কুরআনের আলোকে সুন্নাহ অনুসরণের অপরিহার্যতা

নূর হোসেন তালুকদার

যারা কুরআনের দোহাই দিয়ে হাদিস বা সুন্নাহ অস্বীকার করে, তারা কি সঠিক পথে না পথভ্রষ্ট? আসুন, তাদের দাবীমতো কুরআন দিয়েই বিচার করি।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তার হাবীব জনাব মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শিখিয়ে দিচ্ছেন : বলুন; যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ্ হলেন ক্ষমাশীল ও দয়ালু। [আল-ইমরান : ৩১]-এ আয়াতের মর্মে জানা যাচ্ছে-
আল্লাহ্কে ভালোবাসার পূর্বশর্ত হচ্ছে রাসুলের অনুসরণ অর্থাৎ সুন্নাহ্ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর এটা আল্লাহ্কে ভালোবাসা তথা মান্য করার প্রমাণ, আল্লাহ্র ভালোবাসা অর্জনের উপায় এবং ক্ষমা বা নাযাতের পাথেয়।
তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহ্র এবং আনুগত্য করো রাসুলের। তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে (জেনে রেখো) আমার রাসুলের দায়িত্ব কেবল স্পষ্ট ভাষায় প্রচার করা। [তাগাবুন: ১২]
অনুরূপ :
তোমরা আল্লাহ্র অনুগত হও, রাসুলের অনুগত হও এবং আত্মরক্ষা করো।…[মায়িদাহ : ৯২]-এ আয়াতে পূর্বোল্লিখিত আয়াতের অতিরিক্ত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ লক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো ’‘আত্মরক্ষা’র নির্দেশ আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্যের মধ্যেই নিহিত আছে মুমিন তথা সমগ্র মানবজাতির (জাহান্নামের আযাব হতে) আত্মরক্ষার মূলমন্ত্র। এবং আল্লাহ ও রাসুলের অনুগত্য করো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমতের আচরণ করা হয়। [আল-ইমরান : ১৩২]
সুন্নাহ অনুসরণের সুফল : হে ইমানদারগণ! আল্লাহ্র আনুগত্য করো, নির্দেশ মান্য করো রাসুলের এবং তোমাদের উলিল আমরদের’। যদি তোমাদের (ও উলিল আমরের) মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে তা আল্লাহ্ ও রাসুলের দিকে রুজু করো;-যদি তোমরা আল্লাহ্ ও কিয়ামত দিবসে বিশ্বাসী হয়ে থাকো। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। (নিসা : ৫৯]
‘উলিল আমর’-ন্যায়পরায়ণ মুসলিম ধর্মীয় শাসক অথবা ধর্মীয় জ্ঞান ও অনুশীলন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ যারা সাধারণের জন্য নেতৃস্থানীয় (ইমাম)। তারা কুরআন-সুন্নাহর আলোকে যে ফায়সালা দিবেন তা মান্য করা জরুরি। এটাই মাযহাব। তবে তাদের সাথে সাধারণের মতপার্থক্য হলে কুরআন-সুন্নাহ্র দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। আর এরূপ করাটাই আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহর নির্দেশ।


যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি যা-কিছু অবতীর্ণ হয়েছে-সেটাই তো তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত সত্য-তা আন্তরিকভাবে মেনে নিয়েছে, আল্লাহ তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তাদের অবস্থা সংশোধন করে দিয়েছেন। [মুহাম্মদ : ২]
আর যে আল্লাহর হুকুম, তাঁর রাসুলের হুকুম মান্য করবে, সে আল্লাহর নিয়ামত প্রাপ্তদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম। [নিসা : ৬৯]
সুন্নাহ অস্বীকারের কুফল ও পরিণতি : * হে মুমিনগণ! আল্লাহ্র আনুগত্য করো, রাসুলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের কর্ম বরবাদ করো না। [মুহাম্মদ : ৩৩]
এ থেকে বুঝা গেল- আল্লাহ্র আনুগত্য যেমন ফরজ, রাসুলের আনুগত্যও তেমন ফরজ এবং এর ব্যতিক্রম করলে মুমিনের কর্মফল বরবাদ (ধ্বংস) হয়ে যাবে।

  • যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোন বিষয় ফায়সালা করে দেন, তখন কোন মুমিন বা মুমিনার পক্ষে (এর ব্যতিক্রম করার) অধিকার থাকে না। আর যে আল্লাহ ও রাসুলের নাফরমানি করে, সে প্রকাশ্য গোমরাহিতে (পথভ্রষ্টতায়) পতিত হয়। [আহযাব : ৩৬]
  • বলুন, আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য প্রকাশ করো। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখ হয়, তাহলে আল্লাহ্ কাফিরদেরকে ভালোবাসেন না। [আল-ইমরান : ৩২]
    এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়-এ দুই আনুগত্যের কোন একটি অস্বীকার করা কুফরি। সুতরাং সুন্নাহ অস্বীকারকারী-আল্লাহর ভালোবাসা-বঞ্চিত কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।’
    অন্য আয়াতে এদের পরিণাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেখুন :
  • ‘যে-কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ্ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার তলদেশে ঝর্ণা প্রবাহিত। আর যে-কেউ মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য রয়েছে (জাহান্নামের) যন্ত্রণাময় শাস্তি। (ফাতাহ : ১৭]
  • কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যতা করলে তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন, যার ভেতর তারা স্থায়ীভাবে থাকবে। [জিন : ২৩]
    আনুগত্য ও সুন্নাহ : আল্লাহকে ভালোবাসার পূর্বশর্ত হচ্ছে রাসুলের আনুগত্য করা। আনুগত্য শব্দের দুটি অর্থ বাধ্যতা ও অনুসরণ। আর রাসুলের আনুগত্যের ক্ষেত্রে উভয় অর্থই একত্রে প্রযোজ্য।
    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা, কাজ ও অনুমোদনকে সুন্নাহ বলা হয়। যার অপর নাম হাদিস। আর সুন্নাহর অনুসরণ ব্যতীত রাসুলের আনুগত্য বা অনুসরণ-আদৌ সম্ভব নয়।
    আনুগত্যের স্বরূপ : *…রাসুল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো। [হাশর : ৭]
  • এ আয়াতাংশের পূর্বে যদিও গণিমতের আলোচনা আছে তথাপি-এর শব্দাবলি সাধারণ থাকায় শরীয়তের যেকোন বিষয়ে তা একটি সাধারণ মূলনীতি হিসেবে গণ্য।
    শেষ কথা : আল্লাহর আনুগত্য রাসুলের আনুগত্যের শর্তাধীন। রাসুলের আনুগত্য ব্যতীত আল্লাহর আনুগত্যের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহকে অনুসরণ ও অনুকরণের সুযোগ নেই রাসুলের সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপনের মাধ্যমেই আল্লাহর আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তাই তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা : যে রাসুলের আনুগত্য করলো, সে আল্লাহর আনুগত্য করলো। [নিসা : ৮০]

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *