বড়বোন লতিফাকে বারবার বলে রেখেছে নিশাত, আজ সেহরির সময় ডাকবে কিন্তু আপুমনি, আমি রোজা রাখবো। লতিফা বললো, তা কি করে হয় সোনা আপু তুমি যে অনেক ছোট। ছোটদের উপর তো আল্লাহতায়ালা রোজা ফরজ করেননি। চট করে নিশাত লতিফার গা ঘেঁষে দাঁড়ায় আর বলে, এই দেখোননা আমি কত্ত বড় হয়ে গেছি। আচ্ছা আচ্ছা ডাকবো ইনশাআল্লাহ। তবে শরীর যেন নষ্ট করোনা সোনা আপু। নিশাতের আনন্দ আর ধরে না। লাফাতে লাফাতে চলে যায় খেলতে। নূপুর, শাওন, তুষার, আঁখি ওর খেলার সাথী। সবাইকে জানিয়ে দেয় ও রোজা রাখবে। নিশাতের সাথীরা জানায় ওরাও রোজা রাখবে। সন্ধ্যায় খেলা শেষ করে বাড়ি ফেরে নিশাত। সন্ধ্যা ক্রমশঃ গাঢ় হয়ে ওঠে। রাতের খাবার খেয়ে মায়ের কাছে ঘুমিয়ে যায় নিশাত। ক’দিন বৃষ্টি হয়না। দখিনা বাতাস বয়। টিনের চালে রয়নার ফল টুপটাপ পড়ে। বাতাসের ধাক্কায় আমও পড়ে। নারকেল গাছে হুতোমপেঁচা ডাকে। ছুঁচোরদল কিচ কিচ শব্দকরে বাইরে ছুটাছুটি করে। রোজার কথা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে যায় নিশাত। রোজা রেখেছে নিশাত। দুপুর গড়াতেই ক্ষিধেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। রাস্তায় একটু ঘোরাঘুরি করছিল নিশাত। ওর সামনেই দেখে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে। এগিয়ে যায় নিশাত। কি সুন্দর দেখতে কিন্তু একেবারে লিকলিকে শীর্ণকায়। ছেঁড়া জামাপ্যান্ট ওর। তবুও মুখে ম্লান হাসি। উহ বুকের হাড় গোণা যাচ্ছে। নিশাত ওকে জিজ্ঞেস করে, তুমিও কী আমার মতো রোজা আছো? আমরাতো সারাবছরই রোজা রাখি, ম্লান হেসে বললো ছেলেটি। সে আবার কেমন করে ভাই! এই দেখোনা একটা রোজা রাখতেই আমার শরীর কি নিড়বিড়ে হয়ে গেছে। ঘরে খাবার না থাকলে রোজা রাখার জন্য কী রামাদ্বানের দরকার হয়। তোমরা থাকো পাকাঘরে। বুঝবে কি করে! যাবে ঐ গাছতলায় ওখানে আমার মা আছে। ওর সাথে এগোয় নিশাত। আপুর কাছে নিশাত লাড়ুর গল্প শুনেছিল। এই ছেলেটা লাড়ু নয়তো! যাবে ভাই তুমি আমাদের বাড়ি? আম্মুর কাছথেকে তোমাকে খাওয়াবো। কথার মাঝে এসে দাঁড়ায় এক সুদর্শন প্রৌঢ়। কি সুন্দর স্নিগ্ধ অবয়ব। হাত বাড়িয়ে দেন নিশাতের দিকে। “নিশাত বড় হয়ে ওদের দুঃখমোচন করবে, বুঝলে। এজন্য মহান আল্লাহ আমাদের রোজা দিয়েছেন। ওদের ব্যথা যেন আমরা বুঝতে পারি। মায়ের কাছে যাও নিশাত ইফতারের সময় হয়ে এলো যে।
— নিশাত এই নিশাত ওঠো। সেহরি খাবে না?
–লোকটি কই?
— কে নিশাত? স্বপ্ন দেখছিলে বুঝি? নিশাত লতিফাকে জড়িয়ে ধরে।
–সেহরি খাবে না? –ওহ হ্যাঁ, চলো। আমি যে কাল রোজা রাখবো। ততক্ষণে পাখিরা ঘর ছেড়েছে। আকাশও ফর্সা।
Check Also
বিদায়বেলা
জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …