মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসার নাম হচ্ছে ঈমান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা মানে তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট সব কিছুকে ভালোবাসা। আহলে বাইত হলেন নবী করীম (সা.)-এর পরিবার সুতরাং তাঁদেরকে ভালোবাসা আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালোবাসা একই মুদ্রার এপিট-ওপিঠ। আহলে বাইত বলতে হজরত ফাতেমা (রা.), হজরত আলী (রা.) ও হজরত হাসান ও হুসাইন (রা.) কে বুঝায়। হাদিস শরিফে আছে, হজরত ওমর ইবনে আবি সালামা (রা.) হতে বর্ণিত, একদিন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত ফাতেমা (রা.), হজরত হাসান ও হজরত হুসাইন (রা.) কে ডেকে একটি কম্বলে আবৃত করে নিলেন। তাঁর পশ্চাতে আলী (রা.)ও ছিলেন। তাঁকেও আবৃত করে নিলেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত। তাঁদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দিন। আর তাঁদেরকে পূর্ণরূপে পবিত্র রাখুন। (তিরমিযী)
শুধু এ চারজনই নন, তাঁদের পরে তাঁদের অধঃস্থন বংশধরগণও আহলে বাইত। বিশেষ করে হাসান ও হুসাইন (রা.) কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত ভালোবাসতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মান আহাব্বাল হাসানা ওয়াল হুসাইনা ফাক্বাদ আহাব্বানী ওয়া মান আবগাদ্বাহুমা ফাক্বাদ আবগাদ্বানী’ অর্থাৎ, যে হাসান ও হুসাইন (রা.) কে ভালোবাসল, সে যেন আমি নবীকে ভালোবাসল। আর যে তাদের সাথে শত্র“তা করল, সে আমার সাথে শত্র“তা করল।
শুধু এ হাদীস নয় আরও অনেক হাদিসে রয়েছে আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে কত ভালোবাসতেন। তাঁদের উভয়ের জন্যে রাসূল (সা.) খোতবা দেওয়া বন্ধ করে দেন। হজরত হুসাইন (রা.) এর ঘোড়ার প্রতি শখ ছিল। ছোট ছিলেন বিধায় ঘোড়ায় চড়তে পারবেন না। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে ঘোড়ার মতো হয়ে তাঁকে পিঠে বসিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণে সাহাবায়ে কেরামও তাঁদেরকে খুব ভালোবাসতেন। হজরত ওমর (রা.) তাঁদেরকে নিজের ছেলের উপর অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। একদা ইমেনের গভর্ণর হজরত ওমর (রা.)-এর নিকট কিছু মুদ্রা পাঠালেন। হজরত ওমর (রা.) তা জনগণের মধ্যে বন্টন করছেন তখন তিনি হাসান ও হুসাইন (রা.) কে দশ হাজার মুদ্রা করে দিলেন। তখন তাঁর ছেলে তাঁকে বললেন, আমি হাসান-হুসাইনের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং হিজরত করেছি আমাকে কেন তাঁদের থেকে কম দিলেন? তখন তিনি বললেন, তোমার কি তাঁদের নানার মতো নানা আছেন, তোমার কি তাদের মায়ের মতো মা আছেন, তোমার কি তাদের মামার মতো মামা আছেন। এর পর থেকে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তাঁদের সমান হতে চাননি এবং তাঁদেরকে সম্মান করতেন।
সাহাবায়ে কিরামের অনুসরণ করে আউলিয়ায়ে কেরামও তাঁদেরকে ভালোবেসেছেন। হজরত ইমাম শাফেয়ী (র.) তাঁদের মর্যাদার কথা বর্ণনা করেছেন। তাঁর ভাষায়-ইয়া আহলা বাইতে রাসূলিল্লাহ হুব্বাকুম, ফারদুম মিনাল্লাহি ফিল কুরআনি আনযালাহু। ইয়াকফিকুম মিন আযিমিল ক্বাদরী আন্নাকুম। মান লাম ইউসালা আলাইকুম লা সালাতা লাহু। অর্থাৎ-‘হে আহলে বাইতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ফরজ তোমাদের ভালোবাসা। নাযিলকৃত কুরআন মাঝে আছে তাইতো লেখা। তোমাদের মহান মর্যাদার জন্য যথেষ্ট হয়। তোমাদের প্রতি দুরুদ ছাড়া সালাত নাহি হয়।’
এই কবিতা থেকে বুঝা যায় তিনি আহলে বাইতকে কত ভালোবাসতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে কিছু নরাধম কারবালার সেই হৃদয়বিদায়ক ঘটনার মূল হোতা পাপিষ্ট ইয়াযিদের পক্ষাবলম্বন করে সায়্যিদুনা হজরত হুসাইন (রা.)-এর বিরোধিতা করছে। তারা সরলমনা ঈমানদারদের ঈমান হরণ করতে চাচ্ছে। এরা বিধর্মীদের দালালী করছে। আমাদেরকে এদের প্রতারণা থেকে দূরে থাকতে হবে। আমাদেরকে জানতে হবে-হজরত হুসাইন (রা.) এর সাথে শত্র“তা পোষণ করা মানে স্বয়ং রাহ্মাতাল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে শত্র“তা করা। আমাদেরকে আহলে বাইতের প্রতি পরিপূর্ণ মহব্বত রাখতে হবে এবং তাঁদের সাথে শত্র“তা পোষণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আল্লাহপাক যেন আমাদের সবার অন্তরে আহলে বাইতের মুহব্বত সৃষ্টি করে দেন। আমিন।