পৃথিবীর প্রথম মানচিত্র

সুপ্রাচীন কালে লোকে তাদের আশপাশ অঞ্চলের নকশা আঁকতে পারত। নয়তো কী করেই বা বোঝানো যায় কোথায় ভালো শিকার পাওয়া যায়, কোথাকার ফলমূল বেশি মিষ্টি? পরে এই আদিম ভৌগলিকরা তাদের নকশায় আশেপাশের পল্লীগুলির ছবি আঁকতে লাগলো। ছোট ছোট পথরেখা এঁকে সেগুলি যুক্ত করল। আর যখন কারাভান প্রথম বাইরেরে দেশে যাত্রা করল তখন সে চলার দীর্ঘ পথঘাটের নকশা এবং বিবরণও তৈরি করল। খ্রিস্টপূর্ব শতাব্দীর প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক আনাক্সিতান্দর সে সময় প্রচলিত বহু বিবরণ সংগ্রহ করে সমগ্র পৃথিবীর একটা নক্সা আকার চেষ্টা করেন। এই ভাবে সৃষ্টি হয় প্রথম মানচিত্র। সোভিয়েত ইউনিয়নে কৃষ্ণসাগরের অদূরে মাইকোপ নামে একটি শহর আছে। বেলায়া নদীর তীরে এই শহর। তেমন একটা পুরনো নয়। একশ বছরের সামান্য বেশি হতে পারে তার বয়স। শহরের অদূরে উঁচু হয়ে আছে একটা ঢিবি, কবে যে ওখানে মাটি স্তুপকার করা হয়েছিল। কেউ বলতে পারে না। কেনই বা করা হয়েছিল তাও লোকে বহুকাল হলো ভুলে গেছে। অবশেষে একদিন পতœতত্ত্ববিদ পন্ডিতেরা ঠিক করলেন ঢিবিটা খুঁজেই দেখা যাক না হতে পারে যে ওর ভেতরে এমন সমস্ত জিনিস আছে যা থেকে কোন এক সময় এখানে সংঘটিত ঘটনার ইতিহাস পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

যা বলা তাই কাজ। বৈজ্ঞানিক অভিযানের জন্য তৈরি হলেন পণ্ডিতেরা। ঢিবিটার কাছে এলেন তারা, শুরু হয়ে গেলো। একদিন গেল কিছুই না। দুদিন যায়, তিনদিন যায়, কোদালে ওঠে চাপ চাপ মাটি, কেবল বালি আর প্রত্বতত্ববিদরা হতাশ হয়ে পড়লেন। তারা তখন ভাবতে শুরু করছেন। এমন বাজে কাজে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না। এমন সময় তারা সন্ধান পেলেন গুপ্তধনের। গুপ্তধনই বটে যেন। কী নেই সেখানে! মাটিতে চাপা পড়ে ছিল একটা সমাধি। সমাধির মাথার ওপরে সোনার তবকে কারুকাজ করা জমকালো চাঁদোয়া। চাঁদোয়াটা খাড়া আছে চারটে রূপোর থামের ওপর। প্রতিটি থামের শেষ প্রান্তে রূপো আর সোনার তৈরি একটি করে পাকানো শিংওয়ালা ষাঁড়ের অপূর্ব মূর্তি। আরও খুঁড়ে পাওয়া গেল সোনারূপোর সুন্দর তৈজসপত্র, বহু রকমের অলংকার। সমস্ত হাতিয়ার আর অস্ত্রশস্ত্র ছিল পাথর আর খাঁটি তামার তৈরি।
বুঝাই যাচ্ছিল কোন এক সময় এক বড় ঐশ্বর্যবান গোষ্টির দলপতি মারা যায়। হয়তো বৃদ্ধ বয়সে মারা যায়, হয়তো বা শত্রুর সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যায়। কিন্তু সে যাই হোকনা কেন, লোকটি এতই শ্রদ্ধার পাত্র ছিল যে যোদ্বারা পরম সম্মানের সঙ্গে তাকে সমাধিস্ত করে। কিন্তু পণ্ডিতেরা যার সন্ধান পেয়ে বেশি উল্লাসিত হন – সোনা না না হয় রুপোও নয়। উদ্ধার করা সামগ্রীর মধ্যে সবচেয়ে আশ্বর্যজনক ছিল চারধারে আঁকা গোলাকার চীনেমাটির কিছু পাত্র। ঐ কলসীগুলো ভিতরে কোন এক সময়ে তেল ও সূরা রাখা হত। অজ্ঞাতনামা শিল্পীরা মাটির গায়ে এঁকে রেখেছেন ককেশাস পর্বতমালা আর নদী। যে নদী ঐ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। দেখতে হয়েছে সত্যিকারের নকশা, আর এমনই নিখুঁত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ যে আঁকা জায়গাগুলি প্রতœতত্ত্ববিদরা বার করতে কোন বেগ হয়নি। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল উদ্ধারপ্রাপ্ত নিদর্শনের বয়স। পাত্রগুলি কম হলেও চার হাজার বছরের পুরনো। সেই সময় এখানকার তৃণভূমিতে বসবাসকারী গোষ্টিগুলোর পক্ষে অক্ষরপরিচয় না জানাই ছিল স্বাভাবিক, অথচ এলাকার মানচিত্র তারা ঠিক আঁকতে পারত। সম্প্রতি তুরষ্কদেশে খননকার্য করে প্রাচীন পল্লীর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের সময় প্রতœতত্ত্ববিদরা মাটির ফলকের গায়ে আঁচড় কাটা নকশার সন্ধান পেয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিদর্শনটি নয় হাজার বছরের পুরনো। এখন পর্যন্ত এই মানচিত্রটি পৃথিবীর প্রাচীনতম মানচিত্র রূপে বিবেচিত সত্যি সত্যিই তাই কিনা কে বলতে পারে। বলা যায়না কোথাও হয়তো আরও পুরোনো আছে।
নেহাৎ আমরা খুজে পাইনি এখনও।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *