খোদাভীতির উজ্জ্বল নমুনা

(পূর্ব প্রকাশের পর)
৫৩. হজরত খালিদ বিন সাফওয়ান (র.) বলেন, একদিন আমি খলিফা হিশাম বিন আব্দুল মালিকের অতিথি হলাম। তিনি আমার নিকট গল্প শুনতে চাইলেন। আমি বললাম, জনৈক বাদশা নগর ভ্রমণের সময় এক প্রাসাদের প্রতি আঙুল উঁচিয়ে বললেন, এটা কার? বাদশাহর সহচরগণ বললেন, সুলতানের। বাদশাহ আবার বললেন, আমার নিকট যতটুকু সম্পদ রয়েছে পৃথিবীর কোনো বাদশাহর কাছে কোনো সময় তা কি ছিল? তখন এক প্রাচীন যুগের বয়ঃবৃদ্ধ আলিমে দ্বীন বললেন, আগে আমার কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিলে আমি এর জবাব দিব। বাদশাহ বললেন, বলুন! আলিমে দ্বীন বললেন, আপনার নিকট যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তা কি আগের চেয়ে হ্রাস পায়নি? এ সম্পদ কি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত নন? আপনার স্থলাভিষিক্ত কি এ সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে পাবে না? বাদশাহ বললেন, আপনার তিনটি প্রশ্নই যথার্থ। আলিমে দ্বীন বয়ঃবৃদ্ধ ব্যক্তি বললেন, এ সম্পদের মোহই আপনাকে আজ অন্ধ করে দিয়েছে। যে সম্পদ ক্ষয়শীল। যে সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অন্যের হস্তগত হবে এবং যে সম্পদ আপনি ব্যয় করেছেন তার হিসাব হবে। একথা শুনে বাদশাহ শিহরিত হয়ে উঠলেন এবং বললেন, আমি উত্তর পেয়ে গেছি।
বৃদ্ধ আলিম বললেন, বাদশাহী করতে চাইলে আল্লাহ তাআলার অনুসরণ করুন। অন্যথায় তা বর্জন করতে হবে। বাদশাহ এ বিষয়ে সারা রাত চিন্তা-ভাবনা করে সকালে বললেন, আমি বাদশাহী ছেড়ে মরু বিয়াবানে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপনি আমার সঙ্গে থাকলে খুশি হব। অতঃপর তারা উভয় মৃত্যু পর্যন্ত এক পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান করেন।
এ ঘটনা শুনার পর খলিফা হিশাম বিন আব্দুল মালিক এতই কাঁদলেন যে, তার চোখাশ্র“ দ্বারা দাঁড়ি সিক্ত হয়ে গেল। পুত্রদ্বয়কে প্রশাসনিক দায়িত্ব দিয়ে তিনি ঘরের এক কোণে বসে ইবাদত করতে লাগলেন। তিনি বাইরে যাতায়াত ছেড়ে দিলেন। খলিফার এ অবস্থা দেখে রাষ্ট্রের উর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গ হজরত খালিদ বিন সাফওয়ানকে বললেন, আপনি আমিরুল মোমিনীনকে এমন কি করলেন যার প্রভাবে তার বিলাসিতা বিদূরিত হলো। খালিদ বিন সাফওয়ান (র.) বললেন, আমি আল্লাহ তা’আলার নিকট এ মর্মে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ যে, আমি কোন বাদশাহর নিকট গেলে তাঁকে আল্লাহর ভয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিব। (তারীখুল খুলাফা)।
৫৪. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী (র.) লিখেন, হজরত হাম্মাদ (র.) বলেন, হজরত উমর বিন আব্দুল আযীয খলিফা হওয়ার পর কেঁদে কেঁদে আমাকে বললেন, হাম্মাদ! আমার প্রচণ্ড ভয় লাগছে। আমি বললাম, আপনি দিনার-দিরহাম কতটুকু ভালোবাসেন? তিনি বললেন, মোটেও না। আমি বললাম, তাহলে আপনার ভয় কিসের? আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন। (তারীখুল খুলাফা)
৫৫. হজরত ফারাত বিন সায়েব বলেন, উমর বিন আব্দুল আযীয (র.)’র স্ত্রী ফাতেমাকে তার পিতা আব্দুল মালিক অনেক মূল্যবান অলংকারাদি দিয়েছিলেন, একদিন স্ত্রীকে বললেন, (হে আমার স্ত্রী) তোমার অলংকারগুলো বাইতুল মালে জমা দাও। অন্যথায় আমাকে পছন্দ না হলে তোমাকে পৃথক করে দিব। কারণ আমি, তুমি এবং তোমার অলংকারাদি এক ঘরে থাকাটা আমি মোটেও সহ্য করতে পারছি না। ফাতেমা বললেন, আমি আপনাকেই প্রাধান্য দিব। আপনি আমার অলংকারগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করে দিন। তিনি তাই করলেন। খলিফা উমর বিন আব্দুল আযীয ইন্তিকালের পর ইয়াযিদ বিন আব্দুল মালিক খলিফা হলে তিনি তার অলংকারগুলো ফিরত দিতে চাইলে ফাতেমা সে প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বললেন, স্বামীর মহত্ত্বের নিদর্শন স্বরূপ তাঁর জীবদ্দশায় যে জিনিস আমি (রাষ্ট্রীয় কোষাগারে) দিয়েছি তাঁর ইন্তিকালের পর তা ফেরত নেব না। (তারীখুর খুলাফা)

Comments

comments

About

Check Also

মুবাহাসা (২য় পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)মুসাল্লা উঠিয়ে নাওইমাম আযম আবু হানিফা র.-এর আদত মুবারক ছিল যখন তিনি শাগরিদকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *