মনের মতো বউ

রাহেলা বেগমের দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার। স্বামী সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। এখন অবসর প্রাপ্ত। একে একে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বিশাল খরচ ও ধুমধামের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছেন। এরপর পর পর দুই ছেলেদের বিয়ে করিয়ে দু-দুটি বউ বাড়ি আনেন।
বড় বউ দিবা আর ছোট বউয়ের নাম রাত্রি। দিবা আর রাত্রির মধ্যে তেমন কোন ব্যবধান নেই। আসলে দুই জনই শিক্ষিতা এবং সুন্দরী। তবে রাত্রির বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা দিবাদের তুলনায় অনেক কম। তাই দিবা বাবা বাড়ি থেকে খাট- পালং, সোনার গয়না ইত্যাদি অনেক কিছু আনতে পারলেও রাত্রি তা আনতে পারেনি। এজন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন দিবাকেই অধিক পছন্দ করত। কিন্তু তাদের সেই পছন্দ অধিককাল স্থায়িত্ব লাভ করতে পারেনি, তার কারণ দিবার অহঙ্কার। কথায় কথায় খোঁটা দেওয়ার অভ্যাসের কারণে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে উপরে উপরে সমীহ করলেও মন থেকে ভালো জানত না।
অন্যদিকে রাত্রি অমায়িক স্বভাবের। শ্বশুরবাড়ির কাজকর্ম দিবার চেয়ে অনেক বেশিই করত তবু শাশুড়িকে খুশি করতে পারত না। কারণ রাহেলা বেগম মেয়েকে এত যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন যখন তখনই ভেবেছিলেন দুই ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দ্বিগুণ লাভবান হবেন তিনি। তা আর বুঝি হয়ে উঠল না।
উপরে উপরে মিল মহব্বত থাকলেও ভিতরে ভিতরে দিবা-রাত্রির মাঝে রেষারেষি চলত। আসলে দিবা রাত্রিকে সবার কাছে হেয় করার জন্য সত্য-মিথ্যা বানিয়ে তাদের কাছে বলত। তবে রাত্রিও ছেড়ে দেবার পাত্রী নয়। সে কারো সাথে আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করে না তবে কেউ তার সাথে বিবাদে জড়াতে চাইলে ভদ্রভাবে কথায় বুঝিয়ে দেয়। ফলে দিবা খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারত না উল্টো নিজেই জব্দ হয়ে যেত। কিন্তু এরপরও রাত্রি নিজে থেকে মিশতে যেত দিবার সাথে সে খাতির জমাতে চাইত। তাই তাদের সম্পর্কটা দূর থেকে মধুরই মনে হত।
কিছু দিন পরে দিবা তার স্বামীকে নিয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া করে দূরে চলে যায়। শ্বশুরবাড়ির ঝামেলা থেকে বেঁচে যেন হাঁফ ছাড়ে। এবার ছেলেমেয়ে নিয়ে বেশ গুছালো সংসার তার। শ্বশুর মশাইয়ের সেবা, শাশুড়ির যতœ আর মাঝেমধ্যে ননদের আবদার তার কাছে অসহ্য লাগত। এখন সে বেশ সুখী। একা একা নিজের মতো নিজে আছে।
রাত্রির স্বামীর ইনকামও কিন্তু কম নয়, তবে রাত্রি আলাদা থাকায় পছন্দ করে না। ছেলেমেয়ে নিয়ে রাত্রি শ্বশুরবাড়িতেই থাকতে পছন্দ করে। তবে ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে। ওদের ভালো স্কুলে দেওয়ার ইচ্ছা তার। তাই গ্রামের বাড়ি থেকে মফস্বল শহরে রাত্রি বাসা ভাড়া করতে চায়। কিন্তু তার শ্বশুর-শাশুড়ি রাজি নয় বাড়ি ছেড়ে যেতে। অনেক বুঝিয়ে শেষমেষ তাদের সে তার সাথে যেতে রাজি করায়।
জীবনের এতগুলো দিন-রাত পাড়ি দিয়ে শ্বশুর শাশুড়ি রাত্রির ব্যবহারে অনেক খুশি। তাদের হৃদয়ের ভালোবাসার অনেকটা অংশ জুড়ে কেবল রাত্রি। আর সেটা অনেক কষ্ট, ধৈর্য এবং জ্ঞানে রাত্রির অর্জন। আসলে স্রষ্টা তো তাকেই সাহায্য করেন যে সৎকাজে ধৈর্যহারা না হয়ে লেগে থাকে। যেকোন সাফল্যই নিজে থেকে আসে না সাফল্যের পিছনে সবসময় লেগে থাকতে হয়। তবেই সাফল্য জীবনের কোন এক কালে ধরা দেয়। যাহোক কেউ যদি রাত্রির শ্বশুর-শাশুড়িকে জিজ্ঞাসা করে: রাত্রি আপনাদের কেমন বউ?তারা আজ একবাক্যে উত্তর দেন:রাত্রি আমাদের মনের মতো বউ।

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *