শিক্ষাদরদী কাজী আবদুল খালীক

জন্ম
জকিগনজ উপজেলার বীরশ্রী ইউনিয়নের পীরনগর গ্রামে ১৯৩৫ সালের ২২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন কাজী আবদুল খালীক। তাঁর পিতা মরহুম কাজী আবদুর রাহমান, মাতা মরহুমা তমিজুন্নেসা খানম।

শিক্ষা জীবন
বীরশ্রী এমই স্কুলে ( বর্তমান গুরুসদয় দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ) তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের শুরু। ১৯৫২ সালে জকিগনজ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৫৫ সালে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এইচএসসি এবং ১৯৫৮ সালে দ্বিতীয় বিভাগে বিএ পাশ করেন।

কর্ম জীবন
১৯৫৮ সালে বিএ পাশের পর বীরশ্রীস্থ গুরুসদয় দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্ম জীবনের শুরু। ১৯৬০ সালে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য তিনি লন্ডন পাড়ি জমান। কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের ফলে কালক্রমে তিনি লন্ডনে একজন সফল ব্যবসায়ি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

জকিগনজ কলেজ প্রতিষ্ঠায় অবদান
১৯৮২ সালে জকিগনজ উপজেলা সদরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে জনাব কাজী আবদুল খালীক কলেজের ভূমি ক্রয়ের জন্য পঁচিশ হাজার টাকা দান করেন। নানাকারণে কলেজ প্রতিষ্ঠায় বিলম্ব হলে কলেজের জন্য ক্রয়কৃত ভূমিতে বন্যার্তদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে সাবেক মন্ত্রী জনাব এম এ হক (১৯১৮-১৯৯৬) এলাকাবাসীর সহযোগিতায় উল্লিখিত ফ্লাড সেন্টারে জকিগনজ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
স্কুল প্রতিষ্ঠা
নিজ এলাকার অনুন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের অভিপ্রায়ে কাজী আবদুল খালীক ১৯৮৪ সালের শেষ দিকে পীরনগর, চিরপুর, জামডহর, লেনজিরগ্রাম ও বড় পাথর প্রভৃতি গ্রামের মুরব্বিগণকে নিয়ে পরামর্শ সভা করেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে, কাজী আবদুল খালীক উচ্চ বিদ্যায় নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
কাজী আবদুল খালীক প্রস্তাবিত স্কুলের জন্য প্রথমে ১০৫ শতক এবং পরবর্তীতে আরো ৮৬ শতক ভূমি দান করেন । সেই সাথে সেমি পাকা একটি বিল্ডিং তৈরি করে দেন। এলাকার শিক্ষানুরাগি গন্যমান্য ব্যক্তিগণের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সহযোগিতায় ১৯৮৫ সালের ১ জানুয়ারি কাজী আবদুল খালীক উচ্চ বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
১৯৮৫ সালের ৩ জুন স্কুলটি নিম্ন মাধ্যমিক এবং ১৯৮৭ সালের ৭ মার্চ মাধ্যমিক স্থর পর্যন্ত সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে।
এলাকার দরিদ্র ছাত্র ছাত্রীদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ করে দেন জনাব কাজী আবদুল খালীক। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সুবিধার জন্য ২০০৯ সালে তিনি ২২টি রিক্সা দান করেন। ২০১১ সালে রিক্সার পরিবর্তে ৩১ সিট বিশিষ্ট একটি মিনিবাস দান করেন। এই মিনিবাস দিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা বিনা ভাড়ায় স্কুলে যাতায়াত করছে।

হাফিজি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা
১৯৯৪ সালে কাজী আবদুল খালীক’র অর্থায়নে স্থানীয় পীরনগরে বয়তুছছুন্নাহ রাহমানিয়া মাদরাসা নামে একটি হাফিজি মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয় । এ মাদরাসার ফ্রী বোর্ডিংয়ে অবস্থান করে ছাত্ররা কুরআন শরীফ হিফয করছে।
স্কুল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ছাড়াও কাজী আবদুল খালীক এলাকার দরিদ্র মানুষকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে এসেছেন।

সংসার জীবন
কাজী আবদুল খালীক’র সহধর্মিনি জহুরুননেসা খালীক। তাঁদের চার পুত্র সন্তান, যথাক্রমে কাজী হায়দার হোসেন খালীক বাদল , কাজী দেলওয়ার হোসেন খালীক বাবুল, কাজী জবলুল হোসেন খালীক জবলু ও কাজী আনোয়ার হোসেন খালীক শিপলু। তাঁরা প্রত্যেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

ইন্তিকাল
২০১৬ সালের ২৭ জুলাই লন্ডনে কাজী আবদুল খালীক ইন্তিকাল করেন। ৩০ জুলাই বুরিয়াল পার্ক সেমিট্রিতে তাঁকে দাফন করা হয়।
বহুভাষাবিদ পন্ডিত ড. মুহাম্মদ শহীদউল্লাহ বলেছিলেন, যে দেশে গুণীর সমাদর নেই সে দেশে গুণী জন্মায় না। তাই আসুন আমরা গুণীজনের যথাযত সমাদরে এগিয়ে আসি।

Comments

comments

About

Check Also

নালায়ে কলন্দর : পূত হৃদয়ের নান্দনিক ছন্দবদ্ধ অভিব্যক্তি

মাহবুবুর রহীম আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) রচিত উর্দুভাষার কাব্যগ্রন্থ ‘নালায়ে কলন্দর’। ‘কলন্দর’ হচ্ছে কাব্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *