শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ’-এর আমাদের দাবি
১. ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে কোনো শ্রেণি থেকে বাদ না দিয়ে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি, সঙ্গীত এবং কারিগরিসহ সকল শাখায় আবশ্যিক বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২. ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়টিকে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় (তথা সামষ্টিক মূল্যায়নে) আগের মতই বহাল রাখতে হবে।
৩. ইসলাম শিক্ষা এবং মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর শ্রমবাজারে শক্ত অবস্থান তৈরির সুবিধার্থে আরবি ভাষাকে সর্বস্তরে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

আমাদের পরিচয়
‘ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ’ একটি অরাজনৈতিক শিক্ষক সংগঠন, যা বাংলাদেশে ইসলামি শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দেশে চলমান শিক্ষাব্যবস্থার কারিকুলাম পর্যালোচনা করে তাতে ‘সংবিধান ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বিরোধী কিছু থাকলে তা চিহ্ণিত করে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দূর করার চেষ্টা করা এ সংগঠনের প্রধান ও পবিত্র দায়িত্ব। Ñ(সংগঠনের গঠনতন্ত্র, ধারা ৬, পৃষ্ঠা ৭)।

প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
আপনাদের অবগতির জন্যে ‘ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ’ নিবেদন করছে

বর্তমান সমস্যা
‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’-এ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য অনুযায়ী “ধর্ম, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।” (জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘প্রাক-কথন’)। প্রধানমন্ত্রীর দাবির বাস্তব ছবি দেখা যায় গোটা শিক্ষানীতি জুড়ে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছেÑ
১. সেই অমূল্য শিক্ষানীতির আলোকে রচিত ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২’-তে, শিক্ষানীতি প্রতিফলিত না হয়ে উল্টো একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ‘বিজ্ঞান’ এবং ‘ব্যবসায় শিক্ষা’ শাখা থেকে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি পুরোপুরি বাদ হয়ে যায়। আর ‘মানবিক’ শাখায় থেকে যায় শুধুমাত্র ঐচ্ছিক চতুর্থ বিষয় হিসেবে, যা স্পষ্টভাবে শিক্ষানীতির লঙ্ঘন। Ñ(জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২, পৃষ্ঠা ১১)। অথচ শিক্ষানীতিতে ছিল ছিল “শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছেÑ প্রাথমিক (১ম শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত) ও মাধ্যমিক স্তরে (৯ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত) শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিকশিক্ষার মাধ্যমে উন্নত চরিত্র গঠনে সহায়তা করা।” (জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০, পৃষ্ঠা ২ এবং ১২)।
২. একইভাবে ‘প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২০’-এ এসে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়টিকে ১০ম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা তথা বোর্ড পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া হয়। অর্থাৎ, বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান কিংবা সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়গুলোর সামষ্টিক মূল্যায়ন এবং শিখনকালীন মূল্যায়ন উভয়টি হলেও ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়টি সামষ্টিক মূল্যায়ন তথা বোর্ড পরীক্ষা থেকে পুরোপুরি বাদ থেকে যায়। Ñ(প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২০, পৃষ্ঠা ৯৭)

‘ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ’-এর দাবি
প্রিয় দেশবাসী, এমতাবস্থায়, দেশের সর্বোচ্চ কর্ণধার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সমীপে বলিষ্ঠতা ও দৃঢ়তার সাথে নিম্নলিখিত দাবি করতে থাকুন
১. ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি, সঙ্গীত এবং কারিগরিসহ সকল শাখায় আবশ্যিক বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২. ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়টিকে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় (তথা সামষ্টিক মূল্যায়নে) বহাল রাখতে হবে।
৩. ইসলাম শিক্ষা এবং মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর শ্রমবাজারে শক্ত অবস্থান তৈরির সুবিধার্থে আরবি ভাষাকে সর্বস্তরে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

‘ইসলাম’ ও ‘ইসলামি শিক্ষা’য় ‘জাতির পিতা’ ও ‘জননেত্রীর অবদান’ : সরকারের ভাবমূর্তি প্রসঙ্গ
‘ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ’ গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছে জাতির পিতা, স্বাধীনতার স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা- যিনি ইসলামের খেদমতে জাতীয় প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যিনি তাঁর প্রতিটি বক্তব্যে ‘ইনশাআল­াহ’ বলতেন। নিজেকে তিনি ‘বাঙালি মুসলমান’ বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন। তিনি বলেছিলেন, “মক্তব শিক্ষাই হবে এদেশের বুনিয়াদি শিক্ষা।”
ধর্মভীরু পিতার যোগ্য সন্তান হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘ইসলামি আরবি বিশ^বিদ্যালয়’ এবং ১০১০ টি ‘দারুল আরকাম মাদরাসা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স-এর সমমান সনদ দিয়েছেন, ৫৬০ টি ‘মডেল মসজিদ’ প্রতিষ্ঠার মত মেগাপ্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন, ‘ঈদে মিলাদুন্নবি স.’-কে গেজেটভুক্ত করে জাতীয় দিবসের মর্যাদা দান করেছেন। এ ছাড়াও তাঁর বহুমুখী পদক্ষেপ ইতিহাস হয়ে থাকবে।
এই অবস্থায় ইসলাম শিক্ষাকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি থেকে বাদ দিলে কিংবা এসএসসি’র পাবলিক পরীক্ষা তথা বোর্ড পরীক্ষা না হলে সরকারের বিশাল ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে এবং সরকারের সদিচ্ছা দেশবাসীর কাছে প্রশ্নের মুখে পড়বে।

স্কুল-কলেজে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি কেন জরুরি
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘ইসলাম শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ’, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্ণধার এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মতান্ত্রিক দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি দেশবাসীর কাছে, ইসলাম শিক্ষা বিষয়টির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার পক্ষে কিছু যুক্তি ও বাস্তবতা তুলে ধরছেÑ
০১. আমাদের সংবিধান শুরু হয়েছে ‘বিসমিল­াহির-রহমানির রহিম’ তথা সর্বশক্তিমান আল­াহর নাম দিয়ে এবং উক্ত সংবিধানের ‘২ ক’ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রধর্ম যেখানে ইসলাম, শিক্ষাব্যবস্থায় সেখানে ইসলাম শিক্ষা বিষয় গুরুত্বহীন কিংবা অপ্রধান হয়ে থাকতে পারে না। তদুপরি ইসলাম শিক্ষা বিষয়টিকে পাবলিক পরীক্ষা থেকে দূরে রেখে সংবিধানকে সমুন্নত রাখা অসম্ভব।
০২. জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী “নৈতিকতার মূল উৎস হচ্ছে ধর্ম।” Ñ(জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২১০, পৃষ্ঠা ২১)। সেই ধর্মকে পাবলিক পরীক্ষা থেকে দূরে রেখে কিছুতেই জাতীয় শিক্ষানীতিকে বাস্তবায়ন এবং নৈতিক ও আদর্শিক চেতনাসম্পন্ন নাগরিক পাওয়া সম্ভব নয়। অতএব, যার-যার ধর্ম থেকে সাধ্যমত সর্বোচ্চ নৈতিকতা আহরণের ব্যবস্থা করা শিক্ষানীতির অনিবার্য দাবি।
০৩. বাংলা উইকিপিডিয়ায় ‘বিভিন্ন দেশে ধর্মের গুরুত্ব’ শিরোনামে একটি তথ্যনির্ভর প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রবন্ধে রয়েছে, “বিশ্বজুড়ে ২০০৯ সালে করা ‘গ্যালোপ জরিপ’ থেকে করা গবেষণায় প্রশ্ন করা হয়েছিল, “ধর্ম কি তোমার প্রতিদিনের জীবনে গুরুত্ব বহন করে?” তাদের উত্তরের ওপর নির্ভর করে যে তালিকা তৈরি করা হয়, তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে এক শতাংশ অংশগ্রহণকারীও নেতিবাচক উত্তর দেন নি। ৯৯%+-এর উত্তর ছিল “হ্যা, গুরুত্বপূর্ণ।”
০৪. ধর্ম সম্বন্ধে কতকের অভিযোগ, ধর্ম একটি আনপ্রোডাক্টিভ বিষয়। অথচ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু চাকুরি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য নয়। চরিত্রগঠনই শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য। আর চরিত্রগঠনে ধর্মের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। ইতিহাস ও চলমান বাস্তবতা তাই বলছে।
০৫. পাবলিক পরীক্ষা তথা বোর্ড পরীক্ষা বহির্ভূত কোনো সাবজেক্টকে শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক গুরুত্ব দেন না। অতীতের অভিজ্ঞতা তাই বলছে। এমতাবস্থায় শুধু ‘শিখনকালীন মূল্যায়ন’ দিয়ে ইসলাম শিক্ষার পূর্ণ সুফল প্রত্যাশা করা অবাস্তবতার নামান্তর।
০৬. ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে জাতীয় ঐক্য গড়ে দেশ ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষত ও সমুন্নত রাখতে ইসলাম এর কোনো বিকল্প থাকতে পারে না।
০৭. “দ্বীনী জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর ওপর ফরজ”। Ñ(বায়হাকি)। আর বিদ্যালয়ে গুরুত্বের সাথে ইসলাম শিক্ষা পড়ানো না হলে কিছুতেই আমাদের সন্তানরা প্রকৃত মুসলমানি জীবন ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারবে না।
০৮. আল­াহর ভাষায় মহানবি স. হচ্ছেন ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’ বা উত্তম ও অনুসরণীয় আদর্শ। অথচ মহানবির অনুসারীরা যদি সেই নবির চিন্তাধারা ও জীবনাদর্শের সাথে পরিচিত হতে না পারে, তাহলে তা যে কোনো মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রের জন্যে বিপদ ও দুর্ভাগ্যের কারণ হবে।
০৯. ইসলাম ও মহানবি স.-এর আদর্শ রাষ্ট্রস্বীকৃত উৎস থেকে না শিখতে পারলে আমাদের সন্তানরা সহজেই মিসগাইডেড হয়ে ভুল উৎস থেকে ইসলামের অপব্যাখ্যা শিখে জঙ্গীবাদ ও চরমপন্থার সাথে জড়িয়ে যাওয়ার যথেষ্ট আশংকা রয়েছে।
১০. সর্বোপরি, আমাদের সংবিধান ও সরকারের প্রতিশ্রæতি হচ্ছে ‘ক্ষুধা, দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস, নারীনির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতা এবং চরমপন্থামুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করা’, যার সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা রয়েছে ইসলামে। সকলের সহজবোধ্যতা ও দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে, স্কুল-কলেজের ইসলাম শিক্ষা পাঠ্যপুস্তক থেকে অল্প কয়েকটি আয়াত ও হাদিস তুলে ধরা হচ্ছে প্রমাণ হিসেবে
‘সন্ত্রাস ও বিপর্যয় সৃষ্টি করা, নরহত্যার চেয়েও গুরুতর।’ ‘সাবধান ! কেউ যদি কোনো যিম্মীর (তথা মুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিক-এর) প্রতি অবিচার করে, তাহলে কিয়ামাতের দিন আমি নবী (আল­াহর আদালাতে) সেই যিম্মির পক্ষ নিয়ে মামলা দায়ের করব।’ ‘আমি এবং কন্যাসন্তানদের অভিভাবক জান্নাতে পাশাপাশি অবস্থান করব।’ ‘সমগ্র সৃষ্টি আল­াহর পরিবার।’ ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও আর ঋণগ্রস্তকে ঋণমুক্ত করো।’
‘মদ্যপায়ী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।’ ‘ঘুষদাতা এবং ঘুষ গ্রহীতা উভয়েই জাহান্নামি।’ ‘যে আমাদের ছোটদেরকে দয়া করে না আর বড়দেরকে সম্মান করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *