আশা পূরণের মালিক আল্লাহ

দুই হাজার আট সাল। ‘সাফা’ তখন জামাতে রাবের ছাত্রী। সাফাদের জামাতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মোট ১২জন। তাদের এগারো জন ছিলেন স্থানীয়, একমাত্র ‘জসিমউদ্দিন’ ভাই অন্য এক জেলা থেকে এসে তাদের সাথে ভর্তি হয়েছিলেন। সাফা’দের সাথে উনার বয়সের তারতম্য হবে প্রায় কুড়ি বছরের। যাই হোক ভিন্ন জেলা থেকে আসা সে ভাই-ই ছিলেন মুরব্বী কাতারের। পড়ালেখায় খুব মেধাবী ও তাদের থেকে অনেক বড় হওয়াতে রাবে জামাতের নাজিম হলেন তিনি। ছবক বলেন আর আম মশক বলেন যেখানে উনার বুঝার কমতি হতো তাৎক্ষণিক ভাবে হুজুর মহোদয়দের সামনে প্রশ্ন ছুড়ে দিতেন অনায়াসে। উনার প্রশ্নের জন্য সবারও সেই প্রশ্নোত্তর জানা হয়ে যেতো। বাকি সবাই ছিলেন কথায় কথায় মাশাআল­াহ বলার দলে। তারা কখনোও ভয়ে, কখনো আবার ইচ্ছা করে কোন প্রশ্নই করতো না হুজুরদেরকে। যাই হোক, আসল কথায় আসা যাক। নিয়মানুযায়ী দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্টের রাবে জামাতের চূড়ান্ত পরীক্ষা ২৮ রামাদ্বান ঘোষণা হলো। পরীক্ষার প্রায় পাঁচ সাত দিন পূর্বে নাজিম ভাই কোথাও বেড়াতে যাবেন বলে কয়েকদিনের ছুটি নিলেন প্রধানকারী হুজুরের কাছ থেকে। ছুটি শেষে উনি আবার মাদ্রাসায় আসলেন। মাদ্রাসায় এসে উনার সহপাঠীদের অর্থাৎ সাফাদেরকে ‘দুরুদে হাজারী শরীফ’-এর প্রিন্ট কপি হাদিয়া হিসেবে দিয়ে বললেন, আমি যেখানে গিয়েছিলাম সেখান থেকে তোমাদের জন্য এই দুরুদ শরীফের প্রিন্টগুলো হাদিয়া নিয়ে এসেছি। সাফারা খুব আনন্দের সহিত তা গ্রহণ করলো। তার পরে উনি বললেন, আমি চট্টগ্রাম ‘হযরত খাজা গরিব উল্লাহ শাহ’ রহ.-এর মাযার জিয়ারতে গিয়েছিলাম, মাযার কমিটি থেকে এই দুরুদ শরীফের অনেকগুলো কপি আমাকে দেওয়া হয়েছে যাতে আমি নিজে আমল করি ও অন্যদেরকে হাদিয়া দিয়ে আমল করার জন্য উৎসাহ দেই। নাজিম ভাই মাযারের সৌন্দর্য বর্ণনা করছিলেন, সবাই মনযোগ সহকারে উনার থেকে সেখানের গল্প শুনছিলো, এদিকে সাফা কল্পনাতে সেখানের দৃশ্য অবলোকন করতে লাগলো ও মনে মনে ভাবলো, ইশ.! আমিও যদি সেখানে যেতে পারতাম, উনার মতো আমিও যদি অন্যদেরকে এরকম ভালো কিছু হাদিয়া দিতে পারতাম। কথায় আছে আল্লাহ প্রত্যেক নেক আশাগুলো কোনো না কোন সময় পূর্ণ করেন যদি তা কায়মনোবাক্যে আল­াহর কাছে চাওয়া হয়ে থাকে। অনেক বছর কেটে গেলো। সাফা সেই ইচ্ছা আশার কথা ভুলে গেলো। ২০২১ সালের শেষের দিকে সাফা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে, অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েও তার শরীরিক অবস্থার কোন উন্নতি হচ্ছেনা দেখে ওর চাচা বললেন, চট্টগ্রামে ভালো ডাক্তার আছে এখানে সাফাকে নিয়ে আসলে ইনশা আল­াহ রোগ ধরা পড়বে ও শরীরিক অবস্থার উন্নতি হবে। সাফার চাচা চাকুরীর সুবাদে চট্রগ্রাম বসবাস করেন। চাচার কথা মতো সাফাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হলো, চিকিৎসার জন্য সে প্রায় এক মাসের বেশি সময় এখানে থাকে। সাফা ভাবলো যেহেতু চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছি তাহলে কাছের দর্শনীয় স্থান দেখবো এবং আল­াহর ওলীদের মাযারও এই সুযোগে জিয়ারত করে যাবো।

কোন এক শুক্রবার সে ইচ্ছা করলো হযরত গরীব উল­াহ শাহ-এর মাযার জিয়ারত যাবে, যেই কথা সেই কাজ। সকাল সাড়ে নয়টায় তার ভাইয়ের সাথে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলো। ওর চাচার বাসা থেকে মাযারে পৌছাতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে, তারা সেখানে ৯টা ৫০মিনিটে পৌঁছে গেলো। গাড়ি থেকে নেমেই বড় একটা সুদর্শন গেইট দেখতে পেলো তারা। গেইটের ভিতর দিয়ে ঢুকে প্রায় ৫০/৬০ টি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। তারা আস্তে আস্তে উপরে উঠলো, সাফা অজু করে মহিলাদের ইবাদত খানায় গিয়ে নফল নামাজ পড়লো। কিছুক্ষণ তিলাওয়াত করবে ভেবে সামনের সেল্ফ থেকে একখানা ওজিফা আনলো। সেল্ফের পাশে আরেকটা সেল্ফে তার চোখ বিঁধলো। সেই সেল্ফের সামনে লিখা ছিলো ‘দুরুদে হাজারি শরীফ’ বাড়িতে নিয়ে পড়বেন ও অন্যদেরকে বন্টন করে দিবেন। লেখাটা দেখেই রাবে জামাতের জসিম ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেলো। সেই সাথে ভাবলো তাহলে কি ভাই এই মাযারে এসেছিলেন? এখান থেকে নিয়েই কি আমাদেরকে দুরুদে হাজারী শরীফ হাদিয়া দিয়েছিলেন? এমন অনেক প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। সেদিনের (২০০৮) সালের ইচ্ছাটা ২০২১ সালে পূর্ণতা খুঁজে পেয়েছে বলে, ও লাখো কোটি শুকরিয়া জানালো আল­াহর দরবারে। যদি দুরুদ শরীফের লেখাটার উপর সাফার চোখ না পড়তো তাহলে সে কখনো বুঝতোই না তার একটি আশা পূর্ণ হয়েছে। যাক, দুরুদ শরীফের কপি সেখান থেকে সাফা আনবে কি আনবে না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে গেলো। কিছুটা সাহসী হয়ে সেল্ফ থেকে দুটি কপি হাতে নিয়ে মাযারের পাশে বসে থাকা খাদিমদারকে জিজ্ঞেস করলো এগুলো কি নেওয়া যাবে? উনি বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই নিতে পারবেন। এবং অন্যদেরকেও আমল করার জন্য হাদিয়া হিসেবে দিতে পারবেন। উনার কথায় আরেকটু অভয় পেয়ে আরো ১০/১২ টা কপি সেখান থেকে সাথে করে নিয়ে আসলো সাফা। পরিশেষে, আবারো আল­াহর শুকরিয়া আদায় করলো, এবং চিন্তা করলো নিশ্চিয়ই আল­াহ পাক বান্দার নেক আশা ও চাওয়া গুলো বিলম্ব হলেও পূরণ করে থাকেন। সাফা মনে মনে ভাবলো যেকোনো জিনিস চাইতে হলে আল­াহর কাছে চাওয়া উচিত, আজ অথবা কাল আল­াহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তা পূরণ করবেনই।

Comments

comments

About

Check Also

এই গরমে শিশুর ঈদ ও পরিবারের যত্ন

‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ শিশুকে সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে প্রয়োজন একটি সুন্দর পরিবারের, আর সুন্দর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *