অঙ্গীকার (৬ষ্ট পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)
সেদিনের পর থেকে রাদিয়া অনেকটা বদলে গেছে। আগের মত সেই চঞ্চল এখন আর নেই। নিয়মিত ইসলামিক জীবন যাপন পালন করার চেষ্টা করে। ভার্সিটিতে গেলে ও অহেতুক সময় নষ্ট না করে বাসায় চলে আসে। আবার মায়ের সাথে এখন সংসারের কাজে সহযোগিতা করে। দুপুরের পর দুইটা টিউশনি করে আগে থেকেই নিজের হাত খরচের জন্য।
তবে আফিয়া আগের থেকে অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে। ওর হাত পা গুলোফুলে খুব খারাপ অবস্থার তৈরি হয়েছে। নামাজও প্রায় সময় বসে বসে পড়তে হয়। আজকাল নানারকম দুঃস্বপ্ন এসে ওর মনের মধ্যে ভর করে। এসব যখন শাফীকে বলে ও মুখের মধ্যে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটিয়ে বলে, দূর পাগলী! তুমি অযথাই টেনশন করছো। আল্লাহর উপর থেকে ভরসা হারাবেনা। উনি সবসময় আমাদের সাথে আছে।
জবাবে আফিয়াও কিছু বলে না। কিন্তু ও জানে যতটা চিন্তা ওর হচ্ছে তার থেকে বেশি চিন্তা শাফী করে। কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না। পুরুষ মানুষগুলো আসলেই অনেক কঠিন মনের। এদের যত চিন্তা হোক বা যত বড় বিপদের সম্মুখীন হোক না কেন অফিসে কিংবা বাড়িতে এরা পরিবারের কাউকে তা বুঝতে দেয় না। ঠান্ডা মাথায় সবকিছু সামাল দেয়ার চেষ্টা করে। এরা নিজেরা কষ্টে থাকলেও পাশের মানুষটাকে সেই কষ্টে নিমজ্জিত করেনা। খুব কম সংখ্যক পুরুষ আছে যারা নিজেদের কষ্টের কথাগুলো অন্যদের বলতে পারে।
শাফীর ব্যবসার কাজ রেডি না হওয়াতে আফিয়ার পিছনে যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে পারছে। আসলে ও ইচ্ছে করেই ব্যবসাটা শুরু করেনি আফিয়াকে দেখভালো করার চিন্তা করে। আফিয়ার সব কাজগুলো বলতে গেলেই শাফীই করে দেয়। এমনকি আফিয়ার জামাকাপড়গুলো পর্যন্ত ও ধুয়ে দেয়। শাফী যখন থাকে না মানে ওদের বাসায় যায় বা অন্য কোন দরকারে বের হতে হয় তখন মুনিরা কিংবা রাদিয়া, সামিহা এগুলো করে। আফিয়া শাফীকে বারবার নিষেধ করে এই বলে যে, মা আছে রাদি আছে সামিহা আছে ওরা করতে পারবে আপনি এত কাজ কেন করবেন?
-ওরা ওদের দায়িত্ব পালন করবে আর আমি আমারটা করছি।
-তারপরেও আমার খুব খারাপ লাগছে। আপনি আমার কাজ করেন আর আমি শুয়ে থাকি।
-তুমি কি ইচ্ছে করে শুয়ে থাকো? অসুস্থ দেখেই তো নাকি?
-তারপরেও
-আবার তারপরে কি? আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলতো? আজ যদি তুমি অসুস্থ না থেকে আমি অসুস্থ থাকতাম তাহলে তুমি কি এভাবে বসে থাকতে? নাকি আমার সেবাযতœ তুমি অন্য কাউকে করতে দিতে?
-কখনোই না।
-তাহলে আমার বেলায় কেন নিষেধ করছো?
-আপনি পুরুষ মানুষ তাই।
-আচ্ছা আমি পুরুষ বলে আমি ঘরের কাজ করলে তোমার অসম্মান হবে এটা কে বলেছে? স্বামী ঘরের কাজ করলে অসম্মানি হবে আর স্ত্রী করলে তাতে সম্মান বাড়ে? স্বামী স্ত্রীকে সাহায্য করলে এতে অসম্মান হয় না। এতে একজনের প্রতি আরেকজনের সম্মান বাড়ে, তাদের মধ্যে ভালোবাসা বাড়ে। আমাদের রাসূল সা. ও তার স্ত্রীদের কাজ করতে সব সময় সাহায্য করতো। এতে কারো সম্মান কমে যায় না। কিছু পুরুষ আছে যারা নিজেদের সংসারের রাজা মনে করে থাকে। এদের কথা হলো বাহিরে কাজ করে এসে আবার ঘরে কেন করবো? কিন্তু এরা একবারো ভাবেনা ওই মেয়েটি ও ঘরে সারাদিন শুয়ে বসে থাকে না। আমাদের তো অফিস থেকে ফিরার পর একটু নিস্তার থাকে কিন্তু মেয়েটি সেই সকাল রাত পর্যন্ত তার ঘর সংসার আর সন্তানদের সামলাতে গিয়ে একটু বিশ্রাম নেয়ারও সময় পাইনি আমরা যদি তাদের সাথে হাতে হাত লাগিয়ে একটু সাহায্য করি এতে তারাও খুশি হবে এটা তারা ভাবে না।
তথাকথিত পুরুষদের মত শুয়ে বসে খাওয়ার অভ্যেস আমার নেই এটা তুমি ভালো করে জানো। আর এখন তো তুমি অসুস্থ।
আর তোমাকে তো আমি ভালো করে চিনি, তুমি সুস্থ থাকলে কখনোই আমাকে এসব করতে দিতে না। এখন যখন একটু সুযোগ পেয়েছি তা হাতছাড়া করি কি করে। চুপচাপ বসে বসে অর্ডার করবে যা লাগবে আমি সবসময় প্রস্তুত আছি তা পালন করার জন্য।
-আপনি খুব ভালো মানুষ।
-জী আমি ভালো মানুষ কারণ আমি আফিয়া বিনতে জাওয়াদের স্বামী।
-সত্যি বলছি আমার জীবনের অনেক বড় অর্জন আপনাকে আমার করে পাওয়াটা।
-জী জাযাকাল্লাহু খায়রান। আমিও ধন্য আপনাকে পেয়ে।
-আচ্ছা একটা কথা বলি? যদিও এগুলো ঠিক না তারপরও জানার ইচ্ছে আরকি।
-বলো।
-আপনি ছেলে নাকি মেয়ে হলে বেশি খুশি হবেন। মানে আপনার কোন ইচ্ছে আছে?
-আফিয়া প্রশ্নটা আসলেই অবান্তর। ছেলে মেয়ে যা হোক না কেন আল্লাহ আমাদের খুশি হয়ে যে রহমত দান করবেন তাই আমি আনন্দচিত্তে গ্রহণ করে নেবো। আর কখনো এসব বলবে না। আমাদের কারো একটা পিপড়া বানানোর ক্ষমতা নেই সেখানে আমরা আল্লাহর দেয়া এই বিশেষ রহমতের উপর নারাজ হবো কেন?
-আসলে এখন অনেক জায়গায় এই ব্যাপারগুলো নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় তো তাই জানতে চেয়েছি অন্য কোন দৃষ্টিকোণ থেকে নয়।
-তুমি আমাকে সেরকম ভেবেছো?
-আরে না কি বলছেন আপনি সবার থেকে আলাদা।
-হুম যারা এই ব্যাপারগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন আল্লাহ তাদের অভিসম্পাত করেন। এরা নামে মুসলিম, কাজে নয়। সত্যিকারের মানুষ তো সেই যে সমস্ত বিপদ আপদ, আনন্দ যাই হোক না কেন সবসময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে। কত মানুষ একটা বাচ্ছার জন্য হাহাকার করে মরে আর এরা পেয়েও তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা। এদের মতো নিকৃষ্ট মানুষ জগতে নেই।
-আপনার কাছ থেকে কত কি যে শিখার আছে। সত্যি আপনার মত মানুষ হয় না।
-শাফী হেসে বললো, আমার মত কেন হবে? আমার মতো করে আল্লাহ শুধু আমাকে বানিয়েছে আর দ্বিতীয়টা খুঁজে পাবে না।
-আসলেই পৃথিবীতে এত কোটি কোটি মানুষ এদের কারো সাথে কারো বিন্দুমাত্র মিল নেই।
-হুম আল্লাহ হলেন খুব নিপুণ এবং নিঁখুত কারিগর। এজন্যই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। শুধু মানুষ কেন এইযে পৃথিবীতে এতো এতো গাছ আছে একগাছের পাতার সাথে আরেকগাছের পাতারও বিন্দুমাত্র কোন মিল নাই। এতো পশুপাখি, জীবজন্তু কোনকিছুর কারো সাথে কারো একটু মিলও নেই। তিনি এতো ক্ষমতাশালী যে মাত্র ছয়দিনে আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন কারো সাহায্য ছাড়াই। আর এজন্যই তিনি অদ্বিতীয়।
-হুম এটা শুধু আল্লাহই পারে। আল্লাহ ছাড়া তো এক চুল পরিমাণ নড়বার ক্ষমতা নেই।
-হুম তুমি এখন কথা বন্ধ করে একটু ঘুমাও আমি একটু বাহিরে থেকে আসি এ বলে শাফী আফিয়াকে শুইয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো।
রাদিয়া ভার্সিটি থেকে ফিরে আসে দুপুর দেড়টা কি দুইটাই। কিন্তু এখন বাজে সাড়ে চারটা, ও এখনো বাসায় ফিরেনি। আফিয়া আর ওর মা অনবরত কল দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করার কোন নামগন্ধ নেই। এদিকে শাফীও আজ বাসায় নেই ওর বাবাকে ডাক্তার দেখাতে হবে তাই বাসায় গেছে। ও থাকলে ওকে দিয়ে খোঁজ খবর নেয়া যেতো। ওর বান্ধুবীদের মাঝে যে দুজনের নাম্বার আছে তাদের একজনের বিয়ে হয়ে গেছে আর অন্য মেয়েটা এখন দেশের বাড়িতে ফোন দিয়ে জানতে পারলো। সবাই বেশ চিন্তার মধ্যে আছে। আত্মীয়দের মধ্যেও কারো কারো কাছে ফোন করাতে ওরা জানালো ওদের বাসায় যায়নি। ও যে বাসাতে টিউশনি করায় তারাও একি কথা জানালো। মুনিরা তো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। শাফীকে ফোন করতেই ও বললো বাবাকে বাসায় দিয়ে ও চলে আসবে। এই মেয়ের কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই নাকি? বাসার এতোগুলো মানুষ ওর চিন্তায় অস্থির আর ও কোথায় গিয়ে বসে আছে। এতবড় মেয়ে হয়েছে যদি বুদ্ধিটা একটু থাকতো।
এতক্ষণ যাও ফোন ঢুকেছে এখন তাও সুইচ অফ বলছে।
আচ্ছা ওর কোন বিপদ হয়নিতো?
আল্লাহ না করুক এমন কিছু। আজকাল রাস্তাঘাটে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে, রাস্তায় বেরোনোই মুশকিল।
মুনিরা কাঁদতে কাঁদতে বললো, আল্লাহ, তুমি আমার মেয়েটার হেফাজত করো।
পাঁচটার দিকে শাফী আসলো। ও সব কিছু শুনার পর যখনি বেরোতে যাবে রাদিয়ার কলেজের উদ্দেশ্যে ( একমাত্র ওই জায়গায় খবর নেওয়া বাকী আছে) শাফী ড্রয়িংরুমে বেরিয়ে আসতে তখনি বাসার ডোরবেলটা বেজে উঠলো…

সামিহা দরজা খুলে দিতেই রাদিয়া কেমন যেন একরকম বিধ্বস্ত অবস্থায় বাসায় প্রবেশ করলো। চোখমুখ ফুলে প্রচন্ড লাল হয়ে আছে। মনে হয় অনেক কেঁদেছে। মুনিরার বুকের ভিতর কেমন যেন করে উঠলো। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে উনি কেঁদে দিয়েছে। কোথায় ছিলি তুই? কি হয়েছে? ফোন কেন বন্ধ তোর? এইরকম নানারকম প্রশ্ন করতে লাগলো।
আফিয়া আস্তে করে ধীর পায়ে বিছানা ছেড়ে উঠে আসলো। মাকে উদ্দেশ্য করে বললো। মা কি শুরু করেছো? ওকে আগে ঠিক করে বসতে দাও। রাদিয়ার রুমে রাদিয়াকে নিয়ে গিয়ে আফিয়া চেয়ার টেনে বসে বললো, রাদি কি হয়েছে? তুই কোথায় ছিলি এতক্ষণ? ফোন কেন ধরিসনি?
-রাদিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো, সরি আপু ফোন সাইলেন্ট ছিলো আমার মনে ছিল না। আজ সারাদিন হসপিটালে দৌঁড়াদৌড়ি করাতে ব্যস্ত ছিলাম।
-হসপিটাল? হসপিটালে কেন?
-মুনিরা বললো, হসপিটালে গিয়েছিস কেন? তোর কিছু হয়নি তো?
-ওহ হো মা! আমার কিছু হয়নি।
-আফিয়া বললো, তাহলে কাকে নিয়ে হসপিটালে ছিলি?
-আপু নিতু… বলে রাদিয়া আর কিছু বলতে পারছে না কান্নার তোড়ে।
-নিতু কে? আর কি হয়েছে।
-আপু সেদিন যে মেয়েটি আমাদের বাসা এসেছিলো সেই নিতু।
-বাসায় এসেছে, কিছুক্ষণ ভেবে আফিয়া বললো ও সেই আধুনিকা মেয়েটা? (সেদিন রাদিয়ার কাছে কি যেন নোটের জন্য ওর একটা ফ্রেন্ড আসছিলো। মেয়েটাকে দেখেই আফিয়া ইন্নালিল্লাহ বলে মুখে হাত দিলো। মেয়েটা এমন একটা পোশাক পরে এসেছিলো ওর হাতের বাহুগুলো উপরে পুরো খোলা ছিলো। পিঠ পুরো দেখা যাচ্ছিলো। মাফলারের মত কি যেন একটা গলায় পেঁচিয়ে রেখেছিলো। পায়ের দিকে একেবারে হাটু পর্যন্ত খোলা ছিলো। শাফী তখন বাসায় ছিলো। তাই আফিয়া রাদিয়াকে ডেকে মেয়েটাকে ভিতর রুমে নিয়ে যেতে বললো। মেয়েটার চলাফেরা কথাবার্তা পোশাক সব পাশ্চাত্যদের মত। আফিয়া অবাক হলো এই মেয়ের সাথে রাদিয়ার বন্ধুত্ব এই ভেবে। এদের সাথে মিশলে যে কেউ খারাপ হতে পারে।
পরে রাদিয়াকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো মেয়েটার নাম নিতু, খুব বড়লোকের মেয়ে। সবসময় এরকম ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরেও চলাফেরা করে। রাদিয়া আফসোস করে বললো, সত্যি বলতে কি আপু ওর সাথে কলেজ থেকে বন্ধুত্ব। বলা ঠিক না এগুলো কারণ কেউ কাউকে খারাপ করতে পারে না এটা ঠিক। আমি যদি ঠিক থাকি কেউ আমাকে খারাপ করতে পারবে না। সত্যি বলতে কি ওর প্ররোচনায় আমি তখন অনেকটা বিগড়ে গিয়েছি ইসলাম থেকে সরে গিয়েছি। ওরা যখন আমাকে এসব ব্যাপারে বলতো, তখন আমার ঈর্ষা হতো ওরা কতো স্বাধীন আর আমি কেমন? ওরা যেভাবে ইচ্ছা চলতে পারছে আর আমাকে বন্দি পাখির মত জীবন কাটাতে হচ্ছে। ওরা এভাবে চলতে পারলে আমি কেন পারবো না এই ভেবে ভেবে আমি অনেকটা খারাপ হয়েছি। এখন ওদের সাথে আমার মিশা ঠিকনা তারপরও অনেকদিনের বন্ধুত্ব হুট করে বদলে ফেলতে পারি না, তাই ভাবছি আস্তে আস্তে সরে যাবো। সেই সাথে চাইছিলাম যাতে ও এ জীবন থেকে ফিরে আসে।) আফিয়া মনে মনে বললো সেই স্বাধীন মেয়ের এখন কি হলো?
-আফিয়ার কথায় রাদিয়া বললো হুম সেই মেয়ে।
-কি হয়েছে ওর?
-রাদিয়া চোখের পানি ছেড়ে বললো আপু নিতুকে গনধর্ষণ করা হয়েছে?
-কি? কি বলছিস?
-হুম আপু সত্যি বলছি।
-কে করেছে কিছু জানা গেছে?
-হুম আপু। ছেলেটার সাথে ওর সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিলো। এক পর্যায়ে ওরা দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ছেলেটার দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী নিতু দেখা করতে গিয়েই এ অবস্থা। আপু বিশ্বাস করতে পারবি না ওর শরীরের যে বিশ্রী অবস্থা। শরীরের কোন একটা জায়গা খালি নেই আঁচড়ের দাগ ছাড়া। রক্তাক্ত অবস্থা একেবারে।
-আফিয়ার চোখ দিয়ে ও পানি পড়তে ছিলো, এখন কি অবস্থা?
-ভালোনা আপু বাঁচে কি মরে তার ঠিক নেই এখনো জ্ঞান ফিরেনি। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলো। ওর মায়ের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে গেছে। ভদ্রমহিলার কান্নায় হাসপাতালের সবার চোখের পানি ঝরেছে। খবরটা যখন শুনলাম না গিয়ে থাকতে পারিনি। ওখান থেকে যে আসবো তারও কোন উপায় ছিলো না। নিতুর বাবা ব্যবসার কাজে নেপালে গিয়েছে। মেয়ের খবর শুনেই উনি রওনা দিয়েছেন। ওদের কোন আত্মীয় ও ছিলো না শুধু নিতুর এক মামা ছিলো। উনি হাসপাতালে ডাক্তারের সাথে কথা বলা ব্লাড যোগাড় করা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ওর মায়ের পাশে থাকার মতো কেউ ছিলো না তাই আমরা আসতে পারিনি। পরে উনাদের আত্মীয় স্বজনরা আসাতে আমরা চলে আসলাম।
-আফিয়া আফসোসের স্বরে বললো হায়রে আধুনিকতা! হায়রে স্বাধীনতা! আজ তার স্বাধীনতা তাকে কোথায় নিয়ে গেলো। মানুষ আধুনিকতার নামে আজ যে নগ্নতা প্রকাশ করছে ছেলেদের সাথে ফ্রিমাইন্ডে চলার কথা বলে যে অবাদ মেলামেশা করছে তার পরিণতি আজ হয়তো নিতু পেয়েছে। বলা ঠিকনা তারপর ও আজ ওর এ অবস্থার জন্য ও নিজেই অনেকটা দায়ী।
-জানিস আপু আইসিউ রুমের বাহিরে দাড়িয়ে যখন ওকে দেখলাম তখন নিজের ভিতর কেমন মৃত্যুর ভয় চলে আসলো। যে মেয়ে এতো আধুনিক চলাফেরা করতো সারাক্ষণ ছেলেদের নিয়ে হাসি ঠাট্টায় মেতে থাকতো সে আজ বলতে গেলে একেবারে নি®প্রাণ হয়ে পড়ে আছে। আমার শুধু একটা কথা মনে হতে লাগলো আজ তো আমার সাথে এরকম কিছু হতে পারতো। আমি যে পথে চলে যাচ্ছিলাম আজ তো ওর জায়গায় আমিও থাকতে পারতাম। কেন তখন বুঝিনি আমি?
-মুনিরা কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো, আল্লাহ না করুক। সময় থাকতে আল্লাহ তোকে হেফাজত করেছে এটাই আমার প্রাপ্তি। আল্লাহ সব বাবা মায়ের মেয়েগুলোকে এরকম বিপদ থেকে রক্ষা করুক। ওই মেয়েটাও যেনো তার মায়ের কোলে ফিরে আসুক মৃত্যুর দুয়ার থেকে।
-আফিয়া বললো, তুই ওখানে ছিলি আর আমাদের সবার টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা।
-আপু ওই পরিস্থিতিতে আসলে কোনকিছুই মাথায় ছিল না।
আচ্ছা তুই বিশ্রাম নে আগে পরে কথা হবে বলে সবাই বেরিয়ে গেলো।
পরদিন সকালে রাদিয়ার এক বান্ধুবী ফোন করে জানালো সারারাত মৃত্যুর সাথে লড়াই করার পরে ভোর ছয়টার দিকে নিতু এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছে। তার বাবার এতো এতো টাকাপয়সা তার মেয়ের জীবন বাঁচাতে পারেনি। খবরটা শুনে রাদিয়া সাথে সাথে বেরিয়ে গেলো শেষবারের মত মেয়েটিকে দেখার জন্য।
বেশ কিছুদিন পর…
আফিয়ার ডেলিভারির ডেটও ঘনিয়ে আসলো। ডাক্তারদের দেয়া ডেট অনুযায়ী এখনো দশদিন বাকী আছে। কিন্তু আজ সকাল থেকে আফিয়ার শরীরটা কেমন জানি অন্যদিনের চেয়ে খুব খারাপ লাগছিলো। কেমন জানি লাগছে ও বুঝতে পারছেনা। কাউকে বলতে ও পারছে না। শাফী সেই সকালে বেরিয়েছে ওদের দূরসম্পর্কের কোন আত্মীয় জানি মারা গেছে তার জানাজা পড়তে এখনো ফিরেনি। বলেছে মা বাবার সাথে দেখা করে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবে।
(চলবে)

Comments

comments

About

Check Also

মুবাহাসা (২য় পর্ব)

(পূর্ব প্রকাশের পর)মুসাল্লা উঠিয়ে নাওইমাম আযম আবু হানিফা র.-এর আদত মুবারক ছিল যখন তিনি শাগরিদকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *