কবি রুহুল আমীন খানের কাব্যে নবী প্রেমের স্তুতি গানv

সৃষ্টির ঘোষণা আর নবী প্রেমের সূচনায় আমি কোনো ফারাক দেখতে পাই না। তাই তো ‘নবী প্রেম’ পরিভাষা পুরাতন অতি পুরাতন। হযরত আদম সফিউল­াহ আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে হযরত ঈসা রুহুল­াহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকল নবী-রাসূল ওলী আবদাল গৌস কুতুব মু’মিন মুসলমান এমনকি বিধর্মী প্রাজ্ঞব্যক্তিবর্গ নবী প্রেমের স্তুতি গান গেয়েছেন অকপটে নির্দ্বিধায়। লিখলে বললে অত্যোক্তি হবে না শেষ পর্যন্ত বনের পশু পাখিরাও নিজ নিজ ভাষায় আল­াহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতাবা সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­ামের জয়গান গাইতে কার্পণ্য করেননি। বর্তমান বাংলাদেশের ইসলামিক শক্তিমান কবি যুগের ফররুখ নামে খ্যাত মাওলানা কবি রুহুল আমীন খান সাহেবের কিছু না’তে রাসূলের শ্লোক নিয়ে আজকের উপস্থাপনা। যা সারা বাংলায় তথা বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে গীত হচ্ছে অহরত।
আমরা বাংলাদেশের মানুষ। আমাদের থেকে প্রিয় নবীর রওদ্বা মোবারক দূরে অনেক দূরে সদূর আরবে। ইচ্ছে করলেই যাওয়া যাবে এমন নয়, কিন্তু বাংলা তথা পৃথিবীর আনাচে-কানাচে আশিকে রাসূলেরা মনের গহীন থেকে কলমের খুঁচায় অমৃত কবিতায় মজার মজার শ্লোক প্রকাশ করে নবী প্রেমিকদের আত্মার খোরাক জোগান দিয়েছেন নিরলসভাবে। প্রত্যেক আশিক (প্রেমিক) তার মাসুকের (প্রেমাস্পদ) জন্য সদা উদগ্রীব। অশান্ত মনে শান্তনার আশায় যেতে চায় পাক মদীনায় মনজিলে মকসুদে অভিষ্ট লক্ষ্যে। কবি রহুল আমী খানও তারই ধারাবাহিকতায় লিখলেন এবং গাইলেন-
মন যে আমার টেকে না গো এই দেশেতে হায় রে-
প্রিয় নবী লও গো ডাকি সোনার মদীনায় রে \
প্রেমিক তার প্রেমাস্পদের অপেক্ষায় দেরী সইতে পারে না। অভিনব কৌশলের ফন্দি আটে তরা করে কাছে যাওয়ার। তিনি অন্যত্র বলেন-
‘পাখা যদি থাকতো আমার
দেরী তবে করতাম না আর
উড়ে গিয়ে হাজির হতাম নবীজির রওজায় রে\’
নবী প্রেমের দিওয়ানা কবি, যুগের ফররুখ তার ‘নবীর নবী বাদশা নবী’ কবিতায় এ ব্যাপারে আরো লিখেন-
‘হেথা দিওয়ানা তোমার
সইতে পারে না যে আর।
পরদা দাও হটিয়ে দূর
দেখাও ওই অনুপম নূর।’


মজনু আরবি শব্দ। অর্থ পাগল। নবী প্রেমে পাগল পারা লোকের কোনো সংখ্যা পরিসংখ্যান আজ পর্যন্ত কেউ করেনি, বোধহয় করতেও পারবে না। কবি রুহুল আমীন খানও নবী প্রেমে মজনু। মন পাখি তার কেঁদে মরে, দূরত্ব আর আর নাহি সহে। নবীর কদমে ঠাঁই চায়। ‘মুহাম্মদ আল-আরাবী’ কবিতায় তিনি বিষয়গুলো লিখেন এভাবে-
‘মজনু হলাম তোমার তরে
মন পাখি মোর কেঁদে মরে
লও গো কাছে ডেকে তোমার
দূর করো এই ফেরাকী।
আমি অধম কিছু না চাই
দিও কেবল কদমে ঠাঁই।’
এ ব্যাপারে কবির লিখিত ও সর্বাধিক গীত বিশ্ববিখ্যাত না’তে রাসূল ‘শামসুদ্দোহা আস্সালাম’ কবিতায় মনের মাধুরী আর কলমের আদরী দিয়ে নিখুঁতভাবে ছন্দ আঁকেন এভাবে-
‘লও গো ডাকিয়া লও পাক মদীনায়
দাও গো ঠাঁই তব মুবারক পায়
পারে না জুদায়ী ব্যথা সহিতে আর
প্রিয়, তব গোলাম \ ’
‘মদীনা’ নবী প্রেমিকদের হৃদয়ের স্পন্দন, প্রেমের শিহরন। ‘মদীনা’ শব্দ এতই সমাদৃত আমাদের জাতীয় কবি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেই ফেললেন-‘মদীনা নামের তাসবীহ ফিরি গলে লইয়া।’ তার হেতু মকীনের (অবস্থানকারী) কারণে মাকানের (অবস্থান স্থল) মান। এরই নিরিখে কবি রুহুল আমীণ খান ‘মদীনা’ কবিতায় লিখেন-
‘মদীনা দিল্ আমার মদীনা জান্
মদীনার তরে দিল্ করি কুরবান \’
দিল্ কেন কুরবান করবেন? তার উত্তরেও একই কবিতায় দিয়েছেন এভাবে-
‘মদীনায় নবীজির পদ-ধূলি
রয়েছে নিব তা শিরে তুলি।’
আল­াহর হুকুমে ভাগ্যের সুখময় চাকায় ঘুরে ঘুরে যদি জীবনে যাওয়া যায় একবার সোনার মদীনায়। তবে সেখানে পাক দরবারে আরজি পেশ কবির ভাষায়-
‘ইয়ামনী চাদর ফেলে শির তোলো ইয়া নবী
সব গোলামের গাফলতি নিদ ভাঙ্গে
ইয়া নবী।’
অন্য কবিতায় গেয়ে উঠলেন-
‘নেকাব সরাও বদন হতে
একবার দেখাও দীদার তোমার
পেয়ারা নবী ফেরাকী গম
সহে নাগো দিলে আর।’
পরিশেষে, প্রিয় কবি রুহুল আমীন খান সাহেবের দীর্ঘায়ু কামনা করে আল­াহ পাকের শাহী দরবারে এবং একটি দাবি জোড়ে দিলাম কবির খিদমতে-আরো না’তে রাসূল চাই আপনার কলম থেকে।

Comments

comments

About

Check Also

রাসুলুল্লার হিজরাত : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীতে তখন ঘোর অমানিশার রাজ। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। যে ভিন্নতার জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *