বাংলাদেশে ইসলামী সাহিত্য পত্রিকার প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এদেশে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ মুসলমানের অবস্থান। এদেশের ভোর হয় আল্লাহু আকবার ধ্বনির মাধ্যমে আবার সূর্যের প্রস্থানের সাথে সাথে মসজিদ হতে ভেসে আসে মুয়াজজিনের কণ্ঠে সুললিত আযান ধ্বনি। ইসলাম, মুসলমান আর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কেউ পার পাবার নয়। আর তাই হওয়া উচিত। কেননা, নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম’ -(সুরা আলে ইমরান ঃ ১৯)। আর এই ইসলাম ধর্ম ছাড়া আল্লাহর কাছে অন্য কোন ধর্ম গ্রহণযোগ্য নয়। তাই অন্য কোন ধর্মের ছায়াতলে অবস্থান করার জন্য তালাশ করা যাবে না। তাইতো আল্লাহ বলেন, ‘যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্থ’ -(সুরা আলে ইমরান ঃ ৮৫)।
মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করতে, ইসলামী জ্ঞানকে মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে ইসলামী সাহিত্য পত্রিকা অতুলনীয় ভূমিকা রাখবে। জ্ঞানের প্রচারে লিখনিসমূহ যুগ যুগ, শতাব্দীকাল আলোর পথ দেখাবে জনসমাজে। যা ইসলাম প্রচারের অন্যতম খেদমত। জ্ঞানের সম্প্রচার করার জন্য আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসাহিত করেছেন। তাদের জন্য দো’আ করেছেন। হাদীসের বাণী, ‘হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা মুখমন্ডল উজ্জ্বল করুন সেই ব্যক্তির, যে আমাদের থেকে কিছু শুনবে, অতঃপর যেভাবে শুনেছে সেভাবেই অপরের কাছে পৌঁছে দিবে। কেননা, যার কাছে পৌঁছানো হয় সে অনেক সময় শ্রোতার চেয়ে অধিক সংরক্ষণকারী হয়’ -(আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে হিব্বান)। তাই অন্যের কাছে ইসলামের বাণীসমূহ পৌঁছে দেয়ার অন্যতম মাধ্যম হল ইসলামী সাহিত্য পত্রিকা। অন্য হাদীসে জ্ঞানের প্রচার ও কল্যাণের পথ দেখানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। হাদীসের ভাষ্যমতে, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, মু’মিন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার আমল ও নেকীর কাজ থেকে যা (সাওয়াব) তার নিকট পৌঁছবে তা হলো, এমন ইলিম যা সে শিক্ষা দান করেছে ও প্রচার করেছে’ -(ইবনে মাজাহ্, বায়হাক্বী, ইবনে খুযায়মা)। এতে স্পষ্ট হয় যে, ইলমে দ্বীন বা দ্বীনের জ্ঞান প্রচার অতীব গুরুত্ববহ, মর্যাদা ও সম্মানের কাজ। সে সম্মানের কাজকে আঞ্জাম দিতে ইসলামী সাহিত্য পত্রিকার অবদান কোন অংশে কম নয়। আমরা যদি আমাদের সমাজে ইসলামী সাহিত্য পত্রিকার ব্যাপকতা তৈরী করতে পারি তাহলে ইসলামের ব্যাপক কাজ হবে ইনশাআল্লাহ।

সাহিত্য সকল ভাষায় সর্বক্ষেত্রে সমাদৃত। চাই সেটা যে কোন ভাষাতেই হোক না কেন? আমাদের এ দেশ মুসলীম প্রধান দেশ হলেও ইসলামী পত্রিকা, সাহিত্য, ম্যাগাজিন খুবই কম। উল্লেখ করার মতো তেমন কোন দৈনিক পত্রিকা নেই। দৈনিক পত্রিকার কোন কোন পত্রিকাতে প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা করে দু-একটি লেখা ছাপা হয়। অন্যথায় সপ্তাহে একদিন একপৃষ্ঠায় সামান্য কিছু লেখা ছাড়া ইসলামী কোন লেখা পরিলক্ষিত হয় না। যা একটি মুসলীম প্রধান দেশের জন্য একেবারে নগণ্য। এতে আলেম সমাজসহ ইসলামের শুভাকাংখীরা এগিয়ে আসা অতীব জরুরী।
ইসলামের আহ্বান মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছাতে ইসলামী সাহিত্য পত্রিকার প্রয়োজন সর্বাগ্রে। দৈনিক পত্রিকা কম হলেও বেশ কিছু মাসিক ইসলামী পত্রিকা বর্তমান সময়ে প্রকাশিত হচ্ছে। যা আমাদেরকে আশার পথ দেখায়। এরপরও এগুলো চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত বলা বা পর্যাপ্ত মনে করা খুব কঠিন। আমরা আমাদের সমাজকে তাদের চাহিদা মোতাবেক খোরাক দিতে পারছি না।
বর্তমান সময়ে পত্র পত্রিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু, আমাদের দেশে তেমন কোন ইসলামী পত্রিকা না থাকায় ইসলাম প্রচারের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমাদেরকে আরো সচেতন হয়ে ইসলাম প্রচারের কাজকে ত্বরান্বিত করতে ইসলামী সাহিত্য পত্রিকার প্রসারে কাজ করতে হবে। কেননা, ইসলাম প্রচারে ইসলামী সাহিত্য পত্রিকার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আসুন সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ইসলাম প্রচারে অবদান রাখতে সক্রীয় হই, সমাজে ইসলামী সাহিত্য পত্রিকার ব্যাপকতা তৈরী করি।

Comments

comments

About

Check Also

আনন্দ-সংকটে সুনামগঞ্জ ভ্রমণ

২ সপ্তাহ আগে এক জায়গায় বসা অবস্থায় সিদ্ধান্ত হয় আমরা ২দিনের ট্যুরে সুনামগঞ্জ যাব। মামুন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *