হজ্জ : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

পবিত্র হজ্জ সমগ্র পৃথিবীর মুসলিম মিল্লাতের আন্তর্জাতিক বার্ষিক সম্মেলন। উঁচু নিচু, সাদা কালো, ধনী গরীব নির্বিশেষে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমান এসে আরাফার প্রান্তরে এসে একত্রে মিলিত হয়, অবস্থান নেয়। আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবার তাওয়াফ সহ হজ্জের আহকাম ও আরকানগুলো আদায় করেন। সুনির্দিষ্ট এ আহকাম ও আরকানগুলো আদায় করা মানেই শরীয়াতসম্মতভাবে হজ্জ আদায় করা। যেহেতু হজ্জ আমাদের নিত্যদিনের অভ্যস্ত আমলের মত নয় যে, করতে করতে এর সবকিছুর অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। কেউ জীবনে হয়তো একবারই আল্লাহর ঘরে যাওয়ার তাওফীক পেয়েছেন। অনেকে আবার আজীবন ইচ্ছা ও চেষ্টা করে করে আল্লাহর ঘর দেখার সাধ ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রওয়াজায় সালাম জানানোর আকাক্সক্ষা পূরণ হয়নি। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে এর আগেই তারা কবরে চলে গেছেন। তাই যার নসীবে হজ্জ ও জিয়ারত জুটলো সে বড়ই ভাগ্যবান। তার উচিত হবে হজ্জের আহকাম ও আরকানগুলো জেনে নেয়া। সঠিকভাবে তা পালন করে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা।
আহকাম ও আরকান শব্দদুটি বহুবচন এর একবচন যথাক্রমে হুকমুন ও রুকনুন। আরবীতে কোন বস্তু প্রতিষ্ঠা করার বা দাঁড় করানোর নির্ঘাত প্রয়োজনীয় বিষয়কে বলে আরকান। সুতরাং আরকান হচ্ছে প্রতিটি কাজের ভিতরে সম্পাদিত আবশ্যকীয় জিনিস। সে হিসেবে প্রতিটি ইবাদাত বা আমলের ফরজ কাজগুলোই আরকান। অপরদিকে আহকাম হচ্ছে তার পূর্ব প্রস্তুতিমূলক জরুরী আয়োজন। প্রতিটি আমলের ক্ষেত্রে এ আহকামকে আমরা শর্ত বা যোগ্যতা বলে থাকি। আসুন আমরা জেনে নেই- হজ্জের আহকাম-শর্ত বা যোগ্যতা বলতে কোন বিষয় চলে আসে। মহান আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে আল কুরআনের সুরা বাকারা এর ৯৭ আয়াতে ইরশাদ করেন-
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষের কর্তব্য হচ্ছে এই যে, তারা যেন আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ করে- যাদের সে পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে। এ সুরার ১৯৭ আয়াতে আল্লাহ পাক আবার ঘোষণা দিচ্ছেন-‘তোমরা পাথেয় যোগাড় কর, উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া অর্থাৎ আল্লাহর ভয়।’ এ রকমের হজ্জ সংশ্লিষ্ট আয়াত ও হাদীসের আলোকে হজ্জের সাধারণ আহকাম হচ্ছে ৭টি এবং মহিলাদের জন্য অতিরিক্ত শর্ত সহ মোট আহকাম ৮টি। ধারাবাহিক আমরা এগুলো বলে যাচ্ছি- মুসলমান হওয়া। কোন অমুসলিমের উপরে হজ্জ ফরজ নয়। ইসলামপূর্ব যুগে কাফির-মুশরিকরা হজ্জে আসত, উলঙ্গ হয়ে কাবা তাওয়াফ করতো। সুনানে তিরমিযি শরীফের ৩০৯১ নাম্বার হাদীসে জানা যায় যে, আলকুরআনের সুরা বারাআত বা তাওবা নাযিল হবার পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু বকর ও আলী রা. মক্কায় প্রেরণ করেন। তাদের ঘোষণা পত্রে এ কথা ছিল যে, আর কোন মুশরিক হজ্জ করবে না, আর কোন উলঙ্গ কাবা তাওয়াফ করবে না। স্বাধীন হওয়া, সুতরাং পরাধীন গোলামের উপর হজ্জ ফরজ নয়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, অপ্রাপ্তবয়স্ক নাবালেগের উপর হজ্জ ফরজ নয়। জ্ঞানবান হওয়া, তাই পাগল, মাতাল ও নির্বোধ ব্যক্তির সম্পদ থাকলেও হজ্জ ফরজ নয়। সুস্থ হওয়া, অতএব অসুস্থ, লেংড়া, খোড়া, অন্ধ ও চলাফেরা করতে অক্ষম ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরজ নয়। পথ খরচ ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারের খরচ চলার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হওয়া। যেটা বাসস্থান ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত হতে হবে। পথ নিরাপদ থাকা, সুতরাং যাত্রা পথে শত্রু ও হিং¯্র জীবজন্তুর আশঙ্কা না থাকা, রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ বা যুদ্ধ হাঙ্গামার ভিতর দিয়ে অতিক্রম করে যেতে হলে হজ্জে রওয়ানা হবে না। সর্বোপরি মহিলাদের জন্য তিন দিন সফরের পথ তথা ৪৮ মাইল বা ৭৭ কিলোমিটার যদি পথের দূরত্ব হয়, তবে একাকী রওয়ানা হবে না। সাথে স্বামী বা যার সাথে দেখা দেয়া যায় এ রকম কোন মুহরিম পুরুষ থাকলে তবেই হজ্জে রওয়ানা হতে পারবে। তবে বর্তমান কালে ফিতনা যেভাবে ছড়িয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে তাতে মহিলাদের একাকী যাতায়াত অনিরাপদ। এজন্য বর্তমান কালের ফকীহগণের ফতোয়া হচ্ছে ঐ দূরত্বের কম হলেও মহিলা একাকী হজ্জে রওয়ানা হবে না।

আর আমরা হজ্জের তিনটি আরকানকে খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্রথমটি হচ্ছে ইহরাম। অর্থাৎ গোসল বা অজু করে দুই খণ্ড সেলাই বিহীন কাপড় পরে, দুই রাকাত নামায আদায় করে নিয়ত সহ হজ্জের তালবিয়া পাঠ করাকে ইহরাম বলে। দ্বিতীয়ত ৯ জিলহাজ্জ সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত- সামান্য সময়ের জন্য হলেও আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। তৃতীয়ত দশ এগার বা ১২ তারিখে তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করা। এ তিনটির কোন একটি বাদ গেলে হজ্জ আদায় হবে না।
হজ্জের হুকুম আহকামের মধ্যে আরো জরুরী কিছু কাজ আছে। এ মুহূর্তে যারা বাইতুল্লাহর মুসাফির যারা এই মহান সৌভাগ্যের অধিকারী- তারা সেগুলো জেনে নিবেন; সঠিকভাবে আদায় করার চেষ্টা করবেন। মীনায়, মুজদালিফায়, তাওয়াফের সময়, রুকনে ইয়ামানীর জায়গায়, হাজরে আসওয়াদের চুম্বন বা ইশারায়, জমজমের কিনারায়, মাকামে ইবরাহীমের কিনারায়, সাফা মারওয়ার চূড়ায় এ রকম সর্বত্রই বহু সাওয়াবের কাজ আছে। যার কতেক ওয়াজিব, কতেক সুন্নাত আর কতেক নফল বা মুস্তাহাব। এগুলো সবই হজ্জের আহকামের অন্তুর্ভুক্ত। এগুলো আমরা যথাসাধ্য পালনের চেষ্টা করবো। আর যে সব কাজ হজ্জের ক্ষতি করে যা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ এগুলো হজ্জের মুহূর্তে আমরা এড়িয়ে চলবো। যেমন কোন ধরণের ঝগড়া ঝাটি, ফাসেকী তথা পাপের কাজ, স্ত্রী সহবাস বা মহিলাদের সামনে এজাতীয় আলোচনা বা অশ্লীল কথা কাজ ও আচরণ এ সবই রফাস এর অন্তর্ভুক্ত।
হাজরে আসওয়াদ শব্দ দুটি আরবি। বাংলায় কালো পাথর। মাকামে ইবরাহীমও আরবি, বাংলায় এর অর্থ ইবরাহীম আ. এর দাঁড়ানোর স্থান। হাজ্জের সময় এ কালো পাথরে চুম্বন ও মাকামে ইবরাহীমের কাছে দু রাকাত নামায আদায় করা সুন্নাত বা মুস্তাহাব। কিন্তু বিশ্ব মুসলিমীনের কাছে এ পাথর দুটির গুরুত্ব ফরজের চাইতে কোন অংশে কম নয়। বরং হাজরে আসওয়াদে চুমু দিতে পারাটাকেই জীবনের সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় বলে একজন মুসলিম মনে করে। অনুরূপ বাবা ইবরাহীম আ. এ কাবাঘর কত কষ্ট করে তৈরি করেছেন, কত দীর্ঘ সে ত্যাগ তিতিক্ষার ইতিহাস এবং সে সময়ে দাঁড়ানো পাথরে তাঁর পায়ের ছাপ চোখে পড়লে একজন মুমিন নিজেকে স্থির রাখতে পারে না। আবেগে তার চোখ থেকে ঝর্ণার মত তরতর বেগে পানির ফোয়ারা ছুটে আসে। দু রাকাত নামাজ এ পাথরের কাছে এসে পড়তে পারার মত সৌভাগ্য আর কিসে আছে?
তিরমিযি শরীফের ৮৭৭ নাম্বার হাদীসে এসেছে-
হাজরে আসওয়াদ যখন জান্নাত থেকে নেমে এসেছে তখন এটি দুধের চেয়েও সাদা ছিল। বনী আদমের পাপ একে কালো করে দিয়েছে। তিরমিযি শরীফের ৮৭৮ নাম্বার হাদীসে উল্লেখ-
নিশ্চয়ই রুকন ও মাকাম বেহেশতী ইয়াকুতের দুটি ইয়াকুত পাথর। আল্লাহ তায়ালা এদের নূর বা জ্যোতি নিষ্প্রভ করে দিয়েছেন। নাহলে এদের জ্যোতি মাশরেক থেকে মাগরিব পর্যন্ত আলোকিত করে দিত। যিনি এ পাথর চুম্বন করেন তার গোনাহরাশি পাথরে শুষে নিয়ে তাকে পবিত্র করে দেয়। মুসনাদু আহমাদ ইবনু হান্বল এর ৭৪৬২ নাম্বার হাদীসে এসেছে এটির চুম্বনে পাপরাশির মোচন হয়ে যায়। মু’জামুল কাবীর লিততাবারানীতে উল্লেখ আছে-পৃথিবীতে বেহেশতের আর কোন জিনিস নেই কেবল এ হাজরে আসওয়াদ ছাড়া। এ পাথরটি বর্তমানে কাবার যেখানে স্থাপন করা আছে, এটা বাবা ইবরাহীম আ. এর স্থাপনা কীর্তি। পূর্ব থেকে এভাবে ছিল না।
আলমুসতাদরাকু আলাস সহীহাইন এর ২১৫৪ নাম্বার হাদীসে এসেছে বাবা ইবরাহীম আ.কে কাবা ঘর বানানোর নির্দেশ দিলে এ গুরুভার পালনে তিনি নিজেকে অক্ষম মনে করলেন। তখন আল্লাহ পাক তার উপর সাকীনা প্রেরণ করে দিলেন। আর তা ছিল রহমাতের বাতাসের এক প্রবল প্রবাহ। তার একটি মাথা বা অগ্রভাগ ছিল। তাফসীরে কুরতুবীতে আছে তার একটি জিহ্বা ছিল যা দিয়ে কথা বলতো। সিরিয়া হতে ইবরাহীম আ. বিবি হাজেরা ও ইসমাইল আ. কে নিয়ে কাবা ঘর বানানোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে এ বাতাস তার অনুসরণ করে চলতো। কাবা ঘরের যেহেতু তখন নাম নিশানা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ঐ বাতাস কাবাঘরের স্থানে এসে ঘূর্ণি বায়ুর মত পাক খেতে খেতে জমীনে বেড়ী তৈরি করে দিল। ঠিক সাপের বেড়ী দেয়ার মত। যা অনুসরণ করে মাটির নিচ থেকে আদম আ. এর ভিত্তির সন্ধান পেলেন। তার উপরে কাবা নির্মাণ করে হাজরে আসওয়াদের ঐ পর্যন্ত উঠে পুত্রকে বললেন আমাকে সুন্দর একটি পাথর এনে দাও। যেটা এখানে মানুষের নিদর্শনের জন্য ভিত্তি প্রস্তর ফলক হিসেবে স্থাপন করবো। সে অনেক দীর্ঘ কথা শেষে আবু কুবাইস পাহাড় থেকে ইবরাহীম আ. এর নাম ধরে ডাক আসে যে, আমার ভিতরে তোমার জন্য গচ্ছিত সম্পদ আছে। যা বিস্তারিত বিবরণ তাফসীরে কুরতুবীতে দেয়া আছে। তিনি সেখান গিয়ে একটি পাথর উত্তোলন করলেন যা ছিল ধবধবে সাদা। হযরত আদম আ. বেহেশত থেকে এ পাথরটি সহ প্রেরিত হয়েছিলেন। এ পাথরটিই আজ আমাদের হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর।
সুনানে তিরমিযির ৯৬১ নাম্বার হাদীসে উল্লেখ আছে যে, কিয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদকে উঠানো হবে। তার দুটি চোখ ও জিহ্বা থাকবে সে কথা বলতে পারবে। যারা তাকে চুম্বন বা ইস্তিলাম করেছে, সে তাদের জন্য সুপারিশ করবে। মাকামে ইবরাহীম সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা-
‘তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে মুসাল্লা হিসেবে গ্রহণ করো।’ এখানে মুসাল্লা অর্থ সালাত আদায়ের জায়গা হিসেবে গ্রহণ করা। মাকামে ইবরাহীম সম্পর্কে জানতে গেলে দেখব তাফসীরে এ সম্পর্কে অনেক মতামত উল্লেখ করা হয়েছে। কুরতুবীতে উল্লেখ আছে হযরত ইবনে আব্বাস রা.কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন- সমগ্র হারামের সীমানাই মাকামে ইবরাহীম। যেহেতু তিনি নামাজে হারাম শরীফের ভিতরে দাঁড়িয়েছেন তাই সবটাই তাঁর দাঁড়ানোর জায়গা। অপর মতে ইসমাইল আ. এর স্ত্রী বিবি সাঈদা তাঁর শ্বশুর নবী বৃদ্ধ ইবরাহীম আ. কে যে পাথরে দাঁড় করিয়ে তার মাথা ধৌত করে দিতেন- সেটিই মাকামে ইবরাহীম। আবার অন্য বর্ণনায় আরাফা, মিনা, মুজদালিফা সবটাই মাকামে ইবরাহীম। কারণ ইবরাহীম আ. তো শুধু এক জায়গায় দাঁড়াননি। কিন্তু তাদের কাছে যদি এ আপত্তি তোলা হয় যে, আল্লাহ তো মাকামকে সালাত আদায়ের জায়গা হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তখন তাদের বক্তব্য সবগুলোই সালাতের জায়গা; যেহেতু সালাতের শাব্দিক অর্থ দোয়া করা। সুতরাং আয়াতে মুসাল্লা অর্থ দোয়া করার স্থান।
এ ব্যাপারে যে অভিমতটি বেশি আমল করা হয় সেটি হচ্ছে কাবা ঘর নির্মাণের সময় যখন দেয়াল উঁচু হয়ে গেল, হাতের নাগালে এখন আর পাথর উঠানোর উপায় নেই; তখন বেহেশতী এ পাথরটি ইবরাহীম আ. এর পদতলে হাজির হয়। হযরত ইবরাহীম আ. যেদিকে কাজ করতে চাইতেন, এ পাথরটি তাকে নিয়ে সয়ংক্রিয়ভাবে উপরে- নিচে- পাশে সেদিকেই ওঠা নামা করতো। পরবর্তীতে একে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। কিন্তু এটি কত ফজীলতের যে, আল্লাহর এক বান্দা, এক গোলাম, নবী ইবরাহীম এর পদচিহ্ন খচিত এ পাথরটিকে কোরআনের ভাষায় আল্লাহ একটি নিদর্শন বলে ঘোষণা দিলেন-
‘এখানে একটি স্পষ্ট নিদর্শন আছে, তা হলো মাকামে ইবরাহীম।’ কিয়ামত পর্যন্ত এ চিহ্ন রক্ষা করার নিগূঢ় রহস্য এই যে, হাজরে আসওয়াদকে চুমু স্পর্শ করা সুন্নাত। কিন্তু একই নিদর্শন মাকামে ইবরাহীমও একটি পাথর কিন্তু এ নিদর্শনকে কেন চুমু বা স্পর্শ করার বিধান হলো না। উত্তর দেয়া আছে তাফসীরে জারীর তাবারীতে। যে, মানুষ হুমড়ি খেয়ে আবেগে যদি এ পাথর ছুঁইতে বা চুমু দিতে শুরু করতো, তাহলে বাবা ইবরাহীমের পবিত্র পায়ের যে ছাপের কারণে এটি নিদর্শনে পরিণত হয়েছে, সামান্য দেবে যাওয়া সে ছাপ চিহ্ন এত দিনে ভেনিশ হয়ে যেত। নিদর্শন আর নিদর্শন থাকতো না। তাই এখানে চুম্বন বা স্পর্শের পরিবর্তে এর নিকট নামাজের বিধান দেয়া হয়েছে।
আমরা জানি, হজ্জের ফরজ তিনটি- মীকাত হতে ইহরাম বাঁধা, ৯ জিলহজ্জের দিন জোহরের পর আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা, ১০, ১১ বা ১২ জিলহজ্জ বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা।
হজ্জের ওয়াজিব সমূহ-৯ জিলহজ্জ রাতে মুজদালিফায় অবস্থান করা, সাফা-মারওয়া সায়ি করা, মিনায় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করা, তামাত্তু ও কিরান হজ্জ আদায়কারীদের কুরবানি করা, ইহরাম খুলার জন্য মাথা মুণ্ডন করা, বিদায়ী তাওয়াফ করা।
পবিত্র মদীনা মনোয়ারা জিয়ারতও হাজী সাহেবদের জন্য অত্যাবশ্যক। কারণ, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-‘যে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করল, অথচ আমার জিয়ারতে আসল না, সে যেন আমার প্রতি জুলুম করল।’
আমরা যেন জীবনে একবার হলেও কাবা বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও মদীনা মনোওয়ারা যিয়ারতে করতে পারি। আল্লাহ আমাদের সকলকে বারবার সে তাওফিক নসীব করুন। আমীন।

Comments

comments

About

Check Also

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার মূর্তপ্রতীক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

ইদানিংকালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। জাতি সংঘ সহ সারাবিশ্বের সব দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *