আল্লাহওয়ালাদের চরিত্র

হজরত গাউছে পাক (রহ.) এর ত্যাগ স্বীকার
হজরত গাউছে পাক (রহ.) স্বয়ং বর্ণণা করেন যে, বাগদাদে অবস্থানকালে একবার আমি বিশদিন পর্যন্ত খাবার খাওয়ার মত কোনো কিছু পেলাম না। যখন আমি ক্ষুধায় একেবারে কাতর হয়ে পড়লাম তখন আমি কিস্রা শহরের দিকে রওয়ানা দিলাম এ ধারণায় যে, হয়ত সেখানে কোনো কিছু পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম আমি ছাড়াও আরো সত্তরজন আউলিয়া আমার মতো খাবারের অন্বেষণ করছেন। এ অবস্থা দেখে আমার মুনাসিব হল না যে, আমি তাঁদের সাথে খাবার অন্বেষণে রত হয়ে তাঁদের অন্বেষণের বোঝাকে ভারী করি ফেলি। তাই আমি আবারও বাগদাদ চলে আসলাম। আসার সাথে সাথেই এমন একজন লোকের সাথে আমার সাক্ষাৎ ঘটল যাকে আমি চিনি না। উক্ত অপরিচিত ব্যক্তি আমার হাতে স্বর্ণ ও রৌপ্যের কয়েকটি টুকরো দিয়ে বললেন, এ টুকরোগুলো তোমার মা তোমার জন্যে পাঠিয়েছেন। আমি উক্ত টুকরোগুলো গ্রহণপূর্বক একটি টুকরো আমরা হাতে রেখে অবশিষ্ট টুকরোগুলো নিয়ে কিস্রা শহরে গিয়ে সে স্থানে পৌছলাম যেখানে অন্যান্য আউলিয়ায়ে কেরাম খাদ্যের অন্বেষণে রত আছেন। আমি টুকরোগুলো তাঁদের মধ্যে বন্টন করে দিলাম। তাঁরা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কোথায় পেলেন? আমি বললাম, টুকরোগুলো আমার মুহতারামা আম্মাজান পাঠিয়েছেন। আউলিয়া আল্লাহগণ অত্যন্ত খুশী হয়ে টুকরোগুলো গ্রহণ করেন। অতঃপর আমি বাগদাদ চলে এসে আমার নিকট রাখা টুকরো গিয়ে খাবার খরিদ করে অন্যান্য ফকিরদের সাথে মিশে খাবার খেয়ে রাত কাটালাম। (ওয়াইয জি: ৩১)
বেরাদরানে ইসলাম। উপর্যুক্ত ঘটনায় আমরা গাউছে আযম (রহ.) এর নিজের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার মত চরিত্র প্রত্যক্ষ করলাম।
দৃঢ় বিশ্বাসের ফলাফল
অতীত যমানায় একজন লোক মহান আল্লাহপাকের এবাদতে এমনভাবে লিপ্ত ছিলেন যার এবাদতের অবস্থা দেখে হজরত জিব্রাইল (আ.) পর্যন্ত আশ্চর্যাম্বিত হয়ে গেলেন। হজরত জিব্রাইল (আ.) উক্ত আবিদ ব্যক্তির সাথে সাক্ষাতের জন্যে মহান আল্লাহ পাকের দরবারে অনুমতি কামনা করলেন। মহান আল্লাহ পাক এ শর্তে হজরত জিব্রাইল (আ.) কে অনুমতি দিলেন যে, তুমি একবার লাওহে মাহফুযের দিকে লক্ষ্য কর। হজরত জিব্রাইল (আ.) যখন লাওহে মাহফুযের দিকে লক্ষ্য করলেন তখন দেখলেন যে, উক্ত আবিদ ব্যক্তির নাম গুনাহগারদের তালিকায় লিখিত রয়েছে। হজরত জিব্রাইল (আ.) উক্ত আবিদ ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর অবস্থার সংবাদ দিলেন। আবিদ ব্যক্তি বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। হজরত জিব্রাইল (আ.) ধারণা করলেন, লোকটি হয়ত তাঁর কথা শুনেননি। পূনরায় হজরত জিব্রাইল (আ.) তাঁর অবস্থার খবর দিলেন। আবারও লোকটি বললেন, আল্হামদুলিল্লাহ। যদি তার উপযুক্ত না হতাম তাহলে মহান আল্লাহ পাক আমার সাথে এমন ব্যবহার করতেন না। এজন্যে ভাল-মন্দ উভয় অবস্থায় মহান আল্লাহ পাকের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আবিদ ব্যক্তির এমন কথায় হজরত জিব্রাইল (আ.) অত্যন্ত আশ্চর্যাম্বিত হলেন। মহান আল্লাহ পাক বললেন, হে জিব্রাইল। পূনরায় লাওহে মাহফুযের দিকে দৃষ্টি কর। হজরত জিব্রাইল (আ.) বলেন, যখন আমি পূনরায় আমার দৃষ্টি লাওহে মাহফুজের দিকে নিবন্ধ করলাম তখন দেখতে পেলাম উক্ত আবিদ ব্যক্তির নাম গুনাহগারদের তালিকা থেকে পরিবর্তন করে নেককারদের তালিকায় লেখা হয়েছে। (নুযহাতুল মাজালিস-খণ্ড ১ম পৃ. ৭০)
বেরাদরানে ইসলাম! সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করার মত চরিত্র উপর্যুক্ত ঘটনায় আলোচিত আবিদ ব্যক্তির মধ্যে আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। প্রথমে যদিও আবিদ ব্যক্তির নাম গুনাহগারদের তালিকায় লিপিবদ্ধ ছিল কিন্তু মহান আল্লাহ পাকের উপরে তাঁর দৃঢ়বিশ্বাসের ফলে মহান আল্লাহ পাক গুনাহগারদের তালিকা থেকে তাঁর নাম মিটিয়ে নেককারদের তালিকাভুক্ত করে দেন।
আল্লাহওয়ালাদের চরিত্র
অবশিষ্ট চা-টুকুও পান করলেন
আল্লামা নজমুদ্দীন (দা-মাত বারাকাতুহুম) সাহেব জাদায়ে ফুলতলী শামসুল উলামা আল্লামা ফুলতলী (রহ.) এর মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লামা সাহেব ক্বিবলা ফুলতলী (রহ.) একদা আসামের কোন এক স্থানে তাঁর একজন গরিব মুরিদের বাড়িতে তাশরীফ রাখেন। তখন সাথে সাহেব ক্বিবলা (রহ.) এর সাথে অপর একজন মাওলানা সাহেবও ছিলেন। বাড়ির মালিক গরিব লোকটি তার মুর্শিদ সাহেব ক্বিবলা (রহ.) কে পেয়ে অতি আনন্দিত ও ব্যতিব্যস্ত। কিভাবে কী দিয়ে স্বীয় মুর্শিদকে আপ্যায়ন করানো যায়। গরিব লোকটি তেজপাতা লং ইত্যাদি দিয়ে চা তৈরি করলে সাথে সাথে চায়ের স্বাদ বাড়ানোর জন্য কিছু গোল মরিচও চায়ের মধ্যে দিলেন। মোট কথা তাঁর সাধ্যমত মেহমানদারি করার জন্যে দু’কাপ চা তৈরি করে সাহেব ক্বিবলা (রহ.) এবং তাঁর সঙ্গীয় মাওলানা সাহেবের সামনে এনে হাযির করলেন। মাওলানা সাহেব চায়ের কাপ থেকে অল্প চা পান করে জ্বাল লাগায় রাগতভাবে চায়ের কাপটি হাত থেকে ফেলে দিলেন। সাহেব ক্বিবলা (রহ.) দৃশ্যটি অবলোকন করলেন। এদিকে সাহেব ক্বিবলা (রহ.) স্বীয় মুরিদ গরিব লোক যে সাধ্যমত মেহমানদারি করার চেষ্টা করেছে সে দিকে লক্ষ্য রেখে স্বীয় মুরিদের মনকে খুশী করার জন্যে নিজের সামনে রাখা চায়ের কাপের সবটুকু পান করলেন। সাথে সাথে স্বীয় সঙ্গীয় মাওলানা সাহেবের কাপটির অবশিষ্ট চা টুকুও পান করলেন। যাতে লোকটি বুঝতে পারে যে তার সাধ্যমত মেহমানদারিটুকু স্বীয় মুর্শিদ আনন্দচিত্তে গ্রহণ করেছেন।
বেরাদরানে ইসলাম! উপর্যুক্ত ঘটনায় আয়নায়ে জামালে আহমদী আল্লামা ফুলতলী সাহেব ক্বিবলা (রহ.) এর মধ্যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সমূহের অন্যতম একটি চরিত্র ফুটে উঠেছে। আর তা-হল ‘মানুষের প্রতি ভালোবাসা।’ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য সমূহের অন্যতম একটি চরিত্র ছিল মানুষ তো দূরের কথা মহান আল্লাহ পাকের সৃষ্টিকুলের কোনো সৃষ্টিকে তিনি দুঃখ-বেদনা দেননি। বরং আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ থেকে শুরু করে জীবজন্তু পর্যন্ত সকলের আবেদন নিবেদনকে শ্রবণ করে তাদের সমস্যার সমাধান করেছেন।

Comments

comments

About

Check Also

আল্লামা ছাহেব কিবলার সামাজিক খেদমত

এম এ বাসিত আশরাফ ফার্সী কবি বলেছেন:তরীকত বজুয খেদমতে খালক্বে নেসতবসুজ্জাদা তাসবীহ ওয়া দালকে নেসত।ভাবানুবাদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *