ভূতের ছাঁ জাফর

রাতে ঘুমানোর আগে ঘরের পাশে গাছে গাছে একটা ভূত হেঁটে বেড়ায়। ভূতে ডানা ঝাপটায় আর বিকট শব্দে ডেকে বলে- ‘ভোঁ-তোঁ-তোঁউ-তোঁউ’। এই ভূতকে ইউসুফ নাম দিয়েছে জাফর। ইউসুফ ছোটকালে এই ভূতের অনেক গল্প শুনেছে তাঁর নানীর কাছে। ভূতটা নাকি শুধু শিশুদের ভয় দেখায়। যারা রাতের বেলা নানা ছুঁতোয় শুধু কাঁদে-জাফর ভূতটা সেই কচি শিশুদের ঘাড়ে চাপতে চায়। নানীর ভয়ানক কথায় ইউসুফতো কাঁদাই ভুলে গিয়েছিল। একটু বড় হয়ে ইউসুফ যখন বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করে তখন সে জাফর ভূতকে আর ভয় পেতো না। বরং সেও প্রয়োজনে কচি শিশুদের ভূতের ছাঁ জাফরের গল্প বলে ভয় দিখিয়ে ‘ভোঁ-তোঁ-তোঁউ-তোঁউ’ উচ্চারণ করতো বিকৃত সুরে। কাজ হতো ওষুধের মতো। শিশুরা কান্না ভুলে জাফর ভূতের ভয়ে শান্ত-সুবোধ হয়ে যেতো।
জাফর ভূতের গল্প বলা ইউসুফের কাছে খুবই সহজ। মুখস্ত বলার মতো গড় গড় করে সে গল্পগুলো বলে যেতে পারে। এর কারণ একটাই। তাঁর নানী একই গল্প ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কয়েকবার বলে যেতেন। তাই শুনতে শুনতে মুখস্ত হয়ে গেছে।
ভূতের নাম অন্য কিছু না দিয়ে জাফর কেন দেয়া হলো এই রহস্য একমাত্র ইউসুফই জানে। সে এতো দিন এটা কাউকে বলেনি বা বলার প্রয়োজন হয়নি। একদিন ইউসুফের দাদী জিজ্ঞেস করলেন- ‘এইযে পণ্ডিত মহাশয় ইউসুফ, তোমার জাফর ভূত কেমন আছে?’
ইউসুফ বললো- ‘কেন দাদী জাফর ভূতটা আমার হবে কেন? ভূতটাতো সবার জন্যই সমান।’ তাঁর দাদী বললেন – ‘তা বুঝলাম। কিন্তু ভূতের নাম জাফর রাখলে কেন; সেটা বুঝলাম না। দুনিয়ায় এতো নাম থাকতে মানুষের নামে জাফর বলে তুমি তাকে সবসময় ডাকো যে!’ মূল ঘটনা খুলে বললো ইউসুফ। বললো – ‘শুনো দাদী। আমার নানা একদিন আমাকে গোপনে ডেকে নিয়ে বললেন-ইউসুফ তুমি যে ভূতের গল্প প্রতিদিন শুনো-সেই ভূতের নাম কি জানো? আমি না বলে মাথা নাড়ালে তিনি বললেন-কাউকে আমার কথাটি বলবে না। এই ভূতের নাম হলো- জাফর। সবাইকে বলবে এই নাম তুমি দিয়েছো।’
সব কথা শুনে ইউসুফের দাদী বললেন- ‘ও, এই কথা! আমিতো ভেবেছি কাউকে অপমান করার জন্য তুমিই এই নামটা দিয়েছো। তারপর তোমার নানা কি বললেন? ‘ ইউসুফ একটু থেমে থেমে বললো -‘নানা বলেছেন, এই বাংলার মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ যে ধর্মের মানুষই হোক না কেন সবার একটা ভয়ঙ্কর শত্রু ছিল। তাঁর নাম- মীর জাফর আলী খাঁ। মীর জাফরের কোনো ধর্মই ছিল না। সে নামেমাত্র মুসলমান ছিল। কোরআন শরীফের উপর হাত রেখে শপথ করার পরও শত্রুর সাথে হাত মিলিয়ে সব মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। দেশকে ব্রিটিশদের কাছে তুলে দিয়েছিল। এই বিশ্বাসঘাতক জাফর একটা শয়তান। এখন কেউ অন্যকে গালাগাল করলে ‘মীর জাফর’ শব্দ দিয়েই করে। তুমি বড় হয়ে সব জানতে পারবে। বাংলার দুশমন ‘মীর জাফর’-এর নামেই আজ থেকে তোমার গল্পের ভূতটার নাম হলো- জাফর। এই নামটা কোনো সচেতন পিতামাতা তাঁর সন্তানের জন্য শখ করে রাখেন না। তাই ভূতকে তুমি জাফর নামে ডাকলেও কেউ কিছু বলবে না। আর শুনো, এই ভূতটা কিন্তু এখনো বাচ্চা ভূত। সব শিশুদের ত্রাস ‘ভোঁ-তোঁ-তোঁউ-তোঁউ’-কে তুমি ভূতের ছাঁ জাফরই বলবে।’

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *