রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল

পবিত্র রমজান মাসের প্রতিটি মুহুর্ত মুমিন-মুমিনাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ মহান মাসে তাই তারা সব ধরণের এবাদত-বন্দেগী বাড়িয়ে দেন। নিম্নে রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল পেশ করা হলো।
০১. রমজানের প্রথম কাজ হচ্ছে সব ধরণের পাপ কাজ ত্যাগ করা। কেননা গুনাহ সব এবাদতের মর্যাদা ও ফলাফল নষ্ট করে দেয়। তাই পাপকাজ ত্যাগ করা এবাদত-বন্দেগীর প্রথম দাবী।
০২. রমজান মাসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম নফল নামাজের পরিমান বাড়িয়ে দিতেন। এ জন্য বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। যেহেতু এ মাসের একটি নফল আমল অন্য মাসের একটি ফরজের সমান। হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত মাগরিবের নামাজের পর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ছয় রাকাত আউয়াবিন নামাজ পড়তেন। হযরত আবু হুরায়রা রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিব নামাজের পর কোনো প্রকার দুনিয়াবি কথা না বলে ছয় রাকাত নামাজ পড়বে, তাহলে এ নামাজের বিনিময়ে মহান আল্লাহ তা’আলা তাকে ১২ বছর নফল এবাদতের সমপরিমান ছাওয়াব দান করবেন। (তিরমিযী) এ ছাড়াও রয়েছে ফজরের পরে এশরাকের নামাজ, চাশতের নামাজ, ছালাতুল তাছবীহ, হাজতের নামাজ ইত্যাদি অনেক অনেক ফজিলতপূর্ণ আমল।
০৩. ইসলামের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে তাহাজ্জুদ নামাজ ফরজ ছিলো। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা’আলা নফল নামাজের মধ্যে একমাত্র তাহাজ্জুদ নামাজের কথাই উল্লেখ করেছেন। নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা নবী রাসুলদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো। সুতরাং এ আমলটি প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অতীব জরুরি।
০৪. ইস্তেগফার বা গুনাহের জন্য বার বার মাফ চাওয়া, অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। কায়মনে বেশি করে ইস্তেগফার শরীফ পড়া উচিত। তাছাড়া রমজান মাসে তাওবা কবুল ও গুনাহ মাফের নিশ্চয়তা রয়েছে।
০৫. নেক আমলের প্রতিযোগিতায় নামার মানসে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা উচিত। এ মাসে মহান আল্লাহ তা’আলা বান্দার আমলের মধ্যে কোরআন তেলাওয়াত দেখতে খুবই পছন্দ করেন।
০৬. সহমর্মিতা ও পরোপকারের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। হাদীস শরিফে মাহে রমজানকে সহমর্মিতা ও পরোপকারের মাস বলা হয়েছে। উম্মুল মু’মিনীন সায়্যিদাতুনা আয়িশা সিদ্দীকা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর বদান্যতা রমজানে অনেক বেড়ে যেত।
০৭. অধিক পরিমাণ দান সদকা করা এ মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এ মাসে সকল বন্দিকে মুক্তি দান করতেন এবং কোনো ভিক্ষুককে খালি হাতে ফিরাতেন না। বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম পবিত্র রমজান মাসে প্রবাহমান বায়ূর চেয়ে অধিক পরিমাণে দান-সদকা করতেন। সুতরাং রমজান মাসে বেশি বেশি দান সদকা করা আবশ্যক।
০৮. পবিত্র রমজানে নিজের অধিনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারি ও চাকরদের কাজ হালকা করে দেয়া অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ। এটা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর নির্দেশও। হাদীস শরিফে আছে, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করবে, আল্লাহ তা’আলা তার প্রতিদান দান করবেন।
০৯. অধিক হারে দু’আ করতে হবে। হযরত আয়িশা সিদ্দীকা রা. বলেন, রমজান এলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর চেহারা মুবারক বিবর্ণ হয়ে যেত। নামাজ বেশি বেশি পড়তেন। অপূর্ব বিনয় ও নম্রতার সাথে দু’আ করতেন।
১০. ইতিকাফ রমজানের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রমজানের অন্যান্য করণীয় ইবাদত শেষে একজন রোজাদারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ইতিকাফ করা। ইসলামে ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। অন্তরকে একমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতি মনোনিবেশের প্রশিক্ষণ, সুন্নাত নিয়মে দুনিয়া বিরাগী হওয়ার এবং লাইলাতুল কদর তালাশ করার ক্ষেত্রে ইতিকাফ এর বিকল্প নেই। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম প্রতিবছর রমজান মাসে ইতিকাফ করতেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর ইন্তিকালের পর উম্মুল মুমিনীনগণ ইতিকাফ করতেন।
ইতিকাফের মাধ্যমে শবে কদর খোঁজ করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর মূল উদ্দেশ্য ছিল। হাদীসে এসেছে, হযরত আবু সায়িদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন, আমি প্রথম দশকে ইতিকাফ করেছি এই (কদর) রজনী খোঁজ করার উদ্দেশ্যে। অতঃপর ইতিকাফ করেছি মাঝের দশকে। মাঝ-দশক পেরিয়ে এলাম। তারপর আমাকে বলা হল, (কদর) তো শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ইতিকাফ করতে চায় সে যেন ইতিকাফ করে।’ অতঃপর লোকেরা তাঁর সাথে ইতিকাফ করল। (মুসলিম)
ইতিকাফের সুন্নাত হলো অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবে না। অসুস্থ রোগীকে দেখতে যাবে না। নারীকে স্পর্শ করবে না। জামে মাসজিদ ছাড়া ইতিকাফ করবে না, রোজা ছাড়া ইতিকাফ করবে না। (রোজা ও তারাবীহ : ফাযাইল – মাসাইল, পৃষ্ঠা ১৩৮)
এ ছাড়া গুরুত্ববহ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে অধিক পরিমাণ দূরুদ শরিফ পাঠ করা, যথানিয়মে সেহরি খাওয়া ও ইফতার করা, জামায়াতে নামাজ আদায়, তেরাবির নামাজ আদায়, সম্ভব হলে খতমে তারাবিতে অংশ নেয়া, ফিতরা বিতরণ করা, নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নেক আমলের তৌফিক দান করুন, আ-মীন।

Comments

comments

About

Check Also

আমরা রোজাদার হই

আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র রামাদ্বান। রহমত, মাগফিরাত, আর নাজাতের স্রোতদ্বারা বয়ে যাবে এ মাসে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *