মহররম মাস। কারবালা ময়দানের দুঃসহ স্মৃতি বুকে ধারণ করে হিজরী বর্ষের এ মাসটি মুসলিম উম্মাহর মাঝে আলাদা রূপে ঘুরে ফিরে আসে কাল পরিক্রমায়। ‘ফিরে এলো আজ সেই মহররম মাহিনা/ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না।’ কবিতাংশের অন্তর্নিহিত নির্দেশনার ন্যায় আমরা উজ্জীবিত হতে চাই এ মাসে। কিন্তু মর্সিয়া ক্রন্দনের মতো একটি দিন এ মহররম মাসের ৬ তারিখ আমাদের মাঝে এসে উপস্থিত হয়েছিল। সেদিন মুর্শিদে বরহক, লক্ষ লক্ষ ভক্ত মুরিদানের রূহানী পিতা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলা (রহ.) সবাইকে ছেড়ে মহান মাওলার ডাকে সাড়া দিয়ে আলমে বরযখে চলে গিয়েছেন। শোকের মাতমে, মর্সিয়া ক্রন্দনে আকাশ বাতাস ভারী করে তোলা যদি রীতিসিদ্ধ হত তবে সেদিন ফুলতলীর বালাই হাওরের মাটি কারবালা ময়দানের শোকের মতো ভিন্ন ধরণের আরেকটি মর্সিয়া ক্রন্দনের ময়দানে পরিণত হত। কিন্তু যাদের রূহানী পিতা সারাটি জীবন দ্বীন ইসলামের খেদমতে ত্যাগ তিতীক্ষা আর সংগ্রামে কাটিয়েছেন, ত্যাগ তিতিক্ষা-সংযম আর আধ্যাত্মিকতার অমীয় শিক্ষা দিয়েছেন, মহাবিপদ, ব্যর্থতা, দুঃখ-শোক আর দুর্দিনে মর্সিয়া ক্রন্দনের পরিবর্তে আত্মশক্তিতে বলিয়ান হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, দেখিয়েছেন সিরাতাল মুস্তাকিমের পথ, তারই ওফাতে কি রূহানী সন্তানেরা মর্সিয়া ক্রন্দনে মেতে স্বীয় কর্তব্যকে ভুলে যেতে পারে? তাইতো ৬ই মহররম তারিখে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দেখি বেদনার হাহাকারে নীরব অশ্র“ ঝরাতে, মুর্শিদের রূহানী ফয়েজ প্রাপ্তির এবং তার দরজা বুলন্দির প্রার্থনায় রত হতে।
ছোটকাল থেকে তথা জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী (রহ.) সম্পর্কে জেনে আসছি এবং তাকে দেখেছি। তবুও যেন কিছুই জানা হয়নি, কিছুই দেখা হয়নি। অথৈ সাগর থেকে কোন এক পাখি চঞ্চুতে যতটুকু পানি ধারণ করতে পারে যেন ঠিক ততোটুকুই জানা হয়নি তার সম্পর্কে। সুতরাং তার সম্পর্কে এ অধম কি-ই বা লিখতে পারি। তাই সংক্ষিপ্ত পরিসরের এ লেখায় তার রূহানী ফয়েজ কামনায় একটু স্মৃতিচারণ করছি কেবল।
তখন সবেমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। বাবা ফুলতলীতে ছাহেব কিবলাহর সাথে সাক্ষাতে যেতেন প্রায়ই। মাঝে মাঝে আমাকেও সাথে নিতেন। খুব মনে আছে, তিনি ছাহেব কিবলাহর সামনে নিয়ে আমাকে নির্দেশ দিতেন সালাম ও কদমবুছি করার। সালাম ও কদমবুছি করার পর আল্লামা ছাহেব কিবলাহ আমার মাথায় পবিত্র হাত মোবারক বুলিয়ে ফুক দিতেন। আমার যে কি আনন্দ লাগতো তখনকার সে অনুভূতি স্মৃতিতে এখনো উজ্জ্বল রয়েছে। আল্লামা বড় ছাহেব কিবলাহর নামও তখন বেশ শুনতাম। কচি বয়সে পার্থক্য করতে বিভ্রম হতো কে ছাহেব কিবলাহ এবং কে বড় ছাহেব কিবলাহ। বাবাকে জিজ্ঞেস করে চিনে নিয়েছিলাম এভাবে যে, ‘ধলা ছাহেব’ (আল্লামা ছাহেব কিবলাহ রহ.) এর বড় সন্তান হচ্ছেন- ‘বড় ছাহেব’। তাই আমি ছোটকালে আল্লামা ছাহেব কিবলাহকে ‘ধলা ছাহেব’ নামেই চিনতাম। আমার দাদা প্রয়াত মোঃ আকদ্দছ আলীর মুখে আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ও বড় ছাহেব কিবলাহর কথা বার বার শুনেছি। তিনি প্রায় দিনই আক্ষেপ করে বলতেন- ‘বাত্তির নিচ আন্দাইর থাকে, আমরা তাকে চিনলাম না।’ অর্থাৎ- প্রদীপের নিচ অন্ধকার থাকে, সে সূত্রে আমরা এলাকাবাসী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহেকে ভালো করে চিনতে পারলাম না। তার যথার্থ কদর করতে পারলাম না। বড় ছাহেব কিবলাহ সম্পর্কে তার সহজ ও সর্বদা উক্তি ছিল- ‘বড় ছাব বেহেস্তের আধাখান লইয়া হারছইন।’ অর্থাৎ- বড় ছাহেব কিবলাহ সম্বলহীন, এতিম, বিধবা, অসহায়-দরিদ্র মানুষের সেবা করে তাদের দোয়ার বিনিময়ে বেহেস্তের সম্মানিত স্থান অধিকার করে নিয়েছেন। তাঁর এ দুটি উক্তি আমাকে এখনো ভাবায়। আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ ও বড় ছাহেব কিবলাহ সম্পর্কে একজন অক্ষর জ্ঞান জানা বৃদ্ধ ব্যক্তির এমন সহজ সরল উক্তি, তাদের উভয়ের প্রতি তাঁর ধারণার গভীরতা ও শ্রদ্ধা এখন আমাকে বিস্মিত করে। তখন (১৯৯০ইং) তার এসব কথার মর্মার্থ ঠিক ভালোভাবে বুঝতে পারিনি।
তখন বাদেদেওরাইল ফুলতলী আলিয়া মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হই। ছাহেব কিবলাহ শনিবার ও রবিবার দুদিন বাড়িতে থাকতেন। বাইরে থেকে অনেক লোক আসতেন ছাহেব কিবলাহর সাথে সাক্ষাত করতে। আমরা ছোট শিশুরা সুযোগ পেলেই সে সব লোকের ভিড়েও ছাহেব কিবলাহর চারপাশ ঘিরে দাঁড়াতাম। সালাম ও কদমবুছি করতাম এবং টুপি সরিয়ে মাথা এগিয়ে দিতাম তার হাত মোবারকের ছোঁয়া নেয়ার জন্য। এ নিয়ে আমাদের মাঝে একটি নীরব প্রতিযোগিতা হতো, কে আগে স্পর্শ নেবে। এই স্পর্শ বা ফুক নেওয়ার মধ্যে কী রহস্য আছে তখন ঠিক না বুঝেও বড়দের দেখানো পথ ও অনুকরণে কিংবা মহান আল্লাহর অদৃশ্য নির্দেশে আমরা এ কাজটি করতাম। আল্লামা ছাহেব কিবলাহ সপ্তাহের এ দু’দিন যোহর নামাজের পর মসজিদে পবিত্র কোরআন শরীফ মশক দিতেন। আমরা আগ্রহচিত্তে তাঁর সামনে নতজানু হয়ে বসে মশক গ্রহণ করতাম। সে সব কথা মনে হলে আজ চোখে অশ্র“ দানা বাঁধে। তাকে হারানোর হাহাকারে বুক ফেটে যেতে চায়।
আমার যে কী সৌভাগ্য তা ভেবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে না। ওলীকুল শিরোমনি, যামানার মুজাদ্দিদ, রাঈসুল র্কুরা, অসংখ্য গুণের অধিকারী শামসুল উলামা আল্লামা ছাহেব কিবলাহ (রহ.)-কে ছোট কাল থেকেই কাছে পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা যায়- ‘প্রদীপের নীচ অন্ধকার থাকে’ এ প্রবাদ বাক্যের ষোল আনা সত্য নয়, যাদের প্রতি মহান আল্লাহ রহম করেছেন। আসলে আল্লাহ তায়ালা সকলের প্রতিই রহম করে থাকেন। কিন্তু মানুষ যখন স্বীয় নফসের দাস হয়ে যায় তখন আল্লাহর রহমের সকল নেয়ামত গ্রহণ করতে সে সক্ষম হয় না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ সম্পর্কে লিখে শেষ করার মত নয়। তাকে নির্দিষ্ট কোন অভিধায় অভিহিত করাও হবে অজ্ঞতার নামান্তর। তাই অতি সংক্ষেপে স্মৃতিচারণমূলক আরো দু চারটি কথা এবং আমার দেখা তাঁর অনেক কারামতের মধ্যে একটি কারামতের বর্ণনা দিয়ে লেখাটি শেষ করবো ইনশাআল্লাহ।
আমার নানা (প্রয়াত হাফিজ মোঃ মুছলেহ উদ্দিন) ছাহেব কিবলাহর অত্যন্ত ভক্ত ছিলেন। ছাহেব কিবলাহ তাঁকে বেশ ভালবাসতেন। এর একটি বিশেষ কারণও নিহিত ছিল। হাড়িকান্দি এলাকায় তখনকার একমাত্র ‘দ্বোয়াল্লিন’ খ্যাত এবং ছাহেব কিবলাহর ভক্ত ব্যক্তি ছিলেন আমার নানা। এতো জোয়াল্লিন খ্যাত লোকেরা তাকে খুব কষ্ট দিতেন। বিভিন্নভাবে তার উপর নির্যাতন করত: এক পর্যায়ে তাকে চিহ্নিত করে ‘এক ঘরে’ পরিবার করে রাখা হয়েছিল। আল্লামা ছাহেব কিবলাহ সবকিছু জেনে ধৈর্য্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুনেছি বাবার বিবাহে ছাহেব কিবলাহ উপস্থিত ছিলেন এবং নানার ইন্তিকালের পূর্বে যখনই অসুস্থ হয়েছিলেন তখন ছাহেব কিবলাহ বেশ ক’বার তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। ছাহেব কিবলাহর প্রতি তাঁর এ মহব্বতের নজির স্বরূপ তারই আবদার অনুযায়ী ফুলতলীতে ছাহেব বাড়ি সংলগ্ন কবরস্থানে ছাহেব কিবলাহর নিজস্ব জমিতে নানার কবর দেয়া হয়েছিল। এ কথাগুলো বলছি আমার সৌভাগ্যের প্রতীক স্বরূপ এজন্য যে, পারিবারিক সূত্রেও আল্লামা ছাহেব কিবলাহর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল অহংকার করার মতো, স্মৃতিকথা লেখার মতো। এ সম্পর্কে অন্য কোন লেখায় বিস্তারিত লিখবো ইনশাআল্লাহ।
ওলীকুল শিরোমনি, আধ্যাত্মিক জগতের সম্রাট আল্লামা ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর কাছ থেকে অসংখ্য কারামত সংঘটিত হয়েছিল। আমার দেখা একটি কারামত সংক্ষেপে বর্ণনা করছি। বিয়ানীবাজার মাথিউরা সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন রারাই’র মুহাদ্দিস ছাহেব কিবলাহ (মাদ্দা.)’র ছোট ভাই প্রয়াত হযরত মাওলানা মো: খলিলুর রহমান সাহেব। উপাধ্যক্ষ ছিলেন আমার বাবা মাওলানা মোঃ আব্দুল মজিদ। ১৯৯৪ বা ৯৫ ইংরেজী সনে মাদরাসার বার্ষিক জলসায় আল্লামা ছাহেব কিবলাকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে। মওদুদী অনুসারী কতিপয় ছাত্র এতে বেঁকে বসলো। তারা জিদ ধরলো ফুলতলী ছাহেবকে কোন ক্রমেই জলসায় উপস্থিত হতে দেবে না। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ সাহেব স্বীয় সিদ্ধান্তে অটল থেকে ছাহেব কিবলাকে বিষয়টি জানালেন। দ্বীন ইসলাম প্রচারের সংগ্রামে নির্ভীক আল্লামা ছাহেব কিবলাহ স্বীয় রীতিসিদ্ধ নিয়মে বললেন-সেখানে আমার রক্ত ঝরবে,আমার মৃত্যুও হতে পারে তবুও আমি জলসায় উপস্থিত হব। উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ আব্দুল মজিদ সাহেব মাদ্রাসায় তালামীয কর্মীদেরকে কয়েকভাগে ভাগ করে বিভিন্ন কাজের নির্দেশ দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলেন। তিনি তদারকি করতে থাকলেন আরও মনোযোগের সাথে। সেই ছাত্ররা এত হুককি দেয়ার পরও ছাহেব কিবলাহর আগমন দেখে বিচলিত হয়ে পড়লো। তাদের মধ্যে তিন ছাত্র ছিল বেশ উশৃঙ্খল। সেই তিন জনের একজন সিদ্ধান্ত নিলো জলসায় আতঙ্ক সৃষ্টির। সন্ধ্যার পর ছাহেব কিবলাহ মাহফিলে বক্তব্য রাখছেন। এমন সময় মঞ্চের ঠিক পশ্চিম উত্তর কোণে একটি আতশবাজির বোমা বা হাতে তৈরী সাধারণ বোমা ফুটাল সেই ছাত্রটি। খোদার কি মহিমা, বোমাটি তেমন জোরালো শব্দে ফুটলো না। একজন লোকও ভয়ে মাহফিল ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করলো না। ছাহেব কিবলার বক্তব্যে আরো তীক্ষèতা চলে আসলো। তিনি মুজাহিদের ন্যায় বুলন্দ আওয়াজে স্বীয় বক্তব্য দিতে থাকলেন। কয়েক বছর পর যে ছেলেটি বোমা ফুটিয়েছিল তার শরীরের একপাশ পক্ষাঘাত গ্রস্থে এক পা ও হাত অচল হয়ে পড়লো। কিছুদিন পর শুরু হল রক্তবমি। তখন সে স্বপ্নে দেখলো একজন মুত্তাকি ব্যক্তি নির্দেশ দিয়ে বলছেন- ফুলতলী ছাহেবের কাছে ক্ষমা চেয়ে তওবা করো, তা না হলে তোমার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। ১৯৯৭ ইংরেজী সালে সেই ছেলেটি আমার বাবার (সাবেক উপাধ্যক্ষ) কাছে এসে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে প্রথমে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো। তারপর সে বাবাকে নিয়ে ছাহেব কিবলাহর দরবারে হাজির হলো। আল্লাহ তায়ালার সকল মহিমা সহজে বুঝা সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। ওলী-আউলিয়াদের কারামত কোথায়, কখন, কিভাবে সংঘটিত হয় তা সকলের পক্ষে বুঝা সত্যিই কঠিন।
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলা(রহঃ) ৬ই মহররম আমাদেরকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে বাহ্যিক চোখের আড়ালে চলে গেছেন। দেখিয়ে গেছেন সিরাতাল মুস্তাকিমের পথ। নির্দেশ দিয়েছেন তার প্রদর্শিত মিল্লাতে অটুট হয়ে থাকতে। তাই তার ওফাত দিবসে প্রতি বছরের মহররমে মর্সিয়া ক্রন্দনে নয় বরং তার ওলায়াতপূর্ণ বাণী মোবারক স্বীয় জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে রোহানী ফয়েজ আমরা লাভ করবো। কেননা দ্বীন ইসলামের খেদমত, ত্যাগ তিতীক্ষা আর সংগ্রামের মাঝেই রয়েছে, মহান আল্লাহ ও তার হাবীব (স.) এর সন্তুষ্টি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে আমাদের রুহানী পিতা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলার রুহানী ফয়েজ দান করুন এবং তার বাতানো মিল্লাতে আমাদেরকে অটল রাখুন এই প্রার্থনা করছি। পাশাপাশি কায়মনোবাক্যে দুহাত তুলে পরওয়ার দিগারের কাছে দোয়া করছি, আমাদের মুুর্শিদ কিবলার দরজা দুনিয়াবী জ্ঞানের ঊর্ধ্বে অকল্পনীয় মহিমান্বিত স্থানে যেন বুলন্দ করেন। আমিন।
Check Also
নালায়ে কলন্দর : পূত হৃদয়ের নান্দনিক ছন্দবদ্ধ অভিব্যক্তি
মাহবুবুর রহীম আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) রচিত উর্দুভাষার কাব্যগ্রন্থ ‘নালায়ে কলন্দর’। ‘কলন্দর’ হচ্ছে কাব্য …