ক্রিকেট খেলার প্রতি আমার আগ্রহ ছোট বেলা থেকেই। এটা আমার এক প্রকার নেশায় রুপান্তরিত হয়ে গেছে। কিন্তু শহরে থেকে মাঠ আর সময়ের অভাবে খেলা হয় না। তবে এবার ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যেয়ে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে দারুণ এক বিড়ম্বনার মুখোমুখি হলাম।
বাড়ির পাশে পাড়ার কচিকাচা ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে। আমি অনেকক্ষণ ধরে তাদের খেলা দেখছি আর নিজে নিজে মজা উপভোগ করছি। কচিকাচাদের চেচামেচি দৌড়াদৌড়ি আর এলোমেলো খেলা দেখে আমার বেশ ভালোই লাগছে। শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। ছোট মানুষের মতো তাদের কাছে বায়না ধরলাম আমাকে খেলতে নেয়ার জন্য। কিন্তু কিছুতেই তারা আমাকে খেলতে নেবে না। অনেক ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে রাজি করলাম। তবে শর্ত দিলো আমাকে ধর্মের খোলে খেলতে হবে। ধর্মের খোল বলতে আমি শুধু দুই দলের ব্যাটিং করবো, তাও সবার শেষে। বোলিং, ফিল্ডিং করতে পারবো না। আমি শর্ত মেনে নিলাম।
এদের মধ্যে কাউকে আমি চিনি, কাউকে চিনি না। ওরা আমাকে কাকু, মামা, ভাইয়া ইত্যাদি বলে ডাকছে। আমিও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে সম্বোধন করে ডাকছি।
সবার শেষে এবার আমার ব্যাট করার পালা। ব্যটিংএ নামতেই কড়া হুকুম; লুঙ্গি কাছা দিতে হবে! ( কাছা মানে লুঙ্গি ছোট করে গুছিয়ে পরা) আমি বাধ্য হয়ে লুঙ্গি কাছা দিয়েই ব্যাটিং করতে শুরু করলাম। একটা বল ব্যাটের কানায় লেগে পাশের বাড়ি গিয়ে পড়লো, আর সাথে সাথে ঝাঝালো চিৎকার! কেরে, কেরে বল মারলো.? বলতে বলতে একজন মহিলা ছোট লাঠি নিয়ে তেড়ে আসছে। সকল খেলোয়াড় আমাকে দেখিয়ে বলছে আমরা মারিনি, উনি মারিছে! আমার তো পরানের মধ্যে ধুক পুক শুরু হয়ে গেছে! দৌড় দেবো এমন সাহস ও পাচ্ছি না। লজ্জায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকলাম। মহিলাটা কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো কিরে কেমন আছিস? আমি মাথা উচু করে তাকিয়ে দেখি মহিলাটি আমার স্কুল জীবনের বান্ধবী সোমা। অনেক দিন পর সোমাকে দেখলাম তাই দূর থেকে চিনতে পারিনি। আমি কোনমতে স্বাভাবিক হয়ে বললাম ভালো আছি, তুই কেমন আছিস?
আমিও ভালো, তা তুই এদের সাথে কি করিস? সোমার প্রশ্ন।
আমি বললাম কি আর করবো ক্রিকেট খেলি।
হুম। সারাজীবন খেলে যেতে হবে! পিছনে তাকিয়ে দেখ আমার ছোট ছেলে উইকেট কিপার।
সোমার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম- এটা তোর ছোট ছেলে? আর বড় টা.?
সোমা বললো বড় টা ক্লাস ফাইভে পড়ে আর ছোট টা থ্রি তে।
আমি ফিসফিস করে বললাম ভাগ্যিস তোর মেয়ে হয়নিরে.!
আরে চিন্তা করিস না, আশায় থাক এবার হবে! একথা বলেই সোমা চলে গেলো।
আর আমি লুঙ্গির কাছা খুলতে খুলতে সোমার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।