বিতর্ক

(পূর্ব প্রকাশের পর)
০৬. শয়তানের মুখোশ উন্মোচন
সায়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া (রা.) একবার স্বীয় কক্ষে ঘুমিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় কেউ যেন তাঁকে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার জন্য ডাকতে লাগল। হযরত মুয়াবিয়া (রা.) জাগ্রত হয়ে তাকে ডাক দিলেন। সে ছিল মানুষের চির শত্র“ শয়তান।
হজরত মুয়াবিয়া (রা.) : আরে! কে তুমি? তোমার নাম কী?
শয়তান : হুজুর! আমি সকলের পরিচিত বদনসিব ইবলিস।
হযরত মুয়াবিয়া (রা.) : হে ইবলিস! তোর তো কাজ হল মানুষদেরকে ধোকা দিয়ে তাদের নামাজকে কাযা করানো। আশ্চর্যের ব্যাপার! তুই আবার আমাকে নামাজের জন্যে ডাকছিস। তোর চির বৈশিষ্ট্য হল নামাজ ছাড়ানো। নামাজ পড়ানো তোর কাজ নহে। এমন বৈশিষ্ট্যের বিপরীত কাজ কেন করলে?
শয়তান : তবে মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করুন। আমি আপনাকে এ জন্যে জাগ্রত করেছি যে, যদি আপনার এ সময় নামাজ কাযা হয়ে যায় তাহলে আপনি এমন আফসোস করবেন যে আফসোসের কারণে মহান আল্লাহ পাক আপনার আমলনামায় দু’শত রাকাত নামাজের সওয়াব দিয়ে দিবেন। আপনার নামাজের সওয়াব যাতে বৃদ্ধি না পায় সে জন্য আমি আপনাকে অগ্রিম জাগ্রত করে দিয়েছি। (ফয়দ্বানে সুন্নত)
০৭. বেলাদতের আকাশে একটি উজ্জ্বল তারকা
হযরত ইব্রাহীম ইবনে আদহাম (র.) বলখের বাদশা ছিলেন। তাঁর জীবন ছিল অত্যন্ত বিলাসবহুল। যখন তিনি কোথাও বের হতেন তখন তাঁর সামনে পিছনে চল্লিশজন করে দেহরক্ষী থাকত।
একরাত তিনি তাঁর শাহীবালাখানায় আরামে ছিলেন। অর্ধেক রাত্রিতে তিনি ছাদের উপর কারো পদচারণা শুনতে পেলেন। তখন অদৃশ্য ব্যক্তির সাথে কথোপকথন শুরু হয়।
হযরত ইব্রাহীম (র.) : এ গভীর রাত্রিতে ছাদের উপর কে?
অদৃশ্য ব্যক্তি : আমার একটি উট হারিয়ে গেছে। আর তা খুঁজছি।
হযরত ইব্রাহীম (র.) : হে মুর্খ! ছাদের উপর উটের কী কাজ? কেউ কী কখনও ছাদের উপর উট তালাশ করেছে?
অদৃশ্য ব্যক্তি : হে গাফেল! তুমি তো রেশমী পোশাক পরিধান করে, নরম বিছানায় আরাম করে, রাজ সিংহাসনে বসে মহান আল্লাহ পাককে তালাশ করছ। ছাদের উপর উট তালাশ করা যদি মুর্খতা হয় তাহলে রেশমী পোশাক পরিধান করে, নরম বিছানায় আরাম করে, শাহী তখতে বসে মহান আল্লাহ পাককে তালাশ করা এ কেমন জ্ঞানীর পরিচয়?
অদৃশ্য ব্যক্তির এমন কথাবার্তায় হযরত ইব্রাহীম ইবনে আদহাম (রহ.)-এর অন্তরে খুবই রেখাপাত করল।
ভোরবেলা যখন বাদশাহ ইব্রাহীম ইবনে আদহাম (র.) রাজ সিংহাসনে বসলেন এবং জনসাধারণের সমাগম হতে শুরু করল তখন এক অপরিচিত ব্যক্তি শাহী দরবারে প্রবেশ করলেন। তাঁর মধ্যে এমন ব্যক্তিত্বের ছাপ ছিল যে, ভিতরে প্রবেশ করতে বাঁধা দিতে কারো সাহস হল না। তিনি সরাসরি বাদশাহের রাজ দরবারে প্রবেশ করে এমন মন্তব্য করলেন যাতে স্বয়ং হযরত ইব্রাহীম ইবনে আদহাম (র.) পর্যন্ত তাক লেগে গেলেন। নিম্নে তাঁদের বিতর্ক উল্লেখিত হল :
অপরিচিত ব্যক্তি : এ মুসাফিরখানা আমার পছন্দ নয়।
হযরত ইব্রাহীম (র.) : ইহা তো মুসাফিরখানা নহে। ইহা তো আমার শাহী বালাখানা।
অপরিচিত ব্যক্তি : হে বাদশাহ! আমাকে বলুন, এ বালাখানা আপনার পূর্বে কার ছিল?
হযরত ইব্রাহীম (র.) : আমার মুহাতারাম পিতার নিকট ছিল।
অপরিচিত ব্যক্তি : আপনার মুহাতারাম পিতার পূর্বে কার নিকট ছিল?
হযরত ইব্রাহীম (র.) : আমার দাদাজানের নিকট।
অপরিচিত ব্যক্তি : আপনার দাদাজানের পূর্বে কার নিকট ছিল?
হযরত ইব্রাহীম (র.) : আমার দাদাজানের পিতার নিকট ছিল।
অপরিচিত ব্যক্তি : তাহলে আপনার বর্ণনা মোতাবিক জানা গেল যে, আপনার পূর্বে আপনার পিতা এ অট্টালিকায় থাকতেন, আপনার পিতার পূর্বে আপনার দাদা থাকতেন। আপনার দাদার পূর্বে আপনার দাদার পিতা থাকতেন। এখন আপনিই বলুন মুসাফিরখানা কাকে বলে? মুসাফিরখানা তো তাকেই বলে যাতে একজন যাওয়ার পর আরেকজন থাকেন। এ বলেই অপরিচিত ব্যক্তি বাহিরে চলে গেলেন।
অপরিচিত ব্যক্তির এমন কথাবার্তায় হযরত ইব্রাহীম ইবনে আদহাম (র.) দারুণভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে রাজ সিংহাসন ছেড়ে অপরিচিত ব্যক্তির পিছনে দৌঁড়াতে শুরু করলেন। এমনকি তাঁকে পেয়ে গেলেন।
হযরত ইব্রাহীম (র.) : আপনি কে?
অপরিচিত ব্যক্তি : আমি হযরত খিজির (আ.)।
অপরিচিত ব্যক্তির পরিচয় পেয়ে হযরত ইব্রাহীম ইবনে আদহাম (র.) আরও বেশি প্রভাবান্বিত হয়ে পড়লেন। তিনি দুনিয়ার বাদশাহী ছেড়ে মহান আল্লাহ পাকের খোঁজে বেরিয়ে পড়লেন। তিনি একাধারে নয় বৎসর পর্যন্ত একটি গর্তে মহান আল্লাহ পাকের ধ্যানে মগ্ন থাকলেন। এমনকী বেলাদতের আকাশে একটি উজ্জ্বল তারকা হিসেবে প্রকাশিত হয়ে গেলেন। (তাযকেরাতুল আউলিয়া ও মসনবী শরীফ)
(চলবে)

Comments

comments

About

Check Also

মুবাহাসা (২য় পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)মুসাল্লা উঠিয়ে নাওইমাম আযম আবু হানিফা র.-এর আদত মুবারক ছিল যখন তিনি শাগরিদকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *