আরবী মাস সমূহের মধ্যে রামাদান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মহিমান্বিত ও বরকতময়। আল্লাহ তাআলা এ মাসকে তার নিজের মাস বলে অভিহিত করেছেন। যাবতীয় কল্যাণ, নেয়ামত আর রহমতে ভরপুর করে দিয়েছেন। এ মাসকে আল্লাহ তাআলা তার শাশ্বত বাণী কুরআন কারীম নাযিলের মাস হিসাবে নির্বাচন করেছেন। কুরআন নাযিলের এ মাসকে আল্লাহ তাআলা তার মুমিন বান্দাহগণের সিয়াম পালনের জন্যও নির্ধারণ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন “সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন রোযা রাখে”।
আল্লাহ তাআলা তার বান্দাহদের উপর রোযাকে ফরয করেছেন বান্দাহর শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি বান্দাহকে তাকওয়ার মহান গুণে গুণান্বিত করা। তিনি বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোযাকে ফরয করা হয়েছ যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়াবান হতে পারো”। অর্থাৎ, তোমাদের উপর রোযা আবশ্যক করা হয়েছে যাতে তোমাদের অন্তরে তাকওয়ার প্রদ্বীপ প্রজ্বলিত হয়। রোযার দ্বারা মানুষের অন্তর্নিহিত খারাপ শক্তিগুলো ধ্বংস হয়। মানুষ ক্ষুধার্ত থাকলে তার ভিতরের খারাপ প্রবৃত্তিগুলো দূর্বল হয়ে ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে মানুষের অন্তর থেকে গুনাহ করার আগ্রহ দূর হয়ে যায়।
রামাদানের ফযীলত
হাদীসের কিতাব সমূহে রামাদান মাস এবং এর রোযার ফযীলত সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা এসেছে। বুখারী শরীফে হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- “রামাদান মাস আগমন করলে জান্নাতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানসমূহকে বন্দী করা হয়”। ইমাম নববী র. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, রামাদান মাসের সম্মানের কারণেই জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় আর জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়। শয়তানকে বন্দী করা হয় যেন মুমিনদের কষ্ঠ না দেয়।
রামাদানের রোযা
সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযার নিয়তে ইচ্ছাকৃত পানাহার এবং যৌন তৃপ্তি থেকে বিরত থাকাকে শরীআতের পরিভাষায় সিয়াম বা রোযা বলে।
মাসআলা: রোযার জন্য নিয়ত করা শর্ত। নিয়ত ছাড়া হবে না।
মাসআলা: নিয়ত মুখে উচ্চারন করা জরুরী নয়, তবে মনের খটকা দূর হওয়ার জন্য মুখে উচ্চারণ করা ভালো।
পাগল ও নাবালেগ ব্যতীত রামাদান মাসের রোযা সকল মুমিনের উপর ফরয। শরীআত সমর্থিত কোন ওযর-আপত্তি ব্যতীত রামাদানের রোযা পরিত্যাগ করা জায়য নেই।
মাসআলা:
অসুস্থ ব্যক্তি দ্বীনদার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোযা ছেড়ে দিতে পারবেন। তবে রামাদানের পর তার কাযা করে নিতে হবে।
মাসআলা: রামাদান মাসে কেউ শরঈ সফরে থাকলে তার জন্য রোযা ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি আছে। পরে কাযা করে নিবে। তবে অতিরিক্ত কষ্ঠ না হলে সফর অবস্থায়ও রোযা রাখা উচিত।
মাসআলা: হায়য বা নিফাস চলাকালে নামায-রোযা নিষেধ। এই অবস্থায় মহিলাগণ রোযা রাখবেন না। রামাদানের পর পবিত্র অবস্থায় কাযা করে নিবেন।
মাসআলা: মিসওয়াক করলে, আতর ব্যবহার করলে বা মুখের ভিতরের থুথু গিলে ফেললে রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে থুথুর পরিমাণ বেশি হলে গিলে ফেলা মাকরূহ। রোযা অবস্থায় মাজন বা টুথপেস্ট ব্যবহার করা মাকরূহ।
মাসআলা: ভুলে কোন কিছু খেয়ে ফেললে বা পান করলে রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে ভুলে খাওয়ার পর রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে করে যদি পুনরায় কোন কিছু খায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে, কাযা আবশ্যক হবে।
মাসআলা: স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভঙ্গ হবে না।
মাসআলা: রক্ত দান করলে রোযা ভঙ্গ হবে না, তবে মাকরূহ।
মাসআলা: অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে রোযা ভঙ্গ হবে না।
রোযার কাযার বিবরণ
শরীআত সমর্থিত কোন কারণে রামাদান মাসে রোযা রাখতে না পারলে পরবর্তীতে সেটা আদায় করাকে কাযা বলে। রামাদনের কাযা যত দ্রুত সম্ভব আদায় করে নেয়া জরুরী।
মাসআলা: রোযা অবস্থায় নাকে বা কানে ওষুধ দিলে রোযা ভেঙ্গে যাবে, কাযা ওয়াজিব হবে।
মাসআলা: কুলি করার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবেও কন্ঠনালিতে পানি চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে, কাযা আবশ্যক হবে।
মাসআলা: বিড়ি-সিগারেট সেবন করলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে যে কোন কিছুর ধোয়া নাকে বা গলা পর্যন্ত পৌঁছালে রোযা ভেঙ্গে যাবে, কাযা আবশ্যক হবে।
মাসআলা: মুখে পান নিয়ে ঘুমিয়ে গেলে এবং এই অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে কাযা আবশ্যক হবে।
মাসআলা: হস্তমৈথুন করে বীর্যপাত করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে, কাযা ওয়াজিব হবে।
কাফফারার বিবরণ
রামাদান মাসে শরীআত সমর্থিত কোন কারণ ছাড়া রোযা ছেড়ে দিলে কাযা এবং কাফফারা ওয়াজিব হবে। রোযার কাফফারা হলো, একাধারে বিরতিহীনভাবে ৬০ টি (কাযা ব্যতীত) রোযা রাখা। এই ৬০ টি রোযা রাখার মধ্যখানে একটি রোযা ছুটে গেলে নতুন করে আবার ৬০ টি রাখতে হবে। তবে মহিলাদের হায়যের কারণে যে কয়দিন বিরতি যাবে তাতে কোন অসুবিধা হবে না।
একাধারে ৬০ দিন রোযা রাখতে না পারলে ৬০ জন মিসকীনকে তৃপ্তির সাথে দু’বেলা খাওয়াতে হবে। অথবা একজন মিসকীনকে ৬০ দিন খাওয়াতে হবে।
মাসআলা: রোযার নিয়ত করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে কাযা এবং কাফফারা ওয়াজিব হবে।
মাসআলা: রোযা অবস্থায় সহবাস করলে (বীর্যপাত হোক বা না হোক) স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য কাযা এবং কাফফারা ওয়াজিব হবে।
মাসআলা: একই রামাদানে একাধিক রোযা ছুটে গেলেও কাফফারা একটিই আবশ্যক হবে।
ফিদয়ার বিবরণ
রোযা রাখতে সম্পূর্ণ অপারগ ব্যক্তি ফিদয়া আদায় করবেন। ফিদয়া হলো প্রতিটি রোযার পরিবর্তে সাদকায়ে ফিতর পরিমাণ পন্য বা সমমূল্য দান করা।
মাসআলা: এমন দীর্ঘ মেয়াদী অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি ফিদয়া দিতে পারবেন, যিনি আর কোন দিন রোযা রাখার শক্তি লাভ করতে পারবেন না, অথবা আর কোন দিন সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নাই।
মাসআলা: অসুস্থ ব্যক্তি যদি রামাদানের পর সুস্থ হওয়ার আশা বা সম্ভাবনা রাখে তাহলে তার জন্য ফিদয়া দেওয়া জায়য নয় বরং তিনি সুস্থ হওয়ার পর রোযার কাযা করে নিবেন।
মাসআলা: অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি ফিদয়া দেওয়ার পর সুস্থ হলে বা রোযা রাখার শক্তি পেলে তাকে রোযার কাযা আদায় করতে হবে। যে ফিদয়া দেওয়া হয়েছিল তার জন্য তিনি আলাদা সাওয়াব অর্জন করবেন।
সাহরী ও ইফতার
সাহরী এবং ইফতার রোযার গুরুত্বপূর্ণ দুটি অংশ। ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত বা নফল; যে কোন রোযার জন্য সাহরী খাওয়া সুন্নত। যদি পেটে ক্ষুধা না থাকে তবুও অন্তত কয়েকটি খেজুর বা অন্য কিছু খেয়ে নিবে। কোন কিছু না খেলে অন্তত এক গ্লাস পানি পান করে নিবে। কেননা সাহরীর মধ্যে রাখা হয়েছে বরকত বা প্রাচুর্যতা। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা সাহরী খাও। কেননা, সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে’ -(বুখারী ও মুসলিম)। তাছাড়া আমাদের এবং ইয়াহুদী-নাসারাদের রোযার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরী খাওয়া। (মুসলিম) সুতরাং সকলের উচিত রোযার নিয়তে সুবহে সাদিকের পূর্বে খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করা। এ বরকতময় খাবার পরিত্যাগ করা উচিত নয়।
মাসআলা: সাহরী বিলম্বে খাওয়া উচিত। তবে এরকম দেরী করা উচিত নয়, যাতে সাহরীর ওয়াকত শেষ হওয়ার আশঙ্কায় তাড়াহুড়া করতে হয়।
মাসআলা: রামাদান মাসে কোন কারণে সাহরী খেতে না পারলেও রোযা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে অনেকে মনে করেন সাহরী না খেলে রোযা হবে না। এটা ভুল। সাহরী না খেলেও রোযা রাখতে হবে। আবার অনেকের ধারনা সাহরী না খেয়ে রামাদানের রোযা রাখা যায় কিন্তু নফল রোযা রাখা যায় না; এ ধারনাও সঠিক নয়। সাহরী খেতে না পারলেও যে কোন রোযা রাখা যায়, কেননা সাহরী খাওয়া রোযার জন্য সুন্নত। কোন কারণে সাহরী খেতে না পরলেও রোযার নিয়ত করে রোযা রাখতে পারবেন। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কারণ ছাড়া সাহরী পরিত্যাগ করা উচিত নয়।
মাসআলা: সাহরীর সময় আছে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ হলে সাহরী না খাওয়া উচিত। যদি সাহরী খাওয়ার পর জানা যায় যে, তখন সাহরীর সময় ছিল না তাহলে এ দিনের রোযা কাযা করতে হবে।
ইফতার
একজন রোযাদরের জন্য ইফতারের মূহুর্ত হলো আনন্দের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। একটি তার ইফতারের সময় এবং অপরটি (পরকালে) তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ লাভের সময়’ -(বুখারী ও মুসলিম)। ইফতারের মাধ্যমে একজন রোযাদার আল্লাহর অপার নিআমত ও কল্যাণ লাভ করে থাকে। ইফতারের সময় হলে তাড়াতাড়ি ইফতার করা সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন “লোকেরা ততদিন কল্যাণের সাথে থাকবে, যতদিন শীঘ্রই (সময় হওয়ার সাথে সাথে) ইফতার করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
রোযাদারের উচিত হলো সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করে নেয়া। আর এমনটি করা আল্লাহর প্রিয় বান্দাহগণের লক্ষণ। আমাদের অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ইফতার করতে বিলম্ব করেন। এটি সুন্নত বিরোধী কাজ। ইফতার যথাসম্ভব দ্রুত করে নেয়া উচিত। ইফতারের পূর্বে দুআ করা উচিত। এ সময় দুআ কবূল হয়। (ইবনে মাজাহ)
মাসআলা: খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নত। খেজুর না থাকলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা, তাতে বরকত রয়েছে। আর যদি খেজুর পাওয়া না যায় তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা, তা পবিত্রকারী’। (তিরমিযী)
মাসআলা: সূর্য ডুবে গেছে মনে করে ইফতার করার পর জানা গেল তখনো সূর্য ডুবে নি, তাহলে এই দিনের রোযা কাযা করতে হবে।
ইফতারের দুআ
“আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওআ’লা রিযক্বিকা আফত্বারতু” (হে আল্লাহ! আমি আপনারই জন্য রোযা রেখেছি এবং আপনার রিযিক দ্বারাই ইফতার করছি)
ইমাম আবূ দাউদ র. এই দুআটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য রোযাদারকে ইফতার করানোর প্রতি উৎসাহিত করেছেন। অন্যকে ইফতার করানো অত্যন্ত সাওয়াবের বলে ঘোষনা দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
“এটা ঐ মাস যাতে মুমিন ব্যক্তির রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হয়, এই মাসে যে ব্যক্তি অন্য একজন রোযাদারকে ইফতার করাবে এটা তার জন্য তার গুণাহ সমূহের জন্য কাফফারা হবে এবং তার নিজেকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তির কারণ হবে। আর তাকে রোযাদারের সমান সাওয়াব প্রদান করা হবে, এতে তার সাওয়াব হতে কিছুই কমানো হবে না।”
তারাবীহ
তারাবীহর নামায রামাদান মাসের ইবাদাত সমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। দিনের বেলা আল্লাহর নির্দেশে সিয়াম পালন করে রাতের বেলা আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করা। তারাবীহ নামাযের দ্বারা রামাদান ও কুরআনের হক আদায় হয়, রোযার উদ্দেশ্য তাকওয়া হাসিলে সাহায্য পাওয়া যায়। এ নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের প্রত্যাশায় রামাদান মাসের রাতে কিয়াম করবে, তার অতীত জীবনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখরী ও মুসলিম)
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী র. বলেন, এখানে কিয়াম বলতে তারাবীহ নামাযকে বুঝানো হয়েছে। (শরেহে মুসলিম) তারাবীহর নামায পড়া সুন্নত।
মাসআলা: তারাবীহর নামায বিশ রাকাআত পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।
মাসআলা: তারাবীহর জামাতে কুরআন কারীম খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।
মাসআলা: তারাবীহর খতমে সূরার শূরুতে বিসমিল্লাহ আস্তে আস্তে পড়তে হবে। তবে যে কোন একটি সূরার শূরুতে বিসমিল্লাহ জোরে পড়তে হবে, নতুবা শ্রোতাদের খতম পূর্ণ হবে না।
মাসআলা: তিলাওয়াতে হরফ বুঝা যায় না, এমন দ্রুত তিলাওয়াত করা জায়য নয়। এতে সাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
মাসআলা: কেউ মসজিদে এসে দেখলো ইশার জামাত শেষ হয়ে গেছে এবং তারাবীহ শুরু হয়ে গেছে। তখন সে প্রথমে ইশার নামায আদায় করবে তারপর ইমামের সাথে তারাবীহর নামাযে শরীক হবে। ইমামমের সাথে বিতর নামাযও আদায় করবে। এরপর তারাবীহর যে কয় রাকাত ছুটে গিয়েছিল তা আদায় করবে।
মাসআলা: নাবালিগ তথা অপ্রাপ্ত বয়সস্কদের পিছনে কোন নামাযের ইকতিদা করা জায়য নয়। তারাবীহর নামাযও নয়।
মাসআলা: মহিলাদের তারাবীহর জামাত করা মাকরূহে তাহরীমী।
এতেকাফ
এতেকাফ একটি মহান ইবাদত। দুনিয়ার ব্যস্ততাকে পিছনে ফেলে কিছু দিন একাঘ্রচিত্তে নির্জনে আল্লাহর ইবাদত করার গুরুত্ব অপরিসীম। রামাদান মাসের শেষ দশকে এতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। মদীনায় অবস্থানকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছরই এতেকাফ পালন করেছেন। দাওয়াত, তরবিয়ত, শিক্ষা এবং জিহাদে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও রামাদানে তিনি এতেকাফ ছাড়েননি। বুখারী ও মুসলিমে হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- “রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাদানের শেষের দশকে এতেকাফ করেছেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত। এরপর তাঁর স্ত্রীগণ এতেকাফ করেছেন”।
মাসআলা: এতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়াহ। মহল্লাহর কিছু মানুষ এতেকাফ করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।
মাসআলা: নামাযের জামাত হয় এমন সকল মসজিদে এতেকাফ করতে হবে। জুমআর নামায হওয়া শর্ত নয়।
মাসআলা: শরঈ বা প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হলে এতেকাফ নষ্ঠ হয়ে যাবে। শরঈ প্রয়োজন; যেমন জুমআর নামায পড়া, ওযূ-গোসল। প্রাকৃতিক প্রয়োজন যেমন পেশাব-পায়খানা।
মাসআলা: ফরয গোসল ব্যতীত স্বাভাবিক গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। তবে পেশাব-পায়খানা থেকে আস-যাওয়ার পথে দ্রুত গোসল করে চলে আসলে এতেকাফের কোন ক্ষতি হবে না।
মাসআলা: ইবাদাত মনে করে এতেকাফ অবস্থায় একদম চুপ থাকা মাকরূহ।
মাসআলা: পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এতেকাফে বসা বা বসানো নাজায়য।
রামাদান মাসে সিয়াম পালনকে ফরয করা হয়েছে আমাদের তাকওয়ার গুণ অর্জনের জন্য। রামাদান মাসকে আমাদের গুনাহ মাফের কারণ বলা হয়েছে। আল্লাহর নির্দেশ পালনে আমরা রামাদান মাসে দিনের বেলা পানাহার এবং যৌনতৃপ্তি থেকে বিরত থাকি। এসব থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি আমাদের উচিত হলো অন্যান্য হারাম-নিষিদ্ধ বিষয়গুলো থেকে আমাদের দূরে থাকা। রোযা রেখে আমাদের উচিত হলো মিথ্যা, গিবত, যুলুম, প্রতারণা সহ যাবতীয় পাপকার্য থেকে নিজেকে সংযত রাখা। অনর্থ কাজ থেকে দূরে থাকা। আমাদের জন্য দায়িত্ব হলো, আল্লাহর ইবাদত; নামায, কুরআন তিলাওয়াত, যিকর-আযকার, দান সাদকাহ সহ যাবতীয় কল্যাণকর কাজের মাধ্যমে রামাদান মাসকে অতিবাহিত করা।