অভিযাত্রিকের দুরন্ত অভিযাত্রা

২০১০ সাল। আমরা কিছু স্বপ্নবাজ তরুণ তিমিরের বুকে সাহসের থাবা বসাতে কল্যাণসাহিত্য ও সুস্থ-সংস্কৃতির মাঠে চষে বেড়াই। আমাদের আদর্শিক পৃষ্ঠপোষক ছিলেন আলেম, কবি ও ঔপন্যাসিক রফীকুল ইসলাম মুবীন। তাঁর খেতাব ‘নাতের রাজা’। অগণিত হামদ, না’ত ও ইসলামী সঙ্গীত লিখেছেন তিনি। সমাজদেহে নীতি-নৈতিকতার বীজ বপন করতে আমরা সাংগঠনিক প্লাটফর্ম তৈরি করেছিলাম। সেই সুবাদে হৃদয়ের কাছাকাছি অবস্থান আমাদের। বুকে আদর্শের আতর, কন্ঠে সাহসের চিৎকার, দ্রোহে-স্বপ্নে আগামীর পথচলার শপথে আমরা রোজই আড্ডামঞ্চে একত্রিত হতাম। একদিন মুবীন ভাই জানালেন কল্যাণসাহিত্যের মুখপত্র বের করবেন। চমৎকার একটি নাম নির্বাচন করতে হবে। বেশকিছু নাম টেবিলে এলো। সবার চোখ পড়লো অভিযাত্রিকের উপর। অফিস নির্ধারণ করা হলো। ই-মেইল একাউন্ট খোলা হলো। শুরু হয়ে গেলো লেখা কালেকশন, নির্বাচন, টাইপিং, সেটিং। স্বপ্নের বাতায়ন খোলে আগস্ট ২০১০-এ চলে এলো সুচনা সংখ্যা। আমার একটা কবিতা ছাপার অক্ষরে এলো কবিতার পাতায়। চমৎকার ফিচার, প্রচ্ছদে স্বপ্ন জাগানিয়া নাবিক সিন্দাবাদের হৃদয় যেনো বিমূর্ত হয়ে উঠলো। সূচনা পঙক্তিতেই যেনো বুঝা হয়ে গেলো অভিযাত্রিক আসলে কী জানান দিতে চায়।
অনেক স্বাদ, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার ঝিলিক দিয়ে অভিযাত্রিক শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মসৃণ পথে প্রজন্মকে ডাকতে শুরু করলো। বৃষ্টিবিন্দুর ছোঁয়ায় মরা মৃত্তিকার প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠার মতো অভিযাত্রিকও যৌবনের সয়লাব নিয়ে এলো তার নিজস্ব কক্ষপথে।
তারুণ্যের জন্যই পৃথিবী গৌরবে সজীব হয়। যৌবনকেই পৃথিবী সমীহ করে। আঁধারের পথ মাড়িয়ে নতুন সূর্যোদয় আসে। কুহেলিকা যৌবনের পছন্দ নয়, তারুণ্য তাকে বিশ্বাস করেনা। অভিযাত্রিক সেই আঁধারের পর্দা ভেদ করে আলোর নহর জাগ্রত করতে সাহসী উচ্চারণ নিয়ে এসেছে।
প্রতিটি বিজয় একদল মুক্তিকামী আত্মাকে স্পর্শ করে আসে। অভিযাত্রিকের থীমকথন ‘মূখর তারুণ্যের দৃপ্ত মিছিল’-এর সাথে একাত্ম হয়ে আসেন কিছু প্রত্যয়ী মানুষ, যারা পত্রিকাটির গতিপথকে দুরন্ত গতিময় করে দেন। আজ অভিযাত্রিক নিয়মিত হয়েছে। একঝাঁক মননশীল পাঠক তৈরি হয়েছে। অনেকগুলো পাঠক ফোরাম তৈরি হয়েছে। অভিযাত্রিকের সময়নিষ্ঠ সম্পাদক তাঁর কর্মকৌশল, মেহনত ও লিল্লাহিয়াত দিয়েই যেনো সবকিছু জয় করে নিচ্ছেন।
একটা পত্রিকার সাথে একটা ইজম গড়ে উঠে। ইকবালের কাছে তা দার্শনিকের চোখে বিম্বিত হওয়া আলোর ভুবন, নজরুলের কাছে তা মুক্তিচেতনা, ফররুখের কাছে ইসলামী রেনেসাঁ। সেই ইজম তৈরি হলে তার মতো করে কিছু বিশ্বাসী ও সেই বিশ্বাসের ধারক গড়ে তুলতে চায়। আমি মনে করি, অভিযাত্রিক সেটা পেরেছে। আমাদের চোখের সামনে কলমবাজ মানুষ তার পরিচয় বলে দেন।
অভিযাত্রিক সামনের বিষাক্ত কন্টকাকীর্ণ পথকে পদদলিত করে সফলতার নিজস্ব ভুবন তৈরি করুক। সম্পাদক, পৃষ্ঠপোষক, বিজ্ঞাপন দাতা, পাঠক, লেখক সবার জন্য শুভকামনার বর্ষণ ফুটিয়ে আজ রেখে দিলাম। ‘নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারীব।’লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক, সভাপতি, আইডিয়াল ইয়ুথ ফোরাম, সিলেট।

Comments

comments

About

Check Also

অভিনন্দন! শানে রিসালত মহাসম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির প্রতি

গত ২ ও ৩ মার্চ বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী ৩৬০ আউলিয়াসহ অসংখ্য ওলী-আবেদের পদধূলি ধন্য আমাদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *