নিশি

মা বিরক্ত হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন নিশির দিকে। ওর নিত্যনতুন আবদারের কথা শুনে মা রেগে যান আজকাল। হালখাতার অনুষ্ঠানে রাজ্যের লোক আসবে। বাবা অতিথিদের নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন দোকানে, সেখানে ওকে যেতে দেবার ইচ্ছে ছিলনা মায়ের। সারাক্ষণ বাবার হাত ধরে থাকবো, সব কথা শুনবো, জ্বালাতন করবোনা একটুও। এরকম হাজারটা প্রতিজ্ঞা করে মায়ের থেকে অনুমতি পেয়েছে হালখাতার অনুষ্ঠানে যাওয়ার। আনন্দে সারারাত ঘুম হয়নি নিশির।
সকাল সকাল নিশিকে তৈরী করে দিয়েছেন মা। বাবার সাথে বের হবার মুহূর্তে নতুন আবদার। হিজাব ছাড়া বাইরে যাবেনা। ‘আবার হিজাব পরতে হবে কেন, শুনি? মা তুমি পর’ নিশিকে কথা শেষ করতে দেয় না মা। ‘বড় হই। ক্লাস ফোর-এ উঠেছি তো।’ মার বিরক্তি চরমে পৌঁছায়। ‘গরম পড়েছে বেশ। তোমার এমনিতে গরম বেশি। বাবার দেরি হচ্ছে। জলদি বের হও।’
হিজাব পরলে আল্লাহ খুশি হন যে।
হ্যাঁ, মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসেন মা। তারপর লাল হিজাবে ঢেকে দেন নিশির কাঁধ সমান লম্বা সিল্কী চুলগুলোকে। এবার ঠিক আছে নিশি? আয়নায় নিজেকে দেখে নিশি মাকে জিজ্ঞেস করে, আল্লাহ আমার ওপর খুব খুশি হবে না মা? মার হাসিটা আরও প্রশস্ত হয়। নিশির কথার জবাব দেন না মা। শিগগির বের হও, এবার কিন্তু সত্যি বাবার দেরি হয়ে যাবে। হাত নেড়ে মাকে বিদায় জানায় নিশি।
বাইরের আকাশে নববর্ষের নতুন সূর্য। ইটের রাস্তায় সকালের নরম রোদ পড়েছে। চোখ তুলে নিশি নতুন সূর্যের দিকে তাকায়। সূর্যটা নিশির দিকে তাকিয়ে হাসে। ঠিক মায়ের মত।

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *