদ্দিসীনে কেরামের মতে, শরিআতের মজবুত দলীল। -ফতোয়ায়ে শামী (রদ্দুল মুহতার), খ- ৯, কিতাবুল উদ্বহিয়্যাহ

যিলহাজ মাস এবং ঈদুল আযহার আরও কিছু তথ্য
১। স্থানীয় ঈদগাহে ঈদের জামাআত হওয়ার আগে কুরবানী দিলে শুদ্ধ হবে না; শুধু গোশত খাওয়া হবে। -বুখারী, মুসলিম; মিশকাত-১৩৫১; সূরা আল-কাওছার ১০৮:২
২। ঈদের ২ রাকাত ওয়াজিব সালাতে অতিরিক্ত তাকবীর সর্বমোট ৬টি দেয়া সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। -আবু দাউদ; মিশকাত-১৩৫৯
৩। একটি গরু/মহিষ/উট-এ সর্বোচ্চ ০৭ জন অংশ নিতে পারে। -মুসলিম, আবু দাউদ; মিশকাত-১৩৭৪
৪। কুরবানীদাতা/কুরবানী দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তির উচিত যিলহজ মাসের ১ম দশকে চুল-নখ না কেটে কুরবানীর দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে ১০ম দিবসে, কুরবানী সেরে কাটা। -মুসলিম; মিশকাত-১৩৭৫
৫। আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বোচ্চ প্রিয়তম দশক হচ্ছে যিলহজ মাসের ১ম দশক বা হজ ও কুরবানী’র দশক। (অতএব, এই দশকে বেশি-বেশি ইবাদাত করা উচিত, রোযা রাখা উচিত) -বুখারী, মুসলিম; মিশকাত-১৩৭৬; তিরমীযী, ইবনু মাজাহ; মিশকাত-১৩৮৭
৬। কুরবানীর অনুমোদিত মেয়াদ যিলহজ-এর ১০, ১১ এবং ১২ তারীখ। -মুআত্তা মালিক; মিশকাত-১৩৮৯

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *