ঘুরে দেখা নবীর শহর

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্মৃতি বিজড়িত পূণ্যভূমি মদিনা। এই মদিনাকে নিয়ে কত কবি তাঁদের কবিতা লিখেছেন। কত আশিক এই মদিনা যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছেন। তাঁদের অন্তরে প্রেমের অগ্নিশিখা জ্বলজ্বল করছে। পবিত্র ভূমি মদিনার কিছু দর্শনীয় স্থান যেয়ারতের কথা এখানে বর্ণনা করছি।
মক্কা হতে মদিনা শরীফে যাওয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, পরের দিন আমরা পবিত্র মদিনা শরিফ ঘুরে দেখব। আমার সাথে আমার ওয়ালিদ মুহ্তারাম ও আমার বড় ভাই ছিলেন। আমরা হোটেল থেকে সকালে বের হই। প্রথমে আমরা কুবার মসজিদে যাই। এটা সেই মসজিদ যে মসজিদে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পর প্রথম নামায আদায় করতেন। এই মসজিদের অপর নাম মসজিদে তাক্বওয়া। এই মসজিদের কথা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে। এই মসজিদে নামায পড়ার ফজিলত অত্যধিক। হাদীস শরীফে আছে-‘হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল আমরা মক্কা শরীফে থাকতে মনে যখন ইচ্ছা হত কাবাঘরের তাওয়াফ করতাম; উমরা করতে পারতাম; কিন্তু মদিনা শরীফে এসে তা আমরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আয়েশা (রা.) তোমার মনে যখন ইচ্ছা হয় তখন তুমি মসজিদে কুবায় গিয়ে দু’রাকাত নামাজ আদায় করবে। এই দু’রাকাত নামাজ পড়লে তুমি একটি উমরার সওয়াব পাবে।’ উক্ত হাদিসটি মসজিদে কুবায় প্রবেশের প্রধান দরজায় আরবিতে লেখা রয়েছে।

মোবারক এই মসজিদে নামাজ আদায় করে আমরা মসজিদে যুল-ক্বিলাতাইনে গিয়ে পৌঁছি। ইহা সেই মসজিদ, যে মসজিদে মুসলমানদের ক্বিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে বায়তুল্লাহর দিকে ফিরানো হয়। এজন্য এ মসজিদের নাম মসজিদে যুল-ক্বিবলাতাইন। এই মসজিদে দু’রাকাত নামাজ আদায় করে আমরা ঐতিহাসিক খন্দক নামক স্থানে পৌছিলাম। সেখানে গাড়ির চালক আমাদেরকে গাড়ি থেকে নামতে দেয়নি। তবে গাড়িতে থেকে দেখেছি, শুনেছি এই স্থানে সাতটি মসজিদ ছিল। তবে এখন তিনটি ভেঙে বড় একটি বানানো হয়েছে। আর বাকি চারটি এখনো বলবৎ রয়েছে। এই খন্দক নামক স্থানে ঐতিহাসিক খন্দকের যুদ্ধ হয়েছিল। মদিনাকে রক্ষার জন্য এর চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল। এই পরিখা খননে স্বয়ং রাহ্মাতাল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অংশগ্রহণ করেন। খন্দক থেকে আমরা গেলাম একটি খেজুরের বাগানে। সেই বাগানের পাশে একটি খেজুরের কোম্পানি রয়েছে। সেখানে খেতে চাই ফ্রি; কিন্তু নিয়ে আসতে চাইলে টাকা দিয়ে আনতে হবে। এই খেজুরের বাগান দর্শনের পর আমরা সর্বশেষে চললাম ইসলামের ইতিহাসের দ্বিতীয় যুদ্ধ যে স্থানে সংঘটিত হয়েছিল সেই স্থানে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা সেখানে পৌঁছে গেলাম। সেই স্থানের নাম হলো ‘উহুদের পাহাড়’। যার পাদদেশে সংঘটিত হয়েছিল উহুদের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে মুসলমানগণ প্রথমে বিজয়ী হলেও পরে সামরিক পরাজয় বরণ করেন। এই যুদ্ধে কাফের কিংবা মুসলমান কাউকে বিজয়ী বলা যায় না। এই যুদ্ধে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাঁত মোবারক শহিদ হয়। এই উহুদ পাহাড়ের ফজিলত অত্যধিক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, উহুদ জান্নাতি পাহাড় সমূহের মধ্য হতে একটি পাহাড়।
উহুদের যুদ্ধে যে সত্তরজন সাহাবি শহিদ হন তাঁদের অনেকের কবর উহুদে রয়েছে। তাঁদের মধ্যে সায়্যিদুস শুহাদা হজরত হামজা (রা.)-এর মাজারও রয়েছে। আমরা তাঁদের কবর জিয়ারত করে পবিত্র উহুদ পাহাড় থেকে চলে আসি।
আমাদের গাড়ি উহুদ থেকে সোজা আমাদের হোটেলের দিকে চলে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা হোটেলে পৌঁছে নিজ নিজ রুমে চলে যাই।

Comments

comments

About

Check Also

আনন্দ-সংকটে সুনামগঞ্জ ভ্রমণ

২ সপ্তাহ আগে এক জায়গায় বসা অবস্থায় সিদ্ধান্ত হয় আমরা ২দিনের ট্যুরে সুনামগঞ্জ যাব। মামুন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *