রঙ্-বাহারি

বাণী
সারা দুনিয়ায় একসময় আমাদের কর্তৃত্ব ছিলো। কিন্তু আজ আমরা নির্যাতিত, নিপীড়িত। এর মূল কারণ আমাদের শতধাবিভক্তি। আমরা ছোটো খাটো ইখতেলাফ নিয়ে দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি করে দূরত্ব বাড়িয়েছি। এসব ছেড়ে আজ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের আদর্শ সাহাবায়ে কেরাম, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ও আউলিয়ায়ে কিরাম। তাদের পথে আমাদের চলতে হবে। তাদেরকে ভালোবাসতে হবে। হাদীস শরীফে আছে যে যাঁকে ভালোবাসে তাঁর সঙ্গে তার হাশর হয়।
মাওলানা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী।

মনীষা জীবনঃ আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী
যুগশ্রেষ্ঠ ওলী, মুজাদ্দীদে জামান আল্লামা আব্দুল লতীফ চৌধুরী ছাহেব কিবলা ফুলতলী (রহ.) তাঁর পিতা। মাতা হলেন কুতবুল আকতাব আবু ইউসুফ শাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী (রহ.) এর কন্যা মহীয়সী নারী খাদিজা খাতুন (রহ.)। পিতৃ-মাতৃকূলে বেলায়েতের উত্তরাধিকার বহনকারী এ মহান মনীষী ১৯৪৭ সালে সিলেটের ফুলতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বুযুর্গ পিতার কাছেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর ইছামতি কামিল মাদরাসা হতে দাখিল, সিলেট আলিয়া মাদরাসা হতে আলিম এবং মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা থেকে ফাযিল ও কামিল কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন। শিক্ষার প্রতিটি ধাপে তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ছাত্র জীবনে তিনি ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় অধ্যয়নকালে তৎকালীন শ্রেষ্ঠ আলিম মাওলানা আমীমুল ইহসান মুজাদ্দিদী ওয়া বারাকাতী রহ. এর সংস্পর্শ লাভ করেন।
সৎপুর কামিল মাদরাসা ও ইছামতি কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস হিসেবে অনেক দিন দায়িত্ব পালন করেন। একবছরের অধিককাল তিনি সৎপুর কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন। ফুলতলী কামিল মাদরাসায় এখনো তিনি অবৈতনিকভাবে কামিল জামাতের ছাত্রদের পবিত্র হাদীসের দরস দিয়ে থাকেন। এছাড়াও প্রায় প্রতিমাসে তিনি নিজ উদ্দোগে ফুলতলী ছাহেব বাড়িতে দারসে হাদীসের আয়োজন করেন। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আলিম-উলামা অংশ গ্রহন করেন।
দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট প্রধান কেন্দ্রের জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া ১৯৭১ সনে প্রতিষ্ঠিত ‘লতিফিয়া ইয়াতিমখানা ফুলতলী’ এর প্রধান পৃষ্টপোষক হিসেবে তা তারই পরিচালনায় পরিচালিত হচ্ছে।
মানবতার সেবায় নিবেদিত প্রাণ এই মনীষীর গৃহীত প্রদক্ষেপ সুদূরপ্রসারী। ইয়াতিমদের লালন-পালন, তৈল সাবান দান। অসহায়দের প্রয়োজনীয় আর্থিক ও আসবাবপত্র সহায়তা। ঘরবাড়ি নির্মাণ। বিধবাদের সাহায্য প্রদান। বিনামুল্যে চিকিৎসা প্রদান সহ প্রায় অর্ধশত প্রকল্প তিনি পরিচালনা করেন।
তাঁর বুযুর্গ পিতা ইন্তেকালের পর থেকে তিনি তাঁর পিতার রেখে যাওয়া খেদমত সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
এত ব্যস্ততার পরও তিনি শতধাবিভক্ত মুসলিম উম্মাহর ঈমান-আক্বীদা রক্ষার জন্য হাতে তুলেছেন কলম। রচনা করেছেন প্রায় বিশটির মতো ইসলামী কিতাব। দৈনন্দিন ঈমান-আমলের পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাও যাতে দৃশ্যমান।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক আক্বীদা বুকে লালনকারী মহান এই বুযুর্গ সত্তরোর্ধ বয়সে এখনো আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত রয়েছেন। মানুষের আতিœক ও নৈতিক উৎকর্ষ সাধনে আত্মশুদ্ধির ছবক দিয়ে যাচ্ছেন অবিরত।
সংক্ষিপ্ত পরিসরে এই মণিষীর বর্ণিল জীবন আলোচনা করে শেষ করার মতো নয়।
এউ মহান বুযুর্গের বর্ণিল জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে তাঁর জীবনী গ্রন্থ ‘ক্ষণজন্মা মনীষী’ বইটি পড়তে পারেন।

বুক রিভিউ : বায়তুল্লাহর মুসাফির
বইটি লিখা হয়েছে ২০০৯ সালে। দীর্ঘ ৯ বছর পর বইটি হাতে পেয়েছি। পড়েছি; বিধায় রিভিউ লিখছি। লিখেছেন দেশের খ্যাতনামা লেখক ও সুসাহিত্যিক মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ। স্বপ্ন দেখো, স্বপ্ন লালন করো, স্বপ্নের বেদনা বহন করো, স্বপ্ন পুরণের প্রতীক্ষায় প্রহর গুণো- এরই নাম জীবন। মূল্যবান এই কথাটি লেখক তাঁর মুল্যবান এই বইটিতেই উদ্ধৃত করেছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা।
বইটি যত পড়ছিলাম, তখন এক ভাই আমার পড়ার আগ্রহ দেখে জানালেন যে, দেশের শীর্ষপর্যায়ের খ্যাতনামা এক মাদরাসা স্বণামধন্য অধ্যক্ষ মহোদয়ের প্রিয় বই এটি। তিনি যখনই সময় পান, তখনই পড়েন এই বইটি। অন্ততপক্ষে বিশবার নাকি তিনি বইটি পড়েছেন। শুনে অবাক হলেও, বইটি পড়ে আপনিও চাইবেন বারবার বইটি পড়তে।
মুমীন জীবনের শ্রেষ্ঠ ইচ্ছাগুলোর মধ্যে ‘পবিত্র মক্কা-মাদীনা জিয়ারত’ সর্বোচ্চে অবস্থান। দরবারে রিসালাত থেকে যাঁর ডাক আসে সেই শুধু পারে মদীনার গুম্বুজে খাদ্বরার নিচে শায়িত নুরানী ঐ চাঁদের কদম চুমিতে। অনেকের জীবন কেটে যায় স্বপ্ন দেখে দেখে। অনেকের আবার পুরণ হয় সেই সোনালী স্বপ্ন। কেউ স্বপ্নকে সাথী করে কবরবাসী হন, কেউ বা স্বপ্নের বন্দরে ভীড়েন মদীনার মুসাফির হয়ে।
লেখকের লেখাগত মান ইসলামী সাহিত্য ক্ষেত্রে সম্পৃক্তজনেরাই সম্যক অবগত। খুব যতœ সহকারে লেখক এমন সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন, বইটি পড়বেন আর আপনি ভেসে যাবেন স্বপ্নের ভেলায় ছড়ে সেই সবুজ মিনারের কিনারে। সাফা-মারওয়ার সায়ী আপনার চোখে ভাসবেই। ব্যাকুল হবেন নিশ্চয়ই সেই পবিত্র ভূমির মুসাফির হতে। যতই বইটি পড়েছি, ততই অভিভুত হয়েছি লেখকের অসাধারণ ধারা বর্ণনা দেখে। সত্যিই অসাধারণ উপস্থাপনা।
লেখক তাঁর জীবনের প্রথম মক্কা-মাদীনা জিয়ারতের পঁচিশ বছর পর বইটি লিখেছেন। কেনো এতো দেরি? তার কারণ অবশ্য তিনি বইয়ের শুরুতে তুলে ধরেছেন। তাঁকে তাঁর মুহতারাম শায়েখ নছিহত করেছিলেন ‘পবিত্র ভূমি যিয়ারত’ এর খুলুসিয়াতের জন্যে তিনি যেনো এ সংক্রান্ত সফরনামা লেখার ইরাদা না করেন। অরে অবশ্য সেই শায়েখ দীর্ঘ দিন পর থাকে এই বিষয়ে লেখার অনুমতি দেন।
৪৩০ পৃষ্ঠার মূল্যবান এই বইটির দাম রাখা হয়েছে মাত্র ১৮০ টাকা। দারুল কলম থেকে প্রকাশিত এই কিতাবখানা দেশের অভিজাত সব লাইব্রেরিতে পাবেন।

শিক্ষণীয় ঘটনা
আজ আটাশ রামাদ্বান। জামীদের বাংলো ঘরে বসে আছে জামী, নাছিম, সায়িমসহ আরো ৪/৫ জন। একটি বিষয় নিয়ে তারা পরিকল্পনায় ব্যাস্ত। ঈদের বাকী দু’দিন। জামীর উদ্দোগে সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা গ্রামের গরীব পরিবারগুলোর মধ্যে ঈদ উপলক্ষে কিছু সাহায্য সহযোগীতা করবে। যেই সিদ্ধান্ত, সেই গোছ-গাছ শুরু। ইতোমধ্যে সকলের কাছ থেকে দু’শো টাকা করে উঠানো হয়েছে। প্রায় হাজার দুয়েক টাকা তাদের জমা হয়েছে। খোঁজ নেয়া হলো গরীব পরিবারগুলোর। চরম অসহায় হিসেবে পাওয়া গেলো ১৮/২০ টা পরিবার। সিদ্ধান্ত হলো তাদের মাঝে ময়দা-চিনি-তেল বিতরণ করা হবে। সেই হিসেবে প্রত্যেক পরিবারের জন্য খরচ হলো ১২০-১৩০ টাকা। ঈদ আগের দিন প্রত্যুষেই তা বিলি করা হলো সিলেক্টেড পরিবারগুলোর মাঝে। ১৫/১৬ বছর বয়সী সেই যুবকগুলোর মুখে সে কি ভূবনকাড়া হাসি! মাত্র ১২০-১৩০ টাকা বড় কথা নয়; কোনো লজ্জার বিষয় নয়। অসহায়দের জন্যে সামান্য কিছু করতে পারাই যে, তাদের মনের প্রশান্তির কারণ।

কৌতুক
নাসীরুদ্দীন হোজ্জা একদিন বাজার করে বাড়ি ফিরছিলেন। বড় একটা মাছ কিনেছেন তিনি। বিক্রেতা মাছের সাথে তার প্রস্তুত প্রণালীও দিয়েছে। পথ চলতে চলতে হঠাৎ একটি চিল টু মেরে হোজ্জার হাত থেকে মাছ নিয়ে উধাও। হোজ্জা কিছু বুঝে উঠার আগেই এমন ঘটনা ঘটলো যে, সে কিছু বুঝতে পারলো না। তবে চিলকে সে দেখতে পেলো, সে উড়ছে।
হোজ্জা তখন চিলকে উদ্দেশ্য করে বললো, ওহে! মুর্খ, তুমি মাছ নিয়েছো তো কি হয়েছে। এর প্রস্তুত প্রণালী তো আমার হাতেই রয়েছে, এটা না নিলে খাবে কিভাবে?

Comments

comments

About

Check Also

রঙ্-বাহারি

২০১৯ শেষে… বহু ঘটন-অঘটনে কাটলো ২০১৯ সাল। দীর্ঘ কয়েক দশক দশক পর জাতি দেখলো ‘ডাকসু’ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *