লায়লীর মধ্যস্থতায় রূহুল আমীনের সংগে আমি ওয়াদাবদ্ধ।
তাহলে আমি কি করতে পারি?
কিছুই করতে পারবেন না। যা করবার তা আমিই করবো। আমি শুধু জানতে চাই যদি আল্লাহ আপনার জুড়ি হিসেবে আমাকে সৃষ্টি করে থাকেন, তাহলে আর অন্যথা হবেনা। কিন্তু আমার আপনার মধ্যে এ্যাড্জাস্টমেন্ট হবে কি?
খাপ খাইয়ে নিতে হবে। সে জন্য উভয়েরই কিছু ছাড় দিতে হবে।
আপনার আব্বা মৃত্যুর সময়ে আমার আব্বাকে দিয়ে ওয়াদা করিয়ে নিয়েছেন। সেজন্য আমি ছাড় হিসেবে রুহুল আমীনকে বলে কয়ে যে-প্রকারে হোক ওয়াদা থেকে মুক্ত হবার চেষ্টা করবো। এ-ছাড়া আর কিছুই আমি ছাড় দিতে পারবো না। আমার স্বভাবেই আমি চলবো।
আমি কতোটা ছাড় দিলে তুমি খশি হও, তুমিই আমাকে বলো আমি চেষ্টা করবো।
তাহলে বলি। প্রথম আপনাকে নিয়মিত নামাজ পড়তে হবে।
আর কিছু?
আর দাড়ি রাখা সহ যাবতীয় শরীয়তি বিধান মেনে চলতে হবে।
এই পর্যন্ত।
হ্যাঁ।
আমি যদি কিছু কম করি?
কম করতে পারবেন না। বিয়ে না হলে আপনার আব্বার অন্তিম ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যাবে।
আচ্ছা আমি যদি তোমাকে বলিÑ হ্যাঁ ছাড় দেবো। পরে দেখবে কিছুই ছাড় দিইনি। তাহলে?
ধোকা বাজী, মোনাফেকী মস্ত বড় গুণাহর কাজ। কেন তা করবেন? ছাড় দিতে না পারেন। বিয়ে করার কাজ নেই। আপনার আব্বার ইচ্ছে পূরন করা তখন ইচ্ছে পূরণ না করার চাইতে খারাপ কাজ হবে।
আসাদ ভাবলো খানিকক্ষণ। তার পর বল্লো: আমি তোমার প্রস্তাবে রাজী আছি। কেননা, বাঁচবো আর কতোকাল? আব্বার মতো আমাকেও তো একদিন এ- সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবে কথা কি জানো, মানুষ অভ্যাসের দাসত্ব করে। হয়তো একটু সময় লাগবে। তোমার মনের মতো হবার জন্য আমার স্বভাবে যে-সব পরিবর্তন আনা দরকার তার জন্য সদা সচেষ্ট থাকবো।
তাহলে ওয়াদা করলেন তো?
হ্যাঁ ওয়াদা করলাম। ওয়াদা রক্ষার চেষ্টাও থাকবে ইনশা আল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ। আমি এ বিয়েতে রাজি।
রুহুল আমীনের অফিস কক্ষ। সময় বিকেল। নাসরিন প্রবেশ করলো। রুহুল আমীন অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো: আপনি একা? কখনও তো এভাবে আসেন নি। ব্যাপার কি?
শুনুন, আমি বড়ই বিপদে পড়েছি। আমি কথা রাখতে পারবো না।
কেন? কি হয়েছে?
আমার আব্বা রুস্তুম চাচার কাছে ওয়াদাবদ্ধ। মৃত্যু শয্যায় ওয়াদা দিয়েছেন। আব্বাকে কি করে ওয়াদা খেলাপকারী বানাই বলুন।
অবশ্য সেও একটা কথা বটে। এখন আমি কি করতে পারি বলুন।
আপনি যদি ওয়াদা থেকে আমাকে অব্যাহতি দেন, তাহলে আসাদের সংগে আমার বিয়ে হতে পারে। আর, আব্বার ওয়াদাও রক্ষা হয়।
ঠিক আছে অব্যাহতি দিলাম।
রাগ করলেন?
না রাগ করবো কেন? সৎকাজে সহযোগিতা করা মুসলমানদের কর্তব্য। আর আপনিও আমাকে ভুল বুঝবেন না।
এতে ভুল বুঝবার কি আছে? মানুষের কলম অনেক সময় ভূল লেখে। কিন্তু আল্লাহর কলমের লেখা কখনও রদ হয় না। ভুল হয় না।
আবার আরেকটা আরজু আছে।
বলুন।
আপনি লায়লাকে বিয়ে করুন।
তিনি আমাকে ঘৃণা করেন। আর আমিও তাকে পছন্দ করি না।
ও আপনাকে ঘৃণাই শুধু করে তা ঠিক নয়। মেয়েরা মেয়েদের মন সহজেই বুঝতে পারে। সে আপনার উপর ক্ষেপে গিয়েছিল অন্য কারণে। তা যাক। আপনার সাহচর্য পেলে ওর স্বভাবও পাল্টাবে। মেয়েরা ছেলেদের দ্বারাই প্রভাবিত হয় বেশি।
আমাকে ভেবে দেখতে হবে।
ভাবনা নয়। আপনি মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকুন। লায়লার এবং আমার বিয়ে আল্লাহ চাহেতো একই তারিখে হবে।
আসলেই লায়লা এ বিয়েতে রাজী হবে না।
যদি হয়?
হলেও, আমার বোঝা পড়ার ব্যাপার আছে তার সংগে।
তাকে আসতে বলবো আপনার কাছে। যদি সে আসে বুঝবেন তার সম্মতি আছে।
আচ্ছা দেখা যাক।
পরদিন বিকেলে লায়লা রুহুলের অফিস কক্ষে এসে হাজির হলো। এসেই যে রুহুলকে উদ্দেশ্য করে বললো: নাসরিন আসতে বল্লো তাই এসেছি। কেন এসেছেন, কৈফিয়ৎ তলব করিনি … রহুলের উক্তি।
আমাদের দুই পরিবারের এখন বিয়ে সাদীর আলোচনাই প্রধান। শুনেছেন নিশ্চয়।
নাসরিনের বিয়েটা আপনার সংগে হচ্ছে না। বিশেষ কারণবশত। আমাকে দোষ দেবেন না।
দোষ দেবো কেন? সবই নাসরিনের ব্যাপার।
এখন নাসরিন বলছে…
থামলেন কেন? বলে যান।
বলার কি দরকার? নাসরিনতো আপনাকে বলেছেই।
আপনার মুখে শুনতে চাই।
না, আমি বলতে পারবো না। … লাজুক ভংগী লায়লার
কেন
লজ্জ্বা
আশ্চর্য্য?
কেন আশ্চর্য্য হচ্ছেন?
আশ্চর্য হবো না? আপনারও এতো লজ্জ্বা কবে থেকে হলো?
আপনিই বলেন: লজ্জ্বা ঈমানের অংগ। আবার নারীর তা নাকি অলংকার।
আপনি তা বিশ্বাস করেন? আসলে কিন্তু তাও আমাদের কথা নয় শরীয়তের কথা।
সবাই বিশ্বাস করলেও আমি কেন করবোনা? এখন প্রাসংগিক আলোচনায় আসুন।
তাহলে আসি। আমি কিন্তু দাঁড়ি কামাবোনা। চাই কেউ পছন্দ করুন, চাই না করুক।
আর কিছু?
আমি যে মেয়েকে বিয়ে করবো, তার নামাজ পড়তে হবে। বোরকা পরে বইরে বেরুতে হবে?
আওরকুছ?
সে সিনেমোয় যেতে পারবেন না। বেগানা মারদের সংগে ঢলাঢলি করতে পারবে না।
আপনার প্রস্তাব যদি মেনে নেই?
তাহলে আমারও আপত্তি নেই। কেননা। বিয়ে করা আমারও দরকার।
আমি মেনে নিলাম আপনার নির্দেশিত পথেই চলবো।
পরবর্তী ঘটনা দ্রুত গতিতে ঘটে গেল। একই তারিখে দুটো বিবাহের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেল। আসাদের সংগে নাসরিনের আর রুহুলের সংগে লায়লার বিয়ে। দু’জোড়া নর-নারী সৎ জীবন যাপন ও সৎস্বভাব গঠনে ওয়াদাবদ্ধ। আসাদ ওয়াদা রক্ষার্থে প্রকারান্ত—রে স্ত্রীর মনেরঞ্জনের খাতিরে বিয়ের পর আর দাঁড়িতে খুর ছোঁয়ালো না এবং নামাজ পড়তে শুরু করে দিলো। ওদিকে লায়লা রুহুল আমীনকে যে ওয়াদা করেছিল, তা রক্ষার জন্য তথা তাকে খুশি করার জন্য নামাজ পড়তে শুরু করলো। এবং বোরকা ছাড়া বাইরে কোথায়ও যায় না। পরশ পাথরের ছোঁয়ায় লোহাও সোনায় পরিণত হয়Ñ কথাটার ব্যাখ্যা এভাবে করা চলে।
একদিন লায়লা নাসরিনকে প্রশ্ন করে: এবার বলতো ভাবী, কে জিতেছে?
নাসরিন সকৌতুকে হেসে বল্লো: কেন আমিই জিতে গেছি।
লায়লা বল্লো: তা কি করে হয়? তোর ওয়াদাবদ্ধ বর আমার হলো। জিতেছিতো আমি
নাসরিন বল্লো: আমি ইউথড্র না করলে কেমন হতো। আমি যে অপরের স্বার্থে কিছু ছাড়তে পেরেছি, সেখানেও আমার জয়। এবার লায়লা বল্লো: আমরা দুজনেই জিতেছি। কারণ আল্লাহ যা করেন, তা আমাদের মংগলের জন্যই করেন। নাসরিন বল্লো: বিশ্বাসীরা তা-ই বলেন। আসলেই তাই আমরা কেউই ঠকিনি। আল্লাহ যার সহায় হন কেউ তাকে ঠকাতে পারে না।
সমাপ্ত