হ্যাপি রামাদ্বান

আজ পহেলা রামাদ্বান। রামাদ্বানের প্রথম দিন।
প্রতি বছর এই দিনে লাহিনরা নানা রকম আনন্দে মেতে উঠে। লাহিনরা মোটামোটি স্বচ্ছল বলা চলে। যতটুকু থাকার কথা আসলে ততটুকু নাই। মা, বাবা, দাদা-দাদী, আর চাচা-চাচীদের নিয়ে বসবাস। লাহিন মনে করে আজ যা করবে, যেমন চলবে, রামাদ্বানের প্রতিটা দিন তার তেমন হাসি খুশিতে যাবে। তাই আজ সে শুধু আনন্দ খুঁজে বেড়াবে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। লাহিন বেরিয়ে যায়। বাড়ীর পাশের বকুল গাছটির নিচে থমকে দাঁড়ায়। বকুল ফুল কুড়িয়ে নেয়। এবারের রামাদ্বান এসেছে আষাঢ়ের সাথি হয়ে। রাতে বৃষ্টি হয়েছে তাই ফুলগুলি একটু কাঁদামাখা। সবগুলি না। মাঝে মাঝে। ফুলগুলি নিয়ে সে এসে দাঁড়ালো মসজিদের পাশে, ব্যাস্ত রাস্তার মধ্যে। অদ্ভুদ ব্যাপার। যে রাস্তা মানুষের আনাগোনাতে ব্যাস্ত থাকে আজ হঠাৎ খালি খালি লাগে। আনন্দ কী তবে মাটি হতে চললো। কিছুই বুঝে উটতে পারে না।
এমন সময় নাচতে নাচতে পাড়া থেকে বেরিয়ে আসে তানিয়া। সাথে বাবাও। সে আজ দারুল ক্বেরাতে ভর্তি হবে। তাই এত আনন্দ। লাহিন তাদের দিয়েই তার আনন্দটা শুরু করে। দুটি বকুল ফুল তাদের দিকে বাড়িয়ে দেয়। আর বলে হ্যাপি রামাদ্বান। বাবা হাসতে থাকেন। তানিয়া বকুল ফুল শুকতে শুকতে বাবার হাত ধরে চলে যায়।
তারপর আসতে দেখা গেল মসজিদের মোতাওল্লিকে। বয়সে তরুন। গালে লিরিক দাঁড়ির চাপ। এসেই গল্প জুড়ে দিলেন। গল্পটা এই রামাদ্বানকে ঘিরেই। রামাদ্বান এলেই মসজিদে মুসল্লিদের আনাগোনা বাড়ে। রাতে তারাবির নামায হবে। সুরা তারাবি হবে না খতমে তারাবি হবে এই নিয়ে আলোচনা চলে। কেউ বলেন সুরা তারাবি ভালো কেউ বলেন খতমে তারাবি। আবার কেউ কেউ বলেন, খতমে তারাবিতে হাফিজকে বেশি টাকা দেয়া লাগে। না দিলে সম্মান বাঁচবে না। এখন কী করা? তখন একজন বলে উঠলেন এই মসজিদ শুরুর কাল থেকে দুটি পরিবার সব সময় টাকা বেশি দিয়ে আসছে, তাদের জিজ্ঞেস করে দেখেন তারা কী বলেন?
দুটি পরিবারেরই মত হল তারা এ বছর খতমে তারাবি পড়বেন না। মানে তারা বেশি টাকা দেবেন না। অন্য একজন বললেন আমরা শুরু থেকে খতমে তারাবি পড়েছি, এবারও পড়ব ইনশাল্লাহ। আমি সবার সাথে আলোচনা করে দেখি। সবাই একমত হলেন পরবর্তি বৈঠকে সিদ্বান্ত হবে সুরা তারাবি হবে না খতমে তারাবি হবে। স্বার্থের দ্বন্ধে অবশেষে এবারের রামাদ্বানে সুরা তারাবি পড়ার ব্যাপারে সিদ্বান্ত হলো। এই বলে তিনি থামলেন। সাথে সাথে একটি বকুল ফুল হাতে দিয়ে লাহিন বললোÑহ্যাপি রামাদ্বান।
খুশি হলেন মোতাওল্লি । বললেন তুমি দারুন ছেলে একদিন অনেক বড় হবে। এই বলে তিনি চলে গেলেন।
এরপর এলো পশ্চিম পাড়ার রমিজ ফকির। হাতে বাঁকা লাঠি, গায়ে ময়লা জামা। রমিজ ফকির প্রতি শুক্রবারে মসজিদে নামায পড়ে। খুব সাদাসিধে লোক। পাড়ার সবাই তাকে ভালোবাসে। লাহিন তার হাতে একটি বকুল ফুল তুলে ধরলো। বললো হ্যাপি রামাদ্বান। আনন্দে কেঁদে ফেললো সে। আর লাহিনের মাথায় হাত বুলিয়ে গেল। খুব খুশি হলো সে।
আস্তে আস্তে বৃষ্টি পড়তে শুরু করছে। আষাঢ়ের ঝুর ঝুর বৃষ্টি। এমন সময় বেগম আপা মাথায় ছাতা ধরে আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। মুখটা খুব বেজার। বেগম আপা খুব দুঃখী মানুষ। বিয়ে হয়েছে কয়েকবার । কোথাও শান্তির খোঁজ পাননি। শুধু কালামের মুখের দিকে তাকিয়ে এখন বেঁেচ আছেন। এই যা। বকুল ফুল আপার হাতে দিয়ে বললোÑহ্যাপি রামাদ্বান। আপাও বললেন হ্যাপি রামাদ্বান। তুমি অনেক সুখি হবে লাহিন, অনেক বড় হবে। তারপর তিনিও চলে গেলেন।
এভাবে সারাটি দিন বকুল ফুল দিয়ে হ্যাপি রামাদ্বান বলে আনন্দ বিলিয়ে গেল লাহিন। ছোট ছোট আনন্দ, প্রাপ্তিটা খুব বেশি। লাহিনের আনন্দের সাথে মিলেমিশে একাকার ঝুর ঝুর বৃষ্টি, গুধূলির আলো, গাছ-পালা, ফুল-প্রকৃতি। লাহিন ঘরে আসলো। দাদা ভাই বললেন কী ব্যাপার এত খুশি খুশি লাগছে যে?
হাত ভরা বকুল ফুল দাদার দিকে বাড়িয়ে লাহিন বললো-হ্যাপি রামাদ্বান, দাদা ভাই।

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *