আল্লাহওয়ালাগণ ক্ববরে জীবিত

আম্বিয়ামে কেরামগণ তাঁদের ক্ববর শরীফে স্ব-শরীরে জীবিত, এটা শরীয়তের দলীল চতুষ্টয় তথা কুরআন শরীফ-হাদীস শরীফ, ইজমা এবং ক্বিয়াস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। পাশাপাশি আল্লাহওয়ালাগণ তাঁদের ক্ববরশরীফে জীবিত, এটাও শরীয়তের দলীল দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। মহান আল্লাহপাক এরশাদ ফরমান-আর যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন, তাঁদেরকে তোমরা মৃত বলোনা। বরং তাঁরা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার না। (সুরা : বাক্বারাহ)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান-আর আল্লাহর রাস্তায় যাঁরা শহিদ হয়েছে, তাঁদেরকে তোমরা মৃত বলে মনে করো না, বরং তাঁরা জীবিত। তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদেরকে রিযেক প্রদান করা হয়। (আল-এমরান)
উপর্যুক্ত আয়াত সমূহে শহিদদেরকে মৃত মনে করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং তাঁরা যে জীবিত এ বিষয়ের উপর অকাট্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে।
পবিত্র হাদীস শরীফে আছে, শহিদগণ মৃত্যুর পর বেহেশতে সর্বত্র বিতরণ করেন। তাঁদের মৃত্যু পরবর্তী জীবন তাঁদের ইহকালিন জীবনের ন্যায়।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় জালালাইন শরীফের হাশিয়াকার বলেন-তাদের এ জীবন দুনিয়ার জীবনের মতো নয়। বরং এর চেয়েও উন্নত ও সমৃদ্ধ। কারণ তাদের রুহ যেখানে চায় সেখানে তাঁরা বিচরণ করতে পারেন।
দীর্ঘদিন পরে কোন কোন আল্লাহওয়ালাদের পবিত্র লাশ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সময় দেখা গেছে তাঁদের পবিত্র শরীর তো অক্ষত রয়েছে, এমনকি তাঁদের গায়ের কাফন পর্যন্ত মাটি স্পর্শ করেনি। মনে হয় গতকাল তাঁদেরকে দাফন করা হয়েছে।
শুধু তাই নয় আল্লাহওয়ালাগণ মহান আল্লাহ পাক থেকে শক্তি প্রাপ্ত হয়ে স্ব-শরীরে বিভিন্ন স্থানে বিচরণও করতে পারেন।
আল্লাহওয়ালাগণ তাঁদের ক্ববরশরীফে স্ব-শরীরে জীবিত এমন কিছু বাস্তব ঘটনা নিুে উল্লেখিত হল।
চোখ দুটি জ্বলজ্বল করছে : সায়্যিদুনা হোযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) ছিলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সার্বক্ষণিক সাথী ও একনিষ্ট খাদেম। তাঁর নিকট নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কিছু গোপন তথ্য এবং উচ্চস্তরের কথা প্রকাশ করেছিলেন যা কোন সাহাবীগণ জানতেন না। এ জন্য তাঁকে ‘সাহেবুসিররিন’ অর্থাৎ-নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘গোপন তথ্য ভাণ্ডার’ বলে আখ্যায়িত করা হতো। খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননের মূল পরিকল্পনাকারী সায়্যিদুনা হজরত সালমান (রা.)-এর সহযোগীরূপে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ইরাক বিজয়েও তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত উজ্জ্বল। শেষ পর্যন্ত হিজরি ৩৬ সনে বাগদাদের নিকটবর্তী একটি জনপদে ইন্তেকাল করেন। ১৯৩৩ খ্রি. তদানীন্তন বাগদাদের শাসক স্বপ্নে দেখেন যে, হজরত হোযায়ফা (রা.) তাকে বলছেন, আমার ক্ববর বন্যার পানিতে স্যাতসেতে হয়ে গেছে। আমাকে এখান থেকে স্থানান্তর কর। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে ক্ববর খোলা হলো। দেখা গেল, প্রায় চৌদ্দশ বছর আগে সমাহিত হজরত হোযায়ফা (রা.)-এর লাশটি সদ্যমৃত ব্যক্তির লাশের মতো তরতাজা রয়েছে। এমনকি তাঁর চোখ দু’টিও জীবন্ত মানুষের চোখের ন্যায় জ্বলজ্বল করছে। পরে এ পবিত্র লাশ বাগদাদ থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরবর্তী ‘সালমান পার্ক’ নামক স্থানে হজরত সালমান (রা.)-এর ক্ববরের পাশে পুনরায় দাফন করা হয়েছে।
গতকল্য দাফন করা হয়েছে : ‘মুয়াত্তা ইমাম মালেক (রহ.)’-এর মধ্যে উল্লেখ আছে যে, সায়্যিদুনা হজরত আমর ইবনে জুমুহ (রা.) এবং সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর ক্ববরকে পানির স্রোত ভেঙে দিল। হজরত আমর ইবনে জুমুহ (রা.) এবং আব্দুল্লা ইবনে আমর (রা.) উভয় আনছারী সাহাবা ছিলেন। উভয় উহুদযুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন। তাঁদের উভয়কে একই ক্ববরে দাফন করা হয়েছিল। পানির স্রোত যখন ক্ববরটি ভেঙ্গে দিল তখন দ্বিতীয় একটি স্থানে তাঁদেরকে দাফন করার জন্য ক্ববরটিকে খনন করা হল। যখন খনন করা হল তখন দেখা গেল তাঁদের উভয়ের শরীর মুবারকের মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং এরূপ মনে হলো যেন গতকল্য তাঁদেরকে দাফন করা হয়েছে।
উক্ত ঘটনাটি উহুদযুদ্ধের ৪৬ বৎসর পরে সংগঠিত হয়েছিল।
ক্বদম মুবারক থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল সায়্যিদুনা হজরত মুয়াবিয়া (রা.) স্বীয় খেলাফতকালে মদীনা তায়্যিবায় নদী খনন করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। নদী খনন করা কালে পথিমধ্যে উহুদের ক্ববরস্থান পড়ে গেল। হজরত মুয়াবিয়া (রা.) ঘোষণা ফরমালেন, আপনারা আপনাদের প্রিয় মানুষের লাশগুলিকে স্থানান্তর করে নেন। এ উদ্দেশ্যে যখন লাশগুলিকে বের করা হল তখন লাশ গুলিকে সম্পূর্ণভাবে অক্ষত ও তরতাজা পাওয়া গেল।
এসময়ে এঘটনাটিও ঘটে গেল যে, ক্ববর খননকালে সায়্যিদুনা হজরত হামজা (রা.)-এর ক্বদম মুবারকের মধ্যে কুদাল লেগে গেল। এতে তাঁর ক্বদম মুবারক থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল।
উক্ত ঘটনাটি উহুদযুদ্ধের ৫০ বৎসর পরে সংগঠিত হয়েছিল। (তাফসীরে মাজহারী)

ক্ববরে তেলাওয়াত : সায়্যিদুনা হজরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবী একটি ক্ববরের উপর তাবু গেড়ে ফেললেন। তাঁর জানা ছিল না যে এখানে একটি ক্ববর আছে। তিনি তাবুতে বসে আছেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন এখানে একজন লোক সূরা মূলক তেলাওয়াত করছেন। তেলাওয়াত করতে করতে সম্পূর্ণ সুরাটি শেষ করে ফেললেন।
সাহাবী উক্ত ঘটনাটিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বর্ণনা করলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমালেন উক্ত সুরাটি আযাব থেকে বাধাদানকারী। এ সূরাটি ক্ববরস্থ লোকটিকে মহান আল্লাহ পাকের আযাব থেকে রক্ষা করে দিয়েছে। (মিশকাত শরীফ)
রক্ত সরে গেল : ‘দালাইলুল খাইরাত’ নামক দরুদশরীফের বহুল প্রচারিত কিতাবের লিখক শায়েখ আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান জাযুলী (রহ.) ৮৭০ হিজরির রবিউল আওয়াল মাসের ১৬ তারিখ ইন্তিকাল করেন।
তাঁর ইন্তিকালের পর ‘বসুস’ নামক স্থান থেকে তাঁর লাশ মুবারক স্থানান্তর করে মুরাকুশের রিয়াদুল ফেরদাউসে দাফন করা হয়। যখন তাঁর লাশ মুবারক বের করা হলো তখন দেখা গেল তাঁর শরীর মুবারকের কাফনের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসেনি। তাঁর শরীর মুবারকও সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে। মনে হলো আজই তাঁকে দাফন করা হয়েছে।
জনৈক ব্যক্তি পরীক্ষামূলক তাঁর চেহারা মুবারকের উপর চাপ দিল। যখন আঙ্গুলী উঠিয়ে নিল তখন উক্ত স্থান থেকে রক্ত সরে গেল এবং স্থানটি সাদাবর্ণ ধারণ করল। যেভাবে জীবিত মানুষের হয়ে থাকে। আবার কিছুক্ষণ পর উক্ত স্থানটি লালবর্ণ ধারণ করল।
এ ঘটনাটি ঘটেছিল তাঁর ইন্তিকালের ৭০ বৎসর পর। (হাশিয়ায়ে দালাইলুল খাইরাত)
সুগন্ধি বেরোচ্ছে : মারা যাওয়ার চার বৎসর পরও ক্ববরে অক্ষত রয়েছে এক হক্কানী আলেমের লাশ। সুগন্ধ বেরোচ্ছে ক্ববর থেকে। ঘটনাটি ঘটেছে ঝালকাঠি শহরের প্রবেশদ্বার পেট্্েরালপাম্প মোড় সংলগ্ন কৃষ্ণকাটিতে। বিগত ২০১২ সনের ৬ই অক্টোবর শনিবার সকালে খবর শুনে ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখা যায় উৎসুক মানুষের ভিড়। খবর শুনে ঝালকাঠি ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও. আব্দুর রশীদ, কুতুবনগর মসজিদের পেশ ইমাম হাফিজ মাও. আমির হোসেন উপস্থিত হয়ে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন।
তারা জানান, এলাকার মরহুম মাও. মোতাহির আলী স্বরূপকাঠি থানার ছারছিনা শরীফের মরহুম পীর সাহেব আল্লামা আবু জাফর মো. ছালেহ (রহ.)-এর মুরীদ এবং নেছারাবাদের মরহুম পীর হজরত মাওলানা আজিজুর রহমান কায়েদ সাহেব (রহ.) হুজুরের ঘনিষ্ট সহচর ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সদালাপি ও ধার্মিক ছিলেন।
ঝালকাঠি পৌর শহরের পেট্টোলপাম্প সংলগ্ন কৃষ্ণকাটি (কুতুবনগর) এলাকায় মাও. মোতাহির আলী ২০০৯ সালের জানুয়ারি ১০৪ বৎসর বয়সে মারা যান। তখন ঝালকাঠি বরিশাল সড়কের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। গত ২০১২ সনের ৫ই অক্টোবর রাজমিস্ত্রি হানিফ ক্ববরের পাশে দেওয়াল নির্মাণ করার সময় একপাশ ভেঙ্গে গেলে ক্ববর থেকে সুগন্ধি আসতে থাকে এবং ভেতরে তাকিয়ে দেখে মৃত ব্যক্তির কাফনের কাপড় অক্ষত রয়েছে। তখন তিনি মৃত ব্যক্তির ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত মীর খলিলুর রহমানকে খবর দিলে খলিল এসে ঘটনা দেখে বিস্মিত হন। এ খবর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। তখন এই এলাকার কর্তব্যরত এস.আই জাহাঙ্গীর জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান।
স্থানীয়রা জানান, এই ক্ববরস্থানের পাশের জমি সড়ক ও জনপথের বিধায় ওই জমি যদি মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের দেয়া হয় তাহলে তারা এখানে একটি হাফেজী মাদ্রাসা করতে ইচ্ছুক। (অভিযাত্রিক অক্টোবর সংখ্যা ২০১২ ইং)
মাও. আব্দুল হাকিমের লাশ : ১৬ বৎসর আগে ইন্তিকাল করা মাও. আব্দুল হাকিমের (৫২) লাশ অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, লালমনির হাট জেলা শহরের থানাপাড়ার অধিবাসী ও পুস্তক ব্যবসায়ী মাও. আব্দুল হাকিম ১৯৮৯ সালের ৪ ঠা সেপ্টেম্বরে ইন্তিকাল করেন। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার চোরপুড়া গ্রামে তাঁকে দাফন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ভয়াবহ নদীর ভাঙ্গনে মাওলানা আব্দুল হাকিমের ক্ববর তিস্তা নদীর গর্ভে ভেঙে যায়। এ সময় স্থানীয় জনতা মাও. আব্দুল হাকিমের লাশ কাপনের কাপড়সহ উদ্ধার করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে লাশটি এক নজর দেখার জন্যে উৎসুক জনতার ঢল নামে। পরে কোরপুড়া সিনিয়র মাদ্রাসা মাঠে বহুসংখ্যাক মানুষের উপস্থিতিতে পুনঃনামাযে জানাযা শেষে মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় দাফন সম্পন্ন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, মাও. আব্দুল হাকিম ব্যক্তি জীবনে ধর্মীভীরু ও পরহেজগার ছিলেন এবং সাদামাটা জীবন-যাপন করতেন। (ইনকিলাব, ৩রা জুলাই ২০০৫ ইং)
অবিকৃত কাপনের কাপড় : হজরত আবুল হাসান ইবনে যাগুনী (রহ.) বলেন, যখন শরীফ আবু জাফর (রহ.) কে হজরত আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর ক্ববরের পাশে দাফন করা হল তখন হজরত আহমদ ইবনে হাম্বল (র.) এর ক্ববর খুলে গেল।
দেখা গেল, হজরত আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর কাপনের কাপড় মোটেই নষ্ট হয়নি। দাফনের সময় যেভাবে পরিস্কার ছিল সেভাবেই রয়েছে।
এ ঘটনাটি ঘটেছিল তাঁর ইন্তিকালের ২৩০ বৎসর পরে। (রওদ্বাতুর রাইয়াহিন)
ক্বিবলার দিকে মুখ : হজরত আবু তুরাব বলখী (রহ.) এক অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। যেমন ছিলেন অসাধারণ পণ্ডিত তেমনি ছিলেন ত্বরীকত পন্থীদের মধ্যমণি। আবার সুফী সমাজেরও শিরোমণি। তাঁর সহিষ্ণুতা, কর্মনিষ্ঠাও কিংবদন্তীতুল্য।
শোনা যায়, বসরার কোনো এক বনে তাঁর মৃত্যু হয়। হয়তো বা লোকের অভাবে তাঁর কাপন-দাফন হয়নি। তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর পর কিছু লোক ঐ বনে গিয়ে দেখে তাঁর মরদেহ একখানা লাঠিতে ভর দিয়ে ক্বিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁট দু’খানি শুকনা। কিন্তু এতোদিন পরেও তাঁর মৃত দেহের কোনো ক্ষতি হয়নি। (তাযকেরাতুল আউলিয়া)
টক্ টক্ শব্দ হচ্ছে : আল্লামা আযীযুর রহমান নেছারাবাদী (রহ.) ‘মলফুযাতে নেছারিয়া’ নামক বইতে উল্লেখ করেন যে, স্বীয় মুর্শিদ আল্লামা নেছার উদ্দীন (রহ.) তাঁর এক মুরিদের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, বন্দেআলী নামে আমার একজন মুরিদ ছিলেন। তিনি অত্যন্ত গরিব লোক ছিলেন বটে কিন্তু তিনি একজন তেজস্বী ফয়েযের অলি ছিলেন।
খোদার মর্জি কিছুকাল পর তিনি ইন্তিকাল করেন। ইন্তিকালের কিছুদিন পর তাঁর ক্ববর ভেঙ্গে গেল। তাঁর একটি ছোট কন্যা ছিল। কন্যাটি ক্ববরের কাছে গিয়ে দেখতে পেল যে, তার খেজাব দেওয়া দাঁড়ি ও সমস্ত শরীর এখনও অবিকৃত অবস্থায় আছে। এতদ্দর্শনে সে তার মায়ের কাছে গিয়ে সকল ব্যাপার খুলে বললে মাতা কন্যাটিকে নিয়ে ক্ববরের নিকট গেলেন এবং কন্যার পিতা বন্দে আলী মিঞাকে অবিকৃত অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি তার কন্যাকে সম্বোধন করে বললেন, মা! তোমার ভীত হওয়ার কারণ নেই। তুমি তোমার বাবার ক্ববরের মধ্যে নেমে তাঁর দাড়ি এখনও শক্ত আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখ। কন্যাটি মার কথানুযায়ী বন্দেআলী মিঞার বুকে হাত দিয়ে উত্তর দিল মা! আব্বাজানের বুক এখন পর্যন্ত গরম আছে এবং উহার মধ্যে ঘড়ির কাটার ন্যায় টক্ টক্ শব্দ হচ্ছে।
টুনুক থেকে দিল্লি : হজরত শাহ আবু সায়ীদ দেহলভী (রহ.) মহান আল্লাহ পাকের গোপন রহস্যের খনি ছিলেন। তাঁর ইন্তিকালের চল্লিশ দিন পরই তাঁর শবদেহ টুনুক থেকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয় যখন কাপনের বক্স খোলা হয় তখন মনে হয় যেন এক্ষুণি জানাযার নামাজের জন্যে গোসল দেওয়া হয়েছে। শবদেহে কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি যে তুলা নিচের দিকে দেওয়া হয়েছিল সেখান থেকে খুশবু সবাই গ্রহণ করেছিল। (আনওয়ারুল আরেফীন)
একযুগ পর : রুপগঞ্জে মৃত্যুর একযুগ পর পারিবারিক দ্বন্ধের কারণে এক মহিলার অক্ষত লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। এমনকি লাশের কাফনের কাপড়টিও নষ্ট হয়নি। এ ঘটনা দেখে জনতার ঢল নামে ওই বাড়িতে। উপজেলার কাঞ্চন পৌর এলাকার কেন্দুয়া গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। (যুগান্তর : ৫ ফেব্র“য়ারি ২০১১ ইং)
ঘুমন্ত মানুষের মতো : ছারছীনার পীর সাহেবের জামাতা কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ.বি.এম. ছিদ্দীকুর রহমান চৌধুরীর মাতার মৃত্যুর এক মাস পর কোনো কারণে ক্ববর ভাঙ্গনের পর লাশকে অক্ষত অবস্থায় ঘুমন্ত মানুষের মতো পাওয়া গেছে।
ফরাজীর লাশ : বরিশাল জেলার মুল্লাবাড়ি নামক গ্রামের ফরাজী নামে জনৈক ব্যক্তি ছারছীনার পীর সাহেবের কাছে চাকুরির জন্যে আবেদন করলে পীর সাহেব তাঁকে তাঁর লেখাপড়ার যোগ্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি পাঠশালা পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। তখন পীর সাহেব মুচকি হেসে বললেন, তোমার চাকুরি হলো তাসবীহ পাঠ করা। আর আমার বাড়িতে থাকা, খাওয়া দাওয়া সব ফ্রী। তখন থেকে ফরাজী নামক দরিদ্র ব্যক্তি বাড়িতে বসে নিরবে তাসবীহ নিয়ে বসে থাকেন। উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর ৪৬ বৎসর পর ক্ববর ভেঙ্গে গেলে ক্ববরের মধ্যে অক্ষত অবস্থায় যিন্দা মানুষের ন্যায় তার লাশ পাওয়া যায়।
(ঘটনাদ্বয় বর্ণনাকারী মাও. কুতুবুজ্জামান, সংগ্রহকারী মাও. আব্দুল কুদ্দুস)
সবুজ শ্যামল বাগান : আল্লামা সুহাইলী (রহ.) ‘দালায়েলুন নবুওয়াত’ গ্রন্থে লিখেছেন যে, একজন সাহাবী উহুদ পাহাড়ের নিকট মাটি খনন করছিলেন। ফলে পাশ্ববর্তী একটি ক্ববর থেকে একটি পাশ খুলে গেলে ভিতরে দেখতে পেলেন যে, একজন লোক খাটে বসে আছেন তাঁর সামনে কোরআন শরীফ। তিনি কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করছেন। তাঁর সামনে একটি সুন্দর শ্যামল বাগান এবং লোকটির গণ্ডদেশে ছিল আঘাতের চিহ্ন, এতে বুঝতে বাকী ছিল না যে, তিনি উহুদের শহীদদের মধ্য হতে একজন। (শরহুছ্ছুদুর)
স্বর্ণের কোরআন শরীফ : একজন নেককার লোকের বর্ণনা, তিনি বলেন, আমি এক ইবাদতগোযার বুযুর্গের জন্যে ক্ববর খনন করে তাঁকে ক্ববরের মধ্যে রাখলাম। ক্ববরটিকে যখন সমান করছিলাম তখন পাশ্ববর্তী একটি ক্ববরের একটি ইট নিচে পড়ে গেলে আমি দেখলাম যে, একজন সাদা পোশাকধারী বুযুর্গ লোক বসে আছেন। তাঁর সামনে একটি স্বর্ণের কোরআন শরীফ। যার অক্ষর গুলোও স্বর্ণের। বুযুর্গ লোকটি কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করছেন। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহপাক তোমার উপর রহম করুন। ক্বিয়ামত কায়েম হয়ে গেছে কী? বললাম, না। এ কথা শুনে বুযুর্গব্যক্তি বললেন, তাহলে ক্ববরের ইট যথাস্থানে রেখে দাও। আল্লাহপাক তোমাকে রহম করুন। অতঃপর আমি উক্ত ইটখানাকে যথাস্থানে রেখে দিলাম। (শরহুছ্ছুদুর)
লাশ মুবারক মদীনা ত্বায়্যিবায় : সায়্যিদুনা হজরত সা’দ বিন আবীওয়াক্কাস (রা.)-এর ইন্তেকাল মদীনা ত্বায়্যিবা হতে ১২ মাইল দূরে হয়েছিল। তাঁর দাফনের পর সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় লোকেরা কাঁধে করে তাঁর লাশ মুবারক মদীনা ত্বায়্যিবায় নিয়ে আসেন। (তাফসীরে মাযহারী)

Comments

comments

About

Check Also

‘বাংলার রুমী’ কাব্যে আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী র.

মো. ছাদিকুর রহমান অলংকারী জীবন ও জগতের এমন কোনো দিক নেই যা কবিদের কবিতায় বাদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *