সাকরাইন ও বিয়েতে গান বাজনা, কিছু কথা

আমি একজন কলেজছাত্র, থাকি সূত্রাপুর এলাকায়। সূত্রাপুর গেন্ডারিয়া বা এজাতীয় এলাকা পুরান ঢাকার অন্তর্ভুক্ত। জানুয়ারি মাসের ১৪ অথবা ১৫ তারিখে পৌষ সংক্রান্তি বা সাকরাইন পালিত হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপালে একে মকর সংক্রান্তি নামে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশের সব জায়গায় এই সাকরাইন হয় না। মূলত ঢাকা শহরের যে এলাকায় আমি থাকি অর্থাৎ পুরান ঢাকায় এই সাকরাইন পালিত হয়। এই সাকরাইনে মূলত দিনের বেলা ঘুড়ি উড়ায় এবং সন্ধ্যা ও রাতে আতশবাজি ফোটানো আর ফানুস উড়ানো হয়। তবে এই কথিত সাকরাইনে অনেক উল্টাপাল্টা কর্মকান্ডও হয়। বিশেষ করে সাকরাইনের আগের দিন অর্থাৎ ১৩ জানুয়ারি রাত ৯টার পর থেকে এলাকার বিল্ডিংগুলোতে ডেকসেটে গান বাজনা ও ডিজে বাজানোর প্রস্তুতি চলে। ১৪ তারিখ অর্থাৎ সাকরাইনের দিন সকাল ৮টার পর থেকেই ডেক্সেটে উচ্চৈশব্দে গান বাজনা বাজায় আস্তে আস্তে মোট ৩-৪টি বিল্ডিং থেকে ডেক্সেট ও ডিজেবক্সের আওয়াজ চলতে থাকে। সৃষ্টি হয় কোলাহলের পরিবেশ। যদিও যোহর, আসর, মাগরিব ও এশার আজানের ১ মিনিট আগে থেকে আযান শেষ হওয়া পর্যন্ত ডেক্সেটের গান বাজনা বন্ধ থাকে। আযান শেষ হওয়ার ২ মিনিট পর থেকে ফের চলে গানবাদ্য বাজনা সন্ধ্যা হওয়ার ৫ মিনিট আগে থেকেই চলে আতশবাজি পটকা ফুটানো। এই কথিত সাকরাইনের দিন যারা ডেক্সেটে গান বাজায় তারা অনেক সময় অশালীন টাইপের গানও বাজায়। এই সাকরাইনে মাস্তির নামে অনেকে মদজাতীয় জিনিস পান করে। যারা সাকরাইনে উপরোক্ত এসব কাজ করে তাদের অধিকাংশেরই বয়স ১৭-৩৪ বছর। এসবের প্রভাবে মূলত পুরান ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় শব্দদূষণের পরিস্থিতি বিরাজ করে। স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের ছাত্রদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ও বিঘœ ঘটে। স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজসমূহে ক্লাস করার সময়ও এই ভয়ংকর শব্দদূষণের প্রভাব কিছুটা থাকে। আসলে এই সাকরাইনের দিনে ভয়ংকর শব্দদূষণ ও তার প্রভাব সৃষ্টি হয়। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।


দ্বিতীয়ত, আমাদের বাংলাদেশে বিয়েকে কেন্দ্র করে অনেক বছর যাবত নাচ ও গানবাজনা এবং পর্দাহীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ইসলামে বিয়ে করতে হয় শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই গায়েহলুদ, বিয়ে কিংবা এজাতীয় অনুষ্ঠানে নাচানাচি, উচ্চশব্দে গান বাজনা, ব্যান্ডপার্টি অথবা ডিজের আয়োজন করে থাকে কখনো কখনো রাত ১১টার পরও এই গানবাজনা, ব্যান্ডপার্টি অথবা ডিজে চলে। এতে অন্যান্য মানুষের অসুবিধা হয়। রাতের ঘুমে অসুবিধা ও ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় বিয়েতে এমন গান বাজনা চলে যাতে অশালীনতা, যৌন সুড়সুড়ি ও বেহায়াপানা কে প্রশ্রয় দেয় (নাউজুবিল্লাহ)। বিয়েতে এমন গানবাদ্যের প্রভাবে আশপাশের বাসাবাড়িতে যারা আছে বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং অসুস্থ রোগীদের ব্যাঘাত ঘটে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর একশ্রেণির লোক আছে, যারা অজ্ঞতাবশত খেল-তামাশার বস্তু ক্রয় করে বান্দাকে আল্লাহর পথ থেকে গাফেল করার জন্য। (সূরা লুকমান : ৬)
উক্ত আয়াতের শানে নুযূলে বলা হয়েছে যে, নযর ইবনে হারিস বিদেশ থেকে একটি গায়িকা বাঁদী খরিদ করে এনে তাকে গান-বাজনায় নিয়োজিত করল। কেউ কুরআন শ্রবণের ইচ্ছা করলে তাকে গান শোনানোর জন্য সে গায়িকাকে আদেশ করত এবং বলত মুহাম্মদ তোমাদেরকে কুরআন শুনিয়ে নামায, রোযা এবং ধর্মের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কথা বলে। এতে শুধু কষ্টই কষ্ট। তার চেয়ে বরং গান শোন এবং জীবনকে উপভোগ কর। (-মাআরিফুল কুরআন ৭/৪) এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, ‘অচিরে আমার উম্মতের মধ্যে এক শ্রেণির লোক মদ, যিনা, রেশমবস্ত্র ও বাদ্যযন্ত্র হালাল করবে’।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন (আমিন)

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *