বাবরের সংগ্রাম

(পূর্ব প্রকাশের পর)
১০ম পর্ব
পাঁচ দিন পর।
জুনেদ আজ ক’দিন ধরে রীতিমতো অস্থিরতায় ভোগছে। আমার সাথে কথা বলার জন্য বেপোরোয়া এক তাড়নায় সব সময় এগিযে় আসে। কিন্তু তা আর বলা হয় না। আমি বুঝি, তবে কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারি না।
আজ ডাক্তার সাহেব রুমে এসে ঢুকলে জুনেদ তার কাছে জানতে চাইলো, ‘ডাক্তার সাহেব, আজ কথা বলা যাবে তো?’
শুনে আমি একটু চমকে উঠলাম। কি বলতে চায় সে, কিন্তু বলতে পারছে না। তার দিকে তাকালাম। কিছু বলতে চাইছিলাম। তার আগে ডাক্তার বলে উঠলেন, ‘তুমি যা বলতে চাচ্ছো, নিঃসন্দেহে তা খুব খুশির খবর। তবে এই খবরটা এই কযে়ক দিনের ভেতরে না বলাটাই ভালো। ও আরো একটু সুস্থ হযে় উঠুক।’ শুনে মুহূর্তে জুনেদের মুখটা গুমরা হযে় উঠলো। বিষয়টি খেয়াল করলেন ডাক্তার। ‘আচ্ছা তুমি যখন বলতে অস্থির হযে়ই আছো। তাহলে বলবে। তবে এর জন্য একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। অবশ্য তা খুব বেশি সমযে়র জন্য নয়। তাকে বলতে দেয়া যায় কিনা তা ভাবার জন্য আমাকে মাত্র দশ মিনিট সময় দাও। দিবে তো? না অস্থির হযে় আত্মহুতি দিযে় দেবে? হেঁ’ বলে তার গালে একটা চিমটি দিলেন তিনি। ও হাসলো।
জুনেদ আমার পাশেই ছিল। তার হাত ধরে টান দিলাম। তাকালো আমার দিকে। বললাম, ‘খুশির খবরটা কি রে?’
জুনেদ তাকালো ডাক্তারের দিকে। জবাবটা দিলেন তিনি। ‘পরে জানতে পারবে সব! জুনেদ তোমাকে সে খবর শুনানোর জন্য ব্যাকুল। দেখতে পাচ্ছো না? আরে এখন তুমিও তাই হযে় যাবে নাকি! হে! একটু না হয় সবুর করো। এতোদিন যখন কষ্ট করে সবুর করেছো।’ তিনি কথা বলছিলেন আর আমার নাডি়-ভুডি় দেখছিলেন। ফাইলটা হাতে নিলেন। ‘তা আরও একটু সময় ধৈর্য্য ধরো। না এটাও পারবে না?’
আমি হা সুচক মাথা নাড়ালাম। কিন্তু বুঝলাম, তিনি ইচ্ছে করে এটা করছেন যেন আমার আগ্রহ আরও বাডে় বিষয়টির প্রতি। জুনেদ বলল, ‘ঠিক আছে ডাক্তার সাহেব। আমার বন্ধুকে খবরটা না হয় পরেই শুনালাম। কিন্তু কবে কখন আমরা বাংলাদেশে যেতে পারবো? সেটা কি জানতে পারি?’
ফাইল রাখলেন আমার মাথার পাশে। ‘চাইলে আজই, এখনই যেতে পারবে।’ তার দিকে তাকিযে় মুচকি হাসলেন।
‘সত্যিই!’
‘হ্যাঁ, সত্যি। তবে শুধু তুমি, রোগী না।’
‘কেন?’
‘কারণ এখনও সে পুরোপুরি সেরে উঠেনি। উঠুক, তারপর।’
‘কবে? একটু…’
‘কাটায় কাটায় কি আর বলতে পারি বাবু? বোকা ছেলে!’
‘আনুমানিক…’
‘হ্যাঁ, তাতো কযে়ক যুগ… সরি কযে়ক বছর লাগতে পারে।’
ডাক্তার কথা বলছেন আর মুচকি হাসছেন। জুনেদ তার একেকটি কথা শুনছে আর হতাশ হচ্ছে। আমিও। কিন্তু তিনি তাতে বেশ মজা পাচ্ছেন বলেই মনে হলো। আমি তখন বুঝলাম, তিনি জুনেদের সাথে মজা করছেন।
‘একি পাগলামী কথা।’ বললো জুনেদ।
‘পাগলামী!’
‘সত্যি বলেন না। দয়া করে।’
‘পনের দিন আরও। এর বেশি না।’
‘এতো দিন তারপরও! কেন?’
‘দেখছো না, রোগী শোয়া থেকে বসতে পারছে না।’
‘তাই বলে…’
‘শোযে় শোযে় হাঁটবে নাকি? আর এভাবে নিযে় গেলে তুমি খুশি হও? নাকি সুস্থ হলে?’
‘ডাক্তার সাহেব।’
‘বলো।’ জুনেদ কিছু বললো না। তাকিযে় থাকলো। তার পিঠে হাত রাখছেন ডাক্তার। ‘সেরে উঠতে সময় লাগবে একটু। সেই সময়টা দেয়া উচিৎ বাবু।’
‘কতদিন?’
‘ও তো একেবারে সুস্থ হযে় চলাফেরা করতে সময় লাগবে আরও ছ’মাস।’
‘ছয় মাস!’
‘হ্যাঁ। গুনে গুনে ছয় মাস।’
‘আরও বাড়লো দেখি।’
‘না, বাডে়নি। যেভাবে সেরে উঠছে আমি আশাবাদি, ও দু সপ্তাহের মধ্যে মোটামোটি সুস্থ হযে় উঠবে।’
‘এই ছয় মাসের…’
‘এই ছয় মাসের মাঝে সে বাসা থেকে বের হতে পারবে না। সামান্য ক্লান্ত হযে় পড়লেই অসুস্থ হযে় পড়বে। এটাই তার কারণ। অজ্ঞান হযে় যাবে।’
‘কেন?’
‘আঘাতের যন্ত্রণা ছিলো ভীষণ, তা আবার বাম পাজরে। এখানেই মানুষের সব। এ যন্ত্রণা প্রথমে মাথায় গিযে় চড়াও হযে়ছিলো। নিওরো সমস্যা আছে। তার উপর রক্তহীনতা! দুর্বলতা! দেবতা রক্ষা করেছেন, জুনেদ। গুলিটা যদি আরও একটু উপরে লাগতো, তাহলে খারাপ কিছু হতে পারতো।’
‘আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি, তিনি যে মহা বিপদ থেকে বাঁচিযে়ছেন।’
‘জুনেদ, এখন তাকে পুষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরী। তার সাথে বেশি কথা বলা, হাসি তামাশা, ওসবের কিছু করা যাবে না। অবশ্য ছয় মাসের ভেতরে সব ঠিক হযে় যাবে।’
‘খবরটা জানাতে পারি? ১০ মিনিটের বেশি সময় চলে গেছে।’
‘এতো অস্থিরতার কি বাবু? ও ভাল হযে় উঠলে নিজেই তো সব জানতে পারতো।’
‘একটু আগে সে খবরটা জানলো।’
‘তার ক্ষতি করে? তার ক্ষতি কি তোমার ক্ষতি না?’
‘আমার…’
‘কেন! বন্ধুর ক্ষতি তোমার ক্ষতি না?’
‘অবশ্যই। আর বন্ধুর ক্ষতি মানেই তো নিজের ক্ষতি।’
‘তাহলে আর তাড়াহুড়া করো না।’
‘বললেই বেঁচে যাই।’
‘নইলে মরে যাবে?’
‘না, তা না।’
‘তাহলে খবরটা ভুলে যাবে? ভুললে আমিই স্মরণ করিযে় দেব। ভেবো না।’
‘এটা ভুলে যাবার খবর নয় ডাক্তার সাহেব।’
‘যদি খবর শুনে ও অজ্ঞান হযে় পডে়? আমার মনে হয় কি জানো? এখনই না বলা ভাল।’
‘ও জ্ঞান হারিযে় ফেলতে পারে?’
‘খুশির খবরে জ্ঞান হারানোই স্বাভাবিক। এটার জন্যই তো এতো সব। তাই না? আর ও জ্ঞান হারালে সহজে জ্ঞান ফিরবে না!’
‘ও, ঠিক আছে, আমি চুপ করলাম।’
জুনেদ আর ডাক্তারের মাঝের কথোপকোথন আমি শুনছিলাম। প্রথমে ভাবছিলাম হয়তো খবরটা শুনতে পারবো। এখন মনে হচ্ছে আরও অপেক্ষা করতে হবে। আমার কথা বলা নিষেধ। তাই শ্রোতা সেজে শুযে় আছি। উঠতে পারি না। সেদিন সবাই ধরে আমাকে বসাতে চেষ্টা করেছিল। বুকের পাঁজরে প্রচন্ড ব্যাথা পেযে়ছি। বসতে পারি না। এযাবৎ আমি কোন কথাও বলিনি নিষেধ থাকায়। কিন্তু ভাবনাতে কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না বলে খরবটা কি হতে পারে ভাবলাম। কিন্তু কিছু খুঁজে পেলাম না। ভাবতে শুরু করলে কেন জানি মাথা ঘুরে। দুর্বল হযে় পডি়। তাই আর ভাবতে চাইলাম না।
আজ ১৯৭২ ইংরেজির ২৫ জানুয়ারী। সকাল ১০টা। এখন আমি বসতে পারি। কিছুটা হাঁটতেও পারি। জুনেদ বাইরে গেছে। ডাক্তার আসবেন। নার্স চেয়ারে বসে আছে। ও খুব ভাল মেযে়। ছোট ভাইযে়র মতো আমার সেবা যতœ করছে। তার দিকে তাকালেই সুলতানা আপুর কথা মনে পডে়। কে জানে, তারা এখন কি করছে? বেঁচে আছে না হানাদাররা মেরে ফেলছে! এমনি করে ভাবনার সাগরে দেখতে পাই মা, বাবা, আর অসহায় নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীর বেদনার্ত মুখ। কিন্তু কোথাও দেখতে পাই না স্বাধীন বাংলাদেশ নামক কিছু। যার জন্য আমার এই ত্যাগ আর রক্তদান। আমি সহ অসংখ্যা বীর বাঙ্গালীর…
হঠাৎ দরজা নডে় উঠলো। একজন রুমে ঢুকলো। না, অন্য কেউ নয়, জুনেদ। হাতে বেশ কিছু ফল। টেবিলের উপর রাখলো। ঠিক তখন রুমে ঢুকলেন ডাক্তার সাহেব। এসেই আমার শিয়রে দাঁড়ালেন। চোখ রাখলেন আমার চোখে। মাথায় হাত রাখলেন। মুচকি হাসি দিলেন একটা। জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবর, কেমন আছো?’
‘ভাল, খুব ভাল। ডাক্তার সাহেব আমি ভাল হযে় গেছি মনে হচ্ছে।’
‘তবে পাঁচ ভাগের একভাগ।’
‘এতো কম!’
‘চিন্তার কিছু নেই। সব শেষে তুমি ভাল হযে় উঠবে।’
‘ডাক্তার সাহেব।’
‘প্রতিটি সময়ই তোমার মঙ্গল কামনা করি বাবু।’
‘এই ঋণ কোন দিনই শোধ করতে পারবো না।’
‘কই! তোমাকে কোথায় ঋণী করলাম?’
‘এই যে সেবা, এটাই তো…’
‘আরে না না। এটা আমার পেশা। কর্তব্য মাত্র।’
‘আচ্ছা ডাক্তার সাহেব…’
‘বলো…’
‘কিনা একটা খুশির খবর বললেন…’
হাত সরালেন মাথা থেকে। বসলেন একটা চেয়ার টেনে। ‘হেঁ, খুশির খবর। এ খুশির খবর একদিন নয়, যতদিন বেঁচে থাকবে তত দিনের জন্য। একই সুরে, একই নামে একই ভঙ্গিতে শুনতে পাবে।’
‘আজ…’
‘হ্যাঁ, আজও পাবে।’
‘কিন্তু কই, বলছেন নাতো?’
‘আমি না, জুনেদ বলবে।’ বলে জুনেদের দিকে তাকালেন।
‘সত্যি! আজ বলবো?’
‘জুনেদ, তোমার খবর শুনানোর তৃপ্তি মিটাও এবার। আজই।’
‘ওকে।’ বলে আমার দিকে এগিযে় এলো।
‘তবে তার আগে বাবরকে বলতে হবে, খবরটা শুনে তোমাকে কি উপহার দেবে। নিশ্চয় ভাল কিছু!’
‘অত্যন্ত খুশির হলে শুনার সাথে সাথেই হয়তো দিযে় দেবো।’
‘কি দেবে?’
‘তখন দেখবেন। তবে আবারও বলছি, খবরের উপর নির্ভর করবে। পুরস্কার কি হবে।’
‘ঠিক আছে, আগে খবরটা শুনে নাও। জুনেদ এখন বলতে পারো।’
‘হা, হা, হা…। আচ্ছা বাবর, বলতো তোমার এই অবস্থা কেন হলো?’
‘স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে।’
‘তুমি, আমি আর আমরা সবাই একদিন স্বপ্ন দেখেছিলাম এটা, তাই না?
‘এতো প্রশ্ন সহ্য হচ্ছে না। যা বলার তাড়াতাডি় বলে ফেলো। লম্বা করো না।’
‘আগে উত্তর দাও।’
‘কেন?’
‘কারণ, এর মাঝেই লেকিযে় আছে তোমার খবর।’
‘কি!’ আমার সারা শরীর যেনো মুহূর্তে চমকে উঠলো।
‘হেঁ ! হেঁ বাবর! হেঁ!’
‘মা…মানে! কি!’
‘হেঁ বন্ধু! আজ আমরা…!’
‘আজ আমরা স্বাধীন! স্বাধীন বাংলাদেশ আমাদের!’
‘হেঁ !
‘আমরা মুক্ত। আমরা স্বাধীন বাবর। তোমার সংগ্রাম সফল।’
আমি তীব্র উত্তেজনায় মেতে উঠলাম। ‘এ কি সুখবর দিলে তুমি? এই সুখবরটা শুনার জন্যই তো আমি বেঁচে আছি জুনেদ। আগে বলনি কেন? আমরা স্বাধীন। আমার বাংলাদেশ! আমরা আজ স্বাধীন! মুক্ত!
এমন খুশির খবর আসবে আমি জানতাম। মনে মনে ভাবছিলাম, দেশ কি স্বাধীন হয়নি। বা আর কত দেরি স্বাধীনতার। আজ সেই খবর শুনে আমি প্রচণ্ড খুশিতে আত্মহারা হযে় গেলাম। আমি স্বাধীন, আমার বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি এখন স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। যে দেশটার জন্য প্রাণ দিযে়ছেন আমার বাবা। কত মানুষ। কত প্রাণ। আমার চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এলো। রুমের প্রতিটি বস্তুই যেনো মিছিলের মতো করে বলছে, হ্যাঁ, তুমি স্বাধীন। তোমার বাংলাদেশ আজ হানাদার মুক্ত। হঠাৎ করে আমার কেমন জানি লাগছে। এমন লাগছে কেন? কাঁপছে শরীর। চারদিকটা। কারও উপস্থিতি টের পেলাম না আর রুমে। জুনেদেরও। ভুলে গেলাম। সবই দোলছে। কেন?
আমার মাথা ঝিঝি করছে। ঘুরছে। তালগোল পাকিযে় যাচ্ছিলাম নিজের কাছেই।
এরপর আর কিছু মনে নেই আমার।
এরপর আমি যখন চোখ মেলে তাকালাম, তখন পাশে দেখতে পেলাম ডাক্তার। চেয়ারে বসা জুনেদ। আমি চোখ মেলেই বলে উঠলাম, ‘ডাক্তার সাহেব, ডাক্তার সাহেব, আমরা স্বাধীন! তাই না?’
‘বাবর ! এসব নিযে় পরে আলাপ হবে।’
‘না ডাক্তার সাহেব, এখন আমার কিছু হবে না, প্রথমে বলেছিলাম না! যে অত্যন্ত খুশির খবর হলে সাথে সাথেই উপহার দিযে় দিবো। ঐটা ছিলো উপহার দেয়ার পর্ব। এখন আর কিছু হবে না। ডাক্তার সাহেব, আমাদের স্বপ্ন আজ বাস্তব। লক্ষ শহীদের রক্ত বৃথা যায়নি। আমাদের যুদ্ধ করা, মাতা-পিতা হারানো, ভাই-বোন হারানো, প্রাণ ত্যাগ। রক্ত দান ! ঐ সব সব, ডাক্তার সাহেব ঐ সব স্বার্থক হযে়ছে। কিছুই বৃথা যায়নি। তাই না? আমার বুক আনন্দে ফেটে যাচ্ছে। আচ্ছা, ডাক্তার সাহেব, আমাদের স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য কোন দিন উদয় হযে়ছে?’
‘আজ থেকে একমাস চারদিন আগে। ১৬ই ডিসেম্বর।’
‘আজ থেকে একমাস চারদিন আগে! ১৬ই ডিসেম্বর!’
‘বন্ধু, আজ আমরা স্বাধীন।’ জুনেদ কথাগুলো বলল। আমি তার দিকে তাকিযে় বললাম-
‘জুনেদ! বন্ধু জুনেদ! আমরা স্বাধীন!’ বলে শুয়া থেকে উঠে বসলাম। ডাক্তার আমাকে ধরলেন।
‘হ্যাঁ, পাকিস্তানী বাহিনীর একটাও আর বাংলাদেশে নেই। ওরা লেজ গুটিযে় পালিযে়ছে।’
‘দেশে কবে যাচ্ছি জুনেদ?’
‘আজ থেকে বারদিন পর।’
শুনে তাকালাম আমি ডাক্তারের দিকে। ‘হ্যাঁ, জুনেদ ঠিক বলেছে।’ ডাক্তার বললেন।
‘তাই?’
‘হ্যাঁ, দেশ স্বাধীন হযে়ছে। কিন্তু দেশে গিযে়ও তুমি স্বাধীন হবে না।’
‘কি বলছেন!’
‘আট-নয় মাস তোমাকে বিশ্রামে থাকতে হবে, বাবর।’
‘এতো সময়!’
‘সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পরই তুমি স্বাধীন। মুক্ত।’
‘স্বাধীন!’
‘তোমার সুস্থ জীবনের জন্য এটা।’
‘অবশ্যই মানবো, ডাক্তার সাহেব।’
‘আমরা যাচ্ছি কি করে? ডাক্তার সাহেব!’ জুনেদ জিজ্ঞেস করলো।
‘তোমাদের স্যার হাসান সাহেবের সাথে ফোনে আলাপ হযে়ছিল। তিনি জানালেন দশদিন পর তিনি নিজেই তোমাদেরকে দেশে নিযে় যাবার জন্য পরিবারসহ কলকাতা আসছেন। উনার সাথে তোমাদের যাওয়া হবে।’
‘তাই!’ আমি বিষ্মিত সুরে উচ্চারণ করলাম। ‘স্যার আসবেন?’
‘একদম সত্যি তাই।’
‘আপনাকে অসংখ্যা ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব। অসংখ্যা ধন্যবাদ।’
‘হুঁহুঁহুঁ।’
হেসে তিনি চলে যাচ্ছিলেন। আমি ডাকলাম, ‘ডাক্তার সাহেব।’
আমার দিকে আবার ফিরে বললেন, ‘কিছু বলবে?
‘হাসপাতালের বাগানে জুনেদকে নিযে় একটু হাঁটতে পারি?’
‘যেতে পারবে। তবে সাবধানে।’
বলে ডাক্তার সাহেব চলে গেলেন। জুনেদ কাছে এসে আমার ডান হাতে ধরে বললো। ‘চল তাহলে, বাগানে হাঁটবো।’
তখন আমি কোন কথা বললাম না। শুধু দাঁত বের না করে মুচকি হাসলাম। বিনিমযে় বন্ধু জুনেদও হাসলো।
(চলবে)

Comments

comments

About

Check Also

মুবাহাসা (২য় পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)মুসাল্লা উঠিয়ে নাওইমাম আযম আবু হানিফা র.-এর আদত মুবারক ছিল যখন তিনি শাগরিদকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *