জলপরির জাদুর কাঠি

সে অনেক অনেক বছর আগের কথা। বনমতি নামের এক গভীর জঙ্গল ছিলো। তার মাঝে এক ঝুপড়িতে বাস করতো এক সন্যাসী। দিবানিশি স্রষ্টার আরাধনা করতো। ক্ষুধা পেলে বনের ফলমুল খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতো। তার জীবন ছিলো বিপদসংকুল আর কষ্টকর। নানা সময়ে বনের হিংস্র প্রাণীদের সামনে পড়তে হতো। আর প্রাণের ঝুকি নিয়ে নানা ফন্দি ফিকির করে সে বেঁচেও যেতো। ঐ সন্যাসী সপ্তাহে দুইদিন গোসল করতে নদীতে যেতো। ঐ নদীর নাম ছিলো সান্তা নদী। প্রতি সোমবার ও শুক্রবারে সে গোসল করতো। এক সোমবারে সে গোসল করতে বের হলো। যখন সে সান্তা নদীর ঘাটে পৌছলো তখন গোধুলীর লগন। সেখানে পৌছে সে একটা আজব জিনিস দেখতে পেলো। একটি ঝলমলে কাঠির আগায় একটি ছোট নীল তারকা আলোর রশ্মি ছড়াচ্ছে। সে ভয়ে ভয়ে ওটার কাছে গেলো এবং অতি সতর্কতার সাথে ওটা স্পর্শ করলো। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে ওটা মুষ্টিবদ্ধ করে তুলে নিলো মাটি থেকে। কি সুন্দরই না ছিলো ঐ কাঠি। সে ওটাকে নিয়ে এলো তার ঝুপড়িতে তারপর লুকিয়ে রাখলো ওটাকে সিন্ধুকে। ধীরে ধীরে রাত ঘনিয়ে এলো। গভীর রাত। সুনশান নিরবতা। সন্যাসী ধ্যানে মগ্ন। এমন সময় হঠাৎ করে সমস্ত ঝুপড়ি নড়ে উঠলো। সন্যাসীর ধ্যান ভেঙ্গে গেলো। সে চেয়ে দেখলো সামনে অপূর্ব এক সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে। এমন রূপ যে ইতি পূর্বে কখনো দেখেনি। কিন্তু কি আশ্চর্য ওটার পিছনে প্রজাপতির ডানার মতো একটি চমৎকার ঝলমলে ডানা আছে! সন্যাসী জিজ্ঞাসা করলো : কে তুমি? মেয়েটি মিষ্টি সুরে উত্তর দিলো : আমি জলপরি। দয়া করে আমার যাদুর কাঠিটা দিয়ে দিন। স্রষ্টা আপনার মঙ্গল করবেন। ‘সন্যাসী ঐ কাঠির মায়া ছাড়তে চাইছিলো না। তার উপর যাদুর কাঠি শুনে লোভ আরো বেড়ে গেলো। তাই সে সোজা উত্তর দিলো: আমি কোন যাদুর কাঠি দেখিনি। তুমি চলে যাও। আমার ধ্যানে ব্যঘাত ঘটাতে এসো না। ‘জলপরি চলে যাচ্ছিলো তখন সে এই বলে গেলো-মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তার মুখে মিথ্যা মানায় না। যদি তুমি সত্যাবদি হও তবে ছাড় পাবে নতুবা ঐ কাঠির হাতে তোমার মৃত্যু হবে।’ “সন্যাসী পিছন থেকে জানতে চাইলো-কেমন করে?” জলপরি বললো-কাঠি হারিয়ে ফেললে পরিরা মারা যায় আর তখন তাদের আত্মা ঐ হারানো কাঠিটিকে খুঁজে বের করে ওতে আশ্রয় নেয়। আর তখন ওটা ভয়ংকর হয়ে উঠে। সন্যাসী ভয় পেয়ে গেলো আর তখন জলপরিকে ডেকে বললো : দাঁড়াও তোমার কাঠি তুমি নিয়ে যাও আমার ওসবের দরকার নেই। “এই বলে সন্যাসী তার সিন্ধুক থেকে যাদুর কাঠিটা বের করে দিলো। জলপরি তার কাঠি পেয়ে যারপর নাই খুশি হলো। আর তখন সন্যাসীকে বললো : তুমি ভারি মূর্খ তো! তুমি সন্যাসী হয়েও কি এটা জানো না যে আত্মা বলতে কিছু হয় না। তোমার বোকামির কারণে তুমি অবশ্যই শাস্তি পাবে। তবে তোমাকে প্রাণে মারবো না শুধু বনের একটি প্রাণী বনিয়ে দেবো, যেমনটি অন্যান্যদেরকেও করেছিলাম। এরা সবাই তোমার মতো মানুষ ছিলো কিন্তু লোভের দরুণ তাদের এ অবস্থা হয়েছে। “

Comments

comments

About

Check Also

বিদায়বেলা

জামুরাইল হাই স্কুলের বাংলা শিক্ষক ইমরান হোসেন। প্রতিদিন সকাল ৯ টায় স্কুলে আসেন। যথারীতি তিনি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *