ইমামুল আইম্মা ইমাম আবু হানিফা (র.)

সাহাবায়ে কেরাম ও খোলাফায়ে রাশেদার সোনালী যুগের অবসানের পর উমাইয়া শাসনের শেষ দিকে এবং বিশেষ করে আব্বাসীয় শাসনের প্রথম থেকেই মুসলিম সমাজে নেমে আসে আকীদাগত চরম বিপর্যয়। এ সময় উদ্ভব ঘটে মুতাজিলা, মুরজিয়া, শিয়া, কাদরিয়া, জাবরিয়া, দাহরিয়া ও খারিজি নামক বাতিল ফিরকার। প্রত্যেক ফিরকার অনুসারীগণ আপন আপন ফিরকার মতবাদ প্রচার শুরু করে, তারা কোরআন ও হাদীসের মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা করতে থাকে। ফলে সাধারণ মানুষ চরম বিভ্রান্তির শিকার হয় এবং সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রকৃত সত্য নির্ণয় করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। মুসলিম উম্মাহর এহেন বিপর্যয়কর দূরবস্থায় সত্যের পতাকা নিয়ে আবির্ভূত হন তৎকালীন ইমাম আবু হানিফা (র.)। তিনি মুসলিম উম্মাহর এই বিপর্যস্ত অবস্থা প্রত্যক্ষ করে তাদের ঈমান ও আক্বীদার হেফাজতের জন্য কয়েকখানা মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। এবং গ্রন্থে ইমাম আবু হানিফা (র.) চরমপন্থী খারিজী, শিয়া, দাহরিয়া, জাবরিয়া, কাদরিয়া, মুরজিয়া ও মুতাজিলা সম্প্রদায়ের মতবাদসমূহকে যুক্তি-প্রমাণসহ ভ্রান্ত প্রমাণ করেন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কোরআন-হাদীস ও ইলমে ফিকাহ ভিত্তিক ইসলামী আকীদা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) কে বাদ দিয়ে ইসলামী আইনের সঠিক ও নির্ভুল ব্যাখ্যা কল্পনা করা যায় না। সেই মহান মনীষীর সংক্ষিপ্ত জীবনী নিুে উপস্থাপন করা হল-
জন্ম ও বংশ পরিচয়
তাঁর প্রকৃত নাম নোমান। উপনাম আবু হানিফা। এ নামেই তিনি সুপরিচিত। পিতার নাম সাবিত। দাদার নাম নোমান মতান্তরে যুতী। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তাঁর দাদার নাম ছিল যুতী। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর নাম রাখা হয় নোমান। তাঁর পরদাদার নাম মাহ বা মারজুবান-মাহ ও মারজুবান দুটি সমার্থক শব্দ। এর অর্থ সর্দার বা নেতা। পারস্যের নগর অধিপতিকে মাহ বা মারজুবান বলা হত। ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর বংশ পরম্পরা হচ্ছে ইমাম আজম আবু হানিফা নোমান ইবনে সাবিত ইবনে নোমান ইবনে মারজুবান আত-তাইমী আল কুফী (র.)। ৮০ হিজরীতে (৭০০ খ্রি.) জ্ঞান বিজ্ঞানের নগরী কুফায় ইমাম আবু হানিফা (র.) জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর দাদা যুতী ছিলেন পারস্যের অধিবাসী। তিনি ছিলেন অগ্নি উপাসক। ৩৬ হিজরীতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং স্ত্রীকে নিয়ে হিজরত করে মক্কার পথে দেশ ত্যাগ করেন। কুফায় পৌছে তিনি হজরত আলী (রা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করেন এবং এখানেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি কাপড়ের ব্যবসা দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। একবার নওরোজের সময় তিনি কিছু ফালুদা হজরত আলী (রা.)-কে উপহার দিলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন-এটা কি জিনিস? তিনি বললেন-নওরোজের ফালুদা। হজরত আলী (রা.) বললেন-আমাদের এখানে প্রতিদিন নওরোজ। ৪০ হিজরীতে যুতীর এক পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। তার নাম রাখেন সাবিত। বরকতের দোয়ার জন্য তাকে হজরত আলী (রা.)-এর কাছে নিয়ে গেলে তিনি শিশুর মাথায় হাত মোবারক বুলিয়ে দোয়া করেন। শিশুটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। কিন্তু বেশী দিন যেতে না যেতেই তার পিতা মারা যান। মায়ের øেহে লালিত-পালিত সাবিত পিতার প্রাচুর্যে সুখেই দিনাতিপাত করতে থাকেন। তার ৪০ বছর বয়সে ৮০ হিজরীতে তার ঘরে এক পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। পিতা-মাতা আদর করে তার নাম রাখেন নোমান। ইনি বিশ্ব বিখ্যাত ইমাম আবু হানিফা। এ সময় উমাইয়া শাসক আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান মুসলিম জাহানের শাসনকর্তা ছিলেন। হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ ইরাকের গভর্ণর ছিলেন। তখন পৃথিবীতে অনেক সাহাবী জীবিত ছিলেন। তাদের মধ্যে-আব্দুল্লাহ ইবনুল হারিস (রা.), মৃত্যু-৮৫ হিজরী, ওয়াছিলা ইবনুল আসকা (রা.), মৃত্যু-৮৫ হিজরী, আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.), মৃত্যু-৮৭ হিজরী, সাহাল ইবনে সায়াদ (রা.), মৃত্যু-৯১ হিজরী, আনাস ইবনে মালিক (রা.), মৃত্যু-৯৬ হিজরী, আব্দুল্লাহ ইবনে ইউছর আল-মাজানী (রা.), মৃত্যু-৯৬ হিজরী, মাহমুদ ইবনে আরবাবী আল-আনসারী (রা.), মৃত্যু-৯৯ হিজরী, আল-হারমাম ইবনে জিয়াদ আল-বাহিলী (রা.), মৃত্যু- ১০২ হিজরী, আবু আ-তুফায়েল আমির ইবনে ওয়াছিলা আল-কিনানী (রা.), মৃত্যু-১০২ হিজরী। ইনিই সাহাবীদের মধ্যে সর্বশেষ ইন্তেকাল করেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) এদের সকলের না হলেও অন্তত; সাতজন সাহাবীর সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং তিনজনেরই নিকট থেকে দরস হাসিল করেন-তিনি ছিলেন তাবেয়ী। (আল ফিকহুল আকবর-ইমাম আবু হানিফা (র.) : অনুবাদ-ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, দ্বিতীয় সংস্করণ, অক্টোবর ২০০৬, পৃষ্ঠা-১১)।
শিক্ষা জীবন
ইমাম আবু হানিফা (র.) ছিলেন অত্যন্ত তীক্ষè মেধা ও প্রতিভার অধিকারী। তিনি শৈশবে নিজ গৃহে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তারপর কুফার মসজিদে আরবী ব্যাকরণ, কবিতা, সাহিত্য ও তর্কশাস্ত্র ইত্যাদি শিখেন। তাঁর লেখাপড়ার আগ্রহ ছিল সীমাহীন। ১৬ বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যান। পিতা ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। পিতার মৃত্যুতে সেই ব্যবসার পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হয় যুবক আবু হানিফাকে। পিতার রেখে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আবু হানিফা প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন। একদিন ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাজারে যাচ্ছেন। পথে সাক্ষাৎ ঘটল কুফার প্রসিদ্ধ আলেম ইমাম শাবী (র.)-এর সাথে। ইমাম শাবী (র.) জিজ্ঞেস করলেন-তুমি কোথায় যাচ্ছ? যুবক আবু হানিফা বললেন-আমি ব্যবসার জন্য বাজারে যাচ্ছি। ইমাম শাবী (র.) বললেন-বাছা! আমি তোমার মধ্যে অসাধারণ ইলিম ও প্রতিভা অনুভব করছি, তুমি ইলিম অর্জন কর, তুমি বিশ্বখ্যাতি লাভ করবে। ইমাম শাবী (র.)-এর কথায় ইমাম আবু হানিফা (র.) ইলিম অর্জনে আত্মনিয়োগ করলেন। তিনি প্রথমে ইলমে কালাম শিক্ষায় মনোযোগ দিলেন এবং ইলমে কালাম শাস্ত্রে অগাধ-পাণ্ডিত্য অর্জন করলেন। ইলমে কালাম শাস্ত্রে ইমাম আবু হানিফা এত অধিক জ্ঞান লাভ করলেন যে, লোকেরা তাঁর প্রতিই ইশারা করে বলতো-তিনিই ইলমে কালামের শ্রেষ্ঠ ইমাম। সে সময়ের জিন্দিক, নাস্তিক ও বাতিল আকীদা পন্থীদের বিরুদ্ধে মুনাজারা করে তিনি অত্যন্ত সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর নিজের বক্তব্য হচ্ছে-শুধুমাত্র বাহাস ও মুনাজারার উদ্দেশ্যে আমাকে বিশবার বসরায় গমন করতে হয়েছে। কোন কোন সময় এক বছর আবার কোন কোন সময় এক বছরের কম সময় বসরায় অবস্থান করতে হয়েছে। এ সময় ইলমে কালাম ছিল আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। একেই দ্বীন ও শরীয়তের মৌলিক জ্ঞান বলে আমি মনে করতাম।’ (আইম্মায়ে আরবাআ)।
ইলমে ফিকাহ শিক্ষা
ইলমে ফিকাহ ও হাদীসের তৎকালীন শ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন হজরত হাম্মাদ ইবনে আবু সুলায়মান (র.)। ইলমে ফিকাহে উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য আবু হানিফা (র.) ইমাম হাম্মাদ (র.)-এর নিকট যান। ইমাম হাম্মাদের নিকট তিনি ফিকাহ অধ্যয়ন করেন দশ বছর। ইমাম হাম্মাদ (র.) ইমাম আবু হানিফার প্রতিভায় অত্যন্ত মুগ্ধ হন। অতি অল্প দিনেই আবু হানিফা উস্তাদ হাম্মাদের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেন। উস্তাদ হাম্মাদ বসরা গমনের সময় তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান প্রিয় ছাত্র আবু হানিফাকে। ইমাম আবু হানিফা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। উস্তাদ হাম্মাদের পরিবর্তে তিনি অত্যন্ত সুচারুভাবে দরস দিতেন। দরসে জটিল ও কঠিন প্রশ্ন আসত। যার উত্তর উস্তাদ থেকেও শুনেননি। তিনি ইজতিহাদ করে এসব কঠিন প্রশ্নের জবাব দিতেন এবং নিজ খাতায় নোট করে রাখতেন। এভাবে ৬০টি মাসআলার জবাব তিনি খাতায় নোট করে রেখেছিলেন। দু’মাস পর উস্তাদ আসলে আবু হানিফা তাঁর নোটখাতা উস্তাদ হাম্মাদের দরবারে হাজির করলেন। উস্তাদ হাম্মাদ ৬০টির মধ্যে ২০টিতে ইজতিহাদী ভুল এবং ৪০টিকে সঠিক বলে ঘোষণা দিলেন। এভাবে ইমাম আবু হানিফা (র.) উস্তাদ হাম্মাদের নিকট থেকে ইলমে ফিকাহে অগাধ জ্ঞান অর্জন করেন। উস্তাদ হাম্মাদের মৃত্যু পর্যন্ত ইমাম আবু হানিফা (র.) তাঁর নিকট ইলমে ফিকাহ শিক্ষা লাভ করেন। উস্তাদ হাম্মাদ (র.) ১২০ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। উস্তাদের ইন্তেকালের পর এখানেই ইমাম আবু হানিফা (র.) দরস দানে নিয়োজিত হন।
ইলমে হাদীস শিক্ষা
ইলমে ফিকাহ শিক্ষা লাভের পর ইমাম আবু হানিফা (র.) হাদীস শিক্ষায় আত্মনিয়োগ করেন। হাদীস শিক্ষা লাভের জন্য তিনি খ্যাতনামা হাদীসবিদগণের সাহচর্যে যান। তখনও প্রণিধান যোগ্য কোন হাদীসগ্রন্থ সংকলিত হয়নি বা কোন মুহাদ্দীসের সকল হাদীস মুখস্থও ছিল না। সংগত কারণেই তাকে হাদীস শিক্ষার জন্য অগণিত মুহাদ্দীসের সাহচর্যে যেতে হয়। ইমাম হাম্মাদ (র.) ইমাম আবু হানিফার যেমন ইলমে ফিকাহর উস্তাদ ছিলেন তেমনি ইলমে হাদীসেরও উস্তাদ ছিলেন। কারণ ইমাম হাম্মাদ (র.) হজরত ইব্রাহীম নাখয়ী (র.) থেকে তিনি আলকামা (র.) থেকে, আর হজরত আলকামা (র.) হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে ইলমে হাদীস ও ইলমে ফিকাহ শিক্ষা লাভ করেছেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) কুফায় অবস্থারত যেসব মুহাদ্দীসগণের নিকট হাদীস শিক্ষা লাভ করেন তারা হচ্ছেন-১. ইমাম শাবী (র.)। যিনি ৫ শতাধিক সাহাবাকে দেখেছেন। দীর্ঘদিন তিনি কুফার কাজী ছিলেন। ১০৬ হিজরীতে তিনি ইন্তেকাল করেন। ২. সালামা ইবনে কুহাইল (র.), ৩. মুহাজির ইবনে ওয়াসার (র.), ৪. আবু ইসহাক সাবঈ, ৫. আওন ইবনে আব্দুল্লাহ (র.), ৬. সাম্মাক ইবনে হারব (র.), ৭. ইব্রাহীম ইবনে মুহাম্মদ (র.), ৮. আদী ইবনে সাবিত (র.), ৯. মুসা ইবনে আবু আয়শা (র.)। এদের পর ইমাম আবু হানিফা (র.) বসরায় যান। সেখানে তিনি হজরত কাতাদা (র.)-এর নিকট থেকে হাদীস শিক্ষা লাভ করেন। হজরত কাতাদা (র.) ছিলেন রাসূল (সা.)-এর খাদিম হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর ছাত্র। এরপর ইমাম আবু হানিফা (র.) হজরত শুবা (র.)-এর দারসে যোগ দেন। তাঁকে হাদীস শাস্ত্রে ‘আমিরুল মুমিমীন’ বলা হত। তিনি ইমাম আবু হানিফা (র.) সম্পর্কে বলেছেন-আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে, আবু হানিফা ও ইলিম দুই বস্তু নয়। কুফা ও বসরার পর ইমাম আবু হানিফা হাদীস শিক্ষা লাভের জন্য মক্কায় যান এবং সেখানে আতা ইবনে আবু রিবাহ (র.)-এর নিকট থেকে হাদীস শিক্ষা লাভ করেন। এখানে তিনি হজরত ইকরামা (র.) থেকেও হাদীস শিক্ষা লাভের জন্য মদীনায় যান। সেখানে ইমাম বাকির ও জাফর সাদিক (র.)-এর সাহচর্য লাভ করে হাদীস শাস্ত্রে পূর্ণ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
ইলমে তাসাউফ শিক্ষা
ইমাম আবু হানিফা (র.) ছিলেন ইলমে ফিকাহ শাস্ত্রের জনক। ইমাম আবু হানিফার মত এত বড় আলেম আর হবেন বলে আমার মনে হয় না। সেই মহান শ্রেষ্ঠ আলেম ভাবলেন-আমার তো ইলিম পূর্ণ হয়নি, আমি তো প্রকৃত আলেম হইনি। পূর্ণ ইলিম অর্জন ও প্রকৃত আলেম হওয়ার জন্য আমাকে অবশ্যই কামিল পীরের নিকট মুরিদ হতে হবে। তাই ইমাম আবু হানিফা (র.) কামিল পীরের নিকট মুরিদ হলেন। তাঁর পীর ছিলেন ২ জন। ১. ইমাম বাকের (র.), ২. ইমাম জাফর সাদিক (র.)। সেই ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন-যদি আমার জীবনের দুটি বছর আমার পীর সাহেবের নিকট অতিবাহিত না করতাম তবে আমি আবু নুমান (আবু হানিফা) ধ্বংস হয়ে যেতাম।
কামিল পীরের নিকট মুরিদ হওয়া ছাড়া প্রকৃত ও পূর্ণ আলেম হওয়া যায় না বলেই ইমাম আবু হানিফা (র.) ইলমে তাসাউফ অর্জনের জন্য কামিল পীরের নিকট মুরিদ হয়েছিলেন।

উস্তাদগণের নাম
ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর অদম্য জ্ঞান-পিপাসা ছিল। তাই তিনি হাজার হাজার উস্তাদের নিকট থেকে ইলিম অর্জন করেন। তাঁর উস্তাদের সংখ্যা ছিল চার হাজারের মত। তাঁর কয়েকজন উল্লেখযোগ্য উস্তাদের নাম হচ্ছে-১. হাম্মাদ ইবনে আবু সুলায়মান (র.), ২. আদি ইবনে সাবিত আনসারী (র.), ৩. নাফি ইবনে মাওলা ইবনে ওমর মাদানী (র.), ৪. আব্দুর রহমান হরমুজ আল-আরাজ মাদানী (র.), ৫. মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির (র.), ৬. ইয়াজিদ ইবনে সুহাইব কুফী (র.), ৭. মুহাম্মদ ইবনে মুসলিম মক্কী (র.), ৮. আমীর ইবনে শুরাহবিল (র.), ৯. সালামা ইবনে কুহাইল কুফী (র.), ১০. আবু জুবায়ের (র.), ১১. সিমাক ইবনে হারব কুফী (র.), ১২. মুহারিব ইবনে দীসার (র.), ১৩. আমর ইবনে দীনার মক্কী (র.), ১৪. ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আনসারী (র.), ১৫. আতা ইবনে আবু রাবাহ মক্কী (র.), ১৬. আল কামাহ ইবনে মারসাদ কুফী (র.), ১৭. ইমাম বাকের (র.), ১৮. ইমাম জাফর সাদিক (র.)।

উস্তাদের প্রতি আদব
একজন ছাত্রকে প্রকৃত আলেম হতে হলে তাঁকে অবশ্যই উস্তাদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সেই উস্তাদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অনুপম দৃষ্টান্ত পাই ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর পবিত্র জীবনী থেকে। ইমাম আবু হানিফা (র.) তাঁর উস্তাদগণের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) নিজেই বর্ণনা করেছেন-আমার উস্তাদ হাম্মাদ (র.) যতদিন জীবিত ছিলেন আমি তাঁর বাড়ির দিকে পা প্রসারিত করে শয়ন করতাম না, এমনকি বসতামও না। উস্তাদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন আলেম হওয়ার পূর্বশর্ত। বেআদব ছাত্র কখনও আলেম হতে পারবে না।

কর্মজীবন
ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর প্রধানতম উস্তাদ ইমাম হাম্মাদ (র.)-এর ইন্তেকালের পর কুফাবাসীর অনুরোধে তিনি তার স্থালাভিষিক্ত হন। একদিন ইমাম আবু হানিফা স্বপ্নে দেখেন। তিনি রাসূল (সা.)-এর কবর খনন করছেন এতে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি বসরা গমন করে এক ব্যক্তির মাধ্যমে মুহাম্মদ ইবনে সিরীনের নিকট তিনি এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করলেন। মুহাম্মদ ইবনে সিরীন (র.)-এর জবাবে বললেন-‘স্বপ্নদ্রষ্টা (আবু হানিফা) রাসূল (সা.)-এর হাদীসের ভাণ্ডারকে বিকশিত করবেন’। স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনে ইমাম আবু হানিফা (র.) অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং অত্যন্ত প্রসন্ন মনে ইলমে হাদীস ও ইলমে ফিকাহর দরস শুরু করেন। তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ দরস দানের কথা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে জ্ঞান পিপাসু ছাত্ররা আসেন তাঁর কাছে ইলমে ফিকাহ ও ইলমে হাদীস শিক্ষা লাভ করার জন্য। হাজার হাজার ছাত্ররা তাঁর কাছ থেকে ইলমে হাদীস ও ইলমে ফিকাহ জ্ঞান অর্জন করেন। তাঁর ছাত্রদের অধিকাংশই ছিলেন ফকীহ ও কাজী। আব্বাসীয় শাসক মনসুর কর্তৃক কারারুদ্ধ হওয়া পর্যন্ত তিনি দরস কার্যক্রম চালিয়ে যান। এমনকি কারাগারে বন্দীশালায় থাকাবস্থায়ও পুরো পাঁচ বছর কোরআন, হাদীস ও ইলমে ফিকাহর দরস দান করেন। ইমাম মুহাম্মদ শায়বানী (র.) কারাগারেই ইমাম আবু হানিফার নিকট থেকে ইলিম শিক্সা লাভ করেছিলেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) ছিলেন মহান চরিত্রের অধিকারী একজন মহান ব্যক্তিত্ব। শিক্ষা দানের সময় ছাড়া তিনি সব সময়ই নিশ্চুপ থাকতেন। তাঁকে দেখলে মনে হতো তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন। কোন প্রশ্ন করলে শুধু এর সঠিক জবাব দিতেন। অন্যথায় চুপ থাকতেন। তিনি সর্বদা কোরআন-হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা উদঘাটনে ব্যস্ত থাকতেন। সততায় ও দানশীলতায় তিনি ছিলেন অনন্য। তিনি কখনও কারো নিন্দা করতেন না। ইলিম বিতরণে তৎকালে তাঁর ন্যায় উদার কেউ ছিল না। তিনি একাধারে চল্লিশ বছর বিনিদ্র নয়নে ইবাদতের মাধ্যমে রাতযাপন করেন এবং এশার ওজুতে ফজরের নামাজ আদায় করেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় সত্তর হাজার বার পবিত্র কোরআন শরীফ খতম করেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) রমজানে প্রতিদিন দিনে একবার এবং রাতে একবার কোরআন খতম করতেন এবং তারাবীহ নামাজে তো অবশ্যই কোরআন খতম করতেন। রাসূলে পাক (সা.)-এর এশক ও মহব্বতে তাঁর অন্তর ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। রাসূল (সা.)-এর শানে তিনি রচনা করেছেন অগণিত কবিতা। ‘কসিদাতুল নুমান’ এর জ্বলন্ত প্রমাণ। তাঁর রচিত কবিতা পাঠ করলে প্রতিটি মুমিনের অন্তর নবীর প্রেমে ভরপুর হয়ে যায়। ইমাম আবু হানিফা (র.) ছিলেন এক আপসহীন ব্যক্তিত্ব। নীতির জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকার করাই ছিল তাঁর চরিত্রের অনন্য বৈশিষ্ট্য। কুফার উমাইয়া গভর্ণর ইয়াজিদ ইবনে আমর ইবনে হুরায়রা এবং পরে আব্বাসীয় খলিফা মনসুর তাঁকে কাজীর পদ দান করলে তিনি তা দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেন। এ কারণে তাঁকে দৈহিক শাস্তি ও কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছে এমনকি বিষপানে তাকে হত্যাও করা হয়েছে। তিনি নির্যাতিত হয়েছেন, কারাবরণ সহ্য করেছেন এবং মজলুম অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় ও নিয়েছেন তবুও তিনি জালিমের কাছে মাথানত করেননি।

ফিকাহ শাস্ত্রের জনক
ইমাম আবু হানিফা (র.) যদি ও ইলমে কালাম ইলমে হাদীস ও ইলমে ফিকাহ সব কিছুতেই পারদর্শী ছিলেন তবুও তিনি সমস্ত জীবন উৎসর্গ করে দিয়ে ছিলেন ইলমে ফিকাহর খেদমতে। ইজতেহাদের ক্ষেত্রে তাঁর মূলনীতি ছিল এই যে, তিনি নিজেই বলেছেন-আমি ইজতেহাদের ক্ষেত্রে প্রথমে কিতাবুল্লাহর হুকুম গ্রহণ করি। কিতাবুল্লাহকে কোন হুকুম না পেলে আমি হাদীসকে গ্রহণ করি। আবার হাদীসে সে হুকুম না পেলে আমি সাহাবায়ে কেরামের ইজমা গ্রহণ করি আবার এ ব্যাপারে কোন ইজমা না পেলে সেই ব্যাপারে আমি ইজতেহাদ করি-আর এটাই আমার মাজহাব। তখনও কোন আইনগ্রন্থ রচিত হয়নি : তাই তিনি মুসলিম মিল্লাতের স্বার্থে একাজ সম্পন্ন করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন। ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর হাজার হাজার ছাত্র ছিলেন। এর মধ্যে বিশিষ্টতা লাভ করেন ৪০ জন। এ ৪০ জন বিশিষ্ট ছাত্র নিয়ে তিনি একটি বোর্ড গঠন করেন-এ বোর্ডের প্রধান ছিলেন তিনি। যে কোন মাসআলা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতেন বোর্ডের এর ৪০ জন সদস্য। এই তর্ক-বিতর্ক চলতো দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। অতঃপর সকলে ঐক্যমতে পৌঁতে পারলে সেটিই লিপিবদ্ধ করা হতো। উল্লেখ্য যে, ইমাম আবু হানিফা (র.) প্রতিষ্ঠিত এ ফিকহী বোর্ড ১২ লক্ষ ৯০ হাজার মাসআলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) শরীয়তের মাসআলাগুলোর যেরূপ সঠিক ও নির্ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন এরূপ সঠিক ও নির্ভুল সিদ্ধান্ত আর কেউ দিতে পারেননি। পারবে না এজন্য সারা বিশ্বের ওলামায়ে কেরামগণ ইমাম আবু হানিফা (র.)-কে ‘ফিকাহ শাস্ত্রের জনক’ বলে অভিহিত করেছেন।

কয়েকজন বিশিষ্ট ছাত্র
ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর হাজার হাজার ছাত্র ছিলেন। এরা সবাই ছিলেন খ্যাতিমা। এদের বিশিষ্ট কয়েকজন নাম নিুে দেয়া হল-১. কাজী আবু ইউসুফ (র.), ২. আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (র.), ৩. আবু ইসহাক ফাজারী (র.), ৪. মক্কী ইবনে ইব্রাহীম (র.), ৫. ইব্রাহীম ইবনে তাহমান (র.), ৬. ইয়াহইয়া ইবনে ইয়ামান (র.), ৭. ইউনুস ইবনে আবু ইসহাক (র.) ৮. আবু বকর ইবনে আয়াশ (র.), ৯. আবু আসিম নাবিল (র.), ১০. জারির ইবনে আব্দুল হামিদ (র.), ১১. ওয়াকী ইবনে জাররাহ (র.), ১২. ইয়াজীদ ইবনে হারুন (র.), ১৩. আব্দুর রহমান মক্কী (র.), ১৪. হামজা ইবনে হাবীব আজ-জায়াত (র.), ১৫. হাফ ইবনে গিয়াস (রা.), ১৬. হাসান ইবনে সালেহ (রা.), ১৭. ঈসা ইবনে ইউনুস (র.), ১৮. আলী ইবনে মুসহির (র.), ১৯. ইমাম মুহাম্মদ (র.)।
মনীষীদের দৃষ্টিতে আবু হানিফা (র.) ইমাম আবু হানিফা (র.) তাঁর সময়ের সেরা মুহাদ্দীস ও ফকীহ ছিলেন। তাঁর জন্ম না হলে গোটা মুসলিম উম্মাহ কোরআন-হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা থেকে বঞ্চিত হয়ে যেত। ইমাম বুখারী (র.)-এর উস্তাদ মক্কী ইবনে ইব্রাহীম (র.) ইমাম আবু হানিফা (র.) সম্পর্কে বলেন-তিনি তাঁর যুগের সর্বাধিক বড় আলেম ছিলেন (তাহজীবুত তাহযীব)। প্রখ্যাত হাফিজে হাদীস ইয়াজিদ ইবনে হারুন (র.) বলেন-আমি এক হাজার মাশাইখে হাদীসকে পেয়েছি এবং তাঁদের অধিকাংশ থেকেই আমি হাদীস লিপিবদ্ধ করেছি। তন্মাধ্যে পাঁচশ জনকে বড় ফকীহ, আলেম ও মুত্তাকী হিসেবে পেয়েছি-তাদের মধ্যে প্রধান ও সেরা ছিলেন ইমাম আবু হানিফা (র.)। ইমাম শাফেয়ী (র.) বলেন-যে কেউ ফিকাহ জানতে ইচ্ছে করে সে আবু হানিফার মুখাপেক্ষী (বেদায়া ওয়ান নেহায়া)। ইমাম শাফেয়ী (র.) আরো বলেন-ইলমে ফিকহে সকলেই ইমাম আবু হানিফার পরিবারভুক্ত (মুকাদ্দামায়ে ইলাউস সুনান)। শাকীক বলখী (র.) বলেন-ইমাম আবু হানিফা (র.) তৎকালীন যুগের মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় পরহেজগার, সবচেয়ে বড় আলেম ও সর্বাধিক বড় ইবাদত গুজার ছিলেন। সুফিয়ান সওরী (র.) বলেন-ইমাম আবু হানিফা (র.) সমকালীন লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফকীহ ছিলেন ইলমে ফিকাহর ক্ষেত্রে আমি তাঁর সমকক্ষ আর কাউকে দেখিনি। ইমাম আবু হানিফা (র.) সে সময়কার যাবতীয় জ্ঞান আহরণ করেছিলেন। তাঁর উস্তাদগণের মধ্যে সকলেই ছিলেন সমকালীন শ্রেষ্ঠ আলেম। তাদের সাহচর্যে থেকেই তিনি সীমাহীন মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন।

ইমাম আবু হানিফার রচনাবলী
ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর রচিত গ্রন্থাবলী অনেক। তাঁর রচিত অধিকাংশ গ্রন্থ আকাইদ বিষয়ক। তাঁর রচিত কয়েকখানা গ্রন্থ হচ্ছে-১. আল ফিকহুল আকবর, ২. আল ফিকহুল আবসাত, ৩. মুসনাদে আবু হানিফা, ৪. অসিয়া ইলা ইবনিহি হাম্মাদ, ৫. অসিয়া ইলা তিলমিজিহি ইউসুফ ইবনে খালিদ, ৬. অসিয়া ইলা তিলমিজিহি আল কাজী আবু ইউসুফ, ৭. মারিফাতুল মাজাহিব, ৮. আজ জাওয়াবিত আসসালাসা, ৯. রিসালা ফিল ফারায়েজ ১০. দু’আউ আবি হানিফা, ১১. কিতাব আল আলিম ওয়াল মুতাআল্লিম, ১২. রিসালা ইলা উসমান আল বাত্তি, ১৩. মুখাতাবাতু আবি হানিফা মাআ জাফর ইবনে মুহাম্মদ, ১৪. কিতাবুল মাকসুদ ফিস সারফ, ১৫. বাআজ ফতোয়া আবু হানিফা, ১৬. কিতাবুল মাখারিজ ফিল হিয়াল, ১৭. আল-অসিয়া, ১৮. মুজাদালা লি আহাদিদ দাহরিন, ১৯. আর-রিসালা, ২০. আল-কাছিদা আল কাফিয়া-আননোমানিয়া।

ইমামুল মুসলিমিন উপাধি
ইমাম আবু হানিফা (র.) ছিলেন এক প্রকৃত আশিকে রাসূল। রাসূল (সা.)এর প্রতি সর্বোচ্চ মহব্বত তাঁকে এত উচ্চ আসনে সমাসীন করেছে। তিনি নবী (সা.)-এর পবিত্র রওজা মোবারকের সামনে দাঁড়িয়ে এশক ও মুহব্বতের সাথে যখন বললেন-আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা ইয়া সাইয়্যিদাল মুরসালিম। তখন রওজা মোবারক থেকে আওয়াজ আসল-ওয়া আলাইকাস সালাম ইয়া ইমামাল মুসলিমিন।

ইমাম আবু হানিফাকে নিয়ে রচিত গ্রন্থাবলী
ইমাম আবু হানিফাকে নিয়ে রচিত হয়েছে অগণিত গ্রন্থাবলী। নিুে কয়েকখানা গ্রন্থের নাম দেয়া হল-১. নবজাতুন মিন মানাকিব আবি হানিফা-আবুল হুসাইন আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আল-কুদুরী, ২. মানাকিব আল-ইমাম আজম-আবু বকর আহমদ ইবনে আলী ইবনে সাবিত আল খতিব আল বাগদাদী, ৩. ফাজাইলে আবু হানিফা-আবুল কাসিম আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আম-মাদী-দামিস্ক, কায়রো, ৪. হায়াত আল ইমাম আবু হানিফা-সাইয়্যেদ আফিফী, ৫. ইখতিলাফ আবি হানিফা ওয়া আবি লায়লা-আবু ইউসুফ ইয়াকুব ইবনে ইব্রাহীম-মৃত্যু : ১৮২ হিজরী, ৬. মানাফিবে আবি হানিফা ওয়া আখবার আসহবিহি-আবুল হাসানা দিনওয়ারী, ৭. মানাফিবে আবি হানিফা আবু আব্দুল্লাহ হুসাইন ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মদ-মৃত্যু : ৪৩৬ হিজরী, ৮. রদুদ আলা আবি হানিফা-আবু বকর ইবনে আবি শায়বা-মৃত্যু : ২৩৫ হিজরী, ৯. মানাকিব আবু হানিফা-মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ নকীব-মৃত্যু : ৭৪৫ হিজরী, ১০. মুখতালাক বাইনা আবু হানিফা ওয়াশ শাফিয়ী-আবু মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ ইবনে হুমাইদ নাসেহী, মৃত্যু : ৪৪৭ হিজরী। এছাড়া আরো অনেক গ্রন্থ।

ইন্তেকাল
ইমাম আবু হানিফা (র.) ১৫০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। বিষপানে তাঁকে কারাগারে হত্যা করা হয়। হাজার হাজার লোকের উপস্থিতিতে ছয়বার তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাগদাদের খাইজরান নামক স্থানে তাকে দাফন করা হয়। দাফনের পর ২০ দিন পর্যন্ত লোকেরা তাঁর নামাজে জানাজা আদায় করেন।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।

Comments

comments

About

Check Also

নালায়ে কলন্দর : পূত হৃদয়ের নান্দনিক ছন্দবদ্ধ অভিব্যক্তি

মাহবুবুর রহীম আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) রচিত উর্দুভাষার কাব্যগ্রন্থ ‘নালায়ে কলন্দর’। ‘কলন্দর’ হচ্ছে কাব্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *