শবেবরাতের ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত সহীহ হাদীস: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

মহিমান্বিত মাহে রাজাব শেষ হবার পথে। সামনে আসছে মাহে শাবান। শাবানের মধ্যবর্তী রাত হচ্ছে একটি বিশেষ ফযীলতপূর্ণ রাত।
বর্তমান সময়ে লা- মাযহাবী চক্র এ রাতের ফযীলত অস্বিকার করে। তাদের দাবী হলো- এ রাতের ফযীলত সম্পর্কে যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে সবই موضوع বা বানোয়াট ।
মূলত: তাদের এ দাবী ভিত্তিহীন । শবেবরাতের ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত বহু সংখ্যক হাদীস রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হাদীস এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা পেশ করা হলো।
হাদীস:
عن معاذ بن جبل رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: يطّلع الله الى خلقه في ليلة النصف من شعبان ، فيغفر لجميع خلقه الا مشرك و مشاحن.
অনুবাদ: মুআয বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন যে, শাবানের মধ্যবর্তী রাতে ( শবেবরাতে) আল্লাহ তা’লা তাঁর সৃষ্টি কুলের প্রতি রাহমাতের নজরে তাকান; এবং মুশরিক ও অন্যের প্রতি হিংসা পোষণকারী ছাড়া প্রত্যেককে ক্ষমা করে দেন।
যে সব কিতাবে এ হাদীসটি আছে:
১. ইমাম ইবনু হিব্বান- সহীহ ইবনু হিব্বান (অখন্ড) পৃ: ১৫১৪
২.ইমাম বাইহাকী- ফাদাঈলুল আওকাত পৃ: ১৮
৩. ইমাম তাবারানী- মু’জামুল কাবীর ২০:১০৭, মু’জামুল আওসাত ৭:৩৬
৪.ইমাম সুয়ূতী – দুররুল মানছূর ৫:৭৪১
৫.ইমাম দিমইয়াতি- আল মুত্তাজারুর রাবিহ পৃ: ১৮২
৬.ইমাম আবু আসিম- আসসুন্নাহ পৃ: ৮০
৭.ইমাম মুনযিরী- আত তারগীব ওয়াত তারহীব (অখন্ড) পৃ: ২৪১
৮. ইমাম হাইছামী- মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৮:৬৫
৯.ইমাম ইবনু রাজাব হাম্বালী – লাতায়িফুল মা’রিফ পৃ:১৮৮
১০. ইমাম ইবনু আসাকির- তারীখু দিমাশক ৩৮:২৩৫
১১. ইমাম মোল্লা আলী কারী – আত তিবইয়ান পৃ: ১০
১২. ইমাম আবু নাঈম ইস্পাহানি- হিলইয়াতুল আউলিয়া ৫:১৯১
১৩. ইমাম সায়্যিদ আবদুল্লাহ বিন সিদ্দীক গুমারী- হুসনুল বায়ান পৃ:২১
১৪. ইমাম যাকী ইবরাহীম- লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান পৃ: ৭
১৫. ইমাম আবদুল হক দেহলবী- মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ পৃ ২০
১৬. ইমাম সায়্যিদ মুহাম্মাদ বিন আলাওয়ী মালিকী আল মাক্কী- ইতমিনানুল কুলূব পৃ: ৬৫
১৭. শায়খ ড. সায়্যিদ মাহমূদ আস সাবিহ- লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান পৃ: ৭২
১৮. শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী- সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ ৩:১৩৫
(উল্লিখিত কিতাবগুলো ছাড়াও লেখকের সংগ্রহে থাকা আরো ১০টি কিতাবে এ হাদীস আছে।)
সনদ পর্যালোচনা :
ক. ইমাম ইবনু হিব্বান রাহিমাহুল্লাহর দৃষ্টিতে এ হাদীস সাহীহ। এ কারণে তিনি নিজ সাহীহ কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
খ. ইমাম হাইছামী নিজ কিতাবে এ হাদীস উল্লেখ করে বলেন- ইমাম তাবারানী বলেছেন যে, এ হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সবাই ثقة বা নির্ভরযোগ্য ।( সূত্র: মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৮:৬৫)
গ. সালাফী, আহলে হাদীস ইত্যাদি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত লা-মাযহাবীদের ইমাম শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী নিজ কিতাব সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহায় একটি শিরোনাম করেছেন ما صح في ليلة النصف ( শবেবরাত সম্পর্কে যা সাহীহ) । এই শিরোনামের অধিনে উল্লিখিত হাদীস বর্ণনা করে তিনি হাদীসটির সনদ সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। প্রথমে তিনি বলেছেন- حديث صحيح روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضاً
অর্থাৎ হাদীসটি সাহীহ। সাহাবীগণের একটি জামাত থেকে বিভিন্ন সনদসূত্রে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে; যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। ( সূত্র: সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ ৩:১৩৬)
দীর্ঘ পর্যালোচনা শেষে তিনি আবারও বলেছেন- و جملة القول ان الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب
অর্থাৎ সারকথা হলো বিভিন্ন সনদসূত্রে বর্ণিত এ হাদীসটি নি:সন্দেহে সাহীহ ( সূত্র: সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ ৩:১৩৮)
সাহাবী ও তাবিঈগণের অভিমত:
মূলত: কোন বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র প্রমাণিত হাদীস থাকার পর আলাদা ভাবে সাহাবী- তাবিঈন’র অভিমত উল্লেখ না করলেও চলে। তবু পাঠক যাতে আরো বেশি অনুপ্রানিত হন সে বিবেচনায় বিষয়টি উল্লেখ করা হলো।
ইমাম আবদুর রাযযাক সানআনি ( ওফাত: ২১১ হিজরী) নিজ কিতাবে উল্লেখ করেন- عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: خمس ليال لا ترد فيهن الدعاء، ليلة الجمعة وأول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلتي العيدين
অর্থাৎ আবদুল্লাহ বিন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে, পাঁচটি রাতে দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। সে গুলো হলে- জুমুআর রাত, রাজাব মাসের প্রথম রাত, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত ( শবেবরাত) এবং দুই ঈদের রাত। ( সূত্র: আল মুসান্নাফ ৪:৩১৭)
ইমাম আলুসী ( ওফাত : ১২৭০ হিজরী) নিজ তাফসীরের কিতাবে সনদ ছাড়াই উল্লেখ করেছেন যে, عن ابن عباس رضي الله عنهما: تقضي الأقضية كلها ليلة النصف من شعبان وتسلم الى أربابها ليلة السابع والعشرون من شهر رمضان
অর্থাৎ আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। ( চলবে)

Comments

comments

About

Check Also

শবে বরাত : করণীয় ও বর্জনীয়

আরবী চান্দ্র বর্ষের অষ্টম মাস শা’বান-এর মধ্যবর্তী রাত তথা ১৪ তারিখ দিবাগত রাত ‘শবে বরাত’ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *