২১ উদযাপনের সূচি

আসরের নামাজ আদায়ের পর মসজিদের সামনেই চেয়ারম্যানসাবকে ঘিরে ধরলো এলাকার ছেলেরা। তাদের বিষয়বস্তু এবারের ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন। অন্য বছরের চেয়ে এবারের অনুষ্ঠানে অনেক বেশি জাকজমক আনবে বলছে উপস্থিত ছেলেরা। আয়োজনের তালিকা দেখে চেয়ারম্যান সবাইকে আশ্বস্ত করে বললেন, তোমাদের মধ্যে পাঁচজন এসে কাল সকালে আমার সাথে দেখা করবে। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে কি কি করা যায়। ছেলেরা আনন্দ মনে ফিরে গেল।
আসাদগঞ্জ ইউনিয়নের নতুন চেয়ারম্যান খালিদ সাইফুল্লাহ চেয়ারম্যান হয়ে আসার পর পুরো এলাকার চেহারাটাই যেন পালটে গেছে। সততা আর তার নিপুণ নির্দেশনায় জনগণের মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চালন ঘটেছে যেন। ইউনিয়নের পশ্চিম দিকে নদীর পাড়ের শত শত একর সরকারী খাস জমি গরীব কৃষকদের মাঝে ৯৯ বছরের লিজ কাটিয়ে বন্টন করেছেন। সেখানে এখন ফলফলাদি আর ফসলে ভরে উঠেছে। প্রধান সড়কগুলো এর মধ্যেই পাকা হয়েছে। আড়াইশর মত বেকার ছেলেকে নিজ গ্রামেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। গ্রামের যেসব পুকুর অনাবাদি ছিল সেসব পুকুরে মাছ চাষের ব্যবস্থা করেছেন। সব মিলে চেয়ারম্যানের জয়ধ্বণি আসাদগঞ্জ ইউনিয়নের আকাশে বাতাসে সব সময়ই প্রতিধ্বণি তুলছে। লোকেরা তাদের বাসা বাড়িতে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যে কোনো অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান সাহেবকে ডাকবেই। চেয়ারম্যান ছাড়া তাদের পথ চলাই যেন থেমে যায়।

২১ ফেব্র“য়ারি সকাল আটটা বাজতে না বাজতেই আসাদগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে শত শত মানুষের সমাগম দেখা গেল। একেক করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য আমন্ত্রিতরাও মঞ্চে উপবিষ্ট হলেন। অন্য বছরের চেয়ে এবারের অনুষ্ঠানের ভিন্নতা সবারই যেন একটু চোখে লেগেছে। কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হল। ইউ. এন. ও. সাহেব উদ্বোধনী বক্তৃতা দিলেন। তারপর শুরু হল কুচকাওয়াজ, দড়ি টানা এবং অন্যান্য শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা। সকাল দশটা পর্যন্ত চলল এসব। এরপর ঘোষণা করা হল, আসরের নামাজের পর বাকি অনুষ্ঠান শেষ করা হবে।
অনেকের মধ্যেই আলোচনা হতে থাকলো এবারের অনুষ্ঠান নিয়ে। এবার একেবারেই ব্যাতিক্রম। তারা কেউ কখনো ২১ ফেব্র“য়ারি আয়োজনের এমন ভিন্নতা দেখেনি।

আসরের নামাজের আগেই মসজিদে কোরআন খতম হল। নামাজের পর সবাই অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে উপস্থিত। কষ্ট করে ইউ. এন. ও. সাহেবকেও আসতে হল। তিনি বক্তৃতা দিলেন, আমন্ত্রিতদের আরো তিনজনকে বক্তৃতা দিতে দেয়া হল। অবশেষে চেয়ারম্যান সাহেব মাইক হাতে নিলেন। স্কুল মাঠের হাজারো জনতা তার কথা শোনার জন্যই যেন অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে ছিলেন। চেয়ারম্যান সাহেব সালাম বিনিময় করতেই করতালিতে জেগে উঠল যেন ময়দান। চেয়ারম্যান সবাইকে থামিয়ে বললেন, বন্ধুরা, এটা হাততালি দেবার কোনো অনুষ্ঠান না। মনে কষ্ট নেবেন না। অযথা হাততালি দেয়া ভালো কাজ নয়। সম্মানিত উপস্থিতি, আমি অল্প কথা বলেই আমার বক্তব্য শেষ করব। মহান ভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা। আপনারা খেয়াল করেছেন অন্য বছরের তুলনায় এবারের অনুষ্ঠান একেবারেই ভিন্ন। এই ভিন্নতা আমি ইচ্ছে করেই করেছি। কারণ আমি দেখেছি প্রতি বছর এই একুশের সকাল বেলা খালি পায়ে হেঁটে গিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেয় ছেলে-মেয়েরা। আমার প্রশ্ন হল, এতে করে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মা কি কোনো সুফল পায়? আমি বলব এতে কোনো সুফল নেই। আমরা কি কখনো আমাদের মরহুম পিতা-মাতার কবরে বা তাদের উদ্দেশ্যে কোথাও ফুল দেই? দেই না। তবে মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মের লোকেরা দেয়। আমরা তাদের অনুকরণ করব কেন? ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফিরাতের জন্য আমরা কোরান খতম এবং দোয়ার আয়োজন করেছি কারণ ভাষা শহীদদের সবাই ছিলেন মুসলমান। আরেকটা কথা, অন্য বছরগুলোতে দেখেছি, এই ২১ কে ঘিরে নানান রকম নাচ-গানের আয়োজন। সেই আয়োজন হয় আবার সন্ধ্যার পরে, আর বাচ্চারাও তাদের মা-বোনকে সাথে করে এমন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসে। আশেপাশে দোকানপাট বসে। শুধু ২১ নয় সবটাতেই এই একই চেহারা। রাতের বেলা সেই অনুষ্ঠান ঘিরে মহিলা-পুরুষ গাদাগাদি করে চলাফেরা করে। দুষ্ট ছেলেরা সেই রাতের অন্ধকারের সুযোগে নানা রকম অপকর্ম করে বেড়ায়। ইভটিজিং এমনকি মেয়েরা শারীরিক লাঞ্চণার শিকার হয় প্রতি বছর। যার দু-চারটা আমাদের কানে আসে আর বাকি সব চাপা পড়ে যায় ইজ্জতের ভয়ে। ২১ কে ঘিরে এই মেলা মেলা খেলায় অনেক ছেলে-মেয়ের ভার্জিনিটি নষ্ট হয় যা পরিবারের কেউ জানে না। এ নিয়ে একবার দরবারও বসাতে হয়েছে। তাই আপনারা কেউ অখুশী হলেও এবারের আয়োজনে ভিন্নতা আনা হয়েছে। সকালে যারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে উত্তীর্ণরা আমাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হাত দিয়ে পুরস্কার নিবেন এবং দোয়ায় অংশ নিবেন। দোয়া করবেন, যারা আমাদের এই বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে রাজ পথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, বাংলা ভাষার জন্য তাঁদের এই ত্যাগ আল্লাহ যেন কবুল করেন। আল্লাহ হাফেজ।
চেয়ারম্যানের বক্তব্যে মঞ্চে উপবিষ্টরা এবং দর্শকরা খুশীতে বাগবাগ হয়ে গেছে বুঝা যায় তাদের উচ্ছাস দেখেই।

Comments

comments

About

Check Also

আনন্দ-সংকটে সুনামগঞ্জ ভ্রমণ

২ সপ্তাহ আগে এক জায়গায় বসা অবস্থায় সিদ্ধান্ত হয় আমরা ২দিনের ট্যুরে সুনামগঞ্জ যাব। মামুন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *