জ্ঞানের কথা মুমিনের হারানো সম্পদ

(পূর্ব প্রকাশের পর )
পাঁচ সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ কযে়কটি বিষয় নিযে় কিঞ্চিত আলোচনা।
‘‘পাঁচ’’ কে জানুন
কোন ব্যক্তি ঈমান গ্রহণের পর যে সব মৌলিক বিষযে়র সম্মুখীন হয় তাহলো ইসলামের ভিত্তি সমূহ তথা কোন্ কোন্ মূল কাঠামোর উপর ইসলাম নির্ভরশীল। তা জানা ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হযে় পডে়। তাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, গোটা ইসলামি জীবন ব্যবস্থার মূলভিত্তি বা কাঠামো হচ্ছে পাঁচটি।
ভিত্তি বা খুঁটি ব্যতিত যেমন কোন ঘর বা ইমারতের কল্পনা করা যায় না, তেমনি ইসলামের এ পাঁচটি ভিত্তি বা খুঁটি ব্যতিত মূল ইসলামের কখনও কল্পনা করা যায় না। গোটা ইসলামি জীবন ব্যবস্থা যে পাঁচটি ভিত্তি বা খুঁটির উপরে নির্ভরশীল তা হচ্ছে-
১. কালিমা, ২. নামায, ৩. রোযা
৪. হজ্জ, ৫. যাকাত
গোটা ইসলামি দর্শন ও জীবন ব্যবস্থা উপর্যুক্ত পাঁচটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। উক্ত বিষয়গুলো ইসলামের মৌলিক দিক। তাছাড়াও
ইসলামের আরও অনেক শাখা, প্রশাখা রযে়ছে। যে গুলো সম্পর্কে আমাদের সম্যক জ্ঞান থাকা জরুরী।
সাযি়দ্যুনা হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান পবিত্র রামাদ্বান মাসে আমার উম্মতকে এমন পাঁচটি খাচ নিয়ামত দান করা হযে়ছে যা আমার পূর্বে কোন উম্মতকে দেওয়া হয়নি।
১. রোযাদারের মুখের গন্ধ মহান আল্লাহর নিকট মৃগনাভীর সু-গন্ধি অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয়।
২. সাগরের মাছ সমূহও ইফতার পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাকের নিকট রোযাদারের জন্য দোয়া করতে থাকে।
৩. রোযাদারের জন্য প্রতিদিন বেহেশ্তকে সু-সজ্জিত করা হয়।
৪. পবিত্র রামাদ্বান মাসে দূর্বৃত্ত শয়তানকে বন্দী করে রাখা হয়।
৫. রামাদ্বানের শেষ রাত্রিতে রোযাদারের সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
‘রামাদ্বান’ শব্দের মধ্যে পাঁচটি হরফ রযে়ছে। উক্ত পাঁচটি হরফের মধ্যে আলাদা বৈশিষ্ট্য রযে়ছে। তা উল্লেখিত হল।
১. ‘রামাদ্বান’ শব্দের প্রথম হরফ হচ্ছে ‘রা’। উক্ত ‘রা’ হরফ দ্বারা উদ্দেশ্য হল নৈকট্য প্রাপ্তদের জন্যে রযে়ছে রেদ্বাযে় এলাহী তথা মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি।
২. দ্বিতীয় হরফ হচ্ছে ‘মীম’। উক্ত ‘মীম’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল মহান আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে মাগফেরাত বা ক্ষমা।
৩. তৃতীয় হরফ হচ্ছে ‘দোয়াদ্ব’। আর উক্ত দোয়াদ্ব হরফ দ্বারা উদ্দেশ্য হল অনুসরণকারীদের জন্যে রযে়ছে মহান আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে দাসানত বা জিম্মাদারী।
৪. চতুর্থ হরফ হচ্ছে ‘আলিফ’। উক্ত আলিফ হরফ দ্বারা উদ্দেশ্য হল ভরসাকারীদের জন্য রযে়ছে মহান আল্লাহ পাকের উলফত বা মহ্বরত।
৫. পঞ্চম হরফ হচ্ছে ‘নুন’। উক্ত নুন হরফ দ্বারা উদ্দেশ্য হল সত্যবাদীদের জন্য রযে়ছে মহান আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে নাওয়াল বা বখশিশ। (নুযহাতুল মাজালিস)
পৃথিবীতে পাঁচ ব্যক্তি খুব বেশী ক্রন্দন করেছেন।
১. সাযি়্যদুনা হযরত আদম আলাইহিস্সালাম। যখন বেহেশত হতে বের হযে় গেলেন তখন স্বীয় পদস্খলনের উপর এতবেশী ক্রন্দন করেছিলেন যে, তাঁর গণ্ডদ্বয় ক্ষত হযে় দাঁত বেরিযে় গিযে়ছিল।
২. সাযি়্যদুনা হযরত ইয়াকুব (আ.) স্বীয় ছেলে হযরত ইউসুফ আলাইহিস্সালামের বিচ্ছেদে এতবেশি ক্রন্দন করেছিলেন যে, তাঁর চক্ষুদ্বয় সাদা হযে় গিযে়ছিল।
৩. সাযি়্যদুনা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম জেলখানায় অবস্থান কালে খুব বেশি ক্রন্দন করেছিলেন।
৪. সাযি়্যদুনা হযরত ফাতেমাতুয্যুহরা (রা.) নবীজীর ইন্তেকালের সময় এতবেশী ক্রন্দন করেছিলেন যে, যার বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়।
৫. সাযি়্যদুনা হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.) সাযি়দ্যুনা হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর বিষাদ, অসহায়ত্ব এবং কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনা স্মরণ করে চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত এতবেশি ক্রন্দন করেছিলেন যে, কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর মুহূর্তের জন্যে তাঁর চক্ষদ্বয় অশ্র“মুক্ত হয়নি। ক্রন্দন ব্যতিত তিনি কখনও পানি পান করেননি। (হাশিয়াযে় দালাইলুল খাইরাত)
আরবী মাস সমূহের মধ্যে শা’বান একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। শা’বান শব্দের বিশ্লেষণের মাধ্যমেই সহজেই এমাসের তাৎপর্য অনুধাবন করা যায়। শা’বান শব্দের পাঁচটি অক্ষর আছে। যথা: শীন, আইন, বা, আলিফ ও নুন। এ হরফগুলোর তাৎপর্য বা রহস্য নিম্নে উল্লেখিত হল।
১. ‘শীন’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল শরফুন বা মর্যাদা। অর্থাৎ এ মাস মর্যাদাপূর্ণ।
২. ‘আইন’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল উলুউউন বা উন্নতি। অর্থাৎ এ মাসে ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে পারে।
৩. ‘বা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল বিররুন বা কল্যাণ, নেক আমল। অর্থাৎ এ মাসে কল্যাণ ও নেক অর্জনের জন্য অফুরন্ত সুযোগ রযে়ছে।
৪. ‘আলিফ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল উলফত বা ভালবাসা। অর্থাৎ এ মাস হচ্ছে মহান আল্লাহ পাকের সাথে বান্দাদের ভালবাসা সৃষ্টির মাস।
৫. ‘নুন’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল নূর। অর্থাৎ এ মাসে মহান আল্লাহপাক প্রদত্ত কল্যাণ, বরকত ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দুরুদ ও সালাম প্রেরণের মাধ্যমে মানুষ অন্তরে নূর সৃষ্টি করতে পারে। যে নূরের প্রস্রবন ধারায় মাহে রামাদ্বান আলকুরআনের নূর ধারণ করতে সক্ষম হয়।
(গুনিয়াতুত্তালিবীন, নুজহাতুল মাজালিস)
রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান-হাশরের ময়দানে কোন ব্যক্তির পদযুগল ততক্ষণ পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারবেনা, যতক্ষণ না তার কাছ থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর নেওয়া হবে।
১. জীবনের সুদীর্ঘ ও প্রচুর সংখ্যক দিবারাত্রকে কী কাজে ব্যয় করেছ?
২. যৌবনকালকে কীভাবে অতিবাহিত করেছ?
৩. অর্থকডি় কীভাবে অর্জন করেছ?
৪. অর্থকডি় কীভাবে ব্যয় করেছ?
৫. নিজ ইলিম অনুযায়ী কী আমল করেছ?
হযরত শকীক বলখী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি পাঁচটি জিনিস অন্বেষণ করলাম। অতঃপর উক্ত পাঁচটি জিনিস অপর পাঁচটি জিনিসের মধ্যে পেলাম।
১. জীবিকার বরকত অন্বেষণ করলাম, তা চাশতের নামাযের মধ্যে পেলাম।
২. ক্ববরের আলোক রশ্মি অন্বেষণ করলাম, তা তাহাজ্জুদের নামাযের মধ্যে পেলাম।
৩. মুনকার নাকীরের প্রশ্নের জবাব অন্বেষণ করলাম, তা পবিত্র কুরআন শরীফের তেলাওতের মধ্যে পেলাম।
৪. পুলছিরাত পার হওয়ার উপায় অন্বেষণ করলাম, তা রোযা ও ছদক্বার মধ্যে পেলাম।
৫. আরশের ছায়া অন্বেষণ করলাম, তা একাকীত্ব অবলম্বনের মধ্যে পেলাম। (নুযহাতুল বাসাতীন)
সাযি়্যদুনা হযরত আবুবকর ছিদ্দীক (রা.) র্ফমান পাঁচটি অন্ধকারের জন্য পাঁচটি আলো রযে়ছে।
১. গুনাহ অন্ধকার, তার জন্যে আলো হল তওবা।
২. ক্ববর অন্ধকার, তার জন্যে আলো হল নামায।
৩. মীযান অন্ধকার, তার জন্যে আলো হল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
৪. ক্বিয়ামত অন্ধকার, তার জন্যে আলো হল নেক আমল।
৫. পুলছিরাত অন্ধকার তার জন্যে আলো হল ইয়াক্বীন। (নুযহাতুল মাজালিস)
অভিশপ্ত শয়তান মহান আল্লাহপাকের দরবারে মানুষের বিরুদ্ধে পাঁচটি দোয়া করেছিল। মহান আল্লাহপাক তার পাঁচটি দোয়াই কবুল করে নেন।
১. হে আল্লাহ! আমাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সময় দিন
২. আমি যেন যে কোন মানুষের রূপ ধারণ করতে পারি।
৩. প্রত্যেক আদম সন্তানের মুকাবিলায় আমাকে একটা সন্তান দান কর।
৪. মানুষের অন্তরে প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা দাও।
৫. আমাকে আদম সন্তানের রক্ত প্রবাহে চলার শক্তি দাও। (আত্তানভীর)
পাঞ্জাতন পাক বা পবিত্র পাঁচ ব্যক্তিত্ব। আদমের পরিভাষায় যাদেরকে পাক পাঞ্জাতন বলে থাকি। উক্ত পাঁচ ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন
১. হযরত রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
২. সাযি়্যদুনা হযরত আলী (রা.)
৩. সাযি়্যদুনা হযরত ফাতেমাতুয্যুহরা (রা.)
৪. সাযি়্যদুনা হযরত ইমাম হাসান (রা.)
৫. সাযি়্যদুনা হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) (ফরহঙ্গ-ই-রব্বানী)
হযরত ইমাম খাওয়াছ (রহ.) বলেন, অন্তর পরিশুদ্ধির পাঁচটি ঔষধ।
১. মর্মবুঝে পবিত্র কুরআন শরীফের তেলওয়াত করা।
২. কম খাওয়া।
৩. তাহাজ্জুদ পড়া।
৪. শেষ রাত্রে কান্নাকাটি করা।
৫. নেক লোকের সংগ অবলম্বন করা। (কাশকুল)
মাও. মোঃ আইয়ুব বলেন, একজন মুজতাহিদের জন্যে নিম্নলিখিত পাঁচটি বিষযে় ইলিম থাকা আবশ্যক।
১. মহান আল্লাহপাকের কিতাবের ইলিম।
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের ইলিম।
৩. পূর্ববর্তী মনীষীদের কোন বিষযে় তাঁদের ঐক্যমত্য ও মতানৈক্যের বিষয়ক ইলিম।
৪. ভাষাজ্ঞান।
৫. ক্বিয়াস বিষয়ক ইলিম। (দুরারুল মাসাইল আন ওয়ারিত্তানযীল)
সাযি়্যদুনা হযরত মায়মুন ইবনে মিহরান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিযে় বললেন, পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষযে়র পূর্বে মূল্যবান মনে করবে।
১. যৌবনকালকে বার্ধক্যের পূর্বে।
২. সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে।
৩. অবসর সময়কে কর্মব্যস্ততার পূর্বে।
৪. সচ্ছলতাকে দারিদ্রতার পূর্বে।
৫. হায়াতকে মৃত্যুর পূর্বে। (মুসতাদরাকে হাকিম)
চলবে

Comments

comments

About

Check Also

ইবাদতের বসন্তকাল রমজান

ঋতুরাজ বসন্ত যেমন প্রকৃতিতে অপার সৌন্দর্যের মোহনীয় রূপ এনে দেয়। তেমনি রমজান মাস পরওয়ারদেগারের পক্ষ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *