বিয়ে এবং বিড়াল

তিন বন্ধুর মধ্যে দু’জনের বিয়ে হয়ে গেছে। তৃতীয় বন্ধুর বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে। বিয়ে উপলক্ষে এই তিন বন্ধুর সাক্ষাৎ ও খোশগল্প এবং তৃতীয় বন্ধুকে নানা উপদেশ বাণী শুনাচ্ছেন বিবাহিত দুইজন। হঠাৎ প্রথম বন্ধু বললেন- ‘শাদীর পহেলা রাতে মারিবে বিড়াল/না হলে বরবাদ সব তাবত পয়মাল।’ এ উপদেশ শুনে তৃতীয় বন্ধু হতভম্ব। সেটা আবার কী!
নতুন বিয়ে করতে যাওয়া তৃতীয় বন্ধুর আশ্চর্যান্বিত জিজ্ঞাসু মুখাবয়ব দেখে দুই বন্ধু মুচকি হাসলেন। তৃতীয় বন্ধুর ধৈর্যের বাঁধ যখন ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম তখন দ্বিতীয় বন্ধু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন- আমার মতো কমবখত হোসনারে বন্ধু। বিয়ের প্রথম রাতেই বিড়ালটা মারিস। প্রথম বন্ধু এবার বললেন- শুনো তবে আসল কাহিনী।
আমাদের শ্বশুরমশাই পিঠাপিঠি বয়সের দুই রূপসী কন্যাকে সাথে নিয়ে জন্মভূমিতে এলেন। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেন এ দুই কন্যার বিয়ে দিবেন। বর্ণনায় লেখলেন,তার মেয়ে দু’টি খুবই সুন্দরী, গুণবতী, কুমারী, উঁচু বেতনের চাকুরীজীবী এবং ব্রিটেনের স্থায়ী নাগরিক। পিতৃসূত্রেও অঢেল সম্পদের অধিকারী হবে। দু’জন শিক্ষিত ও সুদর্শন পুরুষ তাকে বিয়ে করতে পারবে একটি শর্তে। শর্তটি হলো-মেয়ে দু’টি চাকুরী করে সারাজীবন স্বামীদ্বয়কে ঘরে বসিয়ে খাওয়াবে পরাবে তবে প্রতিদিন স্বামীর মাথায় পঞ্চাশটি জুতারবাড়ি মারবে। এই বিজ্ঞাপন দেখে সাহসকরে কেউ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায় না। কিন্তু আমরা দুই বন্ধু দেখলাম দেশে চাকুরীর অভাবে রুটিরুজি না পেয়ে না খেয়ে না পরে মরে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে। না খেয়ে মরার চেয়ে খেয়ে-পরে পঞ্চাশটি জুতারবাড়ি খেতে খেতেই বেঁচে থাকা অনেক উত্তম। যেই ভাবা সেই কাজ। আমরা প্রস্তাব পাঠালাম এবং বিয়ের দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গেলো।
বিয়ের দিন রাতে ঘটলো আসল ঘটনা। আমরা নিশ্চিত জানি পরদিন সকাল হলেই নববধূর হাতে পঞ্চাশটি জুতারবাড়ি খেতে হবে। আমি মনেমনে একটা বুদ্ধি করতে লাগলাম। বুদ্ধিটি বেশ ফলপ্রসূ হলো। বাসররাতে সুন্দরী নববধূ নানা ধরনের খাবার নিয়ে রুমে ঢুকছেন কিন্তু তার সাথে ঢুকছিল একটি কালোবিড়াল। আমি পূর্বথেকেই লুকিয়ে রাখা তরবারিটি বের করে এককোপে বিড়ালের মাথা ঘাড় থেকে আলাদা করে তর্জনগর্জন শুরু করলাম। বললাম- আমার মেজাজ অনেক কড়া। বিগড়ে গেলে যখন তখন অগ্নিমূর্তি ধারণ করি। এই বিড়ালের মতো যে কারো মাথা কেটে ফেলতে আমার একটুও বাধে না। তাই এখন থেকে তুমি সাবধান হয়ে থেকো বিবি।
কয়েকদিন পর আমরা দু’বন্ধুর দেখা। আমার মাথায় আগের মতোই চুল, মুখে হাসি-খুশির রেখা, নাদুসনুদুস চেহারা দেখে সে অবাক হয়ে বললো- বন্ধু, তোর বউ কি খুব আস্তে আস্তে জুতারবাড়ি মারে? নাকি পঞ্চাশটি থেকে অনেক কম মারে তা বুঝতে পারছি না। এই দেখ, জুতারবাড়ি খেতে খেতে আমার মাথায় একটা চুলও অবশিষ্ট নেই। মুখের অবস্থাও দেখতে পাচ্ছিস কেমন ধকলের ভেতরে দিন যাচ্ছে। তখন আমি মুচকি হেসে বললাম- বন্ধু, আমিতো বিয়ের রাতেই কালোবিড়াল মেরেছিলাম। আর সেদিন থেকেই জুতারবাড়ি খাওয়ার আইনটি থেকে নিস্তার পেলাম। তুমিও চেষ্টা করে দেখো।
সেদিন রাতে সেও একটি ধারালো তরবারি নিয়ে তর্জনগর্জন করতে করতে বউয়ের আদরের কালো বিড়ালটির মাথা কেটে দিলো। কিন্তু ফল হলো উল্টো। তার বউতো রেগে আগুন হয়ে বললো- ‘তুমি আমার আদরের বিড়ালটি মেরেছো,তাই শাস্তি হিসেবে এখন থেকে তোমাকে একশ’টি জুতারবাড়ি খেতে হবে।’ আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি বিড়ালটিকে এককোপে মারতে পেরেছিলে? সে বললো- হ্যাঁ, এককোপেই-তো মাথা আলগে দিয়েছিলাম। তবু কাজ হলো না। প্রতিদিন জুতারবাড়ি খেতে খেতে এই দেখ আমাদের বন্ধুটির চুলের সাথে সাথে দাড়ি-গোঁফও উধাও হয়ে গেছে। তার শাস্তির এই আপদ ও গজবের কথা শুনে তাকে বলেছিলাম- বন্ধু, শাদীর পহেলা রাতেই বিড়াল মারতে হয়।

(গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক, তবে সৈয়দ মোজতবা আলীর একটি পুঁথির ছায়া অবলম্বনে রচিত)

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *