জ্ঞানের কথা মুমিনের হারানো সম্পদ

(পূর্ব প্রকাশের পর )
জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তি বলেছেন, যার মধ্যে পাঁচটি গুণ বিদ্যমান। সে সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ।
১ মহান আল্লাহপাকের ইবাদতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অগ্রগামী হওয়া।
২ সমস্ত সৃষ্টির প্রকাশ্য কল্যাণকামী হওয়া।
৩ মানুষ তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা।
৪ অন্যের ধন-সম্পদের ব্যাপারে উদাসীন-অনাগ্রহী থাকা।
৫ সর্বদা মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত থাকা। (তাম্বিহুল গাফিলীন)

পাঁচটি আমল নেকীর পাহাড় পরিমাণ করে এবং রিযিক বৃদ্ধি করে।
জনৈক বুযুর্গব্যক্তি বলেছেন, যে ব্যক্তি সর্বদা পাঁচটি আমল করে মহান আল্লাহ পাক তাকে পাহাড় পরিমাণ নেকী প্রদান করেন ও তার রিযিক বৃদ্ধি করেন।
১ যে সর্বদা ছদকা করে যদিও তা পরিমাণে কম হয়।
২ যে সর্বদা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে যদিও তা অল্প কিছু দ্বারা হয়।
৩ যে সর্বদা মহান আল্লাহপাকের পথে জিহাদে রত থাকে।
৪ যে সর্বদা অযু অবস্থায় থাকে এবং অযুতে পানি অপচয় করে না।
৫ যে সর্বদা পিতামাতার অনুগত থাকে এবং কখনো অবাধ্য হয় না। (তাম্বিহুল গাফিলীন)
বিখ্যাত বুযুর্গ হাজী ইমদাদুল্লাহ মুজাহিরে মক্কী (রহ.) এর নিজের কক্ষে নিম্নলিখিত কথাগুলো লাগানো ছিল।
১ দুনিয়ার জন্য এতটুকু মেহনত কর, যতটুকু সময় তোমাকে এখানে থাকতে হবে।
২ আখিরাতের জন্যে এত পরিমাণে মেহনত কর যে পরিমাণ সময় তোমাকে সেখানে থাকতে হবে।
৩ মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য ঐ পরিমাণ চেষ্টা কর, যে পরিমাণ তুমি তাঁর কাছে মুখাপেক্ষী।
৪ গুনাহ এতটুকু পরিমাণ কর, যে পরিমাণ আযাব ভোগ করার ক্ষমতা তোমার আছে।
৫ যখন তুমি গুনাহ করবে তখন এমন স্থানে চলে যাও, যেখানে মহান আল্লাহ পাক তোমাকে না দেখে।
শুধু মাত্র ঐ সত্তার কাছে চাও, যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান-অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটি সময় উপস্থিত হবে, যে সময় তারা পাঁচটি বিষয়কে মহব্বত করবে আর পাঁচটি বিষয়কে তারা ভুলে যাবে।
১ তারা দুনিয়াকে মহব্বত করবে অথচ পরকালকে ভূলে যাবে।
২ তারা সম্পদকে মহব্বত করবে অথচ তার হিসাব দেওয়া ভুলে যাবে।
৩ তারা সৃষ্টিকে মহব্বত করবে অথচ স্রষ্টাকে ভূলে যাবে।
৪ তারা গুনাহকে মহব্বত করবে অথচ তওবা করাকে ভুলে যাবে।
৫ তারা দুনিয়ার অট্টলিকাকে মহব্বত করবে অথচ ক্ববরকে ভূলে যাবে।
বেরাদরানে ইসলাম। উপযুক্ত হাদীস শরীফটি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে তাঁর উম্মতের জন্যে একটি ভয়াবহ বিপদ সংকেত। b r হযরত আদী ইবনে হাতিম তাঈ (রা.) রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান, কিয়ামত দিবসে একদল লোককে জান্নাতের দিকে নিযে় যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। তারা যখন জান্নাতের নিকটবর্তী হবে জান্নাতের সু-শীতল বায়ূ গ্রহণ করবে। জান্নাতের প্রাসাদ সমূহ ও জান্নাতীদের জন্যে যে সব নিয়ামত মহান আল্লাহপাক তৈরী করেছেন, তা দেখবে, ঠিক তখন বলা হবে, ‘তাদেরকে জান্নাত থেকে ফিরিযে় নিযে় এসো। তাদের ভাগ্যে জান্নাত নেই। ’
তারা তখন এমন আক্ষেপ ও আফসোস করতে করতে ফিরে আসবে, যা পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের কেউ করেনি। তারপর তারা বলবে, হে আমাদের রব! জান্নাতীদের জন্যে আপনি যে নিয়ামতরাজী তৈরী করেছেন, তা দেখানোর পূর্বেই যদি আমাদেরকে জাহান্নামে পাঠাতেন। তখন মহান আল্লাহপাক বলবেন, তোমাদের সাথে এ আচরণ করার কারণ হল :
১ নির্জনে তোমরা আমার খুব সম্মান ও মর্যাদা বর্ণনা করতে আর মানুষের সাথে সাক্ষাৎ হলে তাদের খুব মর্যাদা করতে, তাদের সামনে নতযানু হযে় যেতে।
২ তোমরা স্বীয় আমল সমূহের মাধ্যমে মানুষের নিকট নিজেদের অন্তরের বিপরীত ভাব প্রকাশ করতে।
৩ তোমরা মানুষকে ভয় করতে, আমাকে ভয় করতে না।
৪ তোমরা মানুষকে সম্মান করতে, আমাকে সম্মান করতে না।
৫ মানুষের ভযে় পাপ কাজ বর্জন করতে, আমার ভযে় করতে না। (বায়হাকী শরীফ)

প্রকাশ থাকে যে, কৃপণ ব্যক্তির অপমান ও হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার জন্য নিম্নবর্ণিত পাঁচটি শাস্তিই যথেষ্ট।
১ ধন সম্পদ সে অপরের জন্য জমা করে। নিজের জন্য করাটা তার ভাগ্যে জুটে না।
২ এ সম্পদ আহরণের জন্যে যাবতীয় কষ্ট ক্লেশ ও প্রায়শ্চিত্ত সব তাকেই পোহাতে হয়।
৩ কৃপণ ব্যক্তি সঞ্চিত সম্পদের আস্বাদ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত থাকে।
৪ সে সর্বদা বিষণœ মনের হযে় থাকে। কোনরূপ আনন্দ সে অনুভব করতে পারে না।
৫ ধন সম্পদের কল্যাণ থেকে সে সর্বদা বঞ্চিত থাকে। (মুকাশাফাতুল কুলুব)

সাযি়্যদুনা হযরত আদম আলাইহিস্সালাম তদীয়পুত্র সাযি়্যদুনা হযরত শীস আলাইহিস সালামকে অছীয়ত করেছিলেন এবং তাঁর সন্তান-সন্ততিদেরকেও উক্ত পাঁচটি বিষযে় অছীয়ত করার নির্দেশ দিযে়ছিলেন।
১ পার্থিব ধন-সম্পদের উপর আস্থাশীল হযে় নিশ্চিন্ত হযে়া না। চিরস্থায়ী জান্নাতের নিয়ামতের উপর আস্থাশীল হযে় আমি নিশ্চিন্ত হযে়ছিলাম। তথাপি বিশেষ কারণে আমাকে সেখান থেকে বের হতে হযে়ছিল।
২ মহিলাদের আশা-আকাঙ্খার অনুসরণ করো না। আমি আমার স্ত্রীর কথায় উদ্বুদ্ধ হযে় নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেযে়ছিলাম। ফলে আমাকে চরম লজ্জিত হতে হযে়ছিল।
৩ কোন কাজ করতে ইচ্ছা করলে সর্বপ্রথম সে কাজের পরিণাম চিন্তা-ভাবনা করে নিবে। কেবল এতটুকু বিষয় চিন্তা না করার কারণে আমাকে বহু দুঃখ-কষ্ট পোহাতে হযে়ছে।
৪ কোন কাজ করতে যদি তোমার দ্বিধা সংকোচ হয় তাহলে সে কাজ সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ কর। নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করার পূর্বে আমার দ্বিধা অনুভূত হযে়ছিল। তবুও ভক্ষণ পরিত্যাগ না করায় আমাকে পরিমাণে লজ্জিত হতে হযে়ছে।
৫ প্রতিটি কাজে পরামর্শ গ্রহণ কর। আমিও যদি ফেরেশতাদের সাথে পরামর্শ করে নিতাম তাহলে আমাকে এ দুর্ভোগে পড়তে হত না।
(মুকাশাফাতুল কুলুব)
সাযি়্যদুনা হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) অন্তিম মুহূর্তে স্বীয় পুত্র হাম্মাদকে নিম্নোক্ত উপদেশগুলো প্রদান করেন। ১. সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহপাকের আদেশ নিষেধ মান্য করে চলবে।
২ যে সব বিষয় তোমার জানা প্রযে়াজন সেগুলি সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞান অর্জন করতে কখনও অলসতা করোনা।
৩ কোন মুসলমানের সাথে শত্র“তা পোষণ করো না।
৪ মহান আল্লাহপাক তোমাকে ধন-সম্পদ বা মান-মর্যাদা যতটুকু দান করেছেন। ততটুকুতেই পরিতৃপ্ত থাকতে চেষ্টা করো।
৫ তোমার যা আছে সেটুকুই সর্বোত্তম ব্যবহার করতে চেষ্টা করবে। (কুড়ানো মানিক)
মাটি দুনিয়ার মানুষকে হুশিয়ার করার জন্যে দৈনিক পাঁচবার এ পাঁচটি ঘোষণা দিযে় থাকে।
১ হে বণী আদম! আজ আমার পিঠের উপর তোমরা চলাফেরা করছ, অথচ একদিন তোমাকে আমার উদরে আসতে হবে।
২ হে বণী আদম! আমার পিঠের উপরে তুমি রং বেরংযে়র সু-স্বাদু খাবার খাচ্ছ, অথচ একদিন আমার উদরে স্বয়ং পোকা-মাকড় ও কীটপ্রতঙ্গ তোমাকে খাবে।
৩ হে বণী আদম! আমার পিঠের উপর আজ তুমি হাসাহাসি করছ, অথচ কিছুদিন পরেই আমার উদরে ভীষণ কাঁদবে।
৪ হে বণী আদম! আমার পিঠের উপর তুমি দারুণ আনন্দিত, অথচ কিছুদিন পরেই আমার উদরে দুঃখে জর্জরিত হবে।
৫ হে বণী আদম! আমার পিঠের উপর নির্দ্ধিধায় পাপাচার করছ, অথচ সত্তরই তোমাকে আমার উদরে শাস্তি প্রদান করা হবে। (তাম্বীহুল গাফিলীন)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, বেহেশত যা অফুরন্ত নিয়ামতে ভরপুর ও লোভনীয় হযে় রযে়ছে, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন মানুষের অন্তর উহার সঠিক কল্পনাও করতে পারেনি। উক্ত বেহেশ্ত পাঁচ শ্রেণির লোকের জন্যে আগ্রহের সহিত অপেক্ষা করছে।
১ পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওতকারী।
২ নিজের জিহ্বাকে সংযতকারী।
৩ ভূখা লোকদের অন্নদানকারী।
৪ বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদানকারী।
৫ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উদ্দেশ্যে দুরুদ শরীফ পাঠকারী।

‘ইব্তেলাউল আখবার’ নামক কিতাবে বর্ণিত আছে, একদিন সাযি়্যদুনা হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামের সহিত ইবলিসের সাক্ষাৎ হল। অভিশপ্ত ইবলিশ পাঁচটি বোঝাই করা গাধা যাদেরকে সে হাঁকিযে় নিযে় যাচ্ছিল। সাযি়্যদুনা হযরত ঈসা আলাইহিস্সালাম ইবলিসকে জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কি নিযে় যাচ্ছিস?
ইবলিস জবাব দিল, এগুলো ব্যবসার মাল। এজন্যে ক্রেতার খোঁজে বের হযে়ছি। পুনরায় তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোর কাছে কী কী মাল আছে?
ইবলিস গাধাগুলোর উপর যে মালামাল ছিল তার বিস্তারিত বর্ণনা দিল।
১ এতে রযে়ছে, অত্যাচার-অবিচার। এগুলো আমি রাজা-বাদশাহ্দের নিকট বিক্রি করব।
২ এতে রযে়ছে অহংকার। এগুলো ক্রয় করবে সওদাগর ও জওহরীগণ।
৩ এতে হিংসা ভর্তি রযে়ছে। এগুলোর ক্রেতা হবে আলেম সম্প্রদায়।
৪ এতে খেয়ানত ভর্তি রযে়ছে। এগুলো আমি বণিকদের কর্মচারীদের নিকট বিক্রি করব।
৫ এতে আছে ধোকাবাজী ও প্রবঞ্চনা। এগুলো আমি মহিলাদের কাছে বিক্রি করব। (হায়াতুল হায়ওয়ান)
চলবে

Comments

comments

About

Check Also

ইবাদতের বসন্তকাল রমজান

ঋতুরাজ বসন্ত যেমন প্রকৃতিতে অপার সৌন্দর্যের মোহনীয় রূপ এনে দেয়। তেমনি রমজান মাস পরওয়ারদেগারের পক্ষ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *