উমায়িরের ২১ ভাবনা

আমার ছেলে উমাযি়র। ওর জন্মের পর নাম রাখা নিযে় সবার মধ্যে একটা চাঞ্চল্য বিরাজ করছিল। আমি বললাম ইসলামী নাম রাখা চাই। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামশুনে যেন বুঝতে পারেন আমার উম্মত। শেষমেশ ওর মামা নর্দান ইউনিভার্সিটির ল’ এর ছাত্র মুহিব ফোন করে বলল রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেন, ‘‘ইয়া আবা উমাযি়র! মা ফায়ালান নুগাযি়র?’’ ‘‘উমাযি়র’’ নামটা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের পবিত্র মুখে উচ্চারণ করেছেন। এই নামটা রাখলে কেমন হয়? সর্ব সম্মতিক্রমে ‘উমাযি়র’ সিলেক্ট হল। আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে দোয়া করলাম। আল্লাহ ওকে যেন ছারছীনার মরহুম পীরে কামেল শাহ আবু জাফর মুহাম্মদ সালেহ (রহ.) এর মতো আল্লাহর অলী হিসেবে কবুল করে নেন। ধীরে ধীরে ওর বেডে় ওঠা দেখি। দৌড় ঝাপ একটু করে যতক্ষণ একা থাকে। কিন্তু আশপাশের ছেলে মেযে়রা ওর সাথে যোগ দিতে চাইলে ও দূরে সরে যায়। ছেলের মুখে কথা ফোটার পর থেকে আমায় পেরেশান করে রাখে। একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি অস্থির। কোন কিছুতে তার দ্বি-মত হলেই আর রক্ষা নেই। তাকে বুঝিযে় দিতে হবে কোনটা সঠিক এবং কেন সেটা সঠিক হল। মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করি বড় হলে যুক্তিবাদী খেতাব নিবে নাকি? ও আবার পাল্টা প্রশ্ন করে আব্বু যুক্তিবাদী কি? আমি অস্থির ২১ শে ফেব্র“য়ারী রাতে চতুর্দিকে মাইকে গান বাজে। আমার ছেলে জিজ্ঞেস করে-
-আজকে এতো গান বাজে কেন?
-বললাম আজ একুশে ফেব্র“য়ারি সেজন্য।
-২১ শে ফেব্র“য়ারি কি?
-অনেক আগে, ১৯৫২ সালের এই দিনে ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষার বিজয় হযে়ছিল।
-বাংলা ভাষার বিজয় কেন?
আমাদের দেশে তখন বিদেশীরা শাসন করত। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে চাইলে ওরা বাধা দিযে়ছিল। শেষে আমাদের দেশের ছেলেরা তাদের সাথে লড়াই করেছে। সেই লড়াইযে় আমাদের দেশের অনেক ছেলে শহীদ হযে়ছে। শেষে বিদেশীরা আমাদের সাথে পারেনি।
-তাহলে এই দিনে সবখানে গান বাজায় কেন?
-২১ কে মনে করিযে় দিতে। আব্বু আর কথা বলে না। এ রকম একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে অস্থির।
কিন্তু ঝামেলায় পড়লাম ২১ শে ফেব্র“য়ারি সকাল বেলা। ছেলে আমার দেখল সকাল বেলা স্কুলের ছোট ছেলে মেযে়রা খালি পাযে় হেঁটে যাচ্ছে।
-জিজ্ঞেস করল আব্বু ওরা খালি পাযে় কেন?
-বললাম ২১ শে ফেব্র“য়ারি যারা শহীদ হযে়ছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে খালি পাযে় শহীদ মিনারে ফুল দিযে় আসবে।
-যারা শহীদ হযে়ছেন তারা কি শহীদ মিনারে থাকে?
-না, তাদেরকে স্মরণ করে শহীদ মিনার তৈরি করা হযে়ছে।
-আব্বু, যারা শহীদ হযে়ছে তারা তো মরে গেছে তাহলে ফুল কাকে দেবে?
দেখলাম ছেলের এই প্রশ্নের জবাব দিতে গেলে বিপদে পড়ব। অকে ভুল শেখানো হবে। শহীদ মিনারে ফুল দিযে় শ্রদ্ধা জানানো মুসলিম কালচারের বহির্ভূত কাজ। আমরা মুসলমানরা সব চেযে় বেশী শ্রদ্ধা করি রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে। তাঁকে কেন্দ্র করে আমাদের পৃথিবীতে কোন স্তম্ভ নেই যেখানে আমরা ফুল দিযে় শ্রদ্ধা জানাই। এমনকি মসজিদেও ফুল দেই না। এটা হিন্দু সংস্কৃতি। তারা তাদের প্রতিমাকে ফুল দেয়। তাই আমি আর সামনে বাড়ালামনা। ছেলেকে বললাম আব্বু, আমরা আমাদের ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা করব মন থেকে আর তাদের জন্য নামায পডে় কোরান শরীফ পডে় দোয়া করব আল্লাহ তাদের জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। বল-আমীন।
উমাযি়র বলল-আমিন।

Comments

comments

About

Check Also

কারবালার শিক্ষা

শাফীর বয়স বারো পেরুলো। ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা ওকে সব সময় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *